Trees cut down in the streets of Sonjhuri

March 19, 2020

“গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
আমার মন ভুলায় রে।”

রবি ঠাকুর তার প্রিয় শান্তিনিকেতন কে ভালোবেসেই একসময় এই গান লেখেন।

বোলপুর স্টেশনে নামা মাত্রই কুঁজো অথবা জালা নিয়ে অপেক্ষায় মহিলারা। ঠান্ডা বাতাসা ভেজানো জল। শান্তিনিকেতন। শুধু রবি ঠাকুরের বিশ্বভারতী নয় আছে কোপাই, খোয়াই। জল খেয়ে উঠলেন রিক্সায়। রিকশাচালকের গল্প শুনতে শুনতে, বিশ্বভারতী ছাড়িয়ে চলেছেন লাল মাটির পথ ধরে, খোয়াই। বাউলের গান আর বাঁশি থেকে বিভিন্ন চামড়ার জন্ত্রের সুর ভেসে চলে আকাশে। লাল মাটির ছায়া ঘেরা রাস্তা, দু’পাশে অগুনতি গাছ-পাখিরা আপনাকে আপ্যায়ন করছে হাওয়ায়, সুরে। খোয়াই নামলেন। ভূগর্ভের জলে ভেসে চলেছে খোয়াই নদী। হাজারে হাজারে সোনাঝুরি গাছের ছায়ায়, বাউলদের দেহতত্ত্বের গানে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন বারবার।


এমন শান্তিনিকেতনের সন্ধানেই মানুষ বারংবার, আসেন বোলপুরে। তবে স্থানীয়রা বলছেন টুরিস্ট ক্রমশ কমছে। লাল মাটি প্রায় উধাও, পিচ রাস্তায গলগল করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। গাছ বড্ড কম। শান্তিনিকেতন এখন কোলকাতার মিনি সংস্করণ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় যে ক্রমশ অচলায়তন হয়ে উঠছে, তা পাঁচিলের বহর দেখেই বোঝা যায়। মানুষ তাই শান্তি খুঁজতে শান্তিনিকেতন ছেড়ে প্রান্তিকের দিকেই যাওয়া পছন্দ করেন। কিন্তু, সে পথেও যে বেজায় খরা। সোনাঝুরির রাস্তা ধরে ৩০০ – ৭০০ টি গাছ খুন হয়েছে বলে অভিযোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে, বোলপুর অঞ্চলে বৃষ্টি আগের মতন হয় না। ফলত কৃষিকাজে জলের জোগান বাড়াতেই নাকি এই পরিকল্পনা। ক্যানেলের জলের অনেকাংশই মাটি শুষে নেয়, এতে গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেলে উন্নতি ঘটলেও, গ্রামে গ্রামে জলের জোগান কমছে। তাই ক্যানেলের জল বন্ধ করে, গোটা ক্যানেলটি শান বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গাছের মূল ভবিষ্যতে যাতে ক্যানেলের দেওয়াল ভাঙতে না পারে, তাই অজস্র গাছ কেটে নামানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। ভীষণই দৃষ্টিকটু অবস্থায় এই মুহূর্তের সোনাঝুরির পথ। সূত্রের খবরে, এই এলাকা দৃষ্টিনন্দন করতে আগামী দিনে রাস্তার ধারে বানানো হবে পার্ক হবে।


“প্রকৃতির পরিকল্পনাকে মন থেকে মুছে ফেলে পরিকল্পিত পার্ক দেখতে পর্যটকরা কি আদৌ আর বোলপুর আসবেন?” দুশ্চিন্তায় প্রত্যেকটি বোলপুরবাসী।

Spread the word

Leave a Reply