গৌতম রায়
বিজ্ঞানের ছাত্রেরা, তাঁদের নোতুন আবিষ্কার, মানুষের শরীরে প্রয়োগের আগে, গবেষণাগারে গিনিপিগের উপর তা প্রয়োগ করে থাকেন। সেই প্রয়োগ যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে তারপর তা পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের শরীরে ব্যবহার করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর’ স্বাভাবিক মিত্র ‘বিজেপির ভোট রাজনীতিতে সুবিধে, আর বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের সামাজিক বিভাজনের প্রেক্ষিতকে আরো বিস্তৃত করে, বিজেপির রাজনৈতিক সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রকে প্রস্তুত করবার পরীক্ষামূলক গিনিপিগ হিসেবেই বাংলার মুসলমান সমাজকে চিরদিন ব্যবহার করে আসছেন।
বিজেপির সুবিধার্থে মুসলমান সমাজ সম্পর্কে কি কৌশল নিলে বিভাজনের রাজনীতিকে আরো জোরদার করে তুলতে পারা যায় ,যার জেরে , ভোটের রাজনীতিতে বিজেপির সুবিধা হয়, সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই মমতা গত শতকের নয়ের দশকের শেষের দিক থেকে ,তাঁর সমস্ত ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলিকে জারি রেখেছেন।
অতি সম্প্রতি ,আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসাগুলি নিয়ে এক এক দিন, এক এক রকম অবস্থান নিয়ে মমতা, তাঁর প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িকতার গবেষণাগারে যাচাই করে দেখতে চাইছেন, কি ধরনের বিভেদ মূলক নীতি, ‘উন্নয়নের মোড়কে’ মুসলমান সমাজের প্রতি প্রয়োগ করলে, তার ফলশ্রুতিতে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আবারো নিরঙ্কুশ ভাবে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে পারে।
এই ক্ষেত্রে মমতা মুসলমান সমাজের একান্ত নিজস্ব শিক্ষা পদ্ধতি, মাদ্রাসাকে ঘিরে আবারও তাঁর নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছলে আত্মপ্রবঞ্চনার রাজনীতিকে প্রকট করে তুলে, এখন কেবলমাত্র হিন্দু সমাজকে মুসলমান সমাজের প্রতি উত্তেজিত করে তোলাই নয়, মুসলমান- মুসলমানের বিরোধ যাতে তীব্র হয়, মুসলমান সমাজ যাতে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার ঘিরে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে এবং ক্রমশ সংঘর্ষে মেতে ওঠে, যার ফলশ্রুতিতে মুসলমান সমাজের মধ্যে একটা গৃহযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হয়– সেদিকে মমতা আরএসএসের নির্দেশে সবরকম ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে শুরু করেছেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা ঘিরে তাঁর স্বভাবসুলভ অনৃতবাদনের মতই বেশ কিছু প্রকল্প নোতুন মাদ্রাসা তৈরি, অ অনুমোদিত মাদ্রাসা ,যেগুলিকে ‘খারিজি মাদ্রাসা’ বলা হয় ,সেগুলিকে ঘিরে একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। যদিও এমন প্রকল্প মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর, ২০১১ সাল থেকে একাধিক বার করেছেন, সেই ঘোষণা কিন্তুষ ঘোষণা ই থেকে গেছে। একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। বরঞ্চ পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা শিক্ষা যাকে বিজ্ঞানমুখী, আধুনিকীকরণের দিকে বামফ্রন্ট সরকার পরিচালিত করেছিল, সেই গোটা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে, মমতা কেবল ধ্বংসই করেননি, সেই শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে কেবলমাত্র ধর্মের নিগুড় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, কোনোরকম বিজ্ঞানমুখী, আধুনিক চিন্তা চেতনা সম্পন্ন ভাবধারা সেই শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত না হয় ,তার জন্য যত ধরনের কূটনৈতিক কৌশল, বিভাজনের রাজনীতি অবলম্বন করতে হয়, গত ১২ বছরের মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে মমতা তা করে গেছেন।
বামফ্রন্ট সরকার, পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানমুখী, আধুনিকীকরণের এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার জেরে কেবলমাত্র ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক দুনিয়া, বিশেষ করে আরব দুনিয়ার কাছে, বামফ্রন্ট সরকারের আমলের পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত আগ্রহের বিষয় ।বহু ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট আমলের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে রোল মডেল হিসেবে আরবের মাদ্রাসা গুলিতে পর্যন্ত সেখানকার কর্তৃপক্ষ প্রয়োগ করেছিলেন ।মাদ্রাসা শিক্ষার অন্যতম প্রধানতম্ভ থিয়োলজিকে বজায় রেখেই, আধুনিক বিজ্ঞানমুখী, বিশেষ করে ,প্রযুক্তি সম্পৃক্ত শিক্ষাকে, এ আর কিদোয়াই কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক ,বামফ্রন্ট সরকার যেভাবে প্রয়োগ করেছিল, তা ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়া মুসলমান সমাজকে, আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞান সম্পৃক্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আগ্রহী করে তুলে, অর্থনীতির মূল স্রোতে তাঁদের অংশগ্রহণের বিষয়টিকে অনেক বেশি পরিমাণে নিশ্চিত করেছিল।
কেবলমাত্র কায়িক শ্রম নির্ভর কাজেই মুসলমান সমাজ আবদ্ধ না থেকে, কর্মসংস্থানে র ক্ষেত্রে ,মেধাভিত্তিক নানা ধরনের কর্মসংস্থানে মুসলমান সমাজের অংশগ্রহণের এক নোতুন দিগন্ত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকীকরণের ফলে বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব হয়েছিল।
মমতা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে মুসলমান সমাজের উন্নতির নাম করে, আসলে মুসলমান সমাজের চরম ক্ষতি করবার লক্ষ্যে ,মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকীকরণের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ধাপে ধাপে ,অত্যন্ত নীরবে ,অথচ ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বানচাল করে দিতে উদ্যোগী হন। মুসলমান সমাজ যাতে কেবলমাত্র ধর্মের বেড়াজালের মধ্যে ই আবদ্ধ থাকে ,কোনো আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাভাবনা ,কর্মমুখী শিক্ষা, কর্মসংস্থানের জন্য তাঁদের অভিমুখকে ধাবিত করা, আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা –এইসব কোনো কিছুর সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে, সেজন্য তাঁদের উন্নতির নাম করে, তাঁদেরকে অবনতির চরম আবর্তে নিমজ্জিত করাই হলো মমতার লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে কাজে লাগিয়ে মমতা একদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পশ্চিমবঙ্গের বুক থেকে কার্যতা ধ্বংস করে দিতে সফল হয়েছেন। বামফ্রন্টের আমলে মাদ্রাসা শিক্ষার যে আধুনিক বিজ্ঞানমুখী ভাবধারা তৈরি হয়েছিল ,তাকে এমন একটা জায়গায় মমতা তাঁর ১২ বছরের শাসনকালে নিয়ে এসে উপস্থিত করেছেন যে ,পশ্চিমবঙ্গে সরকারি অনুমোদিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা এখন প্রায় উঠে যেতে বসেছে ।মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক নেই ।মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের রাস্তাকে অদ্ভুত আইনি জটিলতার ভেতর দিয়ে মমতা কার্যত রুদ্ধ করে রেখেছেন। মমতার লক্ষ্য ছিল, স্কুল কলেজে শিক্ষক নিয়োগের নামে যেভাবে দুর্নীতি হয়েছে, সেভাবে ই মাদ্রাসায় শিক্ষক -শিক্ষা কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করেও পুকুর চুরি করবার।
এই কাজে অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ,যখন তৃণমূল কংগ্রেসে অবস্থান করছিলেন, তখন তাঁর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে, মাদ্রাসা তে নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর সরাসরি যুক্ত থাকবার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল ।আজ বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী কে ঘিরে বহু রাজনৈতিক আক্রমণাত্মক কথা মমতা বললেও মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন উত্তীর্ণ হবু শিক্ষক ,যাঁরা আজও চাকরি পাননি, তাঁরা তাঁদের আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে তৃণমূল নেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মাদ্রাসা নিয়োগ ঘিরে কি ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সে সম্পর্কে যে সমস্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলিকে সামনে এনেছিলেন, তা নিয়ে কিন্তু আজ পর্যন্ত মমতা একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি ।কোন তদন্ত করা তো দূরের কথা।
মমতার তথাকথিত মুসলমান উন্নতির ফলে ঐতিহ্যমন্ডিত হুগলি মাদ্রাসা এখন চিরতরে বন্ধ। বামফ্রন্ট সরকার কলকাতা মাদ্রাসার আধুনিকীকরণ ঘটিয়ে যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছিলেন ,সেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, তৃণমূল কি ধরনের শিক্ষকদের উপরে গালিগালাজ থেকে শুরু করে অভব্য আচরণ করে, তার কিছু ভিডিও চিত্র আমরা সামাজিক গণমাধ্যমে দেখেছি ।আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনও এখন কার্যত স্তব্ধ। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি অর্থ বন্টনের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যমূলক আচরন মমতা সরকার করে চলেছেন।
এইরকম একটা অবস্থায় ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে ,তার আগেই লুটের পঞ্চায়েত ভোটে, বহু চেষ্টা করে ও মমতা যখন দেখতে পেলেন ,মুসলমান সমাজের সমর্থন তাঁর দিকে নেই , অর্থাৎ; মুসলমান সমাজকে বিভ্রান্ত করবার যে নোংরা খেলা মমতা দীর্ঘদিন ধরে খেলতে শুরু করেছিলেন ,সেই খেলা যে মুসলমান সমাজ ধরে ফেলছে আবার শিয়ালের কুমির ছানা দেখানোর মতোই, এটা বুঝেই , মমতা, মাদ্রাসা শিক্ষাকে ঘিরে নতুন নতুন তথাকথিত প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিতে শুরু করেছেন।
এই সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলির সাথে সাথে সরকার অ অনুমোদিত খারিজি মাদ্রাসা গুলিকে ঘিরেও তিনি একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে ছিলেন। বামপন্থীরা চিরদিন দাবি করে এসেছে, খারিজি মাদ্রাসা গুলিকে ধীরে ধীরে সরকারি অনুমোদনের ব্যবস্থা করে, মাধ্যমিক শিক্ষা বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আদলে সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসায় যেভাবে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং তার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, থিয়োলজি, অর্থাৎ ; ধর্মতত্ত্ব কে ও একটি সাবজেক্ট হিসেবে পড়ানো হয়, এমন পরিকাঠামোর মধ্যেই খারিজি মাদ্রাসাগুলিকে নিয়ে আসা হোক। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয়, এই খারিজি মাদ্রাসায় মুসলমান সমাজের ধনী ব্যক্তিদের জাকাত, ফেরত ইত্যাদি ধর্মীয় অনুদানের ফলে যে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা সরকারি স্তরের মিড ডে মিল ব্যবস্থা প্রচলনের বহু আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে ,গ্রামের গরীব মুসলমান সমাজের কাছে ,দুপুরবেলায় পেট ভরে খাবার সেই আকর্ষণ টাই কিন্তু এইসব খারিজী মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, এই সমস্ত দিকগুলির একটা সমন্বয় সাধন।
এটাই ছিল বামপন্থীদের দাবি। সেই লক্ষ্যেই বামফ্রন্ট সরকার ধীরে ধীরে তাঁদের কার্যক্রমকে প্রসারিত করছিলেন। কিন্তু মমতা ক্ষমতায় আসবার পর, মুসলমান সমাজকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে, তাঁদের মেধাভিত্তিক অর্থসংস্থানের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা , নিঃসন্দেহে সেই পরিকল্পনা, আরএসএসের ছোকে দেওয়া পরিকল্পনা ।আর তাই তাকে বাস্তবায়িত করবার লক্ষ্যেই মমতা গত ১২ বছর ধরে মুসলমান সমাজের সঙ্গে যে মিথ্যাচার করে চলেছেন, সেই মিথ্যাচারের জন্যেই এই নোতুন কর্মসূচি।
একদিন সরকার অনুমোদিত খারিজি মাদ্রাসা গুলিতে সরকার প্রদেয় বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা , যেগুলি বামফ্রন্ট আমলেই প্রচলিত ছিল, কিন্তু মমতা ক্ষমতায় আসবার পর, তার নানা ধরনের নাম দিয়ে, বশংবদ সাংবাদিকদের মাধ্যমে সেগুলি ,তাঁর একান্ত মস্তিষ্কপ্রসূত বলে চালাবার চেষ্টা করেন, সেই সমস্ত বিষয়গুলি, অর্থাৎ; পোশাক দেওয়া, স্কুলব্যাগ দেওয়া, অ্যান্ড্রয়েড ফোন দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কে খারিজি মাদ্রাসার ক্ষেত্রে বলবৎ থাকবে –এই ঘোষণা সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসার ঘিরে নানা ধরনের প্রচারের পাশাপাশি মমতা করেছিলেন। কিন্তু মজার কথা হলো ,এই ঘোষণা ঠিক পরের দিন ই সংশ্লিষ্ট ঘোষণা থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে ,মমতা ঘোষণা করেছেন, সরকারি কর্মকান্ডের কোনো প্রভাব, সরকার অনুমোদিত খারিজি মাদ্রাসা গুলিতে পড়বে না।
মমতার ঘোষণা, সরকার কোনো অবস্থাতেই খারিজি মাদ্রাসার কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করবে না ,ওখানে কি পড়ানো হবে, কি পোষাক হবে, কিভাবে শিক্ষক জোগাড় করা হবে সেটাতে খারিজী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ।সে বিষয়ে সরকার কোনোভাবে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না।
প্রশ্ন হল একদিন আগেই খারিজী মাদ্রাসা সম্পর্কে অনেক ধরনের গাল ভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে , কেন এভাবে সেই প্রতিশ্রুতি থেকে একদম বিপরীতমুখী অবস্থান মমতা গ্রহণ করলেন? মমতা কি চাইছেন মওলানা, মৌলবি নিয়ন্ত্রিত মুসলমান সমাজের সামাজিক পরিকাঠামো গ্রামীণ বাংলায় আরো জোরদার হোক? মুসলমান সমাজের সামাজিক পরিকাঠামো যদি ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেখানে যদি সামাজিক ,সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কোনো প্রভাব না থাকে, তাহলে প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িকতা ,যেটি মমতার শাসন যন্ত্রের পরিচালনার মূল রসদ , সেটিকে পরিচালিত করবার ক্ষেত্রে ,পরিবেশিত করবার ক্ষেত্রে ,সমাজের বুকে গেঁথে দেওয়ার পক্ষে ,মমতার কাছে বেশি সুবিধে জনক হবে ? আর এই প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িকতার ফসল ভোটের মাধ্যমে ঝরে পড়বে বিজেপির ভোট বাস্কে? এই লক্ষ্যেই কি মমতা চান ,খারিজি মাদ্রাসা গুলি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো আওতায় মধ্যে না আসুক?
হিন্দু-মুসলমানকে কিভাবে পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিতে হয় ,তার আদল মমতা যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের বুকে পরিবেশিত করছেন, তা থেকে এটা খুব পরিষ্কার, সেই আদল তিনি শিখছেন নাগপুরের রেশমবাগের কেশব ভবন ,অর্থাৎ ;আরএসএসের সদর দপ্তর থেকে। কিন্তু তার পাশাপাশি খারিজি মাদ্রাসা ঘিরে মমতার যে অবস্থান ,খারিজি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মের নিগড় অন্ধকারে ঠেলে ফেলে দিয়ে, সেখানে কোনোরকম আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত, যুক্তি নির্ভরতার জায়গা না করে দেওয়ার যে রাজনৈতিক অবস্থান ,সেই রাজনৈতিক অবস্থান মুসলমান সমাজের মধ্যে যাতে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই মমতা যে খারিজি মাদ্রাসায় সরকারি হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অবস্থান গ্রহণ করেছেন , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের জায়গা নেই। এখান থেকে এটাই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, মুসলমান সমাজ ,নিজেদের ভেতরে আধুনিকতা বনাম ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ইত্যাদিতে নিমজ্জিত থেকে ,পরস্পর, পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই দ্বন্দ্বে মেতে উঠে ,অর্থনীতির মূল স্রোত, কর্মসংস্থানের মূল স্রোত — সেই সব জায়গা থেকে যাতে দূরে সরে যায়, সেটা নিশ্চিত করা।
আর তার ফলেই আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি, সামাজিক মেরুকরণকে তীব্র করে ,ভোট রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয়, সেই পথেই মমতা হাঁটতে শুরু করেছেন। মমতা চান ,ঠিক একটা অংশের হিন্দুদের আদলে এই মুসলমান সমাজও, নিজেরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে -বিরোধে- সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক, যাতে আধুনিকতা, বিজ্ঞান চেতনা ,বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা– এসব কোনো কিছুর ভেতর দিয়ে মুসলমান সমাজ কেবলমাত্র কায়িক শ্রম নির্ভর কর্মসংস্থানের গতিপথ থেকে নিজেদের উত্তোলিত করে ,মেধা ভিত্তিক ,মেধা নির্ভর কর্মসংস্থানের দিকে নিজেদের পরিচালিত করতে না পারে। তাহলেই কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নয়, দেশের গোটা পূর্বাঞ্চলে মায়, ত্রিপুরা থেকে মনিপুর, আসাম সর্বত্রই ধর্মান্ধ হিন্দু সম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোট কুড়োতে সুবিধা হয়।
মতামত লেখকের নিজস্ব