১) ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৭ টি আসনে জয়ী হয়েছিল। এখন বিজেপি – বিধায়ক সংখ্যা ৬৭। এর মধ্যে ৭ জন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। ৩ টি আসনে উপনির্বাচনে বিজেপি হেরেছে।
২০১৯ সালে বিজেপির ১৮ জন লোকসভা সাংসদ জয়ী হলেও পরে ২ জন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেয় — বাবুল সুপ্রিয় ও অর্জুন সিং। অবশ্য অর্জুন সিং আবার বিজেপিতে যোগ দেয়।
তাহলে যে বিজেপি নিজের বিধায়ক সাংসদ ধরে রাখতে পারছে না তারা কীভাবে তৃণমূল কংগ্রেস – কে হারাতে পারে?
বিজেপির তিন জন এমএলএ এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছে। কৃষ্ণ কল্যাণী , মুকুটমণি অধিকারী ও বিশ্বজিৎ দাস এই তিন জন বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা প্রার্থী হয়েছে। কী বুঝলেন ?
বিজেপি বর্তমান এমপি জন বার্লা-কে প্রার্থী করেনি। সে বিজেপি ত্যাগ করে কোথায় যাওয়া যায় ভাবছে। ঝাড়গ্রাম – এর বিজেপি সাংসদ কুণাল হেমব্রম প্রার্থী না হওয়ায় বিজেপি ত্যাগ করেছে। আসানশোলে ঘোষণা হওয়া মাত্রই বিজেপি প্রার্থী রাজি নয় জানিয়ে দেয়। দার্জিলিং কেন্দ্রে ঘোষিত বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে কার্শিয়াং – এর বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ওরফে বিপি বজ গায়েন নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
বিজেপি – র প্রাক্তন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এখন রাজ্যে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী। আজীবন বিজেপি করা, বিজেপি সাংসদ, বিধায়ক বিহারের শত্রুঘ্ন সিংহ তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা প্রার্থী। একইভাবে বিজেপি নেতা কীর্তি আজাদ এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। আবার তৃণমূলের দীর্ঘদিনের সঙ্গী তাপস রায় বিজেপি তে যোগ দিয়েছে।
২) ২০১৫ সালে সারদা চিটফান্ড তদন্তের ভার গ্রহণ করে সিবিআই। কুনাল ঘোষ গ্রেপ্তার হওয়ার পরে লিখিতভাবে সিবিআই – কে জানায় এই দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করা দূর অস্ত ডাকতেই দেননি প্রধানমন্ত্রী। ১ দিনের নোটিশে দিল্লি ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও হেমন্ত সরেন – কে গ্রেপ্তার করতে পারে বিজেপি কিন্তু ১০ বছরে মমতা আর তার ভাইপোকে ছুঁতে পারে না। ১ দিনের নোটিশে কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম- এর বাড়ির পাঁচিল টপকে,দরজা ভেঙে গভীর রাতে গ্রেপ্তার করতে পারে, কিন্তু এ রাজ্যে পারে না। কেন ?
৩) সন্দেশখালি ‘ র নারকীয় ঘটনার নায়ক শাহজাহান – এর বাড়ি তল্লাশি করতে গিয়ে ইডি’র অফিসার ও সশস্ত্র বাহিনী নৃশংসভাবে আক্রান্ত হল। ইডি অফিসাররা দিল্লিতে সব তথ্য প্রমাণ পাঠালেন। রাজ্য সরকার ইডি অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা করল। এক মাস শাহাজাহানকে পুলিশি ঘেরাটোপে আগলে রাখল রাজ্য সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী , প্রধানমন্ত্রী একমাস শীতঘুমে কাটালেন। কোন বিবৃতি নেই, রিপোর্ট তলব নেই। এমনকী ইডি -কে দিয়ে সঠিক মামলা দায়ের করা নেই। শুধু স্থানীয় বিজেপি কয়েকটি লোক দেখানো মিছিল ও টিভি বাইট দিল। মোদী নিজের তদন্ত আধিকারিক ও সশস্ত্র বাহিনীকে এ রাজ্যে সুরক্ষা দিতে পারছে না। ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারছে না তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনীর তাণ্ডব চালানোর হিম্মৎ।
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে কারা প্রথম সন্দেশখালির আক্রান্ত মা – বোনদের পাশে দাঁড়াল? সিপিআই (এম )। প্রথমে নিরাপদ সর্দার তার পরে মহম্মদ সেলিম।
হাইকোর্ট স্বতঃস্ফূর্ত মামলা দায়ের করার পরে পাল্টা আইনি লড়াই শুরু হল। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে ঘটনার দিনেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে শাহজাহানের জিনা হারাম করতেই পারত। কেন একাজ করল না?
শুধু কি সন্দেশখালি? একই ঘটনা ঘটল পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে। এন আই এ দল গুরুতর আক্রান্ত হল। হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলছে কেন্দ্রীয় দপ্তর নীরব কেন? কোন উত্তর নেই। বাইরে সভামঞ্চে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সি মার খাচ্ছে, তাদের রক্ত ঝরছে, তার ওপরে রাজ্য সরকার তাদেরই বিরুদ্ধে মামলা করছে, কোর্টে এজেন্সি ভর্ৎসিত হচ্ছে। এই হচ্ছে বাইনারি। এর ফলে একাংশ ভাবছেন মমতা ব্যানার্জির কলজের জোর কতো? কেন্দ্রীয় এজেন্সিকেও পরোয়া করে না। কী অসাধারণ সংগ্রামী, দক্ষ প্রশাসক!! আসলে কী? মোদী কা গ্যারান্টি মমতার ব্যাগে। তুমি এভাবেই চালিয়ে যাও, দেখো বামেদের দিকে মানুষের স্রোত বাড়ছে। তুমি ডুবলে আমার ভরাডুবি আটকানো যাবে না। তার জন্য আক্রান্ত হয় হোক আমার বাহিনী। আদালতে ভর্ৎসিত হয় হোক। ওরা তো আমার চাকর বাকর। আমি বেতন দিই। তাই আমার কথায় ওদের চলা ছাড়া উপায় নেই। ভাবুন,অন্য রাজ্যে কেন্দ্র সরকার যা পারে এ রাজ্যে তা পারে না কেন?
পারে না কারণ বিজেপি – তৃণমূল কংগ্রেস হরিহর আত্মা। দুজনেরই অভিন্ন শত্রু বামপন্থীরা। তাই কেন্দ্রে বিজেপি ছাড়া তৃণমূলের চলবে না। রাজ্যে তৃণমূল ছাড়া বিজেপির চলবে না।
৪) যত নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে এ রাজ্যে তার বিরুদ্ধে মাঠের লড়াই আর আইনের লড়াই কারা লড়ছে? উত্তর একটাই বামপন্থীরা।
৫) অভিষেক ব্যানার্জি ‘ র সম্পত্তির হিসাব হাইকোর্টে জমা পড়ার পর থেকে ইডি সিবিআই সারদা,নারদ, কেলেঙ্কারির তদন্তের মতো ঘুমিয়ে গেল। মোদীর নির্দেশে তদন্ত বন্ধ রাখা হল। আর কেবলই আপনাকে বোঝানো হচ্ছে তৃণমূল – কে জব্দ করতে একমাত্র বিজেপিই পারবে।
৬) রাজ্যে তোলাবাজি সর্বগ্রাসী। বিজেপি কী করল? তোলাবাজি করার জন্য ‘ নির্বাচনী বন্ড আইন ‘ তৈরি করল। বিজেপির তেরি করা সেই আইনে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক দল হয়েও তৃণমূল কংগ্রেস সর্বোচ্চ তোলা আদায় করল। বিদ্যুৎ , ওষুধ,মাদার ডেয়ারি , লটারি মালিক প্রভৃতিদের কাছ থেকে। বিজেপির তেরি করা এই তোলাবাজি আইন তৈরির সময় একমাত্র সিপিআই ( এম) বিরোধিতা করে যে বক্তব্য রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট হুবহু সেই যুক্তিতে এই আইন অবৈধ ঘোষণা করল। মামলা করল কারা? সিপিআই ( এম ) এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বিজেপি – তৃণমূল কংগ্রেসের তোলাবাজি শেকড় শুদ্ধ সামনে আনল কারা? একমাত্র সিপিআই (এম)। তবুও আপনাকে প্রতিদিন বোঝানো হচ্ছে সিপিআই (এম) পারবে না।
৭) ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনায় ভয়ঙ্কর দুর্নীতি। কেন্দ্র সরকার কী করল? দুর্নীতির তথ্য নিয়ে কোন ব্যবস্থা নিল না কেন? এফআইআর করে মামলা রুজু করল না কেন? এসব না করে তিন বছর কাজ বন্ধ, মজুরি বন্ধ করে দিল। সেই সঙ্গে তিন বছর কাজ বন্ধ। এটা করে কার সর্বনাশ করল? আমার আপনার। অন্য দিকে তৃণমূল – কে গলা ফাটানোর সুযোগ করে দিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বলার। বিজেপি দুর্নীতি হয়েছে বলে গলা ফাটাল। এমনকী প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেও ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলছেন। আপনাকে ভাবতে সুযোগই দিল না যা কেন্দ্রের ভূমিকা পালন করল না কেন? এরপরও আপনি ভেবেই চলেছেন বিজেপি – কে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস – কে হারাবেন। আমরা কী বললাম? কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। যারা কাজ করছেন তাদের মজুরি মিটিয়ে দিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, এফআইআর করে মামলা রুজু করতে হবে। আপনি কোন যুক্তির পক্ষে? ভাবুন, ভাবতে আপনাকে হবেই।
৮) চোর ধরো জেল ভরো : গোটা রাজ্য জুড়ে এই দাবিতে রাজ্যব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিয়ে হাজার হাজার মিছিল, গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস ঘেরাও কারা করেছে? কারা করার হিম্মত রাখে ? বামপন্থীরা ছাড়া আর কেউ আছে কি?
উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে গোটা রাজ্যব্যাপী পঞ্চাশ হাজার কিমি গণ পদযাত্রা কারা করেছে? তার তরঙ্গ শীর্ষে ৭ ডিসেম্বর ব্রিগেডে দু কূল ছাপানো সমাবেশ কারা করেছে? ঐ সমাবেশের দশ ভাগের এক ভাগ জমায়েত বিজেপি বা তৃণমূল কংগ্রেস করতে পেরেছে? তারপর ও আপনাকে বোঝানো হচ্ছে বিজেপিই পারবে তৃণমূল কংগ্রেস কে হটাতে। মিডিয়া – কে ব্যবহার করে এই ধারণা বারবার আপনার মগজে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে।
৯) বিজেপি – কে পরিচালনা করে যে আরএসএস তারা লিখেছে অভিষেক ব্যানার্জি কে গ্রেপ্তার করা উচিত হবে না। তারপর থেকে অভিষেক কে জিজ্ঞাসাবাদ করা বন্ধ হয়ে গেছে।
১০) এবার আসছি এবারের ভোট নিয়ে। এই ভোট কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য। আমরা অভিজ্ঞতায় বুঝেছি, কেন্দ্র থেকে বিজেপি কে বিদায় দিতে বামপন্থীদের সঙ্গে থাকুন। কেন্দ্র থেকে বিজেপি বিদায় হলে মুহূর্তের মধ্যেই তৃণমূল বিদায় নেবে। সরকার পড়ে যাবে। দল উঠে যাবে। মিলিয়ে নেবেন।
তাই আপনি যদি সত্যিই তৃণমূল কংগ্রেস -কে আগে হারিয়ে তারপর বিজেপি – কে হারিয়ে বামেদের ফিরিয়ে আনতে চান। তাহলে এই নির্বাচনেই বিজেপি – তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিন। আপনার দুই ইচ্ছেই পূরণ হবে, হবেই।