গাজন, চৈত্র সংক্রান্তি,পয়লা বৈশাখ …বাংলা জুড়ে উৎসব। তার মাঝেই দেশজুড়ে এক অনন্য উচ্চতার মানুষকে নিয়ে মনের উৎসব। আবেগ সেখানে বাধা মানে না। তার পরিচয় কখনো অর্থনীতিবিদ, কখনো রাজনীতিক, কখনো সমাজ সংস্কারক, এক যথার্থ দলিত বা এক বিরল প্রতিভা। মারাঠি ভাষায় বাবাসাহেব, মানে ইংরেজিতে রেসপেক্টেড ফাদার। সংবিধানের জনক। তার নাম ডক্টর বি আর আম্বেদকর।
আম্বেদকরের আন্দোলন ছিল মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়ের জন্য গড়ে তোলা আন্দোলনের একটা ধারা। তার চোখে ছিল এক নতুন সমাজের স্বপ্ন। সেই সমাজে ন্যায় থাকবে, সাম্য থাকবে, থাকবে না ধর্মের নামে কোনও নিপীড়ন। সংবিধানবেত্তা হিসাবে তার পরিচয়। কিন্তু এ কাজ করেছেন দুই থেকে তিন বছর। সংবিধানের প্রধান রূপকার হয়েও তিনি প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সংবিধান তৈরি করতে পারেননি বলে আক্ষেপ করেছেন। রাজনৈতিক সাম্যের কথা সংবিধানে প্রবেশ করাতে পারলেও সামাজিক, আর্থিক সমতাকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তিনি মনে করতেন সেটাই রাজনৈতিক সাম্যের মূল সহায়ক। যে সংবিধান তিনি করেছিলেন সময়ের প্রেক্ষিতে তা অবশ্যই অনেকাংশে তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমান অধিকার ও সুযোগ (ধারা ১৪), লিঙ্গভেদের বৈষম্য নিষিদ্ধকরণ (ধারা ১৫), প্রয়োজন বোধে ‘ইতিবাচক বৈষম্য’ বিধানের ধারা (ধারা ১৫.৩ ), জীবনধারণের সমান সুযোগ এবং সমকাজে সমমজুরি নীতি (ধারা ৩৯) কাজের মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং মাতৃত্বকালীন সুযোগের ব্যবস্থা (ধারা ৪২), রাষ্ট্র কর্তৃক দুর্বলতর অংশের মানুষের শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ যত্নবান হওয়া এবং সব ধরনের শোষণ ও সামাজিক অবিচারের হাত থেকে তাদের রক্ষা করা (ধারা ৪৬), রাষ্ট্র কর্তৃক জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান এবং পুষ্টি সাধনের মাত্রাকে উন্নততর করা এবং জনস্বার্থে বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা (ধারা ৪৭), নারী জাতির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে পারে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা (ধারা ৫১ সি) ইত্যাদি
আম্বেদকরের সারা জীবন অতিবাহিত হয়েছে জাতি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যা আসলে হিন্দু ধর্মের প্রাণভোমরা। আম্বেদকর বিশ্বাস করতেন যে হিন্দুত্বের সঙ্গে জাতি ব্যবস্থা এবং অস্পৃশ্যতার সম্পর্ক জড়িত। মনে করতেন যে এ দেশের জাতি ব্যবস্থা অবলুপ্তি ব্যতীত শ্রেণি অবলুপ্তি অসম্ভব বিষয়। আমৃত্যু দলিতের মুক্তির পক্ষে এক অসম আপসহীন লড়াই তিনি লড়ে গেছেন।
আম্বেদকারের জন্মদিনে এবারের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ তার সাধ এবং সাধ্যের সংবিধান আজ আক্রান্ত। যে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা আছে, যে সংবিধানে গণতন্ত্র আছে, যে সংবিধানে সমাজতন্ত্র আছে, যেখানে সামাজিক ন্যায়ের কথা প্রোথিত, স্বাধীনতা-সমতা-সৌভ্রাতৃত্বের নীতি— তা প্রথম থেকেই সঙ্ঘ পরিবারের চক্ষুশূল। প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে তারা আম্বেদকারকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছে। তাকে লিলিপুট বলেছে। সংবিধানকে বিদেশি আখ্যা দিয়েছে।
মনুস্মৃতিকে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ আখ্যা দিয়ে তাতে সংবিধান হিসাবে স্বীকৃতি না দেওয়ার আক্ষেপ করেছে। এই সেই মনুস্মৃতি যা চতুর্বর্ণের হয়ে উদ্বাহু জয়গান করেছে। নারী ও শূদ্রকে অধিকারহীন সেবাদাসে পরিণত করেছে।
চুপিচুপি নয়, প্রকাশ্যে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সরিয়ে চকচকে মলাটের নতুন সংবিধান বই আইনপ্রণেতা সাংসদদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। বারাণসী শঙ্করাচার্য পরিষদ তৈরি করেছেন হিন্দুরাষ্ট্রের সংবিধান! হিন্দু রাষ্ট্রের সংবিধান। সেখানে বর্ণাশ্রম থাকবে। থাকবে শুধু হিন্দুদের ভোটাধিকার। বর্ণাশ্রম থাকলে এসসি, এসটি ,ওবিসি অবশ্যই হিন্দু নয়। আজ অথবা কাল তাদেরও ভোটের অধিকার যাবে। তার মধ্যেই মোদী চ্যালেঞ্জ করেছেন আম্বেদকরকে। তিনি বেঁচে ফিরে এলেও নাকি এই সংবিধানকে পরিবর্তন করতে পারবেন না! আসলে এবারে চারশো এম পি করার যে আকুল আহ্বান তা সংবিধান আমূল পরিবর্তনের জন্য। পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। আইন যেখানে তৈরি হবে সেই সংসদ ভবনের মাথায় জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভ স্থাপনার সময় প্রধানমন্ত্রী হিন্দু শাস্ত্র মতে পুজো অর্চনা করেছেন। রাম মন্দিরের উদ্বোধনে নিজে গিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছেন, রাজ্যের রাজ্যপাল গিয়েছেন। সংখ্যা অনেক বড়। অথচ দেশ ধর্মনিরপেক্ষ! যেভাবে ধর্মীয় ঘৃণা তৈরি হচ্ছে তাতে আম্বেদকর আরও প্রাসঙ্গিক হচ্ছেন। তিনি বলেছিলেন জাতিভেদ জর্জরিত ভারতবর্ষে স্বাধীনতা পেলেও তা রক্ষা করা কঠিন হবে। কারণ ধর্মীয় ভেদাভেদের কারণে যথার্থ জাতীয় বোধ গড়ে উঠবে না। খণ্ডিত জাতিগত বোধ নিয়ে কখনো ভারত ভাগ্যবিধাতা হওয়া যায় না।
আম্বেদকর কনস্টিটিয়েন্ট অ্যা সেম্বলিতে তার বিখ্যাত বক্তব্যে বলেছিলেন যে সংসদ— আসলে বিরোধীদের । গণতন্ত্রে সংখ্যাগুরুবাদের তত্ত্ব তিনি একদমই মানতেন না। তিনি কার্যকর যা বলতেন তাতে মন্ত্রীদের সংসদে অন্যদের কথা শুনতে হবে। যদি সেটা না হয় তাকে তিনি কার্যত বলেছিলেন— গণতন্ত্রের প্রতারণা। আজ সেই প্রতারণা সর্বস্ব সংসদ। সংসদীয় আলোচনা কতক্ষণ হয়, প্রধানমন্ত্রী সংসদে থাকেন কতক্ষণ, উত্তর দেন কতক্ষণ, আদানিকে বা অন্য কর্পোরেটদের রক্ষা করেন কতক্ষণ? এসবের কোনও উত্তর নেই। মন্ত্রীরা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাব দেন না। বাজেট অধিবেশনে বিরোধীদের বলতে দেওয়া হয় না। গিলোটিনে পাশ করানো হয় বিল। অথচ সংবিধান মন্ত্রীদের আইনসভার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে বলেছে। এটাই সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। আম্বেদকর বলতেন যদি সাংবিধানিক রীতিনীতি না মানা হয় তা আসলে— নৈরাজ্যের ব্যাকরণ। সংসদের ভিতরে তাই চলছে। সংখ্যালঘু সাংসদের প্রতি নিক্ষিপ্ত কুৎসিত ভাষা, দৈহিক আক্রমণে সরকারি দল যখন বাহুবলি তখন সংসদের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা যে নিষ্ফলা তাও ইতিমধ্যে প্রমাণিত।
১৯৪৯ সালে খসড়া পেশের সময় আম্বেদকর বলেছিলেন— যারা ভ্রাতৃত্বকে অতিক্রম করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবিধানের প্রস্তাবনার ভেতরে এসব কথাগুলো আম্বেদকর লিখেও গিয়েছেন। আম্বেদকর যে সাংবিধানিক নৈতিকতার কথা বলেছিলেন আজ তা ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কথা বলার স্বাধীনতায় কার্যত বুলডোজার চলছে। সব কিছুর শেষ লক্ষ্য হিন্দু রাজ প্রতিষ্ঠা করা। এর সম্পর্কেই আম্বেদকর বলেছিলেন— যদি হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা এই দেশের চরমতম বিপর্যয় হবে। আম্বেদকর শুধু এ কথা বলেননি, তাকে কার্যকরী করবার জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। আম্বেদকর সামাজিক নৈতিকতার জায়গায় সাংবিধানিক নৈতিকতা চেয়েছিলেন। আম্বেদকর বলেছিলেন হিন্দুত্ব একটা রাজনৈতিক মতাদর্শ যা ফ্যাসিস্ত চরিত্র বহন করে। এবং তা চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক। ১৯২৮ সালে দূরদর্শী আম্বেদকর বলেছিলেন— রাজনীতি যদি কার্যকরী ধর্মতত্ত্ব হয় তাহলে তা অবশ্যই সংবিধানের বিরুদ্ধে এবং সংবিধানের নৈতিকতার বিরুদ্ধে যায়। আম্বেদকর বই লিখেছিলেন- ‘পাকিস্তান অ্যা ন্ড পার্টিশন অব ইন্ডিয়া’। এই বইতে সাভারকারের হিন্দুত্ব নিয়ে সোজাসুজি বলেছিলেন যে, সাভারকারের প্রকল্প এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় । আম্বেদকর যে কত সত্য বলেছিলেন তা আজ প্রমাণিত। হায়নারা হিন্দুত্বের নামে সাভারকারকে নায়ক বানিয়ে গোটা দেশে হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থানের বুলি ওগড়াচ্ছে। তারা প্রশ্ন করছে মুসলমানদের নমাজ পড়তে দিও না, কেন ওরা রাস্তায় নমাজ পড়বে, কেন মাইক বাজবে, কেন হিজাব পরবে, কেন পাকিস্তানে যাবে না? একবারও প্রশ্ন করছে না যে সরকার মানুষকে খাবার দিতে পারছে না, কাজ দিতে পারছে না, শিক্ষা দিতে পারছে না, জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন কথার কথা থেকে যাচ্ছে। অথচ বড় লোকেদের আমাদের স্বার্থের বিনিময়ে সরকার সবচেয়ে বেশি পুষ্ট করছে এই সময়ে। এগুলো আড়াল করতেই চোখ ধাঁধানো হিন্দু রাষ্ট্রের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে ওদের কাছে।
আম্বেদকর হিন্দু কোড বিল নিয়ে এগিয়েছিলেন। সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকারের জন্য। তিনি বলতেন – I measure the progress of a community by the degree of progress which women have achieved. মহিলাদের প্রগতি দেখে প্রকৃত প্রগতি নির্ধারণের পন্থা ছিল তার। হিন্দু কোড বিল নিয়ে আপসহীন ছিলেন বলে মন্ত্রিসভা থেকে সরে আসতে এক ফোঁটা পা কাঁপেনি। এ বাংলার মাটিতে আর একজন ছিলেন তিনি ১৮১৭ সালে বাবার সম্পত্তিতে মহিলাদের অধিকারের বিষয়ে সরব হয়েছিলেন। হরিচাঁদ ঠাকুর। সোচ্চার ছিলেন নারী-পুরুষ সমান অধিকারের বিষয়ে। সেই মহিলারা আজ আক্রমণের বড় শিকার। মহিলা কুস্তিগির নির্যাতিত বিজেপি’র এমপি দ্বারা। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দলের সকলের অবাধ প্রশ্রয়। হাথরাসের মনীষা বাল্মীকি, কাটুয়ায় আট বছরের আসিফা, গুজরাটের বিলকিস বানু… অজস্র দলিল। মোদীর প্রথম সাত বছরে মহিলাদের ওপর অত্যাচার বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪২.৯৬ শতাংশ । থমসন রয়টার ফাউন্ডেশন রিপোর্টে ভারতকে নারী পাচার যৌনদাসত্ব, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদের কাছে নারী নরকের দ্বার- তাদের এরকমই হওয়ার কথা। এরাজ্যে শেষ প্রকাশিত ঘটনা সন্দেশখালি। আম্বেদকর বা হরিচাঁদ ঠাকুর নারীর অধিকারের কথা বলেছিলেন, সমান অধিকারের কথা বলেছিলেন মেয়েদের এই অসম্মানের কথা বলেননি। বেটি বাঁচাও আর বাংলার মেয়ে বললেই হয় না—মেয়েদের রক্ষা করতে হয়। না করতে পারলে আম্বেদকর বা হরিচাঁদ ঠাকুর তাদের সম্মান জানানো যায় না।
আম্বেদকর ছিলেন স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা তৈরির কমিটিতে। জাতীয় পতাকায় অশোক স্তম্ভের ধারণা তারই অবদান। আরএসএস এই পতাকার বিরুদ্ধে ছিল। তারা স্বাধীনতার পতাকার তিন রঙের ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়েছিল। গেরুয়া মানে হিন্দু, সবুজ মানে মুসলমান আর সাদা মানে অন্যান্যরা। যারা হিন্দু রাষ্ট্র চায় তারা এই পতাকাকে মানবে কেন? অথচ আম্বেদকর তিন রংকে ত্যাগ ,শান্তি এবং বিশুদ্ধতার প্রতীক হিসাবে দেখিয়েছিলেন।
কয়েক হাজার বছরে মনুসংহিতার প্রকোপে, বর্ণাশ্রমের প্রয়োগে শিক্ষার, সম্পদের অধিকার হারা , দাসত্বের বন্ধনে যুক্ত থাকা তথাকথিত সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষকে সমাজের মূল স্রোতে আনার জন্য আম্বেদকর সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। আইন সভায় এবং সরকারি কাজ ও শিক্ষায়। আরএসএস প্রথম থেকেই এর বিরুদ্ধে । বিজেপি-ও তাই। ভোট বড় বালাই বলে তাদের ওপেন অ্যা জেন্ডা হিডন হয়ে যায়।
আম্বেদকরের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রথম শর্ত দলিত মুক্তি আন্দোলনে সহমত হওয়া। রাজ্যে দলিতদের মুখ্য পথপ্রদর্শকদের অন্যতম হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদকে বিকৃত করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডেকেছেন রঘুচাঁদ এবং গরুচাঁদ বলে। তারই এক মন্ত্রী এখন যিনি জেলে, শিক্ষার মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ক্ষমতার দর্পে বলে উঠেছিলেন তফসিলি ও আদিবাসীরা স্কুলে যায় কেবলমাত্র স্টাইপেন্ড তুলতে। আর এক মন্ত্রী ববি হাকিম ‘চোর চামার’ বলেন। আর এক তখনকার মন্ত্রী হুমায়ুন কবির তফসিলি ঘরের মেয়েকে চাকরির লোভ দেখিয়ে বাড়ির কাজ করান এবং কুকুরের মলমূত্র পরিষ্কার করান। বাইরে প্রকাশ হলে তাকে ভয় দেখান। তার এক বিধায়ক যাকে দলিতদের মাথায় তুলেছেন তিনি পঞ্চায়েত ভোটের সময় পদত্যাগ করেন এবং বলে ওঠেন ভোটে টাকা দিয়ে টিকিট বিক্রি হয়। রাজ্যে প্রাইমারিতে দ্বিগুণ, আপার প্রাইমারিতে তিন গুণ ড্রপআউট বেড়েছে। তফসিলিদের। স্কুল ছেড়ে বাইরের রাজ্যে কাজে ছুটছে। রাজ্যে কোনও কাজ নেই। নিম্নবর্ণীয়দের একগাদা পর্ষদ তৈরি করেন। অর্থ বরাদ্দ করেন না। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জাতিগত বিভাজনেও পাল্লা দিয়ে দৌড়ান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তার দল। যেমন দলিতদের বাড়িতে খেতে যাওয়া এবং তাকে কৃতার্থ করা। বিজেপি নাগরিকত্ব কেড়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার নাম করে মানুষকে বাংলাদেশি করে ছাড়ছে। মমতা দেখাচ্ছেন যে তিনি কত বিরোধী এর। অথচ লোকসভায় তার সাংসদেরা বিল অনুমোদনের সময় সদন থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিল পাশে সুবিধা করে দিয়েছে। হরিচাঁদ গুরুচাঁদের সহিষ্ণু মত। অভিষেকের মুখের উপর ঠাকুরবাড়ির দরজা শান্তনু ঠাকুরের নিজে বন্ধ করে দেওয়া-কোন অশনি সংকেত বহন করে? একজন দেশের মন্ত্রী আর একজন দেশের সাংসদ। এই দুই রাজনৈতিক দল হরিচাঁদ গুরুচাঁদের হাতে তৃণমূলের আর বিজেপি’র পতাকা গুঁজে দিতে চাইছে। এইরকম হাজারো সত্যগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার। আম্বেদকরের সারা জীবন চলে গেছে সত্যকে উদঘাটনের কাজে। সমাজ কি বলছে, অধিকাংশ কি বলছে সেদিকে না তাকিয়ে সত্যের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সেই সত্যের দিকেই তাকিয়ে সত্যমেব জয়তের উপর বিশ্বাস রেখে মানুষের কাছে সত্যের উদ্ঘাটন করতে হবে।