সৌভিক ঘোষ
সফদার হাসমি – এই নামের সাথে শুধুই একপাল ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো ছেলে-মেয়েদের জড়ো করে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়িয়ে নাটক গান করার ব্যাপারকে দেখলে চলে না। সফদার’কে শুধুমাত্র ঐটুকু বিষয় হিসাবে দেখতেই আমাদের অভ্যস্ত করতে চায় অনেকেই। সেই চাওয়ার পিছনে যথেষ্ট রাজনীতি ছিল, আছে। আমরা সফদার হাসমি’কে মনে রাখবো কেন? কিভাবে? এসবের উত্তর পেতে সফদারের জীবনপঞ্জি ছাড়াও এদেশে গণআন্দোলনের ইতিহাস, গণসংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস এবং একইসাথে এদেশে বাম আন্দোলনের ইতিহাস পড়তে হবে, উপলব্ধি করতে হবে আমাদের সবাইকে। ঐ ইতিহাস এদেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস – আবার সারা পৃথিবীতে মানুষের অধিকারের স্বার্থে গড়ে ওঠা আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসের সাথেও সফদার’দের লড়াই সংযুক্ত; ছিল, রয়েছে –থাকবে। এই অনুভব নিয়েই সফদার হাসমি’কে মনে রাখতে হবে, ভুলে গেলে চলে না কায়েমি স্বার্থবিরোধী আন্দোলনের শহিদ সফদার, এদেশের শ্রমিক-মুজরদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের লড়াইকে নিজের লড়াইতে পরিণত করা শিল্পির নাম সফদার … মানুষের স্বার্থে সংগ্রামের এই শৈল্পিক এবং মানবিক ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে আজকের দিনটিকে স্মরন করা শুধুই এক নিছক উদযাপন ছাড়া আর কিছুই হবে না। স্মরন করতে হবে সংগ্রামের সেই শপথকে, মানুষের হয়ে মাথা উঁচু রেখে গান গেয়ে ওঠার সেই মেজাজকে; ব্যাক্তির শরীরটা হত্যা করা গেলেও লড়াইয়ের মেজাজকে আজও শেষ করা যায়নি…
এমনই মানুষ ছিলেন সফদার হাসমি।
তাকে মনে রেখে পূর্ণেন্দু পত্রী লিখেছেন –
নতুন শব্দ : সফদার হাসমি
এই মৃত্যুশোক
কাঁধ থেকে নামানো যাবে না কোনোদিন।
আর বর্বরতা কি নির্বোধ।
যেন মৃত্যু হলেই মুছে যায়
প্রতিজ্ঞার প্রাণ।
আক্রমণ কোনো নতুন শব্দ নয়।
হিংসা কোনো নতুন শব্দ নয়।
নতুন শব্দ-সফদার হাসমি।
সফদার হাসমি মানে জাগা,
জেগে থাকা,
জাগানো।