March 8, 2020
নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেহ নাহি দিবে অধিকার- এই অমোঘ বানী সবসময় প্রাসঙ্গিক। মার্ক্স এঙ্গেলসের বন্ধু ও সহকর্মী জার্মানির বিশ্ব বিখ্যাত পন্ডিত আগষ্ট বেবেল তার “Women in the Past, Present and Future” গ্রন্থের শুরুতে বলেছিলেন, “মানবজাতির মধ্যে নারীই সর্বপ্রথম দাসত্বের শৃঙ্খল পরেছে। নারীর দাসত্ব শরু হয়েছে ইতিহাসে দাসপ্রথার ও পূর্বে। ” বর্তমানে আধুনিকতম জীবনযাত্রার কৌশলে, আধুনিকতার মাঝে কোথাও একটা বিশাল ফাঁক রয়ে গেছে। তাই আজও সমাজের দুটি অংশের মধ্যে একটিকে অর্থাৎ নারীদেরকে এখনও লড়াই করতে হচ্ছে, নিজেদের শুধু মেয়ে নয় মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে। আর যারা এই মানুষকে মানুষের অধিকার দিতে বদ্ধপরিকর তাদেরই লড়াইয়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা পেয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১০৬ বছর আগে।
১৮৬৮ সালে মার্কস ও এঙ্গেলস শ্রমিক শ্রেনীর প্রথম আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তোলার সময়তেই শ্রমজীবী মহিলাদের যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের উপলব্ধি ছিল এই, সর্বহারা শ্রেণী নারী শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহন ব্যাতীত সফল হতে পারে না। দাস ক্যাপিটালের প্রথম খন্ডে মার্কস উল্লেখ করেছেন, “ শিল্পপতিরা অধিক মুনাফা অর্জন করে নারী ও শিশু শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে।” শ্রমজীবী মানুষের শোষণমুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সমাজতন্ত্রী নারী নেতৃত্বরা। পূর্ব লন্ডনের কারখানাগুলিতে নারী শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে মার্কসের কন্যা ইলিয়নের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সাল ১৮৮৯ সালে প্যারি শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন নারী- পুরুষদের সর্বক্ষেত্রে সমানাধিকারের দাবিটি উত্থাপন করেন। ১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে ১৫ টি দেশে ৫৯ জন মহিলা প্রতিনিধি উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে অন্যান্য দাবির সাথে নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে ক্লারা জেটকিন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতা সত্বেও ৪৭-১১ ভোটের ব্যবধানে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
১৯০৮ সালে ৮ মার্চ নিউইয়র্কের মহিলা দর্জি শ্রমিক ঐতিহাসিক ভোটাধিকার আন্দোলন শুরু হয়। ১৯০৯ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের শ্রমিক মহিলাদের একটি সভা নারীর ভোটাধিকারের দাবি করে প্রস্তাব গ্রহণ করে। তারপরে ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ১৭ টি দেশের একশত নারী প্রতিনিধি যোগদান করেন কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন এই সম্মেলনের নেতৃত্ব করেন।
প্রস্তাব গৃহীত হয় যে প্রতি বৎসর একটি দিন পূর্ন বয়স্কা নারীদের ভোটাধিকার দাবী দিবস রূপে পালন করা হবে। সেই সময় নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন ছিল একটি বিশেষ বৈপ্লবিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। কারণ তখন মাত্র ৪টি দেশে নারীদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছিল। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, প্রশিয়া। সেই কারণে জার্মানির মহিলাদের কাছে এই ১৯ শে মার্চ দিবসটি একটি দাবি দিবস রূপে চিহ্নিত হয়েছিল। ১৯১০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হবার সময় ১৯১১ সালের ১৯ শে মার্চ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক নারীদিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন তারসাথে ছিলেন কাথেডানকার, আলেকজান্দ্রা কোলান তাই, নীনাবেঙ প্রমুখ। তারপর ১৯১৪ সাল পুনরায় কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত তৃতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে আমেরিকার নারী দর্জি শ্রমিকদের আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে ৮ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
শ্রেণী সচেতনার লক্ষে নিজ দেশে সর্বহারা রাজনৈতিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে , প্রতিটি দেশের সমাজতন্ত্রী নারীরা প্রতিবছর ৮ মার্চ দিনটি নারী দিবস হিসেবে পালন করা হবে। যার মূল উদ্দেশ্য হবে নারীর ভোটাধিকার অর্জনে সহায়তা করা। সমাজতান্ত্রিক প্রেক্ষিতকে মনে রেখে নারীদের সামগ্রিক দাবির সঙ্গে এই দাবিকে যুক্ত করতে হবে। নারী দিবসের একটি আন্তর্জাতিক চরিত্র অবশ্যই থাকতে হবে এবং সচেতন ভাবে তা কার্যকরী করতে হবে।