সংখ্যাগরিষ্ঠতাই জাতীয়তাবাদ নয়
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের প্রখ্যাত গবেষক অধ্যাপক রোমিলা থাপার দেশের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসের দুদিন আগে এক ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেছেন ভারত ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু রাষ্ট্র ছিল এই মতামত তর্কাতীত নয়।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকে কারওয়ান নামে এই ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানটি পরিকল্পিত এবং সম্প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা ছিল বিগত ২০০ বছর ধরে ভারতের ইতিহাস যেভাবে লেখা হয়েছে তার পর্যালোচনা করা। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে প্রথমে ঔপনিবেশিক ঐতিহাসিকেরা এবং পরে জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদেরা যেভাবে এদেশের ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন তাকেই আলোচনার বিষয়বস্তু করা হয়েছিল।
সেই আলোচনারই একটি অংশে জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ এলে অধ্যাপক রোমিলা থাপার ব্যাখ্যা করেন এদেশে জাতীয়তাবাদের অর্থ হবে সমষ্টিগত অস্তিত্ব সম্পর্কে জনগণের প্রত্যেকে নিজেকে কিভাবে দেখছেন কিংবা কোন অবস্থানে খুঁজে পাচ্ছেন। ভারতের সমাজ এই সমষ্টিগত ঐক্যকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে সেই দৃষ্টিভঙ্গি হবে ভারতে জাতীয়তাবাদ বুঝে নেওয়ার উপায়। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন সমষ্টিগত অস্তিত্ব বলতে বোঝায় ভারতে বসবাসকারী প্রত্যেকে সমান অধিকারের ভিত্তিতে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রয়োগ করতে পারছেন। এর বদলে যদি জাতীয়তাবাদ গড়ে তুলতে গিয়ে কোন একটি বর্ণ, একটি ভাষা, একটি ধর্ম কিংবা একটি সংস্কৃতির নামে সংখ্যাধিক্যের অধিকার প্রয়োগকেই প্রধান করা হয় তবে সেই ব্যবস্থা কখনোই জাতিয়বাদ হবে না, বরং তা হবে জাতিয়বাদের অভিমুখ থেকে অনেকটা বিপথগামী হয়ে সংখ্যাধিক্য বাদ।
এ প্রসঙ্গে তিনি তিনি বলেন আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে ভারতের সমস্ত অংশের মানুষ এক যোগে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিল, তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল। দুই জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণা ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া, এবং এই ধারণা মূলত ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রগঠনের মতবাদ। অত্যন্ত দুঃখের হলেও এ কথা ঠিক ব্রিটিশ শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া সেই ধারণা এদেশের কিছু মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল।
আজ ১৫ই আগস্ট ২০২০, ভারতের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস। ধর্মের নামে, সম্প্রদায়ের নামে ব্রিটিশ শাসকের চক্রান্তে এই দেশ স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাথে সাথেই ভেঙে দুই ভাগ হয়েছিল। আমরা ভেঙে ‘ ওরা – আমরা ‘ হয়েছিল। তাই আজকের ভারতে স্বাধীনতার দিনে আমাদের প্রত্যেকের শপথ হবে মানুষকে মানুষের থেকে আলাদা দেখানোর, আলাদা করে রাখার যেকোনো প্রচেষ্টাকেই রুখে দেবার। স্বাধীন ভারতের সংবিধান ভারতের প্রত্যেক নাগরিককে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়। সেই অধিকার রক্ষা করতে হবে আমাদের সকলকেই।