উত্তর পূর্ব দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদীরা তিনটি মসজিদে হামলা চালিয়েছে। পালটা হামলা থেকে শিবমন্দির বাঁচাতে পুরানো মুস্তফাবাদের বাবু নগরে দিন রাত পাহারায় হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশবন্ধু কলেজের ২৪ বছরের বিএ পড়ুয়া মহম্মদ হাসিনও রয়েছেন এরমধ্যে। আশপাশ এলাকার সাম্প্রদায়িক হিংসা যাতে কোনোভাবেই ছড়িয়ে না পড়ে তাদের এলাকায় সতর্ক পাহারায় রয়েছেন হাসিনও। যে কোনও সময়ে এখানে আমরা বড় সংখ্যায় মজুত থাকছি, যাতে বাইরে থেকে উন্মত্ত বাহিনী এলে আমরা ঠেকিয়ে দিতে পারি। এখানে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সৌহার্দ্য জোরালোভাবেই রয়েছে। কোনোভাবেই সেটা আমরা লুট হতে দেব না। একটানা বলে গেলেন হাসিন। মন্দির থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকেন কামরুদ্দিন। বয়স পঞ্চাশের কোটায়। মন্দির পাহারায় বসে থাকা ছেলেদের চা-বিস্কুট দিয়ে যাচ্ছেন। নিজেও থাকেন পাহারা দেওয়া ছেলের দলে। বললেন, অনেক বছর ধরে এখানে আছি। কোনোদিন ভাবিনি এইরকম সাম্প্রদায়িক হিংসা হবে। অন্য সময়ের থেকে এখন এটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে মানবতাকে রক্ষা করা। আমাদের মসজিদগুলি পোড়ানো হয়েছে কিন্তু কারোকে আমরা মন্দির ভাঙতে দেব না। হাসিন জানালেন, মন্দিরের আশপাশে যাঁরা থাকেন তাঁরাই মূলত দিনভর নজর রাখছেন। বিশেষ করে রাতের বেলা। এমনকি আশপাশের এলাকায় যখন হাঙ্গামা হয়েছে আমরা গলির মধ্যে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থেকেছি। যে ধর্মের হাঙ্গামাকারী এসেছে সেই ধর্মের লোকেরাই তাদের ভাগিয়েছে। আমাদের গলি-মহল্লায় হিংসা হতে দেইনি। মাঝবয়সী মহিলা রীনা মন্দিরের দেখভাল করেন। বললেন তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের এই মন্দিরের মন্দির। পুরোহিত না এলেই রীনাই মন্দিরের দেখভালের সঙ্গে পুজোর কাজও করে দেন। এলাকার মুসলিমদের উপর এতটাই বিশ্বাস যে জানালেন জরুরি কিছু দরকার পড়লে মন্দিরের চাবিও তো দিয়ে দিই ওদের হাতেই। স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, ওরা তো আমাদের নিজেদেরই লোক। কয়েকদিন ধরে তো আমি মন্দিরেই যেতে পারছি না। কিন্তু জানি ওঁরা কোনোভাবেই মন্দিরের ক্ষতি হতে দেবে না। আমরা একটা পরিবারের মতো থেকেছি, হঠাৎ এখন বদলে যাব কেন? আমাদের ঈশ্বরের আলাদা নাম থাকতে পারে, শেষ পর্যন্ত তো তিনি একই। গলিতে রীনার মতো অল্প কয়েকজনই হিন্দু আছেন। তা নিয়ে উদ্বেগ নেই রীনার। বললেন, এখানে আমাদের মধ্যে খুবই ভাব ভালোবাসা। সেটা থাকবে, আমি নিশ্চিত।
Hasins guarding Shiva Temple in Delhi
Spread the word