বাবিন ঘোষ
লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র বছরখানেক বাকি। এই সুযোগে সংঘ পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্ষমতাসীন মোদী সরকার, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা করা শুরু করে দিয়েছে। বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এমন একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চলেছে যেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি যাবতীয় ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে তুলে এনে একটি আধুনিক এবং ন্যায্য অধিকারবোধের উপর ভারতবর্ষের সকল দেওয়ানি আইনকে প্রতিষ্ঠা করবে। সংঘ পরিবার তথা বিজেপি এবং তাদের পূর্বসূরী রাজনৈতিক দল জনসংঘ প্রথম থেকেই এমন দাবি জানিয়ে এসেছে। সংবিধানের চতুর্থ পরিচ্ছেদ ‘ডাইরেকটিভ প্রিন্সিপালস অফ স্টেট পলিসি’ বা রাষ্ট্রপরিচালনার দিক নির্দেশিকা সমূহের অন্তর্গত ৪৪ নম্বর ধারার উল্লেখ করে তারা অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে জনগণের সামনে আনতে চায়। মনে রাখা জরুরি ভারতের সংবিধানে ৩৯ নম্বর ধারা থেকেই রাষ্ট্রপরিচালনার দিক নির্দেশিকা সমূহের শুরু। ঐ ধারায় রাষ্ট্রের উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করা হচ্ছে যে তাকে সদা সতর্ক থাকতে হবে যাতে সকল নাগরিক জাতি লিঙ্গ বর্ণ নির্বিশেষে জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় উপার্জনের সুযোগ পায়। এর পরের উপধারাতে বলা হয়েছে রাষ্ট্র প্রচেষ্টা চালাবে যাতে সম্পদ এবং উৎপাদন সামগ্রির কেন্দ্রীভবন না ঘটে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মধ্যে এবং সেই সম্পদের বন্টন এমনভাবে হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে তা বৃহৎ অংশের মানুষের উপকারে লাগে। ৩৯ নম্বর ধারার পরবর্তী উপধারাগুলিতে সমকাজে সমবেতনের নীতি, জনস্বাস্থ্যের প্রতি সরকারের দায়িত্বশীল হওয়ার নীতি, শিশুদের সুষ্ঠু বাড়বৃদ্ধির প্রতি রাষ্ট্রের সচেতন থাকার দায়িত্ব প্রভৃতিরও উল্লেখ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য বিষয় হল সংঘ পরিবার তথা এদেশের কোন দক্ষিণপন্থী দল এমন মৌলিক আর্থিক নীতি সমূহের প্রতি কখনো খুব বেশি দায়িত্বের পরিচয় দেয়নি। জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের একটি ন্যূনতম অভিমুখ বজায় রাখতে কেন্দ্রের অ-বিজেপি সরকারগুলি যতটুকু দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছে, বিজেপি সেই তুলনায় সামান্যতম কিছুও করেনি। একটি ঘোষিত উগ্র দক্ষিণপন্থী, উগ্র জাতীয়তাবাদী দল হিসাবেই আর্থসামাজিক ন্যায় বিচারের চেয়ে ৪৪ নং ধারার অন্তর্গত অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নাম করে বা তার আড়ালে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের এক ঘৃণ্য রাজনীতি পরিচালনা করাই চিরকাল তাদের কাছে অনেক বেশি কাঙ্খিত লক্ষ্য ছিল। অভিন্ন দিওয়ানী বিধি প্রণয়নের নীতি ঠিক কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভারতের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা আলোচনা করার গুরুত্ব সেখানেই।
১৯৪৬ থেকে ৪৭ সাল অবধি চলতে থাকা বীভৎস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং দেশভাগের মর্মান্তিক পটভূমিকে মাথায় রেখেই ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এই উপমহাদেশের তথা খন্ডিত ভারতবর্ষের সামাজিক বাস্তবতা ও দাঙ্গার বীভৎসাই সংবিধান নির্মাণ করতে গিয়ে সংবিধান প্রণেতাদের সতর্ক থাকতে বাধ্য করে। ভারত রাষ্ট্রের ধর্ম নিরপেক্ষ চরিত্রের ব্যাখ্যা ও বর্ণনা প্রসঙ্গে একদিকে প্রায় সাড়ে তিন বছর বিতর্ক চলে। যে সকল জরুরি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বকে সংবিধানের তৃতীয় পরিচ্ছেদ অর্থাৎ মৌলিক অধিকারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি সেগুলিকে চতুর্থ পরিচ্ছেদে রাষ্ট্রপরিচালনার নীতিসমূহের অন্তর্গত করার পক্ষে ও বিপক্ষে বিতর্ক চলে। দুটি বাস্তবতা এই সকল বিতর্কের রূপরেখা তৈরি করে দেয়। একদিকে ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসঞ্জাত দেশভাগের মর্মান্তিক পটভূমি অন্যদিকে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের চমকপ্রদ জয়। এই দুই প্রবল বাস্তবতার মধ্যে তদানীন্তন ভারতবর্ষের বামপন্থী গণ আন্দোলন ও জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেকার বাম ঘেঁষা প্রগতিশীল অংশের প্রভাব যেমন কিছুটা কাজ করে তেমনি সংবিধানে চতুর্থ পরিচ্ছেদের নির্মাণে বিভিন্ন ধর্মের শক্তিশালী রক্ষণশীল অংশেরও প্রভাব পড়ে।
ফলতঃ নবনির্মিত ভারত রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তথা ভিন্নতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় সংহতি নির্মাণের উদ্দেশ্যে সংবিধানের বিবিধ অংশের নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা সংবিধান প্রণেতাদের উদ্বুদ্ধ করে, যদিও রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণে সংবিধান পরিষদের সকল সদস্যের এই ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সংবিধানের নির্মাণের ক্ষেত্রে এদেশের বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ধর্মীয় আস্থার প্রতি সমান মনোভাব ছিল না। জাতীয় কংগ্রেসের টিকিটে জিতে আসা হিন্দু রক্ষণশীল মনোভাবের সদস্যেরা যেমন শ্রী কানাইয়ালাল মানিকলাল মুন্সী অভিন্ন দেওয়ানী বিধিকে ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন বা জাতীয় সংহতি নির্মাণের অন্যতম ভিত্তি মনে করতেন তেমনই মুসলমান সমাজের রক্ষণশীল অংশের প্রতিনিধি যেমন মোহাম্মদ ইসমাইল খান কিম্বা মেহেবুব আলী বেগ বাহাদুর’রা সংবিধান প্রণয়নের বিতর্কে বলেছিলেন ভারতবর্ষের মতো দেশে এক ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় রীতিনীতিকে লঙ্ঘন করবে এবং জাতীয় সংহতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মুসলমান সমাজের মধ্যে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। মুসলমান রক্ষণশীল অংশের তরফ থেকে এটাও বলা হয় যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে সেই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতিনীতি থেকে উদ্ভূত তাদের নিজস্ব দেওয়ানি বিধি, অর্থাৎ বিবাহ/ উত্তরাধিকার/ দত্তক/ সন্তানের তত্ত্বাবধান/ বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি বিষয়ে রাষ্ট্রের অনাভিপ্রেত হস্তক্ষেপ আদতে দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগুরু অংশের আগ্রাসন হিসাবেই গণ্য করা উচিত। এই মতের প্রত্যুত্তরে আম্বেদকারের তরফ থেকে এই অবস্থান নেওয়া হয় যে যেহেতু ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচার ও প্রসারের স্বাধীনতায় রাষ্ট্রের তরফ থেকে বাধাদান সংবিধানের তরফে নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে, সেই একই কারণে সামাজিক কল্যাণ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের অনুমোদনও দিয়েছে। দেশভাগের পরিণতিতে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে জিতে আসা একমাত্র গণপরিষদ সদস্যের নির্বাচনী কেন্দ্রের অবলুপ্তি ঘটেছিল, তাই ঐ বিতর্কে কমিউনিস্ট পার্টির তরফ থেকে সরাসরি অংশগ্রহণ সম্ভব ছিল না। সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রের আশু সমস্যাগুলি মোকাবিলায় সময়, সম্পদ এবং শক্তি নিয়োজিত করাই ছিল সেই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। ভবিষ্যতে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা এবং অন্যায্যতার ঊর্ধ্বে উঠে দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন হতে পারে এই আশায় ঐ বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে। ঐ সময় এবং পরিস্থিতির বিচারে কোনরকমের সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির সম্ভাব্য বিতর্কগুলিকে সাময়িকভাবে হলেও বাড়তে না দেওয়ার প্রয়োজনও অনুভূত হয়েছিল।
স্বাধীন ভারতে পাঁচের দশকের প্রথমদিকে হিন্দু দেওয়ানি আইনগুলিকে বিধিবদ্ধ আকার দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হলে সেই বিতর্কের পরবর্তী অধ্যায়ের সুত্রপাত। জওহরলাল নেহরুর উদ্যোগ ও আম্বেদকারের হস্তক্ষেপেই ১৯৫৫ সাল নাগাদ হিন্দু কোড আইনের রূপ পায়। মাথায় রাখা প্রয়োজন তদানীন্তন হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতির খুব বেশি পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র সেগুলিকে একত্রিত করেই ঐ কোড প্রণীত হয়। এ বিষয়ে জওহরলাল নেহেরু’র নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সাথে আম্বেদকারের যে বিতর্ক হয় তা সর্বজনবিদিত। আম্বেদকার মনে করেন জাতীয় কংগ্রেসের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের আগেকার নিরপেক্ষ অবস্থান পাল্টিয়ে হিন্দু রক্ষণশীল অংশের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছিল। ১৯৫৫ সালে ৪টি হিন্দু আইনকে বিধিবদ্ধ করা হয় এবং তারই ফলশ্রুতিতে জাতীয় কংগ্রেসের সাথে আম্বেদকারের রাজনৈতিক বিচ্ছেদ ঘটে। বহুলাংশে লঘু করে দেওয়া সেই হিন্দু কোড যে আসলে তদানীন্তন হিন্দু সামাজিক রীতিনীতির থেকে খুব বেশি পার্থক্য বজায় রাখতে পারেনি, সংঘ পরিবার তথা বিজেপি এ কথাটা স্রেফ চেপে যায়। হিন্দু কোড বিল পাস হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য দেওয়ানি আইনকে বিধিবদ্ধ রূপ দেওয়া এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে দেওয়ানি আইন সমূহের বিধিবদ্ধ রূপ না দেওয়াকে সরকারের তরফে একপেশে মনোভাব এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তোষণের রাজনীতি বলে জনসংঘের তরফ থেকে প্রচার শুরু হয়। এরাই ছিল হিন্দু রক্ষণশীল অংশের সবচেয়ে জোরালো রাজনৈতিক মুখপাত্র। জনসংঘ ও পরবর্তীতে তাদের দোসর অতি দক্ষিণপন্থী স্বতন্ত্র পার্টি এবং তারও পরে বিজেপির তরফ থেকে ধারাবাহিকভাবে সেই প্রচার চলে আসছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির রাজনীতির নামে বিজেপি আজও এই হিন্দু ভিকটিম কার্ড খেলে চলেছে। অথচ আজকের ভারতে অনেক বেশি জরুরী লিঙ্গ সাম্যের আইনি বিধি প্রণয়ন করতে তারা এমন তৎপর না।
লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে শ্রমিকের বিভাজন যে আদতে শ্রেণী শোষণেরই একটি হাতিয়ার, তা বিশ্বজুড়ে বামপন্থীদের একটি অভিন্ন এবং দৃঢ় অবস্থান। এদেশে বামপন্থীদের অবস্থানও এ বিষয়ে কিছুমাত্র আলাদা নয়। বিভিন্ন ধর্ম, সেই সব ধর্মের রীতিনীতি এবং সেই সকল রীতিনীতির ভিত্তিতে রচিত আইনসমূহ যে নারী তথা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পক্ষপাতদুষ্ট তা নিয়ে কণামাত্র সংশয় বা দ্বিধা বামপন্থীরা পোষণ করে না। ১৯৫২ সালে সংসদের অধিবেশনে বামপন্থী সাংসদরা হিন্দু কোড বিলের বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন এবং পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার, পুরুষের বহুবিবাহ প্রথা, ইত্যাদি ইস্যুতে লিঙ্গ সাম্যের পক্ষে দৃঢ় এবং স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেন। সংসদের কার্যাবলীর বিবরণে বামপন্থী সাংসদদের সেইসব ইন্টারভেনশনই লিপিবদ্ধ রয়েছে। হিন্দু কোড বিল প্রসঙ্গে বিতর্কের ঐ বিবরণীতেই পাওয়া যায় জনসংঘ কী ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৪৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর দিল্লির রামলীলা ময়দানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের তরফে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়। সেই সভার বক্তারা হিন্দু কোড বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং একজন বক্তা হিন্দু কোড বিল’কে হিন্দু ধর্মের উপর অ্যাটমবম বর্ষণ বলেও চিহ্নিত করেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মদতপুষ্ঠ স্বামী কারপত্রী মহারাজ, ডক্টর আম্বেদকারের দলিত পরিচিতিকে আক্রমণ করেন এবং বলেন যে আম্বেদকরের মতন একজন অস্পৃশ্য নিচু জাতির মানুষের কলমে এমন হিন্দু কোড বিল রচনার অর্থ ধর্মশাস্ত্র ও হিন্দু রীতিনীতি আচার-বিচারের উপরে আক্রমণ। সংসদে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বা রামনারায়ণ সিংহের মতো সংঘের মদতপুষ্ঠ সাংসদরা এই দাবি অবধি করেন যে লিঙ্গ সাম্যের নাম করে বৈদিক যুগ থেকে চলে আসা হিন্দু ধর্মের ধ্বংস সাধন করার জন্যই হিন্দু কোড বিল নির্মিত হয়েছে। ইতিহাসের পরিহাস, আজ তাদেরই উত্তরাধিকার বহন করে চলা বিজেপি দাবি করছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে তাদের যাবতীয় উদ্যোগ নাকি লিঙ্গ সাম্যের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতারই পরিচয়! ২০০৫ সালে মিতাক্ষরা রীতিমতে যে সকল অঞ্চলে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন চালু রয়েছে সেই আইনের আওতায় মৃত পিতার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তানের সমান অধিকার স্বীকৃত হয়েছে, অর্থাৎ মাত্র ১৭ বছর আগে। বলাই বাহুল্য প্রথম ইউপিএ সরকার ঐ আইন প্রণয়নে বামপন্থী সাংসদদের পূর্ণ সমর্থনই পেয়েছিল। কিন্তু বামপন্থীদের প্রচেষ্টা সত্বেও বেশ কিছু রাজ্যে কৃষিজমি বা কৃষি-সম্পত্তিতে সমান অধিকারের ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানের অধিকার এখনো আইনে স্বীকৃত নয়। সেই অঞ্চলগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ বা উত্তরাখন্ড। লিঙ্গ সাম্যের দোহাই দেওয়া অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সমর্থক বিজেপি বা সংঘ পরিবারের অন্য কোন সংগঠনের তরফে এখনো অবধি দেশ জুড়ে পিতা মাতার সকল সম্পত্তিতে হিন্দু নারীদের সমান অধিকার দাবি করা হয়নি। তবে কি হিন্দু ধর্মের মধ্যে নারীর সমান আধিকার সংঘ পরিবারের মনঃপুত নয়? অতিসম্প্রতি মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের তরফে একটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে বিজেপি শাসিত কোন রাজ্যেই আইন সভায় নারীদের ৩৩% সংরক্ষণের নীতি কার্যকর হয়নি, অথচ অন্যন্য রাজ্যে বিজেপি ক্রমাগত সেই দাবী জানিয়ে আসছে। আজ অবধি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে নারীদের সদস্যপদ দেওয়া হয় না। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবিকা সমিতি নামে সম্পূর্ণ আলাদা একটি সংগঠন রয়েছে। লিঙ্গ সাম্যের পক্ষে বিজেপির সওয়াল কি শুধুমাত্র মুসলমান বিরোধিতার একটি হাতিয়ার? ইতিমধ্যেই সরকারের তরফে বলা হয়েছে খ্রিস্টান সমাজের বিভিন্ন রীতিনীতি তাদের স্বতন্ত্র বজায় রেখে চলবে এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কাঠামোর মধ্যে সেগুলিকে আনা হবে না। বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অনুগত বনবাসী কল্যাণ পরিষদের তরফ থেকে সরকারের কাছে একই দাবি জানানো হয়েছে। তবে মুসলমান সমাজ বাদে আর কারা বাকি রইল? ঠিক যেমন নাগরিকত্ব আইনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে রুঢ় এবং অন্যায় অভিমুখ রাখা রয়েছে, বিজেপির তরফে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির দাবিও আসলে মুসলমান বিরোধীতার একটি প্ল্যাটফর্ম মাত্র।
মুসলমান সমাজের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা বিবিধ রীতিনীতি যে লিঙ্গ সাম্যের বিরোধী তা নিয়ে কোনোরকম দ্বিধা বা সংশয় বামপন্থীদের নেই। এদেশে সংখ্যাগুরু মৌলবাদ-র পাশাপাশি সংখ্যালঘু মৌলবাদের বিরুদ্ধেও বামপন্থীরা চিরকাল সোচ্চার থেকেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও সংখ্যালঘু হিন্দু নিপীড়নের বিরুদ্ধে সে দেশের বামপন্থী দলগুলি চিরকাল প্রতিবাদে দৃঢভাবে একনিষ্ঠ থেকেছে যার ফলে সে দেশেও ‘সংখ্যালঘু তোষণের’ মিথ্যা অভিযোগ বামপন্থীদের বিরুদ্ধে করা হয়ে চলেছে। শাহবানু মামলায় প্রায় সর্বজনবিদিত রায়ের প্রেক্ষিতে ১৯৮৬ সালে রাজীব গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের প্রণয়ন করা আইন নিয়ে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে বামপন্থীদের ভূমিকা লিঙ্গ সাম্যের পক্ষে দৃঢ়ভাবে থেকেছে। সংসদের প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত শ্রী সাইফুদ্দিন চৌধুরীর ভাষণ এ বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। প্রাক্তন কংগ্রেসী নেতা এবং মুসলিম প্রতিক্রিয়াশীল অংশের প্রতিনিধি, সৈয়দ শাহাবুদ্দিনের সক্রিয় মদতে পাস করা ৮৬ সালের সেই বৈষম্যমূলক আইনের বিরোধিতা করেছিলেন বামপন্থী সাংসদরাই। লোকসভার বিতর্কে সৈফুদ্দিন চৌধুরী এবং সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়’দের ভাষণ যে কোনও আইনের শিক্ষার্থীর জন্যই অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত। ক্রিমিনাল প্রসিজিওর কোডের ১২৫ নম্বর ধারা যা কিনা বিবাহ বিচ্ছিন্না নারীর খোরপোশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে, তাকে বিবাহ বিচ্ছিন্ন মুসলমান নারীদের জন্য অপ্রযোজ্য করে রাখার যে সিদ্ধান্ত ছিয়াশি সালের সেই আইনের মারফত করা হয় তাকে লিঙ্গ সাম্যের পথে একটি আঘাত হিসেবে তুলে ধরেছিলেন বামপন্থী সাংসদরা। সংসদের ভেতরে কিংবা বাইরে এ বিষয়ে কোনোরকম অস্পষ্টতা বামপন্থীদের তরফে কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ আদালত তিন তালাকের বৈধতা খারিজ করে যে রায় দেয় সেক্ষেত্রেও বামপন্থীদের অবস্থান রায়ের স্বপক্ষেই ছিল। এই রায়কে ব্যবহার করে হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনরকম বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টার বিরুদ্ধেই বামপন্থিদের অবস্থান স্পষ্ট ছিল।
২০১৮ সালে গঠিত ২১তম আইন কমিশনের একটি অন্যতম রেফারেন্স ছিল এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। সরকার দ্বারা গঠিত সেই কমিশনও তার রিপোর্টে এ কথা বলে যে বর্তমান সময়কালে দাঁড়িয়ে এমন অভিন্ন দেওয়ানী বিধি খুব প্রয়োজনীয় বা খুব কাঙ্ক্ষিত কিছু নয়। সেই রিপোর্ট সামনে আসার মাত্র দু বছরের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে ২২-তম আইন কমিশন গঠিত করে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে অভিন্ন দেওয়ানী বিধির প্রচার সাম্প্রদায়িক ধুয়ো তোলার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে জনগণের মতামত জানার জন্য ২২-তম আইন কমিশন মাত্র এক মাস সময় দেয়। পরবর্তী সময়ে প্রবল সমালোচনার চাপে মাত্র ১৫ দিনের জন্য সেই মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, যে আইন কমিশন দেশের সকল ধর্মীয় সংগঠনের কাছে এই বিধির পক্ষে বা বিপক্ষে মতামত চেয়েছে। অ-ধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ সংস্থা/ সংগঠনের কাছে কোনোরকম মতামতই চাওয়া হয়নি। অর্থাৎ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র কিছু ধর্মীয় সংগঠন বাদে এদেশে আর কারোর নেই। মোদী সরকার এমনটাই মনে করে। মুসলমান নারীদের পক্ষেই নাকি বিজেপি সরকারের এমন উদ্যোগ, অথচ তাদেরই সবচাইতে বড় ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠন ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের কাছে কোনরকম মতামত কেউ জানতে চায়নি। সংসদে বা অন্যত্র কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমন কোন রিপোর্ট বা তথ্য পেশ করা হয়নি যাতে স্পষ্টভাবে কোনোকিছুর ব্যাখ্যা রয়েছে। আর্থসামাজিক স্তরে নারী বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ জনের পক্ষে অমন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ঠিক কোন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে দেবে যা কিনা বর্তমান ভিন্ন ভিন্ন দেওয়ানীবিধির কারণে আটকে রয়েছে তাও কেউ জানে না! তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেওয়া হয় যে কোনও এক এবং অভিন্ন বিধি এদেশের অগ্রগতির পক্ষে ভীষণ জরুরি সেক্ষেত্রে এই প্রশ্ন থাকবে যে সেই অভিন্ন বিধির মডেল বা তার মতাদর্শগত ভিত্তি কি হবে? বিবিধ ব্রাহ্মণ্যবাদী শাস্ত্র এবং সংহিতা নাকি সামাজিক ন্যায়ের দিক থেকে এগিয়ে থাকা রাষ্ট্রের সংবিধান বা সফল নীতিসমূহই হবে এর ভিত্তি? নাকি ভারতের সমস্ত নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনের সংগঠন তথা বিবিধ ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কোন এক বিকল্প মডেল বিধি হিসাবে তৈরি করা হবে? আইন কমিশনের রেফারেন্সের মধ্যে এরকম কোনও পদ্ধতি সম্পর্কে এখনও অবধি স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এবং ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে আইন কমিশনকে জানানো হয়েছে যে এই মুহূর্তে মুসলিম আইনের মধ্যেই বহু রকমের সংস্কার সাধন প্রয়োজন এবং তার মাধ্যমে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বাদেও লিঙ্গ সাম্যের পক্ষে বেশ কয়েক ধাপ এগোনো যাবে। সাম্প্রতিককালে শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের অবাধ প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে সংঘ পরিবার এবং তাদের অনুগত সংগঠনসমূহ যেভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে তার প্রতিরোধেও কেরলের নির্বাচিত বামপন্থী সরকার এবং এদেশের বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলন দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রতিবাদ করেছে। আবার মুসলমান সমাজে নারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত একাধিক কু প্রথা, যথা মুতা, হালালা এবং মিসিয়ার বিবাহের ক্ষেত্রে, ভারতীয় মুসলমান মহিলাদের আন্দোলনের সাথে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি ঐক্যবদ্ধভাবে বিরোধিতা জানিয়েছে।
অভিন্ন দেওয়ানী বিধি সম্পৃক্ত যে কোনো আলোচনায় বিজেপি’র অবস্থানটা কতকটা এইরকম যে এই এক বিধিই এ দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা সঞ্জাত দেওয়ানি আইনের দ্বারা সৃষ্ট বহু প্রকার সামাজিক সমস্যার এক এবং অব্যর্থ সমাধান। বিবিধ মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ফলেও খানিক অস্পষ্টতার সৃষ্টি হয়েছে। শাহ বানো মামলার (১৯৮৫) রায়ে সুপ্রীম কোর্টের বেঞ্চ একটি ‘কমন সিভিল কোড’ প্রণয়নের বিষয়ে ‘জাতীয় ঐক্যে নির্মাণ’র জন্য সরকারকে অগ্রসর হতে অনুরোধ করেছিল। অথচ, সেই মামলায় বিচার্য বিষয়ে প্রযোজ্য আইনটিতে ক্রিমিনাল প্রোসিজিওর কোডের ১২৫ নং ধারা ধর্ম নির্বিশেষে বিবাহ বিচ্ছিন্না নারীর খোরপোষের ক্ষেত্রে চিরকালই প্রযোজ্য ছিল। এর ১০ বছর বাদে সরলা মুদগল মামলায় (১৯৯৫) সুপ্রীম কোর্ট এক হিন্দু পুরুষের নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে আইন মোতাবেক বিচ্ছেদ না দিয়ে আরেক নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনার বিচারে আবারো অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন এবং নির্দিষ্টভাবে হিন্দু কোড’কেই এ বিষয়ে ‘মডেল’ হিসাবে গণ্য করার পরামর্শ দেন। এই মামলার ক্ষেত্রেও বিশ্বাসভঙ্গ সংক্রান্ত ফৌজদারি আইন এবং সেই আইনে যথেষ্ট কড়া শাস্তির বিধান থাকা সত্ত্বেও কেন যে মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের অভিন্ন দেওয়ানী বিধির প্রয়োজন অনুভব হল, তা স্পষ্ট নয়। এর পরে ২০০০ সালে লিলি টমাস মামলা, ২০০৩ সালের জন ভেল্লোমেট্টম মামলা এবং ২০১৫ সালের ABC Vs NCT of Delhi মামলায় খ্রীষ্টান শিশুর পৈতৃক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে আবারো অভিন্ন দেওয়ানী বিধির প্রসঙ্গ তোলেন যেখানে Guardians and Wards Act-এ সামান্য কিছু সংশোধনের মাধ্যমেই সেই সব মামলায় বিচার্য সমস্যার সমাধান সম্ভব। অন্য দিকে ১৯৯৬ সালের পান্নালাল বংশীলাল পিত্তি মামলায় মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের তরফেই একথা বলা হয় যে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি জরুরি হলেও তা এক ধাক্কায় চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। অভিন্ন দেওয়ানী বিধির চেহারা চরিত্র কেমন হবে তা নিয়ে আজ অবধি মাহামান্য সুপ্রীম কোর্ট কোনো স্পষ্ট নির্দেশ বা বক্তব্য রাখেনি। বিভিন্ন দেওয়ানী আইনের ভাষ্যে লিঙ্গসাম্যের প্রতি যে অনীহা বা সেই আইনের প্রাসঙ্গিকতা লুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কোনও উল্লেখ না করেই স্রেফ অভিন্ন দেওয়ানী বিধি নামের এক অস্পষ্ট, সর্বরোগহর এক অলীক সমাধান বাৎলে দেওয়া হয়েছে।
সংবিধানের ৪৪-নং ধারার অস্পষ্টতাও এক্ষেত্রে আলোচনায় আসা প্রয়োজন। সংবিধানের ৩৭১ক এবং ৩৭১খ নং ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের প্রথাগত দেওয়ানী আইনের কোনো পরিবর্তন সংসদের পক্ষে করা সম্ভব নয় যতক্ষন না এই দুই রাজ্যের বিধানসভায় সেই আইনকে সমর্থন করা হচ্ছে। সংবিধানের ষষ্ঠ তফশীলে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে উপজাতি কাউন্সিল সমূহকে দেওয়ানী আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কাজেই সংসদে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি পাশ করালেও উত্তর পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ অংশেই প্রযোজ্য হবে না। হিন্দু কোড ও ‘অভিন্ন’ নয় এমন সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এবং প্রাদেশিক ও সামাজিক গোষ্ঠী হিসাবেও এর প্রকারভেদ রয়েছে।
পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু, আম্বেদকর এবং গণপরিষদের অন্যান্য সদস্যেরা এই বিতর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট ধর্মের মধ্যে থেকেই দেওয়ানি বিধি সংস্কারের দাবি উঠে এলে সেটাই সবচাইতে কার্যকর হবে। এ বিষয়ে বামপন্থীরা আজও সহমত। সেই দাবি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সামাজিক এবং রাজনৈতিক গণআন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদী এবং সুদৃঢ় প্রভাব বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতিকে পুষ্ট করার উদ্দেশ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে এমন সরকারি উদ্যোগ বামপন্থীরা সমর্থনযোগ্য মনে করে না। আজ ভারতের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস। ইতিহাসের মাইলফলকে দাঁড়িয়ে লিঙ্গসাম্যের পক্ষে লড়াই যে আদতে স্বাধীনতা সংগ্রামেরই এক চলমান অংশ, এদেশের বামপন্থীরা সহ গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন কারোরই সেই নিয়ে কোনোরকম সংশয় নেই। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী কোনও শক্তি যদি ন্যায্য লড়াইকে হাইজ্যাক করার চেষ্টা করে তবে অনমনীয় মনোভাব নিয়েই বাম-গণতান্ত্রিক আন্দোলন তাকে প্রতিরোধ করবে।