ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরো বিবৃতি
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের রায়ে বিজেপি প্রতিহত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে তারা যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল সেই পরিস্থিতি আর নেই। তাদের রাজনীতির প্রতিরোধে এমন ফলাফল এক নিদারুণ আঘাত। নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে এবারের লোকসভা নির্বাচনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে ৪০০টি আসনে জয়ী হবে বলে বিজেপি প্রচার চালিয়েছিল।
এবারের লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিত ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের উপরে সার্বিক আক্রমণ নামিয়ে আনা, কেন্দ্রীয় বিভিন্ন এজেন্সিগুলিকে অনৈতিকরূপে ব্যবহার করা এবং বিপুল অর্থের মাধ্যমে প্রচার। স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে ও দেশের সংবিধান, গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং নাগরিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সারা দেশ যে লড়াই করেছে, তাকে স্মরণে রেখেই দেশের জনসাধারণকে অভিনন্দন জানাচ্ছে পার্টির পলিট ব্যুরো।
এবারের নির্বাচনে ইন্ডিয়া ব্লক কিছু নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকরী প্রচার চালিয়েছিল। একদিকে ছিল বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে সংকটের মতো গুরুতর বিষয়গুলি, আরকেদিকে দেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপরে নামিয়ে আনা আঘাতকে প্রতিহত করা। এই নির্বাচনে দেশের জনসাধারণকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করতে নরেন্দ্র মোদী ও সামগ্রিকরূপে বিজেপি’র পক্ষ থেকে ক্রমাগত বিবিধ অপপ্রচার চালানো হয়, দেশবাসী সেইসব অপচেষ্টাকে যথেষ্টরূপেই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়া সকল পক্ষের জন্য নির্বাচন কমিশন যদি সমান নিয়ম-বিধির আইনানুগ বন্দোবস্তটি সুনিশ্চিত করতে পারত তবে বিজেপি’র জন্য এই নির্বাচনের ফলাফল আরও খারাপ হত। আদর্শ আচরণবিধির নিরিখে নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িক বুলি আওড়ানো বন্ধ করতে ব্যর্থতা নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে একটি কালো দাগ হিসাবেই চিহ্নিত হবে।
এখনও অবধি উপলব্ধ ফলাফলের নিরিখে বলা যায় সিপিআই(এম)-সহ অন্যান্য বামদলসমূহের ফলাফল সামান্য হলেও উন্নত হয়েছে। সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশিত হলে এই প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হবে।
নির্বাচনের ফলাফলে এমন রায় অবশ্যই ইঙ্গিতবাহী। দেশের সংবিধান গণতান্ত্রিক কাঠামো ও রুটি-রুজির উপরে নামিয়ে আনা আঘাতকে প্রতিহত করতে দেশবাসীর সংগ্রামী মেজাজ স্পষ্ট উপলব্ধি করা যায়।