বিংশ শতাব্দীতে মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে ভয়ানক আক্রমণ হলো দুটি বিশ্বযুদ্ধে, তেমনই মানব সভ্যতার অগ্রগতির উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হলো মহান নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব- যার গৌরবজনক নেতৃত্ব দিয়েছে - কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি অর্থাৎ রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি। ১৮৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার প্রকাশ করে কার্ল মার্ক্স ও ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস কমিউনিস্ট পার্টির যে প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছিলেন তা হলো- " সর্বহারাকে শ্রেণী হিসেবে সংগঠিত করা, বুর্জোয়াদের আধিপত্যের অবসান ঘটানো ও শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা।" ১৮৭১ সালে প্যারী কমিউন সেই লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করলেও পরিস্থিতি উপযোগী সংগঠন গড়ে তুলতে না পারা, কৃষক সমাজকে শ্রমিকশ্রেণীর পাশে মৈত্রী বন্ধনে যুক্ত করতে না পারা ও কমিউনিজমের আতঙ্কে আতঙ্কিত সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলির ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন না করার জন্য কমিউনের পতন হয়- কমিউনার্ডদের রক্তে রক্তাক্ত হয়ে প্যারী শহর। কিন্তু প্যারী কমিউন এর পতনের কারণগুলি বিশ্লেষণ করে কার্ল মার্ক্স লিখেছিলেন- কমিউনার্ডরা স্বর্গ জয়ের অভিযানে নেমেছিল, যুদ্ধে পরাজিত হলেও বীর কমিউনার্ডরা এক ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সূচনা করেছে।"

সেই উজ্জ্বল পথের ঐতিহাসিক সূচনা হলো ১৯১৭ সালের মহান নভেম্বর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। ১৯১৭ সালের ৭ থেকে ১৭ নভেম্বর নির্দিষ্ট করে নভেম্বর বিপ্লবের ঘটনাক্রম এর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক জন রীড তার বিখ্যাত ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’ গ্রন্থে বিপ্লবকে চিত্রায়িত করেছেন। কিন্তু বিপ্লব তো শুধু দশদিনের সংগ্রাম নয় বিপ্লবের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয় অনেক আগে থেকে ও বিপ্লব পরবর্তীতে অনেক সময় লাগে তার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য এই পর্যায়ে কালে নানা ঘাত-প্রতিঘাত অগ্রগমন পশ্চাৎবর্তী সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে বিপ্লবের চূড়ান্ত সাফল্য অর্জিত হয়েছে কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে এই ঐতিহাসিক শিক্ষাকে কার্যকরী করেই কমরেড লেনিন মার্ক্সবাদকে বাস্তবোচিত ভাবে প্রয়োগ করে নভেম্বর বিপ্লব সফল করেছেন এবং একেই কমরেড স্তালিন মার্কসবাদ-লেনিনবাদ রূপে চিহ্নিত করেছেন।
বিপ্লবের সূচনা – ফেব্রুয়ারি বিপ্লব –
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হলো জার শাসিত রাশিয়া। জনজীবনে নেমে এসেছিল বিপর্যয়। মানুষ যুদ্ধের অবসান চাইছিল- শান্তি চাইছিল- চাইছিল রুটি-খাদ্য। দেশ জোড়া মানুষ যুদ্ধের দাবানলের মধ্যে সিদ্ধান্তে আসেন যে বাঁচার একমাত্র পথ জারের রাজত্বের উচ্ছেদ।বলশেভিক পার্টি আহ্বানে শ্রমিকরা সাধারণ ধর্মঘট করতে রাস্তায় নামে। জনগণ শামিল হয় স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে। জারের শাসনের অবসান হয় ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে। কিন্তু এই বিপ্লবে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শ্লোগান ছিল না – যদিও শ্রমিকশ্রেণীই ছিল নেতা। স্লোগান ছিল শান্তি,গণতন্ত্র ও রুটি।

আত্মগোপন থেকে কমরেড লেনিন দেশে ফেরেন ১৯১৭ সালের ৩ এপ্রিল। এসেই বলশেভিক নেতৃত্ব কে নিয়ে সভা করে পার্টির আশু লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, যা ‘এপ্রিল থিসিস’ নামে খ্যাত। কমরেড লেনিনের বক্তব্য ছিল জার শাসন থেকে বুর্জোয়া শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এখন বুর্জোয়া শাসনের অবসান ঘটিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে বিপ্লবী অভিযান শুরু করতে হবে। বিপ্লবী ক্ষমতার প্রকৃত রূপ হল শ্রমিক, সৈন্য ও কৃষকদের সোভিয়েত সংস্থা। কমরেড লেনিনের প্রস্তাব মত ‘এপ্রিল থিসিস’ এর ‘রণধ্বনি’ হল -“সোভিয়েতের হাতে সব ক্ষমতা দিতে হবে”।
নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব
তিন মাসের মধ্যেই বুর্জোয়া সরকারের অত্যাচারী চরিত্র জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে সেনা পাঠানোর ও দমন-পীড়ন এর মধ্য দিয়ে। বলশেভিক পার্টি বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণ শুরু হলো। কমরেড লেনিনকে আবার আত্মগোপন করতে হলো। কিন্তু বিপ্লবের বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। অক্টোবর মাসেই পার্টির সদস্য সংখ্যা চার লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।রেডগার্ড, বিপ্লবী বাহিনী ও নাবিকরা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। ভেঙে পড়ে অস্থায়ী বুর্জোয়া সরকার। কমরেড লেনিন আত্মগোপন থেকে আবার দেশে ফিরে কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ডাকলেন ও চূড়ান্ত সংগ্রামের আহ্বান জানালেন। ৭ই -৮ই নভেম্বর পেট্রোগ্রাড সোভিয়েত কংগ্রেস থেকে কমরেড লেনিনকে চেয়ারম্যান করে মন্ত্রিসভা ও সরকার ঘোষিত হল। সর্বহারার সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো- মহান নভেম্বর বিপ্লবের সফল যাত্রা শুরু হলো- শুরু হলো সমাজতন্ত্র নির্মাণের সেই সময়ে বাস্তব অজানা পথে যাত্রা, যার পথনির্দেশক কমরেড লেনিন ও কমিউনিস্ট পার্টি।
বিপ্লব পরবর্তীতে যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ
সমাজতান্ত্রিক নির্মাণ ও অর্থনীতির মূল কথা পরিকল্পিত অর্থনীতি। সাম্যবাদী অর্থনীতির নির্দেশ হলো, “প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুসারে কাজ করবে ও প্রয়োজন অনুসারে সব পাবে”, কিন্তু সমাজতন্ত্রের নীতি হলো, “প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুসারে কাজ করবে এবং কাজের পরিমাণ ও গুণমান অনুসারে মূল্য পাবে”। বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ায় কিছু সময় সমাজতন্ত্র নির্মাণের প্রয়োজনে এই নীতি কার্যকরী করা যায়নি। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণী ও গরীব কৃষকদের সংগঠিত করে বিপ্লবের ভিত মজবুত করা ও গৃহযুদ্ধ এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। সমগ্র লড়াইয়ে লেনিনকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নানা বিতর্ক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত রাশিয়াতে ১৯১৯-১৯২০ সালে শিল্প উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ নেমে এসেছিল। শ্রমিকরা কারখানার দখল নিলেও পরিচালনায় ছিল অনভিজ্ঞ।কৃষকরা জমি পেলেও ধনী কৃষকদের,কুলাকদের ষড়যন্ত্রে খাদ্যসংকট বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বহিঃশত্রুর আক্রমণের আশঙ্কা তো ছিলই। কমরেড লেনিন বললেন, এখন আমাদের যুদ্ধের জাল থেকে বের হতেই হবে। তিনি জার্মানির সাথে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দিলেন। সুযোগ বুঝে জার্মানিও কঠিন শর্ত দিতে থাকলো। কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্ক হল, কমরেড লেনিন দৃঢ় থাকলেন শান্তি চুক্তির অবস্থানে। অনেক ক্ষতি স্বীকার করেও ব্রেস্ট-লিটভস্ক শান্তি চুক্তি করলেন। প্রশ্ন উঠলো এত ক্ষতি স্বীকার করে জার্মানির সাথে অনাক্রমণ চুক্তি কেন? কমরেড লেনিন বললেন,” ভবিষ্যতের জন্য”। এখন আমাদের সমাজতন্ত্রকে বাঁচাতে প্রয়োজনে কিছু আপস করতে হবে। শ্রমিকদের কাছে আহ্বান জানিয়ে বললেন,” এই সোভিয়েত আপনাদের, এই সোভিয়েত সমাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে আপনাদের কিছুদিন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে”, একই আহ্বানে তিনি বললেন,” আগামী উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সমাজতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ।” তিনি বললেন বহির্শত্রু ও ভিতরের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের জন্য, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র রক্ষা করার জন্য কণ্টকাকীর্ণ এই পথ ছিল যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ বা- war communism।

নিউ ইকোনমিক পলিসি (NEP) ও পরিকল্পিত অর্থনীতি
কমরেড লেনিন এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সিদ্ধান্ত নিলেন যে যুদ্ধ শেষে শান্তিপূর্ণ ভাবে অর্থনৈতিক গতি পরিবর্তন এর জন্য এখন আর যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ(war communism) এর প্রয়োজন নেই। যুদ্ধ শেষে শ্রমিকরা কৃচ্ছসাধন বা কৃষকরা উৎপাদিত দ্রব্যের সরাসরি বাজেয়াপ্ত করাকে দীর্ঘদিন বহাল রাখতে চায় না। তারা সমাজতন্ত্রের সুফল এখন পেতে চায়। এই প্রেক্ষাপটেই নয়া অর্থনৈতিক কার্যক্রম (NEP) গ্রহণ করা হলো। ট্রটস্কি সহ কয়েকজন NEP-এর বিরোধিতা করে প্রচার শুরু করে যে এটি পরিকল্পিত অর্থনীতির নামে পুঁজিবাদের দিকে পশ্চাদপসরণ! কমরেড লেনিন বললেন এটা পশ্চাদপসরণ বটে কিন্তু তা পরাজয়ের ফলে নয়- বরং বিরোধীদের সরাসরি আঘাত করার সময়ে যুদ্ধকালীন সাম্যবাদে আমরা অতিরিক্ত অগ্রসর হওয়াতে পিছনে যে জায়গা অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল তা পূরণ করার জন্য কৌশলে পিছিয়ে আসা।( সূত্র- সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস)।
অল্পদিনের মধ্যেই নয়া অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সাফল্য দেখা গেলো। কৃষিতে অগ্রগতি এবং কারখানা ও রেল পরিবহনে প্রথম সাফল্য অর্জিত হলো।যুদ্ধকালীন সাম্যবাদে সৃষ্ট অসন্তোষ দূর হলো ও পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য শ্রমিক কৃষক ঐক্যের ইতিবাচক নজির সৃষ্টি হলো। মহান নভেম্বর বিপ্লবের ফসল সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রাথমিক সমস্যা গুলো কাটিয়ে পরিকল্পিত অর্থনীতির পর্যায় উপনীত হলো। কমরেড লেনিন সমবায় আন্দোলনে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানালেন। শিল্পায়নের জন্য শ্রমিকের উদ্যোগের সাথে সাথে শিল্প পরিচালনায় অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রস্তাব দিলেন। এই প্রস্তাবের সাফল্য অচিরেই দেখা গেলো – যদিও ট্রটস্কি ও বুখারিন সহ কয়েকজন প্রচার শুরু করেছিলেন যে কমরেড লেনিন বিপ্লব বিরোধী ও পুঁজিবাদী পথ অনুসরণ করেছেন। কিন্তু ট্রটস্কি ও বুখারিন শুধু ভ্রান্ত প্রমানিতই হলেন না, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের কঠিন ভাষায় তিরস্কার করে। কমরেড লেনিন বললেন, “নয়া অর্থনৈতিক কার্যক্রম (NEP) পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে জীবন মরণ সংগ্রাম। প্রশ্ন কে জিতবে? আমাদের জিততেই হবে। এই জন্য ব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্যের কৌশল আয়ত্ত করতে হবে।” এই নীতির উপর ভিত্তি করেই পরিকল্পিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহণ করে, এমনকি কমরেড লেনিন আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে অসুস্থ হবার পরে এবং তার জীবনাবসানের পরেও কমরেড স্তালিনের নেতৃত্বে একের পর এক পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি পশ্চাদপদ দেশ রাশিয়া উন্নত – গতিশীল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে উন্নীত হয়ে বিশ্বকে চমকিত করে দিয়েছিল। শিল্প, কৃষি,সাহিত্য, সংস্কৃতি,ক্রীড়া,বিজ্ঞান, মহাকাশ অভিান ও সমরসজ্জায় দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করে সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলো। এমন একটি দেশ বিশ্ব দেখলো যেখানে শোষণ নেই, বেকারী নেই, নেই জাতিগত নিপীড়ন, নেই অসাম্য।
একারণেই রাশিয়া ভ্রমণের সময় ত্রিশের দশকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ” রাশিয়ায় না এলে আমার তীর্থ দর্শন অপূর্ণ থেকে যেত।” (রাশিয়ার চিঠি)
নভেম্বর বিপ্লবের এক বৎসরের মধ্যে নানান ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত শিশু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য জার্মানির সঙ্গে শান্তি চুক্তি করার প্রস্তাব পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যা গরিষ্ঠতায় গ্রহণ করানোর পর, “একটি শোকাবহ শান্তি” শীর্ষক প্রবন্ধ লিখেছিলেন লেনিন, “সন্ধির শর্তগুলো কঠোর ও অসহনীয়…. সকল পরীক্ষা সত্বেও ভবিষ্যত আমাদের হাতে।” (লেনিন সংগৃহীত রচনাবলী)

সত্যিই ভবিষ্যত কমরেড লেনিনের বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। সোভিয়েত ইউনিয়ন অভূতপূর্ব সাহস ও ত্যাগের মাধ্যমে লাল ফৌজ দ্বারা বিশ্বত্রাস হিটলারের নাজি বাহিনীকে পরাজিত করে মানব সভ্যতার অগ্রগমনের ক্ষেত্রে অতুলনীয় ভূমিকার দ্বারা।
মতাদর্শ – রাজনীতি ও পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার যে অভিমুখ কমরেড শুরু করেছিলেন তার সাফল্য আজও অনপনীয়। এমন কি সোভিয়েত রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপর্যয়ের পরেও এই গৌরবজনক ইতিহাসকে মুছে ফেলা যাবে না।
যে শিক্ষা চির অমলিন
সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার পর সারা দুনিয়া জুড়ে পুঁজিবাদের প্রবক্তারা ইতিহাসের সমাপ্তির যে নিদান ঘোষণা করেছিল (The End of History and The Last Man – Fukuyama), তার বিপরীতে দাঁড়িয়েই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) চতুর্দশ পার্টি কংগ্রেসে প্রস্তাব নিয়ে দৃঢতার সাথে বলেছে –
– “ইতিহাসের নানা বাঁক – মোড়, আঁকা বাঁকা গতি সত্বেও সাফল্য ও বিপর্যয় মিলেই, এই শতাব্দীর বিশেষ করে ১৯১৭ সালের পর থেকে ঘটনাবলী মানব প্রগতির বিবর্তনে জনগণের সংগ্রামের সুগভীর প্রতিফলন।… এক শতাব্দীর বেশি সময়ের কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত জনগণের অধিকারকে সহজে মুছে ফেলা যাবে না। বিংশ শতাব্দীর ঘটনাবলী দেখিয়ে দিচ্ছে সমকালীন মানব বিকাশের মৌলিক অভিমুখ জাতীয় ও সামাজিক মুক্তির দিকেই।-“
এই কারণেই মহান নভেম্বর বিপ্লব ও তার সাফল্য নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত অর্থনীতি ও সমাজতন্ত্র নির্মাণ কাজের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা আজও দেশে দেশে মুক্তি আন্দোলনের প্রেরণা।