পশ্চিমের দেশে গ্রীষ্মের মরসুমে বেড়ানোর ধূম কোভিড সংক্রমনের জন্য এবার কম । বন্ধ হয়নি ।ইউরোপ ভ্রমনের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন 15টি দেশকে অনুমতি দিয়েছে । তার মধ্যে আমেরিকার নাম নেই ।কারন করোনাভাইরাসে সংক্রমন ও মৃত্যু আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি । তাজ্জ্বব কান্ড, আমেরিকাকে নিষেধ ? এরকম দেখা যায় না ।
আমেরিকার প্রধান দল দুটোর নেতারা তারস্বরে চিরকাল চিৎকার করে আসছিল বিদেশিরাই সংক্রামক রোগ আমেরিকায় ঢোকায় । আমেরিকার মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপদ রাখতে পরিযায়ীদের প্রবেশের ওপর হাজার নিষেধাজ্ঞা ।
এখন উল্টো চিত্র— সংক্রমন ছড়ানোর ভয়ে আমেরিকানদের অন্য দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ।
31 জানুয়ারি চীন থেকে আমেরিকান ছাড়া অন্য কোন দেশের নাগরিক আমেরিকায় ঢুকতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ট্রাম্প প্রশাসন । ট্রাম্প বারবার আমেরিকানদের শুনিয়েছেন যে এতে সংক্রমন বর্ডারে আটকে যাবে এবং লক্ষ লক্ষ আমেরিকানদের জীবন বাঁচবে । ভাইরাস ঢুকবে না, নিশ্চিত আমেরিকানরা, মাস্কও পড়ার দরকার নেই ।
ফেব্রুয়ারি ও মার্চ জুড়ে ট্রাম্প প্রচার বাড়িয়ে তোলেন যে সংক্রমন আটকাতে মেক্সিকোর সঙ্গে সীমানায় উঁচু দেয়াল তুলে দেওয়া হবে এবং যারা সংক্রমন নিয়ে আসে তাদের এভাবে আটকে দেওয়া হবে ।
আমেরিকায় যখনই রোগ ব্যাধি সংক্রমন ছড়ায় তখন চিরকাল রাষ্ট্র নেতারা পিঠ বাঁচাতে বিদেশের ওপর দোষ চাপায় , এটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে ।
1793 সালে yellow fever দেখা দেয়, জার্মানদের ওপর দোষ চাপিয়ে এর নাম দেওয়া হয় জার্মান ফিভার । জার্মানদের একটা স্থানে কোয়ারান্টিনে রাখা হয় ।
যক্ষার নাম দেওয়া হয়েছিল – ইহুদি রোগ । ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে বসন্ত, কুষ্ঠ, প্লেগ ছড়ানোর জন্য দায়ী করা হয় চীনাদের । 1926 সালে পোলিও সংক্রমনের উৎস বলা হয় ইতালিকে । মেক্সিকানদের দায়ী করা হতো কলেরা, টাইফাস ও নানা রোগ বহনের জন্য । তখন অন্যের ওপর দোষ পাচার করতে কিছু আলগা উক্তি প্রচার হতো ।
1918-19 সালে দুনিয়ার প্লেগের জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানকারী স্পেনের ওপর দোষ চাপিয়ে ব্রিটেন আমেরিকা ও সহযোগীরা এই রোগের নাম দেয় স্প্যানিশ ফ্লু । শুধু তখন নয়, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, 1928-32 মহামন্দার সময় বিদেশিদের ওপর আমেরিকায় প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপিত হয়, সবসময় রোগ ছাড়াও একটা না একটা নানা অজুহাতে থাকে ।
আমেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পের মতো আর কোন আমেরিকান পরিযায়ীদের বিরুদ্ধে এরকম ঘৃনা ও বিদ্বেষ ছড়ায়নি ।
রোগের সঙ্গে এখন জোরালোভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে উগ্র বর্নবিদ্বেষ ও জাতি বিদ্বেষকে , এই বিদ্বেষভাষায় করোনাভাইরাসের নাম স্বয়ং ট্রাম্প দিয়েছেন চীনা ভাইরাস । একই সুরে কথা বলতে শুরু করে দেয় ট্রাম্পভক্ত ভারতীয় শাসকদলের লোকজনও । সেনেটর টম কটন চীনের উহানের পরীক্ষাগারে এই ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে বলে প্রচার জুড়ে দেয় ।
যেমন ইরাকে গনবিধ্বংসী অস্ত্র মজুত আছে ধুয়ো তুলে বুশ প্রশাসন গোটা ইরাককে ধ্বংস করে দেয়, একইভাবে উহানে ভাইরাস তৈরির গল্প বানিয়ে দুদিন ধরে বাজারে ছাড়া হয়েছে । ফলাও করে বাংলা পত্রিকাতেও ছাপা হয় । ইউরোপে ভ্রমণে
আমেরিকানদের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংবাদে স্থান পায়নি ।
এমনও বলা হয়, পরিযায়ীদের ওপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা আমেরিকানদের কর্মসংস্থান বাড়াতে, অথচ শিল্পমহল দক্ষ কাজের লোক না পেয়ে ক্ষুব্ধ । বিপদ বেড়েই চলেছে, তার একটা কারণ কোভিড সংক্রমন থেকে রেহাই পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর ট্রাম্পের ঘোষিত তাচ্ছিল্যের জন্য । সংক্রমনে দৈনিক বিশ্বরেকর্ড এখনো করে চলেছে আমেরিকা ।
সব দেশের কাছে ট্রাম্প আমেরিকাদের ওপর ছাপ দিয়ে এ দেশকে বানিয়েছেন ভয়ংকর রোগ ও ভাইরাস বাহক বিদেশি হিসেবে । 100 বছর আমেরিকা যা করেছে, এখন উল্টোটা বর্তেছে আমেরিকার ওপর । ইতিহাসের কী পরিহাস সহ্য করতে হচ্ছে !
আমেরিকানরা তাই নিষিদ্ধ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলিতে ।
Mridul Dey
ট্রাম্পের অবদান- আমেরিকানরা নিষিদ্ধ ইউরোপে – মৃদুল দে..
Spread the word