বর্তমান ভারতের সমগ্র জনসংখ্যার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ গোষ্ঠী এই আদিবাসীরা নানা ধরনের পশ্চাৎ পদতার শিকার। হ্যাঁ আদিবাসী স্বার্থরক্ষাকারী আইন অবশ্যই আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আইন যথাযথ রূপে প্রয়োগ হয়না। আমলাতান্ত্রিক দূর্নীতি, আইনের প্রয়োগ কর্তাদের মধ্যে ও আদিবাসী স্বার্থের প্রতি সহনাভুতি সম্পন্ন প্রতিনিধির অভাব একাংশের দূর্নীতি এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে অশুভ আঁতাতের কারণে আইন প্রনয়নের আসল উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হয় না। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ আদিবাসী-এর অর্ধেক মহিলা।
স্বাধীনতার পর ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে এবং সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যে – গোটা দেশে বিভিন্ন প্রান্তে মোট ৩৬ টি আদিবাসী আন্দোলন চলেছিল। তার মধ্যে মহিলাদের অংশগ্রহন উল্লেখযোগ্য ১৪টি আন্দোলন ভারতের উত্তর – পূর্বে কেন্দ্রীভূত ছিল। এই আন্দোলনগুলি যে ধারায় চলেছিল –
(১) রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যের দাবীতে আন্দোলন
(২) কৃষি ও অরন্যভিত্তিক আন্দোলন,
(৩) ভাষা ও শিল্প ভিত্তিক আন্দোলন।
এই আন্দোলনগুলির বিভিন্ন ধরনের চরিত্র ছিল। স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবাংলায় গরীব মানুষের বন্ধু সরকার ছিল বামফ্রন্ট সরকার। আর আদিবাসী মানুষের বেশির ভাগই ছিল গরীব মানুষ। বামফ্রন্ট সরকারের আগে ছিল যুক্তফ্রন্ট সরকার ১৯৭২ সাল সন্ত্রাসের কালো দিন এবং ১৯৭৫ সালে দেশে জরুরী অবস্থা আবার ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রকৃত অর্থে গরীব খেটে খাওয়া শ্রমজীবী আদিবাসী মানুষের বটগাছ বামফ্রন্ট সরকার। ১৯৭৮ সাল থেকে বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী জ্যেতি বসু ঘোষনা করেছিলেন – এই সরকার রাইটার্স বিল্ডিং থেকে চলবে না, গ্রামে গ্রামে রাইটার্স বিল্ডিং তৈরি করতে হবে। শুধু তাই নয় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন করে পঞ্চায়েতে ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থা গড়ে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্বে বহুল প্রশংসিত হয়েছিলেন। নব্বই দশকে ৭৩ ও ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পঞ্চায়েতে বিশেষ করে কর্মকর্তা নির্বাচনে তপশিলি জাতি, আদিবাসী মহিলা ও সমাজে পশ্চাদপদ অংশ সংরক্ষনের সুযোগ পেয়েছিল অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে ভুমি সংস্কারের কাজ সঠিকভাবে রূপায়িত হয়েছিল। এই রাজ্যে ৭৮ ভাগ জমির মালিক গরীব ভুমিহীন, খেতমজুর, তপশিলি জাতি, আদিবাসী ও প্রান্তিক অংশের মানুষ।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে প্রথম শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত অবৈতনিক এলাকায় আদিবাসী ছাত্রাবাস, স্কুল, হোস্টেল, স্টাইফেন, বুকগ্যান্ড, উৎকর্ষ ভাতা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির ফলে আদিবাসী তপশিলি জাতি পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষার শেষে টেট, এসএসসি ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে সংরক্ষনের নিয়মনীতি মেনে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রতি বছরই সম্পন্ন হয়েছে এবং মেধার ভিত্তিতে সকলের চাকরী সুনিশ্চিত করা গিয়েছিল।
কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকারের সামগ্রিক পরিকল্পনা ছিল। উন্নত মানবসম্পদ তৈরী করার ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকারের অবদান অনস্বীকার্য সামাজিক উদ্যোগে স্বাক্ষরতা কেন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জনচেতনা কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রবাহমান শিক্ষা কেন্দ্র, আয় বৃদ্ধি মূলক কর্মসূচী, জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন ও পরিকাঠামো গড়ে গ্রাম উন্নয়নে মানুষের অংশগ্রহন সুনিশ্চিত করা গিয়েছিল। যার ফলে সমাজে অ-সামাজিক কাজকর্ম, কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, দুর্নীতমূলক কাজ কম ছিল। গ্রামে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, স্ব-সহায়ক দল গঠনের কাজ পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সফলভাবে রূপায়ন করা হয়েছিল এবং স্থানীয় সম্পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই সমস্ত ক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।
আদিবাসী আধ্যুষিত বনাঞ্চল এলাকাতে ল্যাম্প-এর মাধ্যমে শাল পাতা, কেন্দু পাতা, বাবুই দড়ি, ক্ষুদ্রকুটির শিল্প, ব্যবসা-বানিজ্য করার ক্ষেত্রে আয় উপার্জন করার সুযোগ ছিল। আদিবাসী মানুষেরাই ল্যাম্প-এ (Lamps) যুক্ত থাকতেন তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের প্রচেষ্ঠায় জেডিবি (JDB) ডেভলপমেন্ট বোর্ড তৈরী হয়েছিল। পরে তা সম্প্রসারন করে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্যদ গঠিত হয়েছিল। সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্য আইআইডিপি (IIDP) এলাকাতে টিএসপি (TSP) ও এসসিপি (SSP) ইত্যাদির মাধ্যমে পশ্চাদপদ আদিবাসী ও তপশিলি অধ্যুষিত এলাকায় মানুষের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হতো।
সাঁওতাল বিদ্রোহকে স্মরণে রেখে জেলাগুলিতে প্রতিবছর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করা হতো, তাতে আদিবাসী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহন ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন সামাজিক ও সরকারী উদ্যোগ নিয়ে সম্পন্ন হত।
সাঁওতাল বিদ্রোহ অর্ধশত বছর উদযাপন উল্লেখ্য, গোয়ালতোড় ব্লকে কলেজ স্থাপন (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত । । বামফ্রন্ট সরকারের আমলে আদিবাসীরা সমাজে মানুষের মত করে বাঁচার অধিকার পেয়েছিল। মাধ্যমিক – উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। সরকারী সহায়তায় উচ্চ শিক্ষায় আদিবাসী ভাই- বোনেরা এগিয়ে ছিল।বামফ্রন্ট সরকারের শেষের দিকে কিছু প্রশাসনিক দুর্বলতা ও কিছু মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভ কে কাজে লাগিয়ে বিরোধী সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি একত্রিত হয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বামফ্রন্ট সরকারেকে পরাস্ত করে আমাদের রাজ্যে ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট ২১টি ব্লক ও ৭টি পৌরসভা। কমবেশি প্রতিটি এলাকায় আদিবাসী মানুষের বসবাস রয়েছে। প্রায় ৪ লক্ষ বেশি আদিবাসী মানুষের বসবাস, ১০টি আইটিডিপি (ITDP) ব্লক রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ব্লকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আদিবাসী বসবাস করেন। এই রাজ্যে ৪০টি সম্প্রদায় আদিবাসী হিসাবে চিহ্নিত ও স্বীকৃত রয়েছে।
বর্তমানে রাজ্যে তৃণমূল সরকার ও কেন্দ্রে বিজেপি ও আরএসএস সরকার পরিচালনা করছে। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর সিএনটি (CNT) ও এসপিটি (SPT) আইন করতে চেয়েছিল। ঝাড়খন্ডে সিধু-কানুদের বিদ্রোহ হয়েছিল। বিজেপি সরকার আদিবাসী মানুষের উন্নয়ন চায়না।
বনাঞ্চল আইন ২০০৬ বামপন্থীদের সমর্থনে সংসদে গৃহীত হয়েছিল সেই আইনকে বিজেপি কার্যকর না করে Forest Conservation Act 2023 পাশ করিয়েছে, তাতে আদিবাসীদের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে এবং কর্পোরেটদের কাছ থেকে CSR তহবিলের মাধ্যমে RSS এর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির জন্য বিপুল টাকা সংগ্রহ করে আদিবাসী এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিবেশ ও অন্যান্য সামাজিক কল্যানমূলক প্রশিক্ষন কেন্দ্র পরিচালনা করছে, দীর্ঘদিন ধরে RSS এর পূর্বাঞ্চলের মূল কেন্দ্র খড়্গপুর গোপালীতে, ২০০০ সালের পর থেকে আদিবাসী যুবকদের প্রশিক্ষন চালাচ্ছে, BJP সরকার হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার করছে – ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায়, ভাষা নিয়ে কেন্দ্র সরকার বিভাজনের রাজনীতি সংগঠিত করছে। আদিবাসী পরিচিতি স্বত্তা ও সংস্কৃতি বিপন্ন করতে চাইছে। সংবিধানে আদিবাসীদের অধিকার আইনগুলি পরিবর্তন, প্রত্যাহার করতে কেন্দ্র সরকার খুবই সচেষ্ট।
সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রিয় সরকার অভিন্ন দেওয়ানী বিধি UCC চালু করতে চাইছে, ফলে আদিবাসীদের সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। আদিবাসী মানুষ জমির অধিকার হারাবেন এবং বনাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ হবেন। নতুন শিক্ষানীতি ২০২০ চালু করার ফলে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
অনুরূপভাবে রাজ্যে তৃণমূল সরকার লুট সর্বস্ব রাজনীতি, ব্যপক দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, নারীদের সম্ভ্রম হড়ন, বিশেষ করে আদিবাসী মহিলারাই নির্যাতনের স্বীকার – বর্তমানে উদাহরন হিসাবে সন্দেশখালি যা গোটা বিশ্বের কাছে ইতিহাস হিসাবে থাকবে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আদিবাসী মানুষ ও আদিবাসী মা বোনেদের লড়াই সংগ্রামের উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে অথচ স্বাধীনতা আন্দোলনে যাদের কোন ভূমিকা ছিল না তারা আজ কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসীন। তারা স্বাধীনতার সংবিধানকে স্বীকার করে না গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ধ্বংস করতে চায়। এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম জারি রাখা দরকার।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আদিবাসী মহিলাদের অবস্থা জটিল। বামপন্থীদের দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের ফলে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
আদিবাসী মহিলাদের জন্য বামপন্থীদের দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের ফসল –
১। সংরক্ষন ব্যবস্থা – পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসী মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত হয়েছে।
২। স্বনির্ভর গোষ্ঠির গঠন – বামফ্রন্ট সরকারের সহযোগিতায় সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার সহায়তায় আদিবাসী মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করছে এবং বিভিন্ন আর্থিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে।
৩। রাজনৈতিক অংশগ্রহন বৃদ্ধি – আদিবাসী মহিলাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ।
বর্তমানে তৃণমূল সরকারের আমলে এই রাজ্যে নতুন করে আদিবাসীরা তাদের অর্জিত আধিকার হারাচ্ছে –
১। বৈষম্য – আদিবাসী মহিলারা অনেক ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তাদের অনেক বাধা রয়েছে।
২। জমি অধিগ্রহনের সমস্যা – আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহনের সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি।
৩। সচেতনতার অভাব – আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে , তাদের সচেতন করার জন্য সরকারের কোনও সদিচ্ছা নেই।
৪। দারিদ্র – আদিবাসী মহিলারা এখনও দারিদ্র্যের স্বীকার, সমবায় প্রকল্প গুলির মাধ্যমে মহিলাদের স্বাবলম্বী করার কোন প্রয়াস বর্তমান সরকারের নেই।
৫। অনিয়মিত আয় – তাদের আয়ের উৎস অনিয়মিত এবং অনিশ্চিত।
৬। কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব – আদিবাসী মহিলাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ কম।
৭। শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব – শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে অনেক আদিবাসী মহিলা কাজ পান না, তাদের শিক্ষিত করার ও বিভিন্ন কাজে ট্রেনিং দিয়ে কাজে উপযুক্ত করার কোন পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই।
কিছু উল্লেখযোগ্য প্রভাব –
১। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বাধা – কুসংস্কারের কারনে আদিবাসী মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক পরিবার অনাগ্রহী থাকে। এছাড়াও গর্ভবতী ও স্তনদান কারী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহনেও কুসংস্কার বাধা সৃষ্টি করে।
২। অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব – কুসংস্কারের কারনে আদিবাসী মহিলাদের বাইরে কাজ করার সুযোগ কম থাকে।
৩। সামাজিক বৈষম্য – কুসংস্কারের কারনে আদিবাসী মহিলাদের সমাজে নানাভাবে বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়।
৪। পারিবারিক সহিষ্ণুতা – কুসংস্কারের কারনে আদিবাসী মহিলাদের উপর পারিবারিক অসহিষ্ণুতার ঘটনাও বৃদ্ধি পায়।
কিছু উদাহরন –
ডাইনি প্রথা – আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক স্থানে ডাইনি প্রথার কুসংস্কার এখনও বিদ্যমান। এর ফলে অনেক আদিবাসী মহিলা নির্যাতের স্বীকার হন।
মাসিক স্বাব এর ক্ষেত্রে কুসংস্কার – মাসিক স্বাবকে অপবিত্র মনে করে আদিবাসী মহিলাদের এই সময়ে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয় না।
বিধবার পূর্ন বিবাহের নিষেধ – কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ে বিধবা মহিলাদের পূর্নবিবাহে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
কুসংস্কার দূর করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নেওয়া হয়েছিল যেমনঃ
সচেতনতা বৃদ্ধি – আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চালানো।
শিক্ষার প্রসার – আদিবাসী মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা।
আইনি সহায়তা – কুসংস্কারের কারনে মহিলারা নির্যাতিত, তাই এদের আইনি সহায়তা প্রদান করা।
বামফ্রন্ট আমলে ইতিবাচক দিক –
ভূমিসংস্কার ও ভূমিবিতরনের মাধ্যমে আদিবাসী মহিলাদের জীবনে স্থিতিশীলতা আনা হয়েছিল।
শিক্ষা – আদিবাসী মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছিল।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা – আদিবাসী গ্রামগুলিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল।
জীবিকা – আদিবাসীদের জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসার ঘটানো হয়েছিল।
নারী ক্ষমতায়ন – গ্রামীন স্তরে মহিলাদের অংশগ্রহন বৃদ্ধি পেয়েছিল।
সামাজিক নিরাপত্তা – বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসীদের জীবনে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নারী ক্ষমতায়ন – বামফ্রন্ট সরকারের আমলে মহিলাদের জন্য নতুন নতুন কর্মসূচী চালু করা হয়েছে।
আন্দোলন –
প্রতিক্রিয়াশীল – এটি হল আগের দিনের ফেলে আসা সামাজিক অবস্থাকে ফিরিয়ে আনা।
সংরক্ষনশীল – এর লক্ষ্য হল স্থিতাবস্থায় বজায় রাখা এবং যে কোন পরিবর্তনের বিরোধিতা করা সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন মুছে যাওয়া দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনতে চাই। রক্ষনশীল আন্দোলন সেখানে বর্তমানকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়।
প্রগতিশীল – আন্দোলন আধুনিক সুযোগ বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার দাবী বোঝায়। এইসব আন্দোলনের ধারায় দেশে ১৮৩১-৩২ সালে সংগঠিত ছোটনাগপুরের কোল, মুন্ডা, এবং হো-উপজাতির আন্দোলন। ১৮৫৫-৫৭ সালে সংগঠিত সাঁওতাল বিদ্রোহ ১৮৯৯ সালে বিরসা মুন্ডার বিদ্রোহ ১৯৫১৫-২১ সালে ওরাঁদের ভগং আন্দোলন, এছাড়াও নানান দাবীতে নানান রকম আন্দোলনের ঘটনা আছে।
দাবী – ১। মহিলা, আদিবাসী সহ দলিত মানুষদের উপর অত্যাচার বন্ধের কঠোর ব্যবস্থাপনার দাবীতে লড়াই জারি রাখা।
২। পিছিয়ে পড়া মানুষের বিজ্ঞান চেতনাসহ সাংস্কৃতিক মনোনয়নের জন্য কার্যকরী ভ‚মিকা নেওয়া প্রয়োজন।
৩। সরকার ও প্রসাশনের সমস্ত স্তরে কঠোরভাবে দূর্নীতি বন্ধ হওয়ার লড়াই জারী রাখা।
৪। গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করতে আইনে যে সব দানবীয় বিধি ঢুকিয়ে হয়েছে তার প্রতিবাদ।
৫। বর্গাদার পাট্টাদার উচ্ছেদ বন্ধ করা, জমি অধিগ্রহন ২০১৩ এবং অরন্য অধিকার আইন ২০০৬ বাতিল করা যাবে না।
৬। সন্দেশখালির বিভৎসতার কথা সমস্ত মহিলাদের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার আন্দোলন সংগ্রাম জারি রাখা।
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৫০টি আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে। আদিবাসীরা রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৭%। আদিবাসী মহিলারা আদিবাসী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ। আদিবাসী মহিলাদের অবস্থা উন্নত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। আদিবাসী মহিলাদের অবস্থার উন্নতি করতে যে সহযোগিতা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের করার কথা , সেই কাজ এইদুই সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও করেনি। আদিবাসী ভাই বোনেদের অর্জিত অধিকার ফিরে পেতে ও স্বাবলম্বী করে তুলতে , কেন্দ্রে ও রাজ্যে সমদরদী সরকার প্রয়োজন। ধারাবাহিক লড়াই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের খাদ্য, শিক্ষা ,স্বাস্থ্য ,বাসস্থানের অধিকার ফিরে পেতে হবে।