Tushar Ghosh Brigade Cover

‘It is not in the stars to hold our destiny but in ourselves’: The Brigade

তুষার ঘোষ

১) এই সময়কালে শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুররা যেমন আক্রান্ত তেমনি ছাত্র যুব মহিলাদের অবস্থাও দুর্বিসহ। কি বলবেন?

মোদীর আমলে হাতেকড়া পরিয়ে, পায়ে শিকল বেঁধে ভারতীয় যুবকরা ফেরত আসে আমেরিকা থেকে, অন্যদিকে মমতার আমলে পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিন রাজ্য থেকে লাশ হয়ে মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন জেলায় ফিরে আসে। মোদীর আমলে ভারতের চাষিরা এমএসপি’র দাবিতে রক্ত দিয়ে লড়াই করে, আর মমতার আমলে বাংলা চাষিরা ধানের দাম কুইন্টাল পিছু ১২০০-১৩০০ টাকার বেশি পায় না। লাভের গুড় চেটে খায় জ্যোতিপ্রিয়র মতো খুঁটে খাওয়ার দল। মমতার রাজত্বে ৪ বিঘা পর্যন্ত জোতের চাষি কৃষি থেকে আয় করেন ৯২৮ টাকা, আর গতর খাটিয়ে আয় করেন ৩,৮২৯ টাকা।

মোদীর সময়ে ভারতে সর্বোচ্চ বেকার। লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের অন্তর্জলিযাত্রা ঘটছে মোদীর সময়। রাজ্যেও নতুন শিল্প নেই, উলটে চালু চালু কারখানাও কারখানাগুলির ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে। বেকারদের মমতা নিদান দিচ্ছেন, চপ শিল্পে ভালো আয়, আর মোদী বলছেন পকৌড়া ভাজো।

কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমকোড বিল বাতিলের দাবিতে বাংলার শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে, সেই প্রতিবাদকে স্তব্ধ করতে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ নেয় মমতার প্রশাসন। মোদীর সময় ফসলের দাম না পেয়ে ৪ লক্ষ চাষি-খেতমজুর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। ফসলের দাম না পেয়ে ঋণের দায়ে, মাইক্রোফাইনান্সের জুলুমে বাংলার প্রায় ২৫০০ বেশি কৃষক-খেতমজুর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে তৃণমূলের আমলে। দেশে মায়েদের, মেয়েদের উপর অত্যাচার চলছে। অভয়ার মৃত্যু রাজ্যের মানুষের মনকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। মমতা ও মোদী সবকিছুকেই ক্ষুদ্র ছোট ঘটনা বলে চালিয়ে দেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে গরিব মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। এনিয়ে লোকসভায় মোদীর মুখে কথা নেই। আর মমতা ‘ট্রাস্ক ফোর্স’-র ললিপপ দেখিয়ে বলেন, ‘ওরা বাজারে বাজারে ঘুরে দেখে নিচ্ছে কিভাবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়’। কিন্তু কিছুই হয় না। মোদী সরকারের শিক্ষানীতিতে গরিব ঘরের ছেলে-মেয়েরা যাতে উচ্চ শিক্ষায় না যেতে পারে তার পাকাপাকি ব্যবস্থা হচ্ছে, অন্যদিকে মমতার সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকে লাখো পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এরা মূলত গরিব ঘরেরই ছেলে-মেয়ে।

সকলের স্বার্থে ব্রিগেড সমাবেশে দলে দলে যোগ দিন।

tribal_women_bengal_2009051_630_630

২) তৃণমূল-বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ব্রিগেড সমাবেশে আপনাদের রুটি রুজির দাবির লড়াইতে সাফল্যের সম্ভাবনা কতদূর?

মোদী সরকার ওয়াকফ সম্পত্তিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে, মসজিদের নিচে মন্দিরের প্রচার করে মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক ধরাচ্ছে। ৩৬টি ওবিসি গোষ্ঠীকে বাতিল করে দলিতদের জব্দ করার চেষ্টা করছে মোদী সরকার। সরকারি টাকায় রামমন্দির গড়েছে বিজেপি। মমতা সরকারি টাকায় দীঘায় জগন্নাথ দেবের মন্দির গড়ছেন। মুখে ওয়াকফ সম্পত্তির পক্ষে গলা ফাটাচ্ছে তৃণমূল, কিন্তু পার্লামেন্ট বিল পাশের সময় নিষ্ক্রিয়, যা দেখা গিয়েছিল নিষ্ক্রিয়, যা দেখা গিয়েছিল এনআরসি’র সময়। রাজ্যের পাঁচ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হলো মমতা সরকারের জালিয়াতি আর বেনিয়মের জন্য। মমতা দু’দিকে খেলছেন- একদিকে ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের বোঝাচ্ছেন তোমাদের জন্য দীঘায় জগন্নাথ দেবের মন্দির গড়ছি, অন্যদিকে মুসলিমদের বোঝাচ্ছেন আমি আছি বলেই তোমরা টিকে আছো।পশ্চিমবঙ্গের গরিব,মধ্যবিত্ত মানুষ দুই শাসক দলের বিভাজনের রাজনীতি এবং মিডিয়ায় তৈরি বাইনারি দেখতে দেখতে ক্লান্ত, অবসন্ন। রামমন্দির করে চমক দিয়ে গরিবের সব অধিকার কেড়ে নিচ্ছে মোদী সরকার। অন্যদিকে লক্ষ্মী ভাণ্ডার দিয়ে নিজের মাহাত্ম্য প্রচারে ব্যস্ত মমতা, কিন্তু লক্ষ্মীর ঘরের ছেলে বেকার, রাজ্যে কাজ না পেয়ে ঘরছাড়া। কৃষক চাষ ছেড়ে দিচ্ছে। এম এ, বি এ, বি টেক ডিগ্রির কোনও মূল্যই আজ নেই বাংলায়। দেশে, রাজ্যে অল্প কিছু মানুষের হাতে সম্পদের পাহাড়। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ক্রমশই নিম্নবিত্ত হচ্ছে। ধনী চাষি মাঝারি চাষিতে, মাঝারি চাষি প্রান্তিক চাষিতে আর গরিব চাষি খেতমজুরে পরিণত হচ্ছে। একদিকে কৃষিতে মন্দা অন্যদিকে কৃষিতে যন্ত্রের দাপটে খেতমজুরের কাজ কমছে। রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা কাজ নেই, বেঁচে থাকার মজুরি নেই। ‘কাজ চাই, মজুরি চাই’ এই দাবিতে ব্রিগেড ভরিয়ে দেবে শ্রমজীবী জনতা, যাদের রক্ত ঘামে বাংলার সভ্যতা টিকে আছে। শুধু ব্রিগেড ভরালেই হবে না। চাই শ্রমজীবী মানুষের ইস্যুভিত্তিক দাবি আদায়ের জন্য ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রাম। সীমিত জায়গায় হলেও এই লড়াই চলছে। কোথাও চলছে মজুরি বৃদ্ধির লড়াই, বর্গা, পাট্টা বাঁচানোর লড়াই। এইসব লড়াইয়ের ফলে কোথাও কোথাও আংশিক জয়ও হচ্ছে। যেসব এলাকায় লড়াই হচ্ছে, সেখানে গরিব মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। আমাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গরিব মানুষের মনের কথা জানতে হবে। তাই ঘেরাটোপে না থেকে শ্রমজীবী মানুষের পাড়ায় নিয়মিত যেতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে। তবেই তাদের জীবন যন্ত্রণার প্রকৃত ইস্যুগুলি খুঁজে পাওয়া যাবে। শ্রেণির মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো যাবে না। ব্রিগেড সমাবেশের পরেও লাগাতার লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে। বিগত দিনের বাংলার গৌরবজনক শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর সহ অন্যান্য অংশের আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে বলা যায়-শ্রমজীবী জনগণের জীবন-জীবিকার আন্দোলন গড়ে তুলেই লুটেরা লগ্নিপুঁজির স্বার্থ রক্ষাকারী সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং বাংলার সর্বনাশকারী শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব।

৩) তৃনমুল-বিজেপি’দের লুটে খাওয়াদের দল বলা হচ্ছে কেন?

ভোটের সময় বিজেপি, তৃণমূল সহ অনেক দল পুঁজিপতি, কর্পোরেট, ধনী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়। তার নাম ইলেক্টোরাল বন্ড। এই পার্টিগুলি সেই টাকা ভোটের কাজে ব্যবহার করে। এখন কর্পোরেট মালিকরাই মিডিয়ার মালিক। যে পার্টি ক্ষমতায় থাকলে বা আসলে তাদের লাভ হবে, সেই অনুযায়ী নিরপেক্ষতার ভান দেখিয়ে তারা প্রচার করে। রাষ্ট্রশক্তি, পেশিশক্তি, অর্থশক্তি, মিথ্যা প্রচার, বিভাজনের রাজনীতি এগুলোই নির্বাচকদের প্রভাবিত করছে। ভোটে জিতে যারা এমপি-এমএলএ হচ্ছেন, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠই বিশাল ধনী। শাসকদলের শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি কর্পোরেটসুখী। ২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত বিজেপি সরকার প্রতিদিন একটু একটু করে শ্রমজীবী মানুষের অর্জিত অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। প্রায় বিতর্ক আলোচনা ছাড়া সব ধরনের জনবিরোধী বিল পার্লামেন্ট ও রাজ্যসভায় পাশ করে নিচ্ছে। এই সরকারের মূল কাজ, দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের ধন-সম্পদ বাড়ানোর জন্য আইন প্রণয়ন করা, অন্যদিকে শ্রমজীবী মানুষের অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়া। আর মুসলমানদের ভিলেন বানিয়ে হিন্দুদের হিন্দুত্বের ছাতার তলায় আনার জন্য আরএসএস’র কর্মসূচি কার্যকর করা। এদের কাছে সাধারণ মানুষের কোনও মূল্য নেই। এরা মানবতা বিরোধী। ছোট ক্ষেত্র হলেও মমতা ব্যানার্জিও বিজেপি’র সঙ্গে তাল মিলিয়েই কাজ করছে।

মোদী রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আছেন। মমতা রাজ্যে আছেন। কিন্তু অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য আছে কি? জমির প্রশ্নে মোদী জমিতে কর্পোরেটরাজ কায়েম করতে চান। মমতা সরকারি জমি, চা বাগানের জমি কর্পোরেট আর রিয়েল এস্টেট মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার আইন পাশ করেছেন। তৃণমূল আমলে বি এল আর ও অফিসগুলি প্রোমোটার-জমির দালালদের আখড়া হয়ে উঠেছে। এই দুই দলই ভোটের জন্য কর্পোরেটদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। ভোটের পর জনগণের গলায় ফাঁস লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা তার কয়েকগুণ অর্থ তুলে নিচ্ছে। মোদীর বন্ধ আদানি দেশের সম্পদ লুটছে, এদিকে চাকরি চুরি, বালি চুরি, খাদান চুরি, জমি চুরি, রেশন চুরি, ১০০ দিনের কাজের মজুরি চুরি, আবাস চুরি সহ সব ক্ষেত্রেই লুটে এক নম্বরে তৃণমূল। তাই আমরা দাবী তুলেছি দেশ বাঁচাতে আর রাজ্যে বদল আনতে ২০শে এপ্রিল ব্রিগেড চলো।

৪) বাংলায় ১০০দিনের কেন্দ্রীয় অর্থ পাঠানো বন্ধ করেছে মোদী সরকার। এর জন্যে কি মমতা সরকারের দুর্নীতি দায়ী?

২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের কেন্দ্রীয় অর্থ পাঠানো বন্ধ রয়েছে। লক্ষ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডার কাজ করে টাকা পায়নি। স্ট্রে বকেয়াও অজ পর্যন্ত মেটায়নি মোদী সরকার। কেন বন্ধ কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাঠানো? কেন্দ্রীয় গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রক একটি আরটিআই’র উত্তরে জানিয়েছে ২০১৯ জানুয়ারি, ২০২২ মার্চ ও এপ্রিল মাস- তিন দফায় কেন্দ্রীয় সরকারের টিম ১০০ দিনের কাজ নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত চালায়। ৬৩টি প্রকল্পে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩১ টিতেই বেনিয়ম ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের অভিযোগ এই সকল বেনিয়ম রাজ্যসরকারকে জমানো হলে, সরকার উত্তর দিতে অনেক দেরি করে এবং অসন্তোষজনক ‘অ্যাকশন টেকেন’ রিপোর্ট পাঠায়। ১০০ দিনের কাজের আইনে ২৭ নম্বর ধারাটি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই ধারা অনুসারে প্রকল্প কার্যকর সংক্রান্ত বেনিয়ম বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন ফান্ড পাঠানো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে পারে। কিন্তু এই ধারাতে এটাও বলা আছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য বরাদ্দ বন্ধ রাখা যায় না এবং যুক্তিসঙ্গত সময়েই কাজ আবার যাতে শুরু করা যায় তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যথা যথ সমাধান সূচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সমাধানমূলক পদক্ষেপ নিতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় সরকার সেটা আলোর মতো স্পষ্ট এখন। তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি এবং বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক ক্ষুদ্র স্বার্থের বলিএ রাজ্যের লক্ষ কোটি গ্রামীণ গরিব মানুষ। ১০০ দিনের কাজে বর্তমান রাজ্যের শাসক দল ও রাজ্য সরকার ব্যাপক দুর্নীতি যে করেছে, তা জলের মতো পরিষ্কার। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত একজনকেও শাস্তি দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু প্রকল্প বন্ধ করে, হতদরিদ্র মানুষের রুটি-রুজি কেড়ে নিয়েছে ওরা। এই প্রকল্প আইনসিদ্ধ করতে কৃষক, খেতমজুররা দীর্ঘদিন লড়েছেন। সংসদে এই আইন তৈরি করতে বামপন্থী সাংসদরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। গ্রামীণ জীবনে সামগ্রিক বিপর্যয় নেমে আসার অন্যতম কারণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প বন্ধ থাকা। অর্জিত অধিকার ফিরে পেতে খেতমজুর সহ গ্রাম-শহরের মেহনতি মানুষের জোটবদ্ধ লড়াই একমাত্র পারে পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে। ‘১০০ দিনের কাজের অধিকার ফিরিয়ে দাও’ লক্ষ কণ্ঠে এই দাবি উচ্চারিত হবে ২০ এপ্রিল ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে।

Spread the word

Leave a Reply