১) ওয়েবডেস্ক – ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ। কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেলে মেয়েরা এই সমাবেশকে নিজেদের উইক এন্ডের quality time spending মনে করবে কি?
প্রতিকুর রহমান – আমরা শেষ ৩০ বছর পোস্ট নিউ লিবারেল যুগে আছি। এখন quality time spending – এর মানে অনেক ভাবে ব্যবহার হয়। আমরা যারা সমাজবদলের স্বপ্ন দেখি তাদের কাছে জীবনের quality time মানে এই সমাজব্যবস্থা পাল্টানোর লড়াইকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। “এখন যৌবন যার, মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়”। ছাত্র-যুবরা লাগাতার বঞ্চিত হয়েছে দুই সরকারের আমলে। শিক্ষার পরিবেশ নেই, কর্মসংস্থান নেই, আছে কেবল দেশ বিক্রির ব্লু-প্রিন্ট আর দেশ ভাঙার চক্রান্ত । তাই অধিকার বুঝে নেওয়ার দৃঢ় চেতনায় ছাত্র-যুবরা নিশ্চিত ভাবেই ব্রিগেডমুখী হবে।
২) ওয়েবডেস্ক – বামপন্থার প্রতি ছেলে মেয়েদের যে আগ্রহ ৬০ কি ৭০ – এর দশকে ছিল আজকের সময়ে সেই অবস্থান কেমন? জঙ্গী আন্দোলনে বামপন্থীদের সাথে নতুন প্রজন্মের যোগাযোগ কতটা দৃঢ়?
প্রতিকুর রহমান – ৬০-৭০ দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে এখনকার প্রেক্ষাপট বহুলাংশে আলাদা। আজকের দুনিয়ায় “আপনি বাঁচলে বাপের নাম” মার্কা কনসেপ্ট ছড়িয়ে দেওয়াটা শুরু হয়েছে খুব সুচতুর ভাবে। তবে উল্টোদিকেও আমরা দৃঢ়ভাবে আছি একসাথে বাঁচার লড়াইতে। চিলি, মেক্সিকো থেকে শুরু করে খোদ মার্কিন মুলুক, সর্বত্রই মানুষ সংগঠিত হচ্ছে মানুষ মারা নীতির বিরুদ্ধে।পরিস্থিতি যখন কঠিন হয় তখনই বিকল্পের সন্ধান করে তরুণ প্রজন্ম, আর বিকল্পের কথা বামপন্থীরাই বলে, তাই কঠিন হলেও নিশ্চিত ভাবে অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াইতে ছাত্র-যুবরা বামপন্থার প্রতি আকৃষ্ট হবেই।
আর জঙ্গী আন্দোলন শব্দটায় অনেক অভিমুখ আছে৷ আমাদের কাছে দৃঢ়ভাবে লড়াইতে থাকা, ময়দান ছেড়ে না যাওয়া, প্রতিরোধ, আরও বড়ো প্রতিরোধ এবং সঙ্গে কতটা বেশি সংখ্যায় আমরা কথা বলছি বা রাস্তায় থাকছি সবটা মিলিয়ে জঙ্গি আন্দোলনের রূপরেখে তৈরী হয়। আমার ধারণা এই প্রজন্ম অনেকটাই করার চেষ্টা করছে।
৩) ওয়েবডেস্ক – সদ্য নবান্ন অভিযানে একজন যুবকর্মী পুলিশের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। আরেকজন কে এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ছাত্র যুবরা আন্দোলনের পথে ব্রিগেডের সমাবেশে আসবে? নাকি এই ঘটনা তাদের বামপন্থী রাজনীতির প্রতি বিমুখ করে দেবে?
প্রতিকুর রহমান – বিমুখ করার কোনো প্রশ্নই নেই৷রজ্ঞন গোস্বামী, স্বপন কোলে, সুদীপ্ত গুপ্ত, সায়ফুদ্দিন মোল্লা থেকে মইদুল মিদ্যা। আমরা অনেক শহীদের লাশ বহন করেছি। আর যত লাশ বহন করেছি ততই আমাদের মিছিলও বড়ো হয়েছে ।সাথী হারানোর যন্ত্রণাকে ছাত্র-যুবরা শোক নয় ক্রোধে পরিণত করেছে। সেই ক্রোধ বারবার আছড়ে পরেছে রাস্তায়। ব্রিগেডের দিনও এর অন্যথা হবে না। আমারা শিখেছি, আমরা বিশ্বাস ও করি একজন মানুষের শরীর কে শেষ করা যায় তার আদর্শকে নয়, সেই আদর্শের জায়গা থেকে বার বার মিছিল, মিটিং, রাস্তায় হাজার হাজার রজ্ঞন গোস্বামী, সুদীপ্ত, মইদুল, সাইফুদ্দিন রা আমাদের সঙ্গে শিরা ফুলিয়ে গলা মেলায় স্লোগানে।
৪) ওয়েবডেস্ক – ভোটের লড়াইতে বামপন্থীরা ভাতের সাথে কাজের দাবিকে সামনে রেখে এগোতে চাইছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তি ঘোষনা করে দিয়েছে হয় এ নয় ও, এর বাইরে অন্য কোনো সম্ভাবনা নেই এমন একটা কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ব্রিগেড সমাবেশে সাধারণ ছাত্র যুবরা কেন আসবেন?
প্রতিকুর রহমান – আসবেন। কারণ, রুটি-রুজির প্রশ্ন আজ বিপন্ন। শিক্ষার অদবিকারের প্রশ্ন আজ বিপন্ন। টিভি-মিডিয়া বাইনারি তৈরি করলেও মানুষ তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছে আসল সমস্যাটা কে বা কোথায়। আমরা বলছি বাইনারিটা আসলে অন্য। একদিকে দাঙ্গাবাজ-দুগগিবাজ ( কোকেন চোর ভালো না বালি চোর ভালো! ) আর অন্যদিকে আমরা। বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি। এই বাইনারিতে মানুষের দৈনন্দিন জীবন যন্ত্রণার লড়াইতে আমরাই আছি। মিডিয়া না দেখালেও আমরাই আছি। তাই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই ছাত্র-যুবরা ব্রিগেড আসবে।
৫) ওয়েবডেস্ক – সাম্প্রদায়িকতা আমাদের রাজ্যে নির্বাচনে আলোচনার বিষয় হিসাবে জমি খুঁজে পাচ্ছে – জাত নয় ভাতের লড়াই এটা তরুণ প্রজন্মের সামনে কতটা গ্রহণযোগ্য করা করা সম্ভব?
প্রতিকুর রহমান – হ্যাঁ, এটা ঠিক। সাম্প্রদায়িকতা ক্রমশ জায়গা করছে রাজ্য রাজনীতির বুকে। আসলে এখন রাইটার্সে কেউ বলার নেই যে, “দাঙ্গা করতে এলে মাথা ভেঙে গুড়িয়ে দেব”। রাজ্যের শাসক দল আর কেন্দ্রে শাসক দল প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার মধ্য দিয়ে ভোটের বিভাজন করতে চাইছে। এটা সু-কৌশলে মানুষকে তার দৈনন্দিন সমস্যাগুলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ব্লু-প্রিন্ট। তবে এসবে আর হবে না। নবান্ন অভিযান প্রমাণ করেছে আসল লড়াইটা কাজের, আসল লড়াইটা শিক্ষার, আসল লড়াইটা ভাতের। ২৬শে নভেম্বরের ধর্মঘট প্রমাণ করেছে আসল লড়াইটা শ্রমিকের অধিকারের। দিল্লীর বুকে কৃষক আন্দোলন প্রমাণ করেছে আসল লড়াইটা ফসলের দামের, ফসলের অধিকারের। তাই যতই জাতের রাজনীতিকে সামনে দাঁড় করানোর চেষ্টা হোক, ভাতের লড়াই দিয়ে আমরা জাতের পাঁচিল ভাঙবই।
৬) ওয়েবডেস্ক – বামপন্থীরা ধর্ম নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সরকারের দাবিতে প্রচার করছে। এই সরকার ছাত্রদের সামনে কি বিকল্প হাজির করবে?
প্রতিকুর রহমান – ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরানো। লেখাপড়ার খরচ কমানো। কাটমানি দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে হবেনা মেধা হবে একমাত্র মাপ কাঠি।চাষি আক্কাস চাচার ছেলেটা আবার পড়তে পারবে, দিনমজুর, বাসুদেব খুড়োর ছেলেটা মাঝপথে পড়া ছেড়ে বাইরের রাজ্য কাজ করতে যেতে হবে না। সরকারি স্কুল, কলেজে পোড়ো বাড়ি আর জুয়ার ঠেকের আড্ডা হবে না। সরকারি স্কুল, কলেজের পরিকাঠামে উন্নত হবে, শিক্ষক রা স্কুল কলেজে যেতে ভয় পাবে না।শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান। লেখাপড়া শেষ করে সকলে যেন যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পায়। প্রতি বছর SSC-TET. স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ। গণতান্ত্রিক পরিবেশে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার সুনিশ্চিত করা। বাম, গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ জোট সরকার ছাত্রদের কাছে এই বিকপ্লই হাজির করবে।
কথায় : প্রতিকুর রহমান