সীতারাম ইয়েচুরি
জুন,২০১৪
এখন, মহাশয়, কীভাবে এই যুব-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নটা ঘটবে? যদি আপনি আমাদের যুবকদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান প্রদান করেন, তবেই তো তারা একটি উন্নততর ভারত গড়ে তুলবে। ভবিষ্যত নীতি নিয়ে আমাদের এখানে বিতর্ক করার প্রয়োজন নেই। আমাদের যুবকদের প্রতি আমার সে আস্থা রয়েছে, সবারই রয়েছে। কিন্তু, তাদের প্রয়োজনীয় পাথেয়টুকু দিন। বর্তমানে সেই পাথেয়’র অবস্থা কী? আমি সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের লেখা একটি অংশ পড়বো। তিনি যা বলেছেন, আমি কেবল একটি ছোট প্যারাগ্রাফ উদ্ধৃত করবো। আমি উদ্ধৃত করছি, “ভারতে বিভিন্ন মাত্রার উৎকর্ষের অভিজাত বিদ্যালয় রয়েছে, তবে সমস্ত ভারতীয়দের মধ্যে, সাত বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন এবং প্রতি তিনজন নারীর একজন নিরক্ষর। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের মান নিম্নমানের; চার বছরের শিক্ষা শেষে অর্ধেকেরও কম শিশু ২০ কে ৫ দিয়ে ভাগ করতে পারে। ভারত বিশ্বে জেনেরিক ওষুধের সবচেয়ে বড় উৎপাদক হতে পারে, তবে তার স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা অনিয়ন্ত্রিত এবং বিশৃঙ্খলা পূর্ণ। দরিদ্র মানুষকে নিম্নমানের এবং কখনও কখনও শোষণমূলক বেসরকারি চিকিৎসার উপর নির্ভর করতে হয়, কারণ পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নেই।” এই পরিস্থিতিতে, আমরা যুবসমাজকে কীভাবে ক্ষমতায়িত করছি? এবং, কর্মসংস্থানের পরিস্থিতিটা কী? সর্বশেষ জাতীয় নমুনা সমীক্ষা আমাদের জানায় যে ২০০৫ থেকে ২০১০ এর মধ্যে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির হার ০.৭ শতাংশ। এটাই কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির হার। আমাদের যুবকরা আজ আমাদের জনসংখ্যার মেরুদণ্ড, আমাদের সমাজের মেরুদণ্ড, আমাদের জনসংখ্যা বিন্যাসের বাড়তি সুবিধা তাঁরাই। কিন্তু এই হল তাঁদের শিক্ষার অবস্থা; এই তাঁদের স্বাস্থ্যের অবস্থা। আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছিলেন, বলেছিলেন যে আমাদের দেশে শিশুদের পুষ্টিহীনতার বৃদ্ধি একটি জাতীয় লজ্জা। যদি এই পরিস্থিতি পরিবর্তন না হয়, তাহলে এসব আশার অর্থ কী? এবং, এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হবে, দ্রুতগতির ট্রেন বা শতাধিক নতুন শহরের স্লোগানে কাজ চলবে না।
যদি আপনি সেইসব (খোয়াব) বাস্তবায়ন করতে পারেন, চমৎকার! কিন্তু মনে রাখবেন যে সভ্যতার অগ্রগতি আপনাকে জানিয়েছে যে শহরগুলি আপনার ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে উন্নত হয় না, শহরগুলি অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে উন্নত হয়। শহর তৈরি করলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে না। যদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন না হয়, তবে কোন শহর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। আমাদের কাছে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের উদাহরণ রয়েছে। আমরা সকলেই সেই ইতিহাস জানি। আমি আশা করি এই শতাধিক শহর সেই ধরনের উদাহরণে সমাপ্ত হবে না। এবং, আমরা জানি বাদশা আকবরের ফতেহপুর সিকরির কী হয়েছে। আমরা সবাই এ সম্পর্কে সচেতন। তাই শহর তৈরি করা কোনো সমাধানসূত্র নয়। উত্তর হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন যা শহুরে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু আপনি গাড়ির চাকার আগে ঘোড়াটাকে রাখতে চাইছেন। …(বাধাদান)… আমি ইতিহাসে যাচ্ছি না। প্রশ্ন হল, সমাধান কী। আপনি এখন যে মহান বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করছেন তা নাকি বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। আপনি বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (FDI) ক্ষেত্রে বৃদ্ধির কথা বলছেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্যারাগ্রাফ ৪০ তে রক্ষিত প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে মুক্ত-বাণিজ্য FDI-এর কথা বলা হয়েছে। আমাদের মতে, ভারতের মধ্যে আসা FDI অবশ্যই তিনটি শর্তের ভিত্তিতে হওয়া উচিত যা আমার দেশের জন্য উপকারী — (ক) যে FDI আমাদের উৎপাদনশীল ক্ষমতা বাড়াবে; (খ) যে FDI কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার বাড়াবে; এবং (গ) যে FDI ভারতকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত করবে। যদি এই তিনটি শর্ত পূর্ণ না হয়, তবে অন্য কোনও ধরনের FDI — ভারতের স্বার্থে নয়, জনগণের স্বার্থে নয়। দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক উৎপাদনে আবার বিদেশি বিনিয়োগের অর্থ কী? সেকারণে আমাদের নিরাপত্তার উদ্বেগে বাড়তি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আমার মনে পড়ে, কংগ্রেসে আমার বন্ধুদের, যারা এখন বিরোধী দলে রয়েছেন, তারা আমাকে বলতেন যে আমি চীনে টেলিকম সেক্টরে ১০০ শতাংশ বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের সমর্থক, কিন্তু কেন আমি ভারত এ ব্যাপারে বিরোধিতা করছি? চীন টেলিকমে FDI-কে শুধুমাত্র হার্ডওয়্যার উৎপাদনে অনুমতি দিচ্ছে। কেন আমরা সবাই আজ চীনে তৈরি সেলফোন ব্যবহার করছি? কেন সেগুলো ভারতে তৈরি হচ্ছে না? এখন, আস্তে আস্তে আসছে। কিন্তু কেন আমরা হার্ডওয়্যার উৎপাদনে তাদের অনুমতি দিইনি? কেন আমরা পরিষেবায় অনুমতি দিলাম? কেন আমরা তাদের লাভজনক পরিষেবায় অনুমতি দিচ্ছি!
চীনে সমস্ত পরিষেবা সরকারি দপ্তর প্রদান করে। কিন্তু এখানে সমস্ত পরিষেবা পাওয়া যায় বেসরকারী সংস্থার থেকে। হার্ডওয়্যার উৎপাদন আমদানি করা হয়। এই বিদেশি বিনিয়োগ নীতির মানে কী? শুধুমাত্র বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতি দয়াপরায়ণতা? এটা আদৌ আমাদের উপকারে আসবে? আপনি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। আপনি কৃষির কথা বলছেন। এজন্য আমাদের সম্পদের প্রয়োজন। প্রশ্ন হল, আপনি এই সম্পদ কিভাবে সংগ্রহ করবেন? এই সম্পূর্ণ বক্তৃতায় একটি শব্দও নেই যে আপনি এই সম্পদগুলি কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন। গত বছর, সম্পর্কিত দফতরের মতে, সরাসরি কর সংগ্রহে কমতি পড়েছিল ৫.১ লাখ কোটি টাকা। এটা সরাসরি হাতসাফাই! সরকারি খতিয়ান! তাকে ৫.৭৩ লাখ কোটি টাকার করছাড়ের সাথে জুড়ে নিয়ে গণ্য করতে হবে। ঠিক আছে, এর অর্ধেক বিতর্কিত হতে পারে। আইনগত মামলা হতে পারে। কিন্তু এর অর্ধেকও এই ৫.১ লাখ কোটি টাকার সাথে যোগ করলে ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি হবে। যদি আপনি এটি সংগ্রহ করেন এবং এটি জনসাধারণের বিনিয়োগ, কৃষি, ও গ্রামীণ পরিকাঠামো, শহুরে পরিকাঠামোর জন্য ব্যবহার করেন, তাহলে সবকিছুই মোকাবিলা করা সম্ভব এবং আপনি আমাদের যুবকদের জন্য কোটি কোটি নতুন কর্মসংস্থানও দিতে পারেন যারা আজকে সেটাই চাইছে। এবং, মহাশয়, গত বছর কর ছাড় ছিল ৫৩,০০০ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণ রাজস্ব ঘাটতির চেয়েও বেশি। রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৫.২ লাখ কোটি টাকা এবং কর ছাড় ছিল ৫.৭৩ লাখ কোটি টাকা। যদি এই নীতিগুলি প্রত্যাহৃত না করা হয় এবং যদি এগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত না থাকে, তাহলে এইসব আশা বাস্তবায়িত হতে পারে না।
তাহলে, পাঁচ বছর পরে একই গল্প হবে যখন আপনাদের স্থান পরিবর্তন হতে পারে, যখন আপনি বলবেন যে জনগণের আশার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে এবং আপনি আপনার প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করতে পারেননি। এজন্য, আপনি এই বিষয়গুলিতে গুরুতরভাবে মনোনিবেশ করুন, জিতবে কে এবং হারবে কে — তা ভুলে যান। আমি বলছি আমার নিজের দেশ, আমাদের যুবকযুবতীদের, তাঁদের ভবিষ্যত এবং তাঁদের আশার কথা, আমাদের জনসংখ্যার বিন্যাসকে সম্পদে রূপান্তরিত করার কথা। সেখানেই, মহাশয়, আমি মনে করি, এই বক্তৃতায় গুরুতর সমস্যা রয়েছে, যা এই সরকারকে ভবিষ্যতে মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করি এই আলোচনা অন্তত আসন্ন কিছু সময় আলো জোগাবে। একথা বলার কিছুই নেই যে আমার জন্য এত কিছু ঘটেছে এবং আপনার জন্য ততকিছু ঘটেনি। দশ বছর আগে যখন আমি এই ঘরে প্রবেশ করি তখন আমার বয়স ৫০ বছর ছিল। এখন আমি ৬০ বছর, একজন প্রবীণ নাগরিক। আপনি বলতে পারবেন না যে রাজ্যসভার কারণে আমি ১০ বছর বড় হয়েছি। আমি যে কোনোভাবেই বৃদ্ধ হতাম, স্যার। তাই, দেশও যে কোনোভাবেই এগিয়ে যেত। কিন্তু আপনারাই বলে থাকেন যে হ্যাঁ, এটা আমার জন্য ঘটেছে এবং ওটা আপনার জন্য ঘটেনি। মূল প্রশ্ন হলো, আপনি কীভাবে মোকাবিলা করবেন। কোন পথে? আমি দুঃখিত আমাকে স্যার, মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে বলতে হচ্ছে, যদিও আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রস্তাবের সাথে যুক্ত হচ্ছি, তবে এখানে একটি খুব, খুব গুরুতর ঘাটতি এবং সমস্যা রয়েছে।
অন্য বিষয়ে আসছি, স্যার, সমবায় স্বায়ত্তশাসনের কথা অনেক বলা হয়েছে। আমাদের সকলের রাজ্য সরকারের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা সবাই এটি নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু, আমাদের দেশে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অর্থের বন্টন সুষম না হলে আমাদের স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা কখনই শক্তিশালী হবে না। আপনার কাছে যে অর্থ কমিশন রয়েছে, সে কমিশন স্বাধীনতার পর থেকে একবারও কেন্দ্রীয় কর সংগ্রহের এক-তৃতীয়াংশও রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ করেনি। আজ এটা প্রায় ২৭ বা ২৮ শতাংশ। স্বাধীনতার সময়, আমরা ৫০ শতাংশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম— ৫০ শতাংশ রাজ্যের জন্য এবং ৫০ শতাংশ কেন্দ্রের জন্য। কিন্তু ব্যাপারটা কখনও ঘটেনি। আপনি যদি সমবায় স্বায়ত্তশাসনের কথা বলেন, তবে আপনি কি এমন একটি সাংবিধানিক সংশোধনের জন্য প্রস্তুত আছেন যা এসে বলবে যে কেন্দ্রীয় কর রাজস্বের ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলির সাথে ভাগ করা হবে? যদি আপনি তার জন্য প্রস্তুত না হন, তবে সবকিছুই শূন্যগর্ভ স্লোগান মাত্র। অর্থহীন। নির্বাচনের সময় শেষ। সুতরাং সাউন্ড বাইটগুলোও আর তেমন প্রয়োজনীয় নয়। নিদেনপক্ষে মতামত প্রদানের পর্বটা প্রদান শেষ।
এবার, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুর দিকে আসি। আপনি প্যারাগ্রাফ ৩৯-এ সন্ত্রাসবাদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহিষ্ণুতা না রাখার কথা বলেছেন। সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য-সহিষ্ণুতার কথা বলতে গিয়ে, তিনি বললেন, “বাকি সব বলা হয়েছে, সকল রাজ্যকে সহায়তা দেওয়া হবে, আধুনিকীকরণ ইত্যাদি।” কিন্তু, নির্বাচনের ফল আসার পর থেকে কী ঘটছে? নির্বাচনের ফল আসার পর আপনি দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার একটি প্রবাহ দেখে থাকবেন। আপনি কর্ণাটক এবং পুনেতে দেখেছেন কিভাবে একজন প্রযুক্তিগত পেশাভুক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। শারদ পাওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমাকে বলছিলেন যে মহারাষ্ট্র রাজ্যে গত তিন-চার দিনে ২২টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। এখন, সবকিছু শুধু এই বাস্তবতাকেই মনে করিয়ে দেয় যে ভারতে সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম, অঞ্চল বা সীমা নেই। মহাত্মা গান্ধীকে একজন হিন্দু উগ্রবাদী হত্যা করেছিল; ইন্দিরা গান্ধীকে একজন শিখ উগ্রবাদী হত্যা করেছিল; এবং রাজীব গান্ধীকে শ্রীলঙ্কার একজন এলটিটিই প্রজাতির উগ্রবাদী হত্যা করেছিল।
সুতরাং, ‘অপরাধী কে’ – কোন ধর্মের – তা ধর্তব্যের বিষয়ই নয়। যাঁরা বিনা দোষে বেআইনিভাবে আটক আছেন, সেই সব হাজার হাজার যুবকের প্রতি কি কোন দায়দায়িত্ব রয়েছে? তাঁরা কি একটি নির্দিষ্ট ধর্ম পালনকারী হওয়ার কারণে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে নিয়মিত গ্রেফতারির ফাঁসে পড়েছেন? এমনকি তাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষ কিছুই না থাকলে ভুলভাবে আটক মুসলিম যুবকদের মুক্তি দেওয়া হবে – এইটুকু বলে একটা নিশ্চয়তা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। এবং, তারপর আবার আপনার কাছে সব ধরনের এমন বক্তব্য আসবে যা খুব বিপরীত সংকেত দেয়। মহিলা, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী এখন আপনার দিকে আসছেন। কিন্তু তিনি তার বিবৃতিতে বলছিলেন ‘মুসলিমরা আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নয়’। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এটা বলছে। তিনি বলছেন, ‘মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নষ্ট করে’। এইসব মন্ত্রী এরকম বক্তব্য পেশ করছেন। মুসলিম সংখ্যালঘুকে কিছু সহায়তা প্রদানের প্রশ্নটা তাদের সংখ্যার কারণে আসেনি। এটি তাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার কারণে এসেছে, যা সাচার কমিটির রিপোর্টে উন্মোচিত হয়েছে।
এই কারণেই বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র রিপোর্ট OBC-র মধ্যে সংরক্ষণের বিষয়ে কথা বলেছিল। কিন্তু এখানে এসব বিষয় উদ্বেগজনক নয় বরং আমাদের কাছে প্যারাগ্রাফ ২০-এ আর্টিকেল ৩৭০-এর প্রতি একটি খুব আবেগপূর্ণ উল্লেখ রয়েছে, এবং, সেই বিষয়ে, মহাশয়, কোন বিতর্ক নেই যে আমাদের ভাই, কাশ্মিরি পণ্ডিতরা, যারা নিজেদের দেশে আভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত হয়েছেন, তাদের অবশ্যই নিজেদের অস্তিত্বের বোধ ফিরে পেতে হবে, এইসব এলাকাগুলিতে ফিরে আসতে হবে। এ বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু, স্যার, এটা কি বলা হচ্ছে – বলা হয়েছে যে কাশ্মীরে তাদের ফিরে আসার জন্য এবং পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করা হবে। এটি খুবই উদ্বেগজনক। এটি আমাদের দখলকৃত-প্যালেস্টাইনে ইহুদি বসতি স্থাপনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আপনি কোন বসতিগুলোর কথা বলছেন? এবং, যদি এ ধরনের প্রবণতা থেকে থাকে তবে তা খুবই উদ্বেগজনক প্রবণতার সূচক, কারণ বিদেশী নীতি বিষয়ক সমস্ত আলোচনায় — ভারতের প্যালেস্টাইনের মুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ঐতিহ্যগত সংহতির বক্তব্য — সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। তাই, এই সমস্যার মোকাবিলায় ইসরায়েলি অনুপ্রেরণা ভারতের মূল ধারণা বা ভারতের ধারণার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এই কারণেই আমি মনে করি, স্যার, এই বক্তৃতার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে, ভারত’কে এক সফটপাওয়ার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমি প্যারাগ্রাফ ৪৮-এর কথা বলছি। আমি উদ্ধৃত করছি, ‘আমাদের সফটপাওয়ার হয়ে ওঠার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে…’ তা এ পর্যন্ত, আমি গত দশ বছরে তখন যারা বিরোধী দলে ছিল – এই ঘরটিতে তাদের থেকে যে সমালোচনা শুনেছি, তা হচ্ছে ভারত একটি সফট-স্টেট ছিল পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে, যে কারণে আমরা একটি সফট স্টেট হিসেবে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে পারিনি।
আজ, আপনি সফটপাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন। এর অর্থ কী? আমরা সফটপাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কী আলোচনা করছি? হ্যাঁ, সবার সাথে সম্পর্ক উন্নতি করা একদম সঠিক। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এটা করা উচিত; কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই ঘরের সম্মানিত চেয়ারম্যান, যিনি এখানে কিছুক্ষণ আগে ছিলেন এবং আপনি যখন চেয়ারে এসেছেন তখন তিনি ভারতের সম্মানিত উপ-রাষ্ট্রপতি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তার নির্বাচিত হওয়ার পর। তৎকালীন সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি কিছু অন্য কারণে, কিন্তু তিনি সরকারের একজন মন্ত্রীকে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাঠিয়েছিলেন। এসব ঘটনা ঘটেছে। এটি এমন নয় যে এটি কেবল এই সরকারের নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথেই হঠাৎ শুরু হয়েছে। সার্ক সহযোগিতা চলমান ছিল, এটি চলছে। এটি ভালো যে আমরা এটি অব্যাহত রেখেছি। আমি এটি নিয়ে খুব খুশি। কিন্তু, আমরা যেন এই ধারণা দিয়ে শুরু না করি যে পৃথিবী কেবল আমার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। তখন আমরা কেবল এ ধারণাতেই এসে উপনীত হব যা ষোড়শ চার্লস বলেছিলেন, ‘আমার যুগ সমাপ্ত হলে প্লাবন আসবে’!’ তাই, যদি আপনি এই ধারণা দিয়ে শুরু করেন যে পৃথিবী কেবল আপনার জন্য সৃষ্টি হয়েছে, তবে আপনি কেবল ‘আমার যুগ সমাপ্ত হলে প্লাবন আসবে’ বলেই শেষ করবেন, এবং ব্যাপারটা আমাদের দেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। সুতরাং, দয়া করে মনে রাখবেন, যখন আমরা কথা বলি, যেমন সম্মানিত রাষ্ট্রপতি “আমাদের সমৃদ্ধ আত্মিক, সাংস্কৃতিক, দার্শনিক ঐতিহ্য” এর কথা বলেন, সেটাই ভারতের ধারণা।
স্যার, আমি এই বিষয়টি নিয়ে শেষ করতে চাই। আমি জানি, আপনি সবাই অস্থির হতে শুরু করেছেন, কিন্তু আমি শুধু এই বিষয়টি বলেই শেষ করব।
ভাষান্তরঃ নবারুণ চক্রবর্তী