26CPIMWB Part III

Metiabruj To Kolkata: A Retrospect (Part III)

১৫-১৭ মার্চ, কলকাতায় হতে চলেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র ২৬তম রাজ্য সম্মেলন। ব্রিটিশ শাসনে থাকা ভারতের অবিভক্ত বাংলায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম রাজ্য সম্মেলন হয় ১৯৩৪ সালে। মেটিয়াবুরুজে। সর্বহারা-কৃষক মেহনতি মানুষের স্বার্থে শ্রেণিসংগ্রাম, গণআন্দোলন পরিচালনায় এই রাজ্যে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উজ্জ্বল। রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য নজির। মেটিয়াবুরুজ থেকে কলকাতা। প্রথম থেকে ২৬তম সম্মেলন। সেই ইতিহাসেরই গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য রাজ্য ওয়েবডেস্কের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হবে চারটি পর্বে। আজ তৃতীয় পর্ব।

১৫শ রাজ্য সম্মেলন (২৯ নভেম্বর ডিসেম্বর, ১৯৮৫)

সরোজ মুখার্জি

সম্মেলন আয়োজিত হয় কলকাতার টালিগঞ্জে। সম্মেলনের মূল স্লোগান ছিল ‘পার্টির অনুসৃত সঠিক রাজনৈতিক লাইনকেই জনগনের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে’। এর ব্যখ্যায় বলা হয়, ‘জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যপথে অবিচল থেকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে লড়াই – সংগ্রাম ও বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন অভিযানের মধ্যে দিয়ে। এই সমস্ত সংগ্রামের একটি লক্ষ্য জনগণের রাজনৈতিক চেতনার উন্নতি সাধন’। রাজ্যগুলির হাতে অধিক ক্ষমতার দাবী তোলা হয় এবং বামফ্রন্ট সরকারের শিল্পনীতি সংক্রান্ত আলোচনা হয়। এই সম্মেলন থেকেই গনশক্তি পত্রিকা প্রভাতী দৈনিক হিসাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে। ৫৭৬ জন প্রতিনিধি ও ৭২ জন দর্শকের উপস্থিতিতে এই সম্মেলনে ৯৪ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়। সম্পাদক নির্বাচিত হন সরোজ মুখার্জি।  

১৬শ রাজ্য সম্মেলন (৩-৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৮)

আগামীদিনের বিরাট সম্ভাবনা ও চাহিদাপূরণে গোটা পার্টিকে এগিয়ে যেতে হবে, যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় উপযুক্ত সংগঠন চাই – এই ছিল সম্মেলনের মূল স্লোগান। জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলির সঙ্গে একযোগে কেন্দ্রের কংগ্রেস (আই) সরকারকে উচ্ছেদ করে বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠাই আশু লক্ষ্য স্থির করা হয়। ৯৯ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়, রাজ্য সম্পাদক হিসাবে সরোজ মুখার্জি পুনর্নির্বাচিত হন।

১৭শ রাজ্য সম্মেলন (১১-১৫ ডিসেম্বর, ১৯৯১)

শৈলেন দাশগুপ্ত

ষোড়শ রাজ্য সম্মেলনের পর আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরিস্থিতিতে বদল ঘটে। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অন্তর্গত কিছু দেশে বিপর্যয়ের ফলে বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য ধনতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্য বিপন্ন হয়। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার উত্থান লক্ষ্য করা যায়। ভারতের বৈশিষ্ট অনুযায়ী মার্কসবাদ-লেনিনবাদের প্রয়োগ এবং মতাদর্শগত সংগ্রামকেই উর্ধে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয় সম্মেলন থেকে। জনগনের সামনে কংগ্রেস(আই) অনুসৃত আর্থিক নীতি এবং বিজেপি’র শ্রেণি চরিত্র উন্মোচনকেই লক্ষ্য হিসাবে স্থির করা হয়।  সম্মেলনে আহ্বান জানানো হয় – মার্কসবাদ-লেনিনবাদের কোন বিকল্প নেই, গণসংযোগের মাধ্যমেই পার্টির কাজকে আরও গতিশীল করে তুলতে হবে। ৯১ জনের রাজ্য কমিটি, ১৩ জনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়, রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন শৈলেন দাশগুপ্ত।

১৮শ রাজ্য সম্মেলন (-৫ মার্চ, ১৯৯৫)

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভারসাম্য সাম্রাজ্যবাদের দিকে ঝুঁকে রয়েছে এবং ভারতে একদিকে নরসিমা রাও সরকারের আর্থিক নীতির স্বপক্ষে ব্যাপক সমর্থন জোটাতে সক্ষম হয়েছে অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় মোর্চা রাজনৈতিক ভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেনি – যাদবপুর, কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই সম্মেলনের আলোচনায় উঠে আসে। পরিস্থিতির উপযোগী পার্টি সংগঠন গড়ে তুলে সর্বত্র পার্টির নীতি-আদর্শকে পৌঁছে দিতে হবে, সম্মেলন থেকে বামফ্রন্ট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উল্লেখের সাথেই সারা দেশে বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী শক্তির বিকল্প গড়ে তলার আহ্বান জানানো হয়। ৯১ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়, পুনরায় রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন শৈলেন দাশগুপ্ত।

১৯তম রাজ্য সম্মেলন (২৭-৩০ আগস্ট, ১৯৯৮)

হাওড়ার শরতসদনে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মূল্যায়নে উল্লেখ করা হয় পুঁজিবাদ মানুষের জীবনের মৌলিক সমস্যা সমাধানে অক্ষম আরও একবার প্রমানিত হয়েছে, সুতরাং সমাজতন্ত্রই একমাত্র বিকল্প। জাতীয় ক্ষেত্রে বাম গণতান্ত্রিক শক্তির তৃতীয় বিকল্পই মানুষের চাহিদা বলে উল্লিখিত হয়। সেই লক্ষ্যে পার্টি সংগঠনকে আরও উপযোগী, আরও শক্তিশালী করে তোলার ডাক দেওয়া হয়। ৮০ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়, রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন শৈলেন দাশগুপ্ত।

২০তম রাজ্য সম্মেলন (২২-২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০২)

অনিল বিশ্বাস

সম্মেলনে বিজেপি’র হাত থেকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংসদীয় গণতন্ত্রকে রক্ষার আহ্বান জানানো হয় সম্মেলন থেকে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনকে এর মজবুত এবং প্রসারিত করার সাথেই শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে বামফ্রন্ট সরকারকে আরও জনমুখি করেতলার অঙ্গীকার গৃহীত হয়। আরও বেশি নীতিনিষ্ঠ এবং ত্রুটিমুক্ত পার্টি গঠন করে সংগঠনের গণভিত্তি প্রসারিত করার আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলন থেকে ৮৫ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়। রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন অনিল বিশ্বাস।

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া, গনশক্তি – লেখার সাথে সদৃশতা বজায় রেখে ছবি যুক্ত হয়েছে, সবক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ছবি পাওয়া যায় নি

তথ্যসুত্রঃ গনশক্তি

**************************************

Spread the word

Leave a Reply