Sukhranjan Dey Brigade 2025 Cover

The Rally, The Struggle

সুখরঞ্জন দে

১) ওয়েবডেস্ক- এই প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি ব্রিগেড এর জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে। বস্তি উন্নয়ন সমিতি সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে গড়ে ওঠার যে ইতিহাস, সেটা যদি একটু সংক্ষেপে বলেন।

সুখরঞ্জন দে

এটা ঠিক যে, বস্তিবাসীদের সংগঠন হিসেবে এই প্রথম ব্রিগেডের এত বড় সমাবেশে তারা নিজস্ব সংগঠনের নামে অংশগ্রহণ করবে। অতীতেও যখন নগর উন্নয়নের পরিকল্পনায় এখানে স্লাম ক্লিয়ারেন্স বিল হয়, তখন উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন হিসেবে বস্তি ফেডারেশন গড়ে ওঠে। তখন সমাবেশ হয়েছিল রানী রাসমণি রোডে। সেখানে কয়েক হাজার বস্তিবাসী মানুষ সমবেত হয়েছিল এবং আন্দোলনের চাপে সেই উচ্ছেদ বিরোধী আইন পরিবর্তন হয়েছিল। এবং তখন স্লোগান ওঠে, ‘বিকল্প বাসস্থান ছাড়া উচ্ছেদ নয়’। এই স্লোগানটাই হলো পরবর্তী সময়ে যা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা হলো অধিকার হিসেবে। পরবর্তী সময়ে ৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার আসবার পর নগর উন্নয়নের পরিকল্পনায় বামফ্রন্ট নীতি গ্রহণ করে, যে গরিব মানুষকে শহরে রেখে নগর উন্নয়নের পরিকল্পনার দৃষ্টিভঙ্গি। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কলকাতা এবং হাওড়াতে ঠিকা প্রজা আইন চালু হয়। এবং এই ঠিকা প্রজা আইন চালু হলেও এর উপরে জমিদারদের মামলা হয় এবং আমলাতান্ত্রিক নানা বাধা, প্রতিবন্ধকতা এবং সবথেকে বড় হলো এই ঠিকা প্রজা আইনের সুফল যাতে সাধারণ গরিব মানুষ পান, তখন নতুন করে গড়ে ওঠে বস্তি ফেডারেশনের নব পর্যায়, কলকাতা বস্তি ফেডারেশন। এবং সেটা আশির দশকের শেষ দিকে। আর আজকের যে বস্তি উন্নয়ন সমিতি, যেটা আজকে নতুন করে, এটাও মানুষের প্রয়োজনে আমাদের রাজ্যে সরকারের পালাবদলের পর যে ভাবে বস্তি উচ্ছেদ, অগ্নি সংযোগ এবং গরিব মানুষের উপর যে আতঙ্ক তৈরি হলো, তখন আবার নতুন করে, নতুনভাবে অধিকার, তাদের যে অধিকারগুলো তারা অর্জন করেছিল, এবং তা হলো বিশেষ ভাবে সেগুলো আক্রান্ত হচ্ছে যখন, তখন একটা সংগঠিত ভাবে উদ্যোগ শুরু হয়। গোটা রাজ্যজুড়ে এই অর্গানাইজেশন। যদিও জেলায় জেলায় ছিল, এই অর্গানাইজেশন সবটা একসাথে হয়ে পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি গড়ে ওঠে ২০১২ সালে। এবং তার মুখ্য দাবি বাসস্থান, সম্প্রীতি এবং উন্নয়ন। এই তিনটা মুখ্য দাবি নিয়ে বস্তিবাসীদের সংগঠন হিসেবে রাজ্যে আত্মপ্রকাশ করে এবং লড়াই আন্দোলন শুরু হয়।

২) ওয়েবডেস্ক- বিভাজনের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ বস্তি অঞ্চলের মানুষকে কতটা বিপদে ফেলছে?

সুখরঞ্জন দে

সম্প্রীতি যদি বলেন, বস্তিবাসীদের এটা সহজাত চরিত্র। বস্তিবাসী মানুষ মূলত শ্রমজীবী। শ্রমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ভিন্ন ভাষার, ভিন্ন ধর্মের মানুষ একসাথে থাকতেন এবং তারা তাদের জীবন জীবিকা, তাদের বাসস্থান, এই নিয়ে তারা সমস্ত কিছুই ছিল। এটা সম্প্রীতির পরিবেশ বস্তিতে, এটা আমাদের রাজ্যের ঐতিহ্য ছিল। আজকে এটা আক্রান্ত। আক্রান্ত হচ্ছে হলো বিশেষ করে শুধু এই বস্তিতে বিভাজন, সাম্প্রদায়িকতা, এটা শুধু না। আজকে শাসকদল এই বস্তিকে, বস্তির মানুষের মধ্যে এই ঐক্য ভাঙ্গবার জন্য তারা বস্তির যে পিছিয়ে পড়া মানসিকতা…

একটা অংশ থাকে, এবং এই দারিদ্র্যের সুযোগ, বেকারির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা বিভিন্ন অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত করা, বা বস্তিতে নেশার জিনিস বিক্রি করবার ব্যবস্থা করা, নেশাগ্রস্থ করা, করে অপরাধী বানানোর একটা দিক আছে, বিশেষ করে এটা রাজ্যের শাসক দল করছে। দুই হলো, সাম্প্রদায়িক শক্তি আরএসএস বিভিন্ন ধর্মের নামে- কারণ গরিব মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, ধর্মবিশ্বাসী মানুষ, বস্তিতে তারা নিজস্ব ধর্ম প্রতিপালন অনেক যুগ যুগ ধরে করছে। শীতলা পুজো বস্তির একটা বিষয়, শিব পুজো তারা নিজ নিজ করছে এবং সকলেই হলো তাদের পার্টিসিপেট করছে। কিন্তু আজকে এখানে নতুন করে যে ভাবে হচ্ছে, শিব চর্চার নামে হচ্ছে, ওখানেতে তাদের বিভাজনের, হিন্দুত্বের নামে তো একটা তাদের আখড়া বানাবার চেষ্টা করছে, যা হলো খুব বিপদজনক দিক, এবং বস্তি আন্দোলন, বিশেষ করে গরিব মানুষের মধ্যে যে অনৈক্য তৈরি করার একটা রাজনীতি বা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা হলো সামাজিক ভাবে, শুধু বস্তি না, সামগ্রিকভাবে হলো এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, শহরের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে এবং মানুষের যে স্বাভাবিক যে কাজকর্ম, একটা অসুস্থ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা গরিব মানুষের জন্য হলো বিপদ।

৩) ওয়েবডেস্ক- আপনি বলবার সময় বললেন যে, আমাদের যে পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি, তার যে মূল তিনটি দাবি – বাসস্থান, সম্প্রীতি, উন্নয়ন। এই তিনটি মূল দাবি বস্তিবাসীর মানুষের কাছে আমরা কতটা নিয়ে যেতে পেরেছি, বা তাদের দাবিগুলো কতটা মানুষের কাছে পৌঁছেছে?

সুখরঞ্জন দে-

আমাদের আজকের পরিস্থিতিতে যদি বলেন, যে নতুন ভাবে – কারণ এ রাজ্যের যে সরকার, তার যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং কেন্দ্রের যে সরকার, তাদেরও যে দৃষ্টিভঙ্গি, এটা হলো বড়লোকদের, বিত্তবানদের স্বার্থ রক্ষা করে। এবং এই শ্রমজীবী বস্তিতে যারা থাকেন, শ্রমজীবী মানুষ বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত, এবং এই ক্ষেত্রগুলো হলো তাদের আক্রান্ত হচ্ছে। গরিব মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যে অধিকার, এটা হলো সংবিধান দিয়েছে। বেঁচে থাকার অধিকার সংবিধান আমাদেরকে দিয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য চাই পুষ্টি, এবং পুষ্টির জন্য তার যোগানের জন্য কাজ করতে হবে। কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। তিন হলো উন্নত জীবন যাপনের জন্য হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাকি যে বিষয় আর পরিবার, ভবিষ্যতের জন্য যে তার থাকার যে জায়গা- বাসস্থান। আজকে সবটাই আক্রান্ত। যে কারণে আমাদের যে স্লোগান – বাসস্থান, সম্প্রীতি এবং উন্নয়ন – আজকের যুগে, এই আজকের এই সময়ে সময়োপযোগী হলো আমাদের এই দাবি, কারণ বাসস্থান আজকে নিরাপদ নয়। কারণ অতীতে বামপন্থীরা যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা ছিল। এরা দুটো সরকারই উন্নয়নের কথা বলছেন। কিন্তু গরিব মানুষকে শহরের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে তারা উন্নয়ন করছে। গরিব মানুষকে রেখে নগর উন্নয়নের পরিকল্পনার যে দৃষ্টিভঙ্গি, আজকে সেটা থাকছে না, তাই বস্তি উচ্ছেদ হচ্ছে, এবং বস্তিকে রেখে নগর উন্নয়নের পরিকল্পনায় যে ঠিকা প্রজা আইন, অর্থাৎ যা মানুষকে নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছিল। ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ হবে না – যা আইনত সিদ্ধ ছিল। আজকে ঠিকা প্রজা আইন, পূর্বতন ঠিকা প্রজা আইনকে সংশোধন করে ২০১৯ সালে সংশোধন করা হয়েছে, প্রোমোটারদেরকে যুক্ত করার জন্য এবং তার যে স্ট্যাটাস। আগে ঠিকা টেনেন্ট, ঠিকা টেনেন্টদের ভাড়াটে ছিল, আজকে হলো লাইসেন্সি এবং  অ্যাসাইনি করার মধ্য দিয়ে হলো থার্ড পার্টি প্রমোটারকে যুক্ত করা। প্রমোটার বস্তিতে যুক্ত করার মানে হচ্ছে ওই বস্তির মধ্যে নতুন আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা, যা ধীরে ধীরে ওই গরিব মানুষগুলোকে উচ্ছেদ করবে—এবং এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটা হলো বাসস্থানের ক্ষেত্রে। উন্নয়নের প্রশ্ন। তো, এই উন্নয়ন মানে, আজকে যে উন্নয়নের কথা বলছে, আমাদের মুখ্য দাবি, উন্নয়ন মানে মানবিক উন্নয়ন। মানবিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে, আজকে বস্তিবাসীদের সামগ্রিক যে পরিবেশ, পানীয় জল, নিকাশী ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পুকুর ছিল, যে পুকুর ব্যবহার হতো, সে পুকুর আজকে বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা গাছপালা ছিল, তা থাকছে না, কেটে দেওয়া হচ্ছে। এবং সবটাই হলো প্রমোটারের লোককে সুবিধা করবার জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যে স্কুল ছিল, যে স্কুলগুলোতে পড়তে যেত বাচ্চারা —প্রাইমারি স্কুল, হয় কর্পোরেশন এর বা জিএসএফপি স্কুল কিংবা স্বাস্থ্যক্ষেত্র এবং শহরের মধ্যে যে হেলথ ক্লিনিকগুলো ছিল,যেগুলো মিউনিসিপ্যালিটিগুলো পরিচালনা করত। আজকে সেই সুযোগগুলোও সংকুচিত হচ্ছে। স্কুলে পড়ার সুযোগ কমছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসার সুযোগ কমছে। চিকিৎসার যে ব্যবস্থা, বস্তিবাসী যা এতদিন ধরে ভোগ করে আসছিল, তার সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে। এবং গোটা বিষয়টাকেই একটা বেসরকারি দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, এবং যে কারণে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মধ্য দিয়ে আসলে স্বাস্থ্যটাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সবার জন্য স্বাস্থ্য যে সুযোগ ছিল, এটা কিন্তু সংকুচিত হচ্ছে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। মানবিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই বাধাগুলো হচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো সম্প্রীতির প্রশ্ন; সম্প্রীতির প্রশ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তির ক্ষেত্রে। কারণ, সম্প্রীতিটাই হলো বস্তির শক্তি। একসাথে থাকতে ভালোবাসে, একসাথে সবকিছু করছে, এবং সম্পর্কটা হলো ধর্মের না, ধর্মের সম্পর্কটা প্রাদেশিকতারও না, বর্ণের ও না। সম্পর্কটা ছিল হলো শ্রমের। এই শ্রমের সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে সম্পর্ক, একসাথে বড় হওয়া, একসাথে স্কুলে পড়া, খেলাধুলা, লড়াই করা, ভালো-মন্দ একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়া – এই জায়গাটাকে ভাঙ্গবার চেষ্টা করছে আজকের রাজ্যের শাসকদল এবং কেন্দ্রের সরকার। কেউ ধর্মের আখরা করতে চাইছে, ধর্মের প্রচারের মধ্য দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করতে চাইছে, যা হলো প্রতিক্রিয়ার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। যা বস্তি আন্দোলনের যে চাহিদা এবং তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সামগ্রিকভাবে গোটা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা খর্ব করছে, একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে, সামগ্রিক হলো আরবান এরিয়ার মধ্যে। বস্তি এবং লাগোয়া যে শহর অঞ্চলে, তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করবার জন্য, এবং এই কাজে তারা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করছে। এটা হলো তাই বিপদ। এই তিনটি দাবিই  আজ আক্রান্ত, এই দাবিতেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করবার চেষ্টা করছি। এবং আমরা আমাদের যে আসল লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্যে আমরা গরীব মানুষকে, শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করছি। আমরা আশাবাদী, এ কাজে আমরা সফল হব। বিভ্রান্তি কাটিয়ে আমরা সব মানুষকে জড়ো করতে পারব। তার যে অধিকার পেয়েছিল, যা আজকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তা তারা ভুগছেন, বুঝছেন। কিন্তু সাথে এখনই শামিল হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ভীতি, কিছু হারাবার ভয়, সুযোগ সুবিধা এটা পাইয়ে দিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করার যে চেষ্টা, এটা থেকে আস্তে আস্তে আমরা মুক্ত করতে পারব। আসল যে বিষয়, যে আমরা যা দিচ্ছি, তার তুলনায় সরকারের যে দায়িত্ব, সেটা পালন করছে না। মানুষ এটা বুঝতে পারছেন যে আমরা জিএসটির মধ্য দিয়ে যে ট্যাক্স দিচ্ছি এবং যেগুলো আমরা এতদিন যে সুযোগগুলো পেতাম রেশনের ক্ষেত্রে। রেশনের ক্ষেত্রে হলো, সব গরীব মানুষ এখনো রেশন কার্ড পায়নি। সব গরীব মানুষ স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পায়নি। সব গরীব মানুষ ওই লক্ষী ভান্ডার ওটা পায়না। এক্ষেত্রেও স্বজনপোষণ হচ্ছে। সব গরীব মানুষ তারা আবাসনের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কারণ তাদের জমির পাট্টা নেই বলে, জমির অধিকার সত্ত্ব নেই বলে। সে কারণে সরকারি সুযোগ সুবিধা নির্বাচনের সময় তারা বলেন অনেক প্রকল্পের কথা বলেন, কিন্তু তার বড় অংশই হলো তারা বঞ্চিত হন এবং সেখানে স্বজনপোষণ হয়। এবং তাদের উপর আক্রমণটা শাসক দলের শুধু বসবাস স্থান অঞ্চল পরিবেশ না, তার জীবিকার উপরেও হচ্ছে। হকারি করছেন, হকার উচ্ছেদ হচ্ছে। অটোচালক, টোটো চালক, কোথাও সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করছেন, কোথাও নির্মাণ শ্রমিক এবং যে কাজে সেখানে হলো কাজ হারাবার ভয়টাও একটা বিষয়। আরেকটা বিষয় হলো ন্যায্য মজুরিও তারা পাচ্ছেন না, এবং বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধি ঘটার কারণে তাদের আয়ের সাথে একটা সামঞ্জস্য বজায় থাকছে না বলে খুব তারা সংকটে পড়ছেন। এবং তাই এরা তাদের অভিজ্ঞতার নিরিখে আজকে তারা মুখ খুলছেন এবং আমাদের আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন।

৪) ওয়েবডেস্ক- রেল বা জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য বস্তি উচ্ছেদ হতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের পরবর্তী বাসস্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার বা মালিক পক্ষ উদাসীন হয়ে থাকেন। এই বিষয়ে আপনারা কি পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছেন?

সুখরঞ্জন দে-

আমরা সাধারণভাবে আমাদের রাজ্যে বস্তিবাসীদের যে অবস্থান, তা হলো স্বীকৃত (নোটিফাইড) এবং অস্বীকৃত (ডিনোটিফাইড)। এটি হলো প্রশাসনের চিহ্নিতকরণ। যারা স্বীকৃত, তাদের জন্য পুর পরিষেবা থেকে শুরু করে সব সুযোগ-সুবিধাগুলো তারা কিছুটা হলেও পান। কিন্তু যারা ডিনোটিফাইড, বিশেষ করে রেলের ধারে, খালের ধারে, বাঁধের ধারে, ন্যাশনাল হাইওয়ের ধারে, অর্থাৎ সবটাই উদ্বৃত্ত জমি – তারা যা নিয়েছিলেন তাদের ওই কাজ করবার জন্য, যেখানে তারা আনইউজল্যান্ড আছে, সেখানেতে শ্রমজীবী মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। পোর্ট ট্রাস্টের জমি, রাজ্য সরকারের ইরিগেশনের জমি, সিআইটি কলকাতা শহরে, এইচআইটি হাওড়ার ক্ষেত্রে, এদের জমিতে আছেন। এবং এই জমিতে যারা বসবাস করছেন, তাদের সংখ্যা হলো শহরে বসবাসকারী বস্তিবাসীদের প্রায় ৪৫ শতাংশ। এবং এই ৪৫ শতাংশ মানুষ আজকে আক্রান্ত হচ্ছেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যে নীতি, তারা যে উন্নয়নের কথা বলছেন এবং বস্তিবাসীদের উপর সরাসরি তারা আক্রমণ নামিয়ে আনছেন।

প্রথম কথা হলো রেল। রেল তার রেলপথের জন্য খড়গপুর শহরে যে জমি তারা নিয়েছে, যেটাকে রেল শহর বলা হয়। এবং আজকের যা বাস্তবিক অবস্থা, যে রেল নতুন করে আর উন্নয়নের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি তাদের নেই। ওই যে রেল শহরের উদ্বৃত্ত জমি, যা খড়গপুর মিউনিসিপ্যালিটির প্রায় ৬০-৭০% ওয়ার্ড, তাদের ওখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ—তেলেগু, তামিল, উড়িয়াবাসী, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের লোকজন এবং বাঙালীও আছে, কিছু হিন্দি ভাষীও আছে। এরকম শিলিগুড়ি শহরে আছে, এরকম হলো পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল জুড়ে আছে এবং গোটা রাজ্য জুড়েই হলো রেলের জমিতে এরকম আনইউজল্যান্ড আছে, যেখানে বস্তি গড়ে উঠেছে। এবং রেল আজকে সেই বস্তি উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করছে। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। আমরা মনে করি যে রেল তার প্রয়োজনে  ওই জমিকে ব্যবহার করবে। কিন্তু যে মানুষগুলো আছে, সেই মানুষগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং এটাকে সুনিশ্চিত করতে হবে। তার যে প্রকল্পের, যে প্রকল্পের প্যাকেজের মধ্যে এই উচ্ছেদের এই বিষয়টিকেও যুক্ত করে, যাতে সে তার নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হয়, রুজি রোজগারটাও তার সুনিশ্চিত হয়। কারণ বস্তির মানুষের সাথে রুজি রোজগারের একটা সম্পর্ক—যেখানেতে অবস্থান করেন বসবাস, তার নিকটবর্তী এলাকায় তার রুজি রোজগার। তাকে এমন দূরবর্তী জায়গাতে সরিয়ে দেওয়া হলো, তার রুজি রোজগার থেকে ছেদ ঘটলো। এমনিতেই সে ওখানে তার ঘর পেলেও সেখানে টিকে থাকতে পারবেন না, তার অস্তিত্ব বিলোপ হয়ে যাবে। এই অস্তিত্ব রক্ষার কারণে আমাদের এই দাবি আছে। কিন্তু সাধারণভাবে, এটা আমাদের প্রথম না। প্রথম দাবি যে বস্তি উচ্ছেদ, তুমি ওইটা কি স্বার্থে ব্যবহার করছ? ব্যবসায়িক স্বার্থে তুমি আদানিকে জমি দিচ্ছ বা আম্বানিকে, কারণ আমরা দেখছি যে আজকে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা যারা করেন, তাদেরকে এই জমি দেওয়া হচ্ছে। কিংবা বিভিন্ন রেল শহরের বড় বড় রেল স্টেশনের নামেতে আজকে ওই—কি বলে—অমৃত যে প্রকল্প, অমৃত। এবং সেই স্টেশনের ধারে এবং এই বস্তির মানুষেরা রেলের সাথে সম্পর্ক যুক্ত কারণ রেল পাতা… রেলপথ যখন শুরু হয়, রেল পাতা যখন শুরু হয়, তখন হয়তো শ্রমিক হিসাবে ওখানে কাজ করেছে। পরবর্তী সময়ে তারা ওখানে বস্তি গড়ে, অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ওই মানুষগুলোকে আজ উচ্ছেদের পরিকল্পনা হচ্ছে রেল স্টেশন এবং তার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের পরিধি বাড়ানোর জন্য। গরিব মানুষের অবস্থান তারা মেনে নিতে পারবে না। বৃহৎ মালিকদের স্বার্থে বা ধনিকদের স্বার্থে, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করার নামে গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করার একটা পরিকল্পনা হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি হলো বস্তি উন্নয়ন সমিতির, যে শহরে গরিব মানুষের যে বাসস্থানের অধিকার, এই অধিকারকে রক্ষা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। রাজ্য সরকার প্রয়োজনে রেলের থেকে কারণ কন্ডিশন যে পদ্ধতিতে জমি নেওয়া হয়, থ্রু ডিএম এবং তার একটা কন্ডিশন, থাকে কি পারপাসে জমি নেওয়া হচ্ছে, এবং সেটা অবশ্যই ব্যবসায়িক স্বার্থের না, তাহলে রাজ্য সরকার কেন দায়িত্ব নেবে না? রাজ্য সরকার কেন এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তার অবস্থান গ্রহণ করবে না? আমরা কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখছি যে, রাজ্যের পুলিশ এবং রেল পুলিশ একসাথে এই উচ্ছেদ করবার জন্য আসছে। এখন পর্যন্ত আমরা সমস্ত বস্তিবাসীদেরকে জড়ো করে, দল-মত নির্বিশেষে, সবাইকে জড়ো করে, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা রুখে দিতে পেরেছি। আমরা রুখে দিতে পেরেছি দক্ষিণেশ্বরে। আমরা রুখে দিতে পেরেছি যে কটি উদ্যোগ তারা গ্রহণ করেছে, কুলটিতে, আসানসোলে, রানীগঞ্জে এবং বিভিন্ন নামের বস্তি আছে এবং এখানে হলো আমাদের এই গোবিন্দপুরে, ঢাকুরিয়া।  ডায়মন্ড হারবারে ওরা রেল থেকে করেছে, আমরা ওখানে ডেমোনস্ট্রেশন দিয়েছি, এখন পর্যন্ত এই স্থিতাবস্থা আছে। কিন্তু আমরা মনে করি এরা থেমে থাকেনি, তারা উদ্যোগ গ্রহণ করবে, আর আমরাও থেমে নেই। আমরা সব বস্তিবাসীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন গড়বার প্রস্তুতি, যে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলছে তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব। এবং এই ব্রিগেড সমাবেশ  এখানে দিশা দেবে যে আগামী লড়াই, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। শহরে বস্তিবাসীদেরকে বসবাসের অধিকার বজায় রাখতে হবে, শহর গরিব মানুষেরও বাসস্থান। এই বোধ এবং এই চেতনা গড়ে তোলার একটা লড়াই আমাদেরকে চালাতে হবে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।

) ওয়েবডেস্ক- ব্রিগেডে বস্তিবাসী মানুষের কেমন সাড়া, ব্রিগেডকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলার বস্তি অঞ্চলে কেমন প্রচার হল? সেই অভিজ্ঞতার কথা একটু বলুন।

সুখরঞ্জন দে-

আমাদের চারটি সংগঠন, গ্রামীণ অঞ্চলে সর্বভারতীয় কৃষক সভা, সর্বভারতীয় ক্ষেত্র মজুর সংগঠন, CITU ও পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি যৌথ ভাবে  সংগঠন গুলি তাদের যে মিলিত দাবি গুলো আছে, তা নিয়ে ব্রিগেড সমাবেশ এর ডাক দিয়েছে। এবং এই কেন্দ্রীয় দাবির বাইরেও স্থানীয় যে বিষয় গুলো রয়েছে, তা যুক্ত হয়েছে। আমি বস্তি  উন্নয়ন সমিতির পক্ষ থেকে বলতে পারি, ব্রিগেড সমাবেশ কে কেন্দ্রে করে, আমরা যে যে বস্তি অঞ্চলে প্রচার সংগঠিত করতে পেরেছি, সেখানে বিপুল সাড়া। আজকের পরিস্থিতে বস্তিবাসীদের কাছে জমির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুঁজিবাদী বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সব মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা হওয়া অসম্ভব । আবাসনের চাহিদা থাকবে। মুনাফা সর্বস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ফাটকা পুঁজি জমি কেনা বেচায় ব্যবহার হবে। উচ্ছেদের আশঙ্কায় বস্তিবাসীদের থাকতে হবে। তাই ‘জমির’ বিষয়টি রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ৷ যা শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়ক হবে।

আমাদের লড়াই প্রধানত জমির লড়াই। আমরা মনে করি জমিতে যারা বসবাস করে সেই জমিতে তারই অধিকার স্বত্ব থাকা উচিত। জমিতে যে বাস করে সেই জমি তার বাকিরা ঠিকাদার। তাই লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বস্তির জমিতে বস্তিবাসীদের আধিপত্য বজায় রেখে পাট্টার দাবিতে আন্দোলন চলছে।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়েই জমি সংক্রান্ত আইনগুলি ইতিমধ্যে বিত্তবানদের স্বার্থে পরিবর্তন করেছে। এরাজ্যে কলকাতা ও হাওড়ার ঠিকা বস্তির জমির দখল নিতে ২০১৫ সালে বস্তিবাসীদের রক্ষাকবচ ঠিকা প্রজাস্বত্ব আইনের ২০০৪ সালের বিধির ৩(১)এ উপধারাকে অবলুপ্তি এবং ২০১৯ সালে ‘সংশোধিত ঠিকা প্রজাস্বত্ব অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ আইন—পরিবর্তন ঘটিয়ে বস্তিতে বাড়ি নির্মাণে প্রোমোটারকে যুক্ত করা হয়।

রাজ্য সরকার এসময়ে ‘লিজ হোল্ড’ জমিকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহারে উন্মুক্ত করতে ‘ফ্রি হোল্ড’ করে। উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল চা বাগিচা সহ রাজ্যের শহরাঞ্চলে ঠিকা বস্তির জমি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে বস্তি অঞ্চলে ‘উত্তর :” বোর্ড লাগানা হচ্ছে। শ্রমজীবী বস্তিবাসীদের শহরে বসবাসের অধিকারকে এরা কেড়ে নিতে চাইছে।

এসময়ে বেড়েছে নিরাপদ বাসস্থান ও রুজি রোজগারে অনিশ্চয়তা, চড়া হারে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, বস্তি উচ্ছেদ, আগুন লাগার সংখ্যা। এরাজ্যে নতুন সংস্কৃতি হলো শাসকদলে নাম না লেখালে ও টাকা না দিলে আবাস প্রকল্পে বাড়ি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রেশন কার্ড, বিধবাভাতা, বার্ধক্য ভাতা, ১০০ দিনের কাজ, স্বাস্থ্যসাথী, অটো-টোটো চালনায় অনুমতি, হকারির সুযোগ সহ কোনও কাজ নয়। প্রশাসনিক ক্ষমতার জোরে এরা বস্তিবাসীদের সম্পদ, বাসস্থান ও জীবিকা সহ সমস্ত সামাজিক ও উন্নয়নমূলক সরকারি সুযোগ কেড়ে নিতে চাইছে।

এই সমস্ত দাবি- দাওয়া আমরা প্রতিনিয়ত প্রচার করতে গিয়ে, সংগঠনের কাজ করতে গিয়েই উঠে এসেছে, বস্তির মানুষরা প্রস্তুত ব্রিগেডের মাঠে আসার জন্য।

) ওয়েবডেস্ক- আপনি যেখানে শেষ করলেন সেখান থেকেই শেষ প্রশ্ন রাখছি, ব্রিগেড পরবর্তী সময়ে বস্তিবাসী মানুষের জীবন যন্ত্রণার কথা আগামীর লড়াইয়ে কি বার্তা দেবে? এবং নির্দিষ্ট ভাবে কোন দাবি আদায়ের জন্য লড়াই হবে?

সুখরঞ্জন দে-

ব্রিগেডের আগে আমরা যে তাদের কাছে গেলাম তাদের দাবি নিয়েই আমরা ব্রিগেডে যাবো। আমরা বস্তি বাসীদের যে দাবি নিয়ে ব্রিগেডে যাবো সেটা আশু দাবি নয়। আমরা বামফ্রন্ট সরকার থাকা কালীন যে অধিকার অর্জন করেছিলাম তা পুনরায় ফিরে পেতে চাইছি। অর্জিত অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের বস্তিতে সংগঠন আরো মজবুত করতে হবে। আগামীদিনে জেলা, মহকুমা, মহল্লায় সংগঠন শক্তিশালী করে অধিকার অর্জন করাই লক্ষ। আমরা চাই, জনহিতকর উন্নয়নের সুফল সকলে ভোগ করুক। কিন্তু এই উন্নয়নে যদি শ্রমজীবী, গরিব মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়- আমরা তার বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে আমাদের নির্দিষ্ট দাবি—  উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক প্যাকেজের সঙ্গে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের প্যাকেজ যুক্ত করা। প্রকল্প রূপায়ণের শুরুতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।

বাসস্থান মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। উন্নয়নমূলক কাজে বিকল্প পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নয়—  এই নীতি মেনে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ঢাকুরিয়ার গোবিন্দপুরের রেল বস্তির বস্তিবাসীদের বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা নোনাডাঙায় করে। বর্তমান রাজ্য সরকার কেন এই দায়িত্ব নেবে না?-

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া সরকারের ‘স্ল্যাম’ সম্পর্কিত যে নীতি ভারত সরকার গ্রহণ করেছিল- ‘জীবন-জীবিকার জন্য শহরের শ্রমজীবী গরিব মানুষ অস্থায়ী আস্তানা গড়তে বাধ্য হয়। উন্নয়নের নামে এই বস্তিগুলি উচ্ছেদ নয়, সরকারি খরচে পাকাবাড়ি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।’ এ নীতি আজ মানা হচ্ছে না। এসময়কালে গরিব বস্তিবাসীদের শহরে অবস্থান সম্পর্কে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যে বৈরিতার মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে তা খুবই উদ্বেগের।

একদিকে রাজ্যজুড়ে বস্তি উচ্ছেদের পরিকল্পনা একই সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বোঝাপড়ায় নতুন বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় চালু হওয়া প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার, প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ ব্যবহার গরিব মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। গরিব বস্তিবাসীদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের অধিকার যা লড়াই করে আদায় হয়েছে— বস্তির ঘরে ঘরে নিজের নামে মিটার তা গরিব বস্তিবাসীদের পক্ষে রক্ষা করা কঠিন হবে। নতুন বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়বে, যখন বেশি বিদ্যুতের চাহিদা হবে, যেমন রাতে আলো জ্বালাতে বা গরমকালে ফ্যান ব্যবহারে বিদ্যুতের বেশি মাশুল গুনতে হবে।

পুরানো বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কম বিদ্যুৎ ব্যবহারে ছাড় সহ বিদ্যুৎ বিল মেটানোর যে সুবিধা পাওয়া যেত বা প্রান্তিক গরিব মানুষ প্রতিদিনের জমানো টাকা যা মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল মেটাতে ব্যবহার করতেন, তা চিরতরে বন্ধ হবে। প্রিপেইড স্মার্ট মিটারে চড়া হারে বিদ্যুতের দাম আগাম জমা দিতে হবে। টাকা শেষ হলে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে যাবে।

মানব জীবনে বিদ্যুৎ শুধুমাত্র পরিষেবাই নয় এটি একটি অধিকারও বটে। পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি বিনামূল্যে মাসিক ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাবিতে অনেক দিন ধরে লড়াই করছে। আমাদের দেশের অনেকগুলি রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা চালু করেছে।

বস্তিবাসীদের উল্লিখিত দাবিগুলি ছাড়াও সকলের জন্য সস্তার রেশন, আবাস যোজনায় সবার জন্য বাড়ি, নিকাশি, পানীয় জল সহ উন্নত পুর পরিষেবা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সহ স্থানীয় ভিত্তিক দাবিগুলি নিয়ে বস্তিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করে বস্তির ভিতরে দমবন্ধ পরিবেশ ভাঙতে রাজ্যজুড়ে বস্তিগুলিতে নিবিড় প্রচার চলছে। শাসক দলের দুর্নীতি-দুষ্কৃতী চক্রের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে আগামী ২০ এপ্রিল শ্রমজীবীদের ব্রিগেড সমাবেশে বস্তিবাসীরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ব্রিগেডের মাঠে আসবেন। 

Spread the word

Leave a Reply