এক কোটি প্রকল্প কর্মী এই ধর্মঘটে সামিল হয়েছে। দেশ বাঁচাও দেশের মানুষকে বাঁচাও এই আহ্বান নিয়ে ভারতের এক কোটি প্রকল্প কর্মীরা ২৮-২৯ মার্চ ২০২২ ধর্মঘটে সামিল হয়েছে। সমস্ত প্রকল্প কর্মীদের কাজের নিরাপত্তা নিয়ে গত একশো দিনের উপর একটার পর একটা সব রাজ্য গুলিতে আন্দোলন চলছে। অবস্থান, অনশন, বিক্ষোভ যাতে প্রকল্পগুলিকে বেসরকারিকরণ করার বিরুদ্ধে এই কর্মসূচি চলছে তার সাথে কেন্দ্রের চোদ্দ দফা দাবীকে সামনে রেখে হচ্ছে। পাঞ্জাব হরিয়ানা অন্ধ্রপ্রদেশ কর্ণাটক তেলেঙ্গানা পশ্চিমবঙ্গ মহারাষ্ট্র রাজস্থান হিমাচল প্রদেশ আসাম।এই সব রাজ্যেই অঙ্গনওয়াড়ীরা, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে সাথে ধর্মঘটের সমর্থনে। এই ধর্মঘটে সর্বস্তরের মানুষও আছে।যেভাবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ দিন আনে দিন খায় তাদের ওপর দুই সরকারই কি কেন্দ্র কি রাজ্য উভয় সরকার থেকেই শুধুই নিষ্পেষিত হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার লকডাউন পিরিয়ড থেকে আইসিডিএস এবং মিড ডে মিলের খাবার প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতি মাসে দু কিলো চাল, দু কিলো আলু তিনশো গ্রাম ডাল এই দিয়েছে। তাও এই খাবারও চার মাস যাবত বন্ধ ছিলো। যখন স্কুলগুলো খুলে গেলো এবং খাবার দেওয়া শুরু হল তখন আইসিডিএস কেন্দ্রগুলি খোলার কথা বললো এবং খাবার শুরু হলো কিন্তু খাবারের জন্য যা বরাদ্দ করা দরকার তার থেকে অনেক কম দিচ্ছে, তাতে মা ও শিশুদের খুবই অপুষ্টি হচ্ছে। বাজার কেরোসিন তেল রেশনে ৬৩ টাকা করে কর্মীরা পাচ্ছে ১৮টাকা।স্বাভাবিক ভাবেই কর্মীদের সব কিছুতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই সব কিছু নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। পোষণ ……. নিয়ে রাজ্য সরকার স্মার্ট ফোন না দিয়েই করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই। ধর্মঘটের মধ্যে দিয়ে যদি কেন্দ্র রাজ্য না বদলায় তাহলে আগামী দিনে প্রকল্প কর্মীরা লাগাতার আন্দোলনের যাবে এই হুঁশিয়ারী দিয়ে জানাচ্ছে।
প্রকল্প কর্মীরা ছাড়া এই ধর্মঘট কে সমর্থন করছে কৃষক সভা, ক্ষেতমজুর, ব্যাংক-বীমা রেল, প্রতিরক্ষা এবং তার সাথে ছাত্র, যুব, মহিলা খেটে খাওয়া গরিব মানুষ ও রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সমিতি ১২ই জুলাই কমিটি।
আজ এই প্রকল্প কর্মীদের দ্বারা সারা ভারতবর্ষের কোটি কোটি মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি সহ শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এবং প্রতিটি শিশুকে এক বছর বয়সের মধ্যে প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়। প্রকল্প কর্মীরা এই কাজের মাধ্যমেই মা ও শিশুরা সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পায়।
কেন্দ্র-রাজ্য সরকার বারংবার চেষ্টা করছে এই প্রকল্পগুলিকে তুলে দেওয়ার। কখনো মিশন মোডের নামে, কখনো নয়া শিক্ষানীতির নামে, আবার কখনো বলা হচ্ছে এদের (প্রকল্প কর্মী) দ্বারা কোন প্রোডাকশন হয় না। এসবের মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও তার সাথে আমাদের রাজ্য সরকার নিজেদের আসল চেহারা প্রকাশ করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে প্রকল্প কর্মীরা যেমন নিজেদের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে রয়েছে, একই সাথে শিশু এবং জনসাধারণের অধিকারগুলি সুনিশ্চিত করতেও লড়াই করছে।
সরকার এখনো কিছু করতে পারে নি। বিগত ১৩ বছরে পশ্চিমবঙ্গে কোন কর্মী, সহায়িকা নিয়োগ হয়নি। হাজার হাজার কর্মী সহায়িকা কে ৬৫ বছর বয়সে অবসর দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে একটি মেয়েকে (প্রকল্প কর্মী) দুই থেকে তিনটি কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এতে সেই কর্মীর উপরে ভয়ানক কাজের চাপ পড়ছে অথচ দৈনিক কাজের জন্য দেওয়া হচ্ছে সর্বসাকুল্যে ৫০ টাকা। বারবার বলা সত্ত্বেও কোনো নিয়োগ হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত ৪৪ টি শ্রম আইন কে শ্রম কোড এ পরিনত করেছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কিছুই না করলেও দেশের সম্পদ বিক্রি করে দিতে তৎপর, দেশের মানুষ এর বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন। আমাদের দেশের কৃষকরা পথ দেখিয়েছেন কিভাবে দাবি আদায় করে নিতে হয়। একটার পর একটা ঘটনায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন, আসছেন। সেই সংগ্রামের পথেই আমরা, প্রকল্প কর্মীরাও আছি।