ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন
ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন পরিবারের চাষের জমিতে রাইফেল চারশো করবেন যাতে সাম্রাজ্যবাদের সাথে লড়াই করা যায়। ব্রিটিশ ভারতে পাঞ্জাব প্রদেশে ১৯০৭ সালে তার জন্ম। ভগৎ সিং – পিতা কিষান সিং, মা বিদ্যাবতী। ছোট থেকেই তার উপরে গদর আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়ে, গদর আন্দোলনের নেতা কর্তার সিং সারাভা’কে নিজের আদর্শ মনে করতেন।
১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সময় ভগৎ সিং’র বয়স ১২ বছর। ঐ ঘটনার পরে তিনি অমৃতসরে চলে যান। ১৯২৩ সালে লাহোর ন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হন। পরিবার থেকে তার বিবাহের প্রস্তাব এলে তার প্রতিক্রিয়া ছিল পরাধীন দেশে একমাত্র মৃত্যুই তার স্ত্রী হবার উপযুক্ত।
তার নেতৃত্বেই হিন্দুস্থান রিপাবলিকান আর্মি (HRA) নাম বদলে হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি (HSRA) নামে পরিচিত হয়। ১৯২৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ভগৎ সিং এবং শিবরাম রাজগুরু ব্রিটিশ পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট জন সন্ডার্স-কে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন। এই মামলা ছাড়াও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোমা ছোঁড়া এবং লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে আসামী হিসাবে গ্রেফতার করা হয় এবং আদালতের বিচারে তার ফাঁসির শাস্তি ঘোষণা হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মসূচী হিসাবে পার্লামেন্টে বোমা ছোঁড়া সম্পর্কে অনেকই প্রশ্ন তোলেন, এতে তার প্রতিক্রিয়া ছিল – “Force when aggressively applied is ‘violence’ and is, therefore, morally unjustifiable, but when it is used in the furtherance of a legitimate cause, it has its moral justification.” ব্রিটিশ সংসদে বোমা নিক্ষেপ করা হলেও সেই বমায় স্প্লিন্টার ব্যবহৃত হয় নি, এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসাবেই এমনটা করা হয়েছিল। তারা কারোর প্রাণ কেড়ে নিতে বোমা নিক্ষেপ করেন নি, মানুষের দুঃখ, যন্ত্রণার প্রতি যারা বধির তাদের কানে নিপীড়িত মানুষের আওয়াজ পৌঁছে দিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন। এই বোমা ছিল একটি প্রতীক – সেই সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের ক্ষোভের প্রতীক, আসন্ন বিদ্রোহের প্রতীক।
জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় যতীন দাস, শুখদেও থাপার, শিবরাম রাজগুরু এবং আরও অনেকের সাথে ভগৎ সিং অনশন আন্দোলন করেন। সেই অনশনের ৬৩ দিনে বিপ্লবী যতীন দাসের মৃত্যু হয়।
১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ সন্ধ্যা সাতটার সময় লাহোর জেলে ভগৎ সিং, শুখদেও থাপার এবং শিবরাম রাজগুরুর ফাঁসি কার্যকর হয়। ব্রিটিশ সরকার এই কাজের ফলাফল সম্পর্কে ভীত ছিল, তাই নির্ধারিৎ তারিখের আগেই তারা ভগৎ সিং, শুখদেপ থাপার এবং শিবরাম রাজগুরুকে ফাঁসি দেয়। ফাঁসির আগে ভগৎ সিংকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষমা চাইতে অনুরোধ করা হয়, ভগৎ সিং সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। ফাঁসির মঞ্চে মুখ ঢাকার কাপড় ব্যবহার করতেও তিনি অস্বীকার করেছিলেন।
১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ ভগৎ সিং, শুখদেও থাপার ছিলেন ২৩ বছরের যুবক, শিবরাম রাজগুরুর বয়স ছিল ২২ বছর। এদের সকলেরই পছন্দের রাজনৈতিক স্লোগান ছিল “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”।
ওয়েবডেস্কের পক্ষেঃ সৌভিক ঘোষ