Hellen Keller

Helen Keller: The Struggle

তনুশ্রী চক্রবর্তী

“The only thing worse than being blind is having sight but no vision”

উক্তিটি করেছিলেন হেলেন কেলার, যার তর্জমা করলে বলতে হয়, দৃষ্টিহীন হওয়ার থেকে খারাপ হল- দৃষ্টি থাকা সত্বেও কোন লক্ষ্য না থাকা। আজকের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই উক্তির যথার্থতা অনস্বীকার্য।

কিন্তু সে কথার আগে হেলেন কেলার সম্বন্ধে কিছু আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

হেলেন কেলার (১৮৮০–১৯৬৮) ছিলেন একজন মার্কিন লেখিকা, সমাজসেবিকা ও বক্তা। ছোটবেলায় এক ভয়ংকর অসুস্থতার ফলে তিনি অন্ধ ও বধির হয়ে পড়েন। মাত্র ১৯ মাস বয়সে এক অজানা জ্বরে (সম্ভবত স্কারলেট ফিভার বা মেনিনজাইটিস) আক্রান্ত হয়ে হেলেন দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারান। সাত বছর বয়সে অ্যানে সালিভান তাঁর শিক্ষিকা হন এবং আঙুলের মাধ্যমে শব্দ বোঝানো শেখান। কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় এবং শিক্ষিকা অ্যানে সালিভান-এর সাহায্যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেন। হেলেন ব্রেইল লিপি ও কথ্য ভাষা শেখেন এবং ১৯০৪ সালে র‍্যাডক্লিফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন প্রথম দৃষ্টিহীন ও শ্রবণবিহীন ব্যক্তি যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি The Story of My Life বহু গ্রন্থ রচনা করেন এবং নানা দেশে বক্তৃতা দিয়ে মানুষের মন জয় করেন।হেলেন প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার, নারী স্বাধীনতা, শ্রমিকদের ন্যায্যতা ও শান্তি আন্দোলনের সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। আসলে কিছু মানুষ সহানুভূতি, দয়া এইসবের ঊর্ধ্বে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাদের জীবনকে চালনা করে না। মানুষ শব্দের অর্থ যার মান ও হুশ দুই আছে। তাই দৃষ্টিশক্তির অভাব তার সম্মানবোধ, সচেতনতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা কে কেড়ে নিতে পারেনি। বরং পচা গলা সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন কিভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়। তার জীবন চর্চা আজকের যুবসমাজের পাথেয়। তিনি প্রমাণ করেছেন একজন প্রতিবন্ধী মানুষ কিভাবে প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে সমাজে মূল্যবান অবদান রাখতে পারে।

হেলেন কেলার-এর জীবনযাত্রা যুবসমাজকে শেখায়— কোনো বাধাই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়। তিনি শেখান দৃঢ় মনোবল ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায়। হেলেন-এর জীবনের মাধ্যমে বোঝা যায় যে শিক্ষা সবার জন্য— তা যত প্রতিবন্ধকতাই থাকুক না কেন। তাঁর জীবন অনেক বিশেষ শিক্ষার পদ্ধতির পথ দেখিয়েছে। তিনি নিজের অদম্য প্রচেষ্টাজেদ দিয়ে প্রতিকূলতাকে জয় করেছিলেন। হেলেন কেলার প্রমাণ করেছেন, শারীরিক অক্ষমতা কোনোদিন মনের শক্তিকে থামিয়ে রাখতে পারে না। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় কীভাবে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়। হেলেন কেলার সত্যিই এক সংগ্রামের প্রতীক। তিনি শেখান, একজন মানুষ সাহস, মানবতা ও নেতৃত্বের গুণে সমাজ পরিবর্তন করতে পারে।

আজকে সারা রাজ্য আর দেশজুড়ে যে নৈরাজ্য চলছে তা মানুষ, বিশেষ করে যুবসমাজ বুঝতেও পারছে না। রাজ্য শিক্ষা ব্যবস্থার চরম অবনতি যেন চিৎকার করে বলছে “ওরা যত বেশি পড়ে তত বেশি জানে তত কম মানে।” তাই শিক্ষার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়াই এই সরকারের একমাত্র কাজ। সরকার তাদের নিয়েই ব্যস্ত যাদের সরকার পুষছে। শিক্ষা-কাজের পরিবর্তে ভাতা জায়গা করে নিয়েছে। আর আপামোর জনতা জীবন যন্ত্রণায় জর্জরিত হচ্ছে। যারা লেখাটি পড়েছেন, তারা ভাবতেই পারেন হেলেন কেলার নিয়ে লিখতে বসে কি আবোল তাবোল লিখছেন।

না অহেতুক কথাগুলি লিখছি না। ভেতরের যন্ত্রণা থেকে বলছি। আমরা যারা বড়াই করে নিজেদের শারীরিক, মানসিক ক্ষমতার ঝান্ডা উড়িয়ে বেড়াই তারা কি সত্যিই চোখে দেখতে পায়? তারা কি আর জি করের নির্মমতা দেখতে পায়? তারা কি শিক্ষকদের আর্তনাদ শুনতে পায়? নাকি দেখেও দেখেন না। তারা কি এই অপেক্ষায় আছে, কবে তাদের গায়ে আগুনের লেলিহান শিখা লাগবে?

হেলেন কেলার পাঠ্যপুস্তকে আটকে প্রতিনিয়ত শিকল ছেড়ার চেষ্টা করেছে হয়ত। বর্তমানে হীরক রাজা রানীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কিন্তু উদয়ন পন্ডিতদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। না হলে আজকের যুব সমাজ, সাধারণ মানুষ একসাথে বলে উঠত দড়ি ধরে মারো টান রাণী হবে খানখান।

হেলেন কেলারের জীবন ছিল এক নিরব কিন্তু অবিরাম সংগ্রাম। তাঁর জীবনের লড়াই ছিল মানব ইতিহাসে অনুপ্রেরণার এক যুদ্ধ হেলেন কেলার এর জন্ম দিবসে তার প্রতিনিয়ত লড়াই, তার অদম্য ইচ্ছে শক্তি, তার সমাজকে বোঝার মাধ্যমে দেখতে পারার শক্তিকে নতজানু হয়ে ম্মরণ করছি। তার সাথে দৃষ্টিবান মানুষদের দৃষ্টিহীনতার শিকল ছেড়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি, না হলে “মগজ ধোলাই” সমাজটাকে অচল করে দেবে।

Spread the word

Leave a Reply