March 18, 2020
করোনা ভাইরাস – কিছু তথ্য
সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে এবং প্রতিদিনই আক্রান্ত দেশ ও রুগির সংখ্যা বাড়ছে। এতে মৃত্যুর ঘটনা ও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় আতঙ্ক নয়, সতর্কতা জরুরী।
করোনা ভাইরাস কি ? – করোনা এমন প্রকৃতির ভাইরাস যার দ্বারা মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে। করোনা ভাইরাসের যে দুটি নমুনা এতদিন ধরে মানুষের মধ্যে সর্দি, কাশি, জ্বরের, এই উপসর্গ নিয়ে সংক্রমণ ঘটাত তা হল মিডিল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (MERS) , সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম ( SARS) এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের মারাত্মক প্রকৃতির COVID-19 ।
এই সংক্রমণের লক্ষ হল- জ্বর ,ক্লান্তি, শুকনো কাশি, গলা ব্যাথা, শরীরে ব্যাথা ,নাক বন্ধ ,হয়ে যাওয়া ও সর্দি , এমন কি পাতলা পায়খানা। ৮০% রুগি কোনও বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। প্রতি ৬ জন সংক্রামিত ব্যক্তির মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে রোগ তিব্র হচ্ছে এবং শ্বাস কষ্ট দেখা যাচ্ছে। সংক্রামিত রুগিদের ২% এর মৃত্যু ঘটেছে।
ছড়ায় কিভাবে? – এই সংক্রমন বাতাসে ছড়ায় না -সংক্রামিত ব্যক্তির খুব কাছে (১ মিটার দূরত্বর মধ্যে) আসলে ,হাঁচি বা কাশি থেকে ড্রপলেট সংক্রমনের মাধ্যমে বা রুগীর দেহ থেকে নির্গত অণুজীব হাত থেকে মুখে, নাকে বা চোখে লাগলে এই সংক্রমণ ছড়ায়।
সতর্কতা – এখন পর্যন্ত এই অণুজীবের বিরুদ্ধে কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন বার হয়নি। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে – সংক্রামিত ব্যক্তিকেও তার খুব কাছে যাওয়া মানুষদের নাক মুখ এন-৯৫ মাক্সে ঢেকে রাখতে হবে।সকলের জন্য মাক্স পরার প্রয়োজন নেই।
সংক্রামিত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখতে হবে।করোনা সংক্রামিত দেশ থেকে যেসব মানুষ এদেশে আসছেন তাঁদের ১৪ দিন আলাদা করে রেখে তাঁদের সংক্রমণের লক্ষণ গুলি আসছে কিনা দেখতে হবে।
সতর্কতা হিসাবে কয়েকটি কাজ আরো করা দরকার-
১) কারুর সর্দি কাশি জ্বর হলে মাক্স ব্যবহার করা ও রুগীকে আলাদা রাখা। মাক্স ব্যবহারের পর তা খোলা ও ফেলার সময় সতর্কতা প্রয়োজন কারণ ব্যাবহৃত মাক্স থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। হাঁচি বা কাশির সময় কাপড় দিয়ে মুখ ও নাক ঢাকা রাখতে হবে।
২) সংক্রামিত ব্যক্তি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা – এর জন্য ভিড় ও জমায়েত এড়িয়ে চলা ভালো।
৩) সংক্রামিত ব্যক্তির কাছে যাওয়ার সময় মুখ ও নাক ঢাকা মাক্স (Triple layer surgical mask – single use) ব্যবহার করা।
৪) হাত নাকে মুখে চোখে দেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করা। সংক্রামিত ব্যক্তির কাছে গেলে বা বাইরে থেকে ফিরে সাবান জলে বা ২০% অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাতের সব অংশ ভালভাবে পরিষ্কার করা।
৫) খাবার তৈরি সময় নিরাপত্তা বজায় রাখা- মনে রাখতে হবে ৭০ ডিগ্রি সেন্টি গ্রেড তাপমাত্রায় এই ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে না।মুরগীর মাংস ও ডিম থেকে এই সংক্রমণ ছড়ায় না এবং ডিম বা মাংস সুসিদ্ধ করার তাপমাত্রায় এই ভাইরাস মারা যায়।
৬) অসুস্থ হলে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। করোনা হেল্প লাইন নম্বর – ০৩৩-২৩৪১-২৬০০ , ১৮০০৩১৩৪৪৪২২২।
যে সমস্ত ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন- বয়স্ক মানুষ, শিশু এবং যাদের স্বাসকষ্ট ,ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ,হার্টের অসুখ আছে তাঁদের বিপদের আশঙ্কা বেশি।
পরিশেষে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, এইসব ভাইরাস ঘটিত রোগ নিরাময়ের ওষুধ তৈরির গবেষণায় গুরুত্ব বরাদ্ধ বৃদ্ধির জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে।
আতঙ্কিত হবেন না,আতঙ্ক ছড়াবেন না । সতর্ক থাকুন।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ