১৫ মার্চ, ২০২১ সোমবার
আব্বাস সিদ্দিকী ভয়ঙ্কর মৌলবাদী। কারণ তিনি মসজিদ-মন্দিরের পাশে বসে থাকা ভিক্ষুকের হাতে কাজ চান।
আব্বাস সিদ্দিকী মৌলবাদী হতেন না, যদি ভায়া মিম, বিজেপির পাঠানো প্রস্তাব মেনে নিতেন।
আব্বাস সিদ্দিকী আপাদমস্তক সাম্প্রদায়িক। কারণ তিনি সব বেকারের হাতে কাজ চান।
তিনি সাম্প্রদায়িক হিসাবে আখ্যায়িত হতেন না, যদি অন্য আর এক পীরজাদার মতো তৃণমূলের পাঠানো উৎকোচ গ্রহণ করে, তাদের হয়ে প্রচারে নামতেন।
আব্বাস সিদ্দিকী গণ্ডমূর্খ। কারণ তিনি যা জানেন না, তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন।
তিনি ডহরবাবুকে খোঁজা মুখ্যমন্ত্রী বা বিবেকানন্দ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনকারী বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির কাছে আত্মসমর্পণ করলে অবশ্য তাঁর কোনো বিষয়ে অজ্ঞানতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না।
আব্বাস সিদ্দিকী মধ্যযুগীয় বর্বরতার পক্ষে, কারণ তিনি গত ১১ই ফেব্রুয়ারী তৃণমূলী পুলিশ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে, বুটের লাথিতে মইদুল মিদ্দাকে খুন করলো কেন – সেই প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বর্বর বলে কখনোই চিহ্নিত হতেন না, যদি ২৩৪জন সিপি আই(এম) কর্মীদের লাশ হয়ে যাওয়ার কারণ, তৃণমূলের সাথে হাত মিলিয়ে চলতেন। অথবা হিংসায় উন্মত্ত গৈরিক বাহিনীর অনেক আখলাককে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে দেওয়া বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করতেন।
মানুষ খুনের রাজনীতি করলেও ওরা মধ্যযুগীয় বর্বর নয় কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমের চোখে!
তৃণমূল-বিজেপির ধ্বজাধারী সঞ্চালক যখন বিষ্ময় প্রকাশ করছেন আব্বাস কেন জানেন না – পুলিশ কাউকেই মারতে পারে না, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। আব্বাস পালটা প্রশ্ন করলেন, কেন তাহলে পুলিশের মারে নিহত মইদুলের খুনী পুলিশের বিচার হবে না? এই প্রশ্ন তুলেই তো আব্বাস ভাই নিজের গভীর অজ্ঞানতা প্রকাশ করলেন, তাই না!!
তাও তো তিনি প্রশ্ন তোলেন নি, কেন কোনো প্রমাণ ছাড়া পুলিশ নিগ্রহের মিথ্যা অভিযোগে DYFI নেতা দীপঙ্কর সেনগুপ্তকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ সারা রাত কলকাতার নানা রাস্তায় পিটিয়ে আধমরা করে দিল? সেই সংবাদ প্রায় চেপে যাওয়াটা কি বর্বতার নির্লজ্জ সমর্থন নয়? বাম কর্মীদের পুলিশ পেটালে অবশ্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়না, কর্পোরেট মিডিয়ার চোখে।
আব্বাস এতদিন কেবলমাত্র ধর্মপালন করে এসেছেন। উনি আক্রান্ত হতেন না, যদি ধর্মগুরুর বেশ ধরে বিজেপি স্পনসর্ড বাবাজীদের মতো ধর্মের আড়ালে কাম-বিলাস-বৈভবের জীবন যাপন করতেন। আব্বাস আক্রান্ত হতেন না, যদি মুখ্যমন্ত্রীর জ্যোতিষ পুরোহিতের মতো অর্থের কাছে আত্মসমর্পণ করতেন।
আব্বাস ভাই রাজনীতিতে এসেছেন। নবাগত। বয়সে তরুণ। আপনি অকপটে স্বীকার করেছেন, অনেক কিছুই আপনার অজানা। অনেকেরই এই সৎ সাহস নেই।
আব্বাস আহ্বান জানিয়েছেন সবার প্রতি – আমাকে সৎ পরামর্শ দিন, অজানা বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করুন।
ভালো। কিন্তু আব্বাস ভাই, রাজনীতিতে শুধু রাজনৈতিক নেতা কর্মীরাই থাকে না। থাকে চতুর কর্পোরেটের প্রতিনিধিরা নানা বেশ ধরে। থাকে টাকার থলে হাতে ঘুরে বেড়ানো দালাল। এদের কয়েকজনকে হয়তো আপনি ফুরফুরা শরীফের অন্য এক পীরজাদার দরজায় দেখেছেন। রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকে নিরপেক্ষতার ছদ্মবেশে ঘেরা কর্পোরেট মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
এদের সবাইকে খালি চোখে দেখা যায় না। সোজা-সরল মনে বোঝা যায় না এদের কুটিল উদ্দেশ্য।
অতীতে যখন শুধুই ধর্মগুরু ছিলেন, তখন যেসব কথা বলেছিলেন – তার অনেক কিছুর সাথেই আমরা বামপন্থীরা একমত নই। বরং ঘোরতর বিরোধী। সমাজপ্রগতির পক্ষেই বামপন্থীদের অবস্থান, এটা দেশজোড়া মানুষের জানা। কিন্ত তখন সংবাদমাধ্যম আপনার সাক্ষাৎকার নিয়ে এইসব প্রশ্নের উত্তর চায়নি। আসলে তখন ওদের এগুলো দরকার ছিলো না।
এখন দরকার পড়েছে, কারণ অতীত থেকে বেরিয়ে, অভিজ্ঞতার নিরিখে আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে – কেন মন্দির মসজিদের চারধারে এতো মানুষ ভিক্ষা করছে? এদের সবার কাজের দাবী আপনি তুলেছেন। আপনার ভাই পীরজাদা নৌশাদ সিদ্দিকী প্রশ্ন তুলছেন – কেন বই খাতা কেড়ে নিয়ে বেকার যুবকের হাতে বোমা পিস্তল তুলে দিল তৃণমূল?
এই প্রশ্নগুলো নিয়েই বামপন্থীদের লড়াই। তাই বামপন্থীরা ISF এর হাত ধরেছে। যতদিন এই প্রশ্নের লড়াইয়ে থাকবে ISF, ততদিন চলার রাস্তায় হাতে হাত ধরেই লড়াই হবে – হকের পাওনা ছিনিয়ে আনার জন্য।
রুটি-রুজি-শিক্ষার প্রশ্নগুলো না তুলে যদি তৃণমূলের মঞ্চে উঠে যদি আব্বাস সিদ্দিকী ইনশাআল্লাহ -মাশাল্লাহ বলতেন অথবা বিজেপির পাঠানো দূত মিমের প্রতিনিধির কাছে কোটি কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে, ওদের সাথে হাত মেলাতেন – তাহলে ভুলেও সঞ্চালক মশাই এইসব অতীতের ভিডিও দেখিয়ে আপনাকে বিড়ম্বনায় ফেলার চেষ্টা করতেন না – এ কথা হলফ করেই বলা যায়।
আপনি বয়সে তরুণ। আপনার চাইতেও তরুণতর বয়সে একসময় দিল্লিতে জনপ্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল আমাকে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মেঘের আড়ালে থেকে কিভাবে দেশের বৃহৎ ধনীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের কাজ চালায়। সংসদের সেন্ট্রাল হলে সাধারণ সাংবাদিকদের ভিড়ে মিশে সাংবাদিক সেজে দালালরা ঘুরঘুর করে কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষায়।
এখনো দেখতে পাবেন, চোখ কান খোলা রাখলেই, এক দালাল সাংবাদিক যিনি তৃণমূল আর বিজেপির মাঝে সেতুবন্ধনের কাজের দালালি করেন মাসিক দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে, তিনি আবার বিশেষজ্ঞর ভূমিকায় টিভির পর্দায়-খবরের কাগজের পাতায় নৈতিকতা নিয়ে জ্ঞানদান করে থাকেন।
এদের সম্পর্কে সাবধান। এই জগৎটার কুটিল ঘৃণ্য চেহারার সবটা এখনো হয়ত জানা নেই। অভিজ্ঞতায় সব কিছুই পরিস্কার হবে ক্রমশ।
ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষকে মধ্যযুগীয় অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেও গেরুয়াবসনধারী যোগী আদিত্যনাথের স্বরুপ উন্মোচনে কোনো সাক্ষাৎকার নেওয়ার সাহস কিন্তু এদের নেই। এরা জানে, তাহলে উত্তরপ্রদেশের জেলে থাকা সাংবাদিকের সংখ্যা ৬৩ থেকে বেড়ে ৬৪ হবে।
তৃণমূলের দাগী লুঠেরা তোলাবাজদের দলে নিয়ে দলের নেতা বানাচ্ছে কেন – অমিত শাহ-কে এই প্রশ্ন করার হিম্মতও এদের নেই। জানে তাহলে সাক্ষাৎকার শেষ হওয়ার আগেই কয়েক লক্ষ টাকার মাস মাইনের চাকরি খোয়া যাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই প্রশ্ন করার হিম্মৎ নেই – কেন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো টিপু সুলতান মসজিদের ইমামকে নিয়ে ঘোরেন? কেন মুসলমান দেখলেই ইনশাল্লাহ-মাশাল্লাহ বলতে থাকেন কারণে অকারণে? কেন হিন্দু দেখলেই ভুল উচ্চারণে চন্ডীপাঠ শুরু করেন? এগুলো কি মুখ্যমন্ত্রীর কাজ? তাহলে ইমাম-পুরোহিত কি করবে?
নরেন্দ্র মোদির ধারেপাশে পৌঁছানোর ক্ষমতা এই সংবাদমাধ্যমগুলোর কতটা আছে, তা আমার জানা নেই। পৌঁছাতে পারলে কি জিজ্ঞেস করার হিম্মৎ রাখেন – কেন একটাও হাসপাতালের শিলান্যাস না করে, দেশের মানুষকে লকডাউনের নামে ঘরবন্দী করে, নিজে সাধুসন্তদের সমাবেশ ক’রে মন্দিরের শিলান্যাস করলেন? গ্রাহাম স্টেইন্সের সমগ্র পরিবারকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারার নায়ক বজরং দল। তাদেরই সহ ষড়যন্ত্রী ওড়িশার নেতা প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গী মোদি মন্ত্রীসভার মন্ত্রী কেন – এই প্রশ্ন করবে?
গুজরাট দাঙ্গার ছবি ভিডিওগুলো দেখিয়ে দেখিয়ে মোদি-শাহকে কি প্রশ্ন করবে? আখলাককে পিটিয়ে হত্যা করার ভিডিও কি হারিয়ে গেল? বজরঙ্গিদের গুন্ডামীর ভিডিও দেখিয়ে যোগী আদিত্যনাথের সাক্ষাৎকার হবে না?
বিধানসভা ভাঙচুর, বেদীভবনে পুলিশের গুলি চালানোর মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলীদের ভাঙচুরের ভিডিও ক্লিপিংসগুলো নেই? সেগুলো দেখিয়ে কবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার হবে?
ওগুলো দেখানো যাবে না।
মহামুস্কিলে পড়েছে বিজেপি-তৃণমূল-এদের ভোট ম্যানেজার আর এদের অর্থে চলা সংবাদমাধ্যম। তৃণমূল এতদিন কিছু ইমাম-মোয়াজ্জেম ভাতা ছড়িয়ে মুসলমানদের ভোট পকেটস্থ করতো। মুসলমানদের জুজু দেখিয়ে হিন্দুদের ভোট জড়ো করতো বিজেপি। দাড়ি-টুপি পরিয়ে সাজানো কিছু লোক দিয়ে এই কাজ দিব্যি চালাচ্ছিল ওরা।
এখন নামাবলী – ফেজটুপি পরেই আব্বাস-নৌশাদ সহ বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে – বেকারের চাকরি নেই কেন? কলকারখানা বন্ধ কেন? শূন্য সরকারি পদ ও শিক্ষক পদে নিয়োগ হয় না কেন? হলেও নেতাদের ঘুষ দাও, তবেই মিলবে চাকরি – কেন? কেন পঞ্চায়েত- পৌরসভা-সরকারের টাকার কাটমানিতে বিপুল সম্পত্তি বাড়ছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার সহ পাড়ার তৃণমূলী নেতাদের?
কেন দেশের ব্যাঙ্ক, বীমা, রেল, খনি, সরকারি কোম্পানি-কারখানা সব বেচে দিচ্ছে বিজেপির সরকার? কেন সব সরকারি সম্পত্তির মালিকানা তুলে দিচ্ছেন মোদিজি, আদানি আম্বানি সহ হাতে গোনা কয়েকটা কোম্পানির হাতে?
এই প্রশ্নগুলো নিয়েই তো বামপন্থীদের লড়াই। এই প্রশ্নে যারাই লড়তে চাইছে, তাদের সবাইকে জড়ো করাই তো বামপন্থীদের কাজ। যতদিন এই দাবীগুলো নিয়ে লড়াইয়ের রাস্তায় ISF থাকবে, ততদিন রাস্তায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই লড়াই হবে।
এই প্রশ্নগুলো তোলার জন্যই এত আক্রমণ। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। যত রোটি কাপড়া মকান নোকরির দাবী উঠবে ধর্মীয় বিভাজনের বেড়াজাল ভেঙে, ততই ওদের মাথা খারাপ বাড়বে।