ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (ষষ্ঠ পর্ব)
আরএসএস তাদের কর্মী সমর্থকদের ভেতরে নিজেদের আদর্শ বোধের ভিত্তি তৈরি করতে হেডগেওয়ারের শৈশব-কৈশোরের জীবন চর্চার পাশাপাশি, খুব গুরুত্বের সাথেই মেলে ধরে, হেডগেওয়ারের শিক্ষা জীবনের প্রতিটি স্তর কে ।এই ক্ষেত্র টিকে তারা শুরু করে হেডগেওয়ারের একদম শৈশবের স্কুল জীবন থেকে। হেডগেওয়ারের শৈশবে তার শিক্ষা জীবনে প্রথাগত শিক্ষার পরিমণ্ডলের পাশাপাশি ,আধ্যাত্মিক শিক্ষা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল- সেই বিষয়টিকে আরএসএস ,তাদের কর্মী-সমর্থকদের চিন্তাচেতনার জগৎকে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে ,বৌদ্ধিক পরিমন্ডল হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহার করে থাকে ।
সেই সঙ্গে আধ্যাত্বিক পরিমণ্ডলের পাশাপাশি ,মারাঠা শাসক শিবাজী ,কিভাবে শিশু হেডগেওয়ারের চিন্তা-চেতনার স্তরকে, স্বদেশ চেতনা তে পরিব্যাপ্ত করেছিল, সেই আবেগ টা কে সামনে রেখে ,প্রকৃতপক্ষে শিবাজীর মুসলিমবিদ্বেষ ,কিভাবে হেডগেওয়ারের চিন্তা-চেতনায় একদম শিশু বয়সে মুসলিম বিদ্বেষের বীজকে অঙ্কুরিত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল –এটা আরএসএস তাদের আদর্শগত ভিত্তি বিস্তারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত করে থাকে।
শিবাজী কে মুসলমান শাসক মুঘলদের বিরুদ্ধে ,রাজনৈতিক হিন্দুদের ধর্মীয় আগ্রাসনের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপিত করে, আগামী দিনের হিন্দুদের কাছে মুসলমানদের প্রতিহত করবার পথটি কিভাবে প্রসারিত করা যায় –সেই লক্ষ্যে ই শিবাজী কে উপস্থাপিত করে হেডগেওয়ারের জীবন কেন্দ্রিক একটি কল্পকাহিনীর ভেতর দিয়ে ,আরএসএস তাদের মুসলিম বিদ্বেষের গোটা পরিমণ্ডল টিকে ব্যাপ্ত করে।
হেডগেওয়ার শৈশবে তার স্কুলজীবনেই মুসলমান বিদ্বেষের বীজ যে ছত্রপতি শিবাজীর উত্তরাধিকারীর ভাবনার ভেতর দিয়ে লাভ করেছিলেন– এইটাই তাদের কর্মী সমর্থকদের সামনে তুলে ধরে ,কর্মী-সমর্থকদের নতুন করে মুসলিম বিদ্বেষের উদ্বুদ্ধ করার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করে আরএসএস।
এভাবে একটা শিবাজীর প্রতি অন্ধ আবেগ সৃষ্টি করে ,সেই শিবাজীকে মুসলিম প্রতিহত করবার ক্ষেত্রে সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরাটাই হেডগেওয়ারের শৈশব জীবনের এইসব কল্পকাহিনী অবলম্বন করে ,সেগুলি কর্মী-সমর্থকদের সামনে তুলে ধরা ই হল আরএসএসের একমাত্র উদ্দেশ্য ।আর তার পাশাপাশি শিবাজীর মুঘল বিদ্বেষকে, যেটি প্রকৃত অর্থে ছিল সাম্রাজ্য রক্ষা জনিত তাগিদ এবং অন্ধ মুসলিম বিদ্বেষ- সেটিকেই ‘স্বদেশপ্রেম ‘ হিসেবে উপস্থাপিত করে ,মুসলিমবিদ্বেষ আর স্বদেশপ্রেম– একাত্ম করে দেখানোর প্রাথমিক কৌশল হিসেবে হেডগেওয়ারের জীবন এবং কর্মধারা, আর তার পাশাপাশি ছত্রপতি শিবাজী র নানা ধরনের কল্পিত কাহিনী তুলে ধরে ,নিজেদের কর্মী সমর্থকদের ভিতর একটা তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ একদম প্রথম থেকে জাগিয়ে তোলাই হলো আরএসএসের হেডগেওয়ারের জীবনের নানান আঙ্গিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ,তার শৈশব-কৈশোরের প্রথাগত শিক্ষা জীবনের শুরুর পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করবার মূল লক্ষ্য।
এই লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে হেডগেওয়ারের জীবন কেন্দ্রিক নানা ধরনের স্বদেশীয়ানা সম্পৃক্ত কল্পকাহিনী -ও আরএসএস অত্যন্ত সুচারুরূপে, একদম প্রাথমিক স্তরে তাদের কর্মী সমর্থকদের ভেতরে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করে ।সেই রকম একটি কাহিনী হল; হেডগেওয়ারের বয়স যখন মাত্র আট বছর, তখন রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসন আরোহণের ষোড়শ বর্ষ অত্যন্ত সমারোহের সঙ্গে নাগপুরে পালিত হয়।
আরএসএস তাদের প্রচার মাধ্যমে এটাই বলে থাকে যে ,গোটা নাগপুর শহর যখন মহারানী ভিক্টোরিয়ার ষোড়শতম সিংহাসন আরোহন নিয়ে উৎসবের মত্ত, তার রেশ হেডগেওয়ার যে স্কুলে লেখাপড়া করতেন ,সেই স্কুলে ও এসে পড়েছিল। সেই স্কুলে রানীর সিংহাসন আরোহণের ষোড়শ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ছাত্রদের মধ্যে নানা ধরনের মহার্ঘ্য মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়েছিল ।কিন্তু স্বদেশী আনার জেরে, হেডগেওয়ার নাকি সেই মিষ্টি মিষ্টান্ন গ্রহণে অস্বীকৃত হয়েছিলেন।
এই প্রসঙ্গে আরএসএস তাদের বিভিন্ন কর্ম কণ্ড গুলিতে হেডগেওয়ারের জীবন এভাবেই ব্যাখ্যা করে যে, তার স্কুলে রানী ভিক্টোরিয়া সিংহাসন আরোহণের ষোড়শ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে যখন মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়, তখন হেডগেওয়ার, নাকি তার শিক্ষকদের মুখের উপরে বলেছিলেন; হ্যাঁ ,আমি মিষ্টান্ন নিতে প্রস্তুত। কিন্তু এই মিষ্টান্ন নেওয়ার ঘটনাটি হেডগেওয়ার যখন প্রথম তার বড় দাদা মহাদেব হেডগেওয়ার কে বলেন ,তখন মহাদেব হেডগেওয়ার, তার ছোট ভাই কেশবকে বলেন যে; ব্রিটিশরা জোর করে ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখল করে আছে এবং তারা ভোঁসলের সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করেছে ।যে ব্রিটিশ হিন্দু ভোঁসলে সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করেছে, তাদের হাত থেকে কি করে আমরা মিষ্টি গ্রহণ করব? হিন্দুদের তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার ক্ষেত্রে ব্রিটিশের ভূমিকা সবথেকে বেশি ।এই ব্রিটিশ ই হিন্দুদের, তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে ।তাই যে ব্রিটিশ হিন্দু সাম্রাজ্যের ধ্বংসের প্রধান কারিগর, সেই ব্রিটিশের হাত থেকে , তাদের সম্রাজ্ঞী রানী ভিক্টোরিয়া সিংহাসন আরোহণের ষোড়শ বর্ষ পালন উপলক্ষে মিষ্টান্ন গ্রহণ আদৌ রুচিসম্মত হবে না।
জ্যেষ্ঠাগ্রজের এই কথা শুনবার পর ই নাকি কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার মহারানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসন আরোহণের ষোড়শ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্কুলে যখন মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয় ,সেই মিষ্টান্ন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এই কাহিনীতে হেডগেওয়ারের স্বদেশিয়ানা কেই অন্যতম প্রধান উপপাদ্য বিষয় হিসেবে দেখিয়ে ,ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভারতবর্ষ দখলের পর্যায়ক্রম টি কে , হিন্দুদের হাত থেকে ক্ষমতা ব্রিটিশের হাতে চলে যাওয়ার পর্যায়ক্রমে হিসেবেই আরএসএস তাদের কর্মী সমর্থকদের হাতে তুলে সামনে তুলে ধরে ,ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বণিকের মানদণ্ড ,ক্ষমতার রাজদণ্ড রূপান্তরিত হওয়ার যে পর্যায়ক্রম ,সেই পর্যায়ক্রম টিকে গোটা ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে ,সকল মানুষের ক্ষমতা হারানোর বিষয় হিসেবে না দেখিয়ে , হিন্দু ভোঁসলে সাম্রাজ্যে ক্ষমতা ,ব্রিটিশ কর্তৃক হরণ করার বিষয় হিসেবে দেখায় সঙ্ঘ।
এই রাজনৈতিক হিন্দুদের ক্ষমতাচ্যুতি এবং রাজনৈতিক হিন্দুদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার উপক্রম– ব্রিটেনের রাণীর সিংহাসন আরোহনের উৎসবে মিষ্টি নিতে হেডগেওয়ারেথ অস্বীকার এইরকম –একটি ইতিহাসের জগাখিচুড়ি উপস্থাপিত করে, কর্মী- সমর্থকদের ভেতরে দেশপ্রেম আর মুসলিম বিদ্বেষ কে একাত্ম করে, দেশপ্রেমের লক্ষ্য হিসেবে হিন্দু সাম্রাজ্য পুনঃস্থাপনের বিষয়টিকেই আরএসএস সব সময় তুলে ধরে।
এই বিষয়টিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে হেডগেওয়ারের জীবনকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কল্পকাহিনী তারা অবতারণা করে থাকে।
হেডগেওয়ার জীবনকে কেন্দ্র করে এই কল্পকাহিনির ভেতর দিয়ে মুসলিম বিদ্বেষ কেই স্বদেশীয়ানার মূল কেন্দ্রবিন্দু তে স্থাপন করার রাজনৈতিক অভিপ্রায়, আরএসএস হেডগেওয়ারের ছাত্র জীবনের আরও বহু ঘটনাক্রম কে ,তাদের কর্মী সমর্থকদের ভেতরে একদম প্রথম পর্যায়ে থেকে পরিবেশন করে থাকে ।
এই ক্ষেত্রে ১৯০১ সালে সপ্তম এডওয়ার্ডের রাজ্যাভিষেক কে কেন্দ্র করে এমন কিছু ঘটনাক্রমের কল্পিত কাহিনী তাদের কর্মী সমর্থকদের সামনে সঙ্ঘ তুলে ধরে, যাতে রাজনৈতিক হিন্দু সাম্প্রদায়িক ,মৌলবাদী ,সন্ত্রাসী শিবির যেভাবে স্বদেশীয়ানা কে দেখে ,অর্থাৎ; ব্রিটিশবিরোধী তার মূল লক্ষ্য হলো, হিন্দু সাম্রাজ্যের পুনরুদ্ধার ,সেভাবেই তারা গোটা বিষয়টিকে তুলে ধরে ,এবং অতি অবশ্যই সেই বিষয়ে ভেতরে হিন্দু সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের অর্থ হলো ;মুসলিম শাসনের যাবতীয় রীতি নীতি থেকে বেরিয়ে এসে, একটি শুদ্ধ এথেনিক হিন্দুরাষ্ট্র স্থাপনের অভিপ্রায় ।
এই অভিপ্রায় কে ই নানা রকম তাত্ত্বিক শব্দাবলীর ভেতর দিয়ে ,ছলে-বলে-কৌশলে ,মুসলিম বিদ্বেষের একমাত্র উপকরণ হিসেবে তুলে ধরাই হল রাজনৈতিক হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবিরের সবথেকে বড় লক্ষ্য। আরএসএস প্রচার করে থাকে যে; সপ্তম এডওয়ার্ডের এর রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে ১৯০১ সালে গোটা নাগপুর শহর জুড়ে তুমুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল।
এই সময়কালে নাকি হেডগেওয়ারের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। উৎসব পালনের জন্য অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে হেডগেওয়ার কেও উৎসব পালনের স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।সেখানে ব্রিটিশের পতাকা, ইউনিয়ন জ্যাক উত্তোলন এবং তাকে সম্মান প্রদর্শনের একটি কর্মকাণ্ড ছিল। আরএসএস প্রচার করে যে ,১২ বছরের কিশোর হেডগেওয়ার ইউনিয়ন জ্যাক উত্তোলন এবং তাকে সম্মান প্রদর্শন অপেক্ষা , শিবাজীর ভাগোয়া ঝান্ডার ওপরে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে তার সহপাঠীদের ভেতরে একটা উত্তেজনাময় পরিবেশ তৈরী করতে নাকি সক্ষম হয়েছিলেন।
হেডগেওয়ার নাকি সেই সময়ে ইউনিয়ন জ্যাকের বিরুদ্ধে এমনিভাবেই তার সহপাঠীদের উত্তেজিত করে তুলেছিলেন যে ,তার সহপাঠীরাও নাকি ব্রিটিশ পতাকা তোলার ব্যাপারে, তাদের অসম্মতির কথা জানিয়েছিল ।
এই ঘটনাক্রম ঘিরে আরএসএসের প্রচার; ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন হেডগেওয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরে একটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল, তেমন ই হেডগেওয়ারের শিক্ষকমন্ডলীর পর্যন্ত তাঁদের ছাত্র হেডগেওয়ারের ব্রিটিশ বিদ্বেষ কে কেন্দ্র করে তার প্রতি একটা সমীহের মনোভাব নিয়ে চলতে শুরু করেছিলেন। তেমন ভাবেই এই ঘটনা হেডগেওয়ারের সহপাঠীদের কাছে হেডগেওয়ারকে একটি নায়কদের নাকি আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল।
বিদেশি ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করে হেডগেওয়ার রাজনৈতিক ‘হিন্দু ‘ শাসনের অন্যতম স্থপতি ছত্রপতি শিবাজী দৃষ্টিভঙ্গি কে এবং তাঁর পতাকা কে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক হিন্দু মানসিকতার বিকাশে সেই ১২ বছর বয়সে সক্রিয় হয়েছিলেন- সেই ঘটনাটি নাকি হেডগেওয়ারের সহপাঠীদের এতটাই স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং প্ররোচিত করেছিল যে, এই ঘটনাক্রমের পর, হেডগেওয়ার তাদের কাছে কার্যত নায়কের আসনে অধিষ্ঠিত হয়।
আরএসএস প্রচার করে থাকে; এই ঘটনার পর নাকি স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যান্ড বাজিয়ে হেডগেওয়ার কে অভিনন্দন জানিয়েছিল এবং স্বেচ্ছাসেবকের মর্যাদায় উপনীত করেছিল। এই ঘটনাক্রমের সত্যতা, ইতিহাস সম্মতভাবে জানবার কোনো উপায় নেই ।আরএসএস এই ঘটনাকে যেভাবে উপস্থাপিত করে ,সেটিকে তারা কার্যত গোয়েবলসের কায়দায় নিয়ে গিয়ে, নিজেদের কর্মী -সমর্থকদের ভেতরে মুসলিম বিদ্বেষ কে ,ব্রিটিশবিরোধিতার প্রথম উপকরণ হিসেবে দাঁড় করিয়ে, রাজনৈতিক হিন্দুদের, হিন্দু সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের স্বপ্নকে অঙ্কুরিত করার বিষয়টিকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।
এভাবেই তারা ব্রিটিশবিরোধীতার নাম করে ,একদিকে মুসলিম বিদ্বেষ, অপরদিকে রাজনৈতিক হিন্দু সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার কে ‘হিন্দু সাম্রাজ্যে’ র মডেল হিসেবে শিবাজীর সাম্রাজ্যকে রেখে, তাকে নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের সামনে তুলে ধরে , তথাকথিত হিন্দুরাষ্ট্র স্থাপনের বিষয়টি কে , প্রথম থেকেই তাদের মাথার ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য সব রকমের চেষ্টা করে এসেছে ।
হেডগেয়ারের স্কুল জীবনকে কেন্দ্র করে এই যে সব কাহিনী আরএসএস ,তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রচার করে থাকে ,সেগুলির স্বপক্ষে কিন্তু কোনো রকম প্রশাসনিক বা ইতিহাস সম্মত দলিল-দস্তাবেজ তারা উপস্থাপিত করতে পারেনা। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রানী এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহণের ষোড়শ বর্ষ উদযাপন বা সপ্তম এডওয়ার্ড রাজ্যভিষেক উপলক্ষে একটি ৮ বছরের ছেলে বা পরবর্তীকালে সে যখন ১২ বছরে উপনীত হচ্ছে, তখন সে মিষ্টান্ন নিতে অস্বীকার করছে ,বলছে; হিন্দু সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার হলে পরে ই সে মিষ্টান্ন নিতে পারবে ,ইউনিয়ন জ্যাক প্রকাশ্যে তুলতে অস্বীকার করছে, ইউনিয়ন জ্যাকের পরিবর্তে শিবাজীর ভাগোয়া ঝান্ডাকে সম্মান জানানোর জন্য তার সহপাঠীদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে– এমন সব ঘটনা বলি যদি সত্যিকারে ঘটে থাকতো, তাহলে নাগপুর সন্নিহিত অঞ্চলের পুলিশের কোনো না কোনো প্রতিবেদনে তার উল্লেখ আমরা পেতাম ।
মজার বিষয় হলো নাগপুরের পুলিশের কোনোরকম প্রতিবেদনে আরএসএস হেডাগেওয়ারের প্রথম জীবন সম্বন্ধে যে ধরনের বীরত্বব্যঞ্জক ঘটনাক্রমের উল্লেখ করে থাকে তার একটি রূপ ন্যূনতম উল্লেখ নেই।