March 24, 2020
জেলাতে ছড়াচ্ছে এবার। এখনও অনেকেই ভাবছেন এই লড়াইটা বোধহয় একদিন ১২ ঘন্টা বাড়িতে থেকে বিকেলে কাঁসর ঘণ্টা বাজালেই শেষ বা ২/৪ দিনের ?না এটা এমনকি ২/৩ সপ্তাহের ব্যাপারও নয়।
ইতালিতে ২য় সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫২, সেটা ৫ম সপ্তাহে পৌঁছেছিল ২১১৫৭। এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে – মৃত্যু মিছিল চলছে। মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও পরিকাঠামোয় ইতালির স্থান পৃথিবীর প্রথম সারির ৫ টি দেশের মধ্যে। কিন্তু ওরা একটাই ভুল করছিল – সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে নি। ইরানে ৩য় সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪৫, আর সেটাই ৫ম সপ্তাহে পৌঁচেছিল ১২৭৩৭। আমরা সবে ৩য় সপ্তাহে এখন। আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের মতো ঘনবসতির রাজ্যে একবার ছড়াতে শুরু করলে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে।
*কেন বেরোচ্ছেন? নিজেকে, নিজের পরিবারকে, নিজের প্রতিবেশীকে কেন বিপদে ঠেলছেন?সাবধান হোন। আগুন জ্বালাবেন না। *
একটি জেলায় নাকি ভিন রাজ্য থেকে কেউ একজন করোনা সংক্রমণের সব লক্ষ্মণ নিয়ে গ্রামে ফিরে ধূমধাম করে পূজো করে শতধিক মানুষকে প্রসাদ খাইয়েছেন রোগমুক্তির জন্য। যারা খেলেন – তাঁদের কি হবে জানি না, তবে এই কুসংস্কারমূলক কাজ চলতে থাকলে এই রাজ্য-এই দেশ বাঁচানো কঠিন।
মন্দির মসজিদ গীর্জা গুরুদ্বার যাওয়ার জন্য আপনার জীবন পড়ে আছে। কিন্তু তার জন্য বেঁচে তো থাকতে হবে। এখন সংক্রমণ ছড়াবে একসাথে হলেই। আমাদের দেশে সেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই চীন বা ইউরোপের দেশগুলোর মতো। তাহলে ওদের এই অবস্থা হলে আমাদের কি হবে, ভাবতে পারছেন?
নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখুন। আগুনে ঝাঁপ দেবেন না।
সঙ্গত প্রশ্ন – মানুষ রোজগার না করলে খাবে কি, বিশেষত যারা দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে চলেন। ছোট ব্যবসায়ী থেকে পরিবহন-নির্মান-বিড়ি-দর্জিসহ নানা পেশার অসংগঠিত শ্রমিকদের কি হবে? এদের দায়িত্ব সরকারকে নিতেই হবে। এই লকডাউন ৪/৫ দিনে শেষ তো হবেই না, বরং কতদিন এই বিচ্ছিন্নতা ধরে রাখতে হবে বলা মুস্কিল। চীনে মধ্য জানুয়ারী থেকে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে। তাই অবিলম্বে আর্থিক প্যাকেজ তৈরী না হলে এই খেটে খাওয়া দৈনিক মানুষের রাস্তায় নামা আটকানো যাবেই না। আর যদিও বা পুলিশ মিলিটারি দিয়ে আটকে রাখা হয়, তাহলে না খেতে পাওয়া মানুষের লাশের পাহাড় তৈরী হবে। এখনই বিশেষ তহবিল গঠন করুন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী। দেশে ১৩৮ জন বিলিওনিয়ার সহ অতিধনীদের উপর সেস চাপাক। দয়া করে দ্রব্যের উপর কর চাপিয়ে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা মারবেন না।
এদিকে লকডাউনের ২দিনের মাথায় ওষুধের আকাল লেগে গেছে। বড় অংশের ডিস্ট্রিবিউটার/ডিলার-রা ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে, লোক নেই এই অজুহাতে। সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর এখনই ব্যবস্থা না নিলে, জীবনদায়ী ওষুধের আকাল ২/৩ দিনের মধ্যেই দেখা দেবে। একই পরিস্থিতি দেখা দেবে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রেও। যে স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তাদের প্রয়োজনীয় মাস্ক ও অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধক পোশাকের আকাল চলছে। সাধারণ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এরা কাজ করতে পারছেন না এইসব জিনিসের অভাবে। একইভাবে কেবলমাত্র কলকাতাকেন্দ্রিক পরীক্ষাগার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে দূরবর্তী জেলাগুলোর মানুষের কি হবে! সেখানেও অন্তত জেলা ভিত্তিক একটা হাসপাতালে করোনা রোগ নির্ণকেন্দ্র তৈরী করা হোক দ্রুত।
যুদ্ধটা সমগ্র মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবেই লড়তে হবে। বিজ্ঞানকে ভরসা করার কোনো বিকল্প নেই।
কিন্তু সরকার একা সব পারবে না। আপনি – আমি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাড়িতে থাকুন, হ্যাঁ যত বেশী বিচ্ছিন্নভাবে আমরা থাকতে পারবো, তত ঐক্যবদ্ধভাবেই এই লড়াইটা লড়তে পারবো।