দ্বিপ্সীতা ধর
বিলকিস বানোর হাত, সস্তা কাঁচের চুড়ির টুকরো দুটো, এখনো ওর চামড়ায় ফুঁটে আছে যেন। আপনজনের লাশ, গর্ভের মৃত বাচ্ছা, তাঁদের আর্তনাদ দুঃস্বপ্নের মতো কানে বাজে। বিলকিসের বয়স তখন কুড়ি এক, পেটের বাচ্ছাটা মাস পাঁচেক। ত্রিশূলধারী যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ওর উপর, তাদের মুখ হিংস্র হায়নার মত, এত ঘৃণা মানুষের চোখে থাকতে পারে? প্রথম বার জেনেছিলো সে। বিলকিস এর অপরাধ, বিলকিস মুসলমান, বিলকিস এর অপরাধ বিলকিস মেয়ে। তাই তার ধর্মের লোকেদের শায়েস্তা করতে তার শরীরটাই সবচেয়ে উপযুক্ত যুদ্ধক্ষেত্র। “সাইট অফ ভায়োলেন্স”. ওর ধর্ষণ হয়ে যাওয়া দেহ, দেওয়াল লিখনের মতো, স্পষ্ট লেখা “ভারত মে আগর রাহেনা হায়, তো জয় শ্রী রাম কাহেনা হায়”. “হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান”.
নারী শরীর, হিংসার ক্যানভাস
তবে বিলকিস প্রথম এবং একা নন, ধর্মীয় দাঙ্গায়, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, এমনকি শরিকি বিবাদেও ধর্ষণ এর ঘটনা আকছাড় ঘটে। কারণ ধর্ষণ শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, তার আঁচড় মনস্যতাত্বিক। “Robbing the Dignity” বা মর্যাদাহানি কে ধর্ষনের সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয় অনেক জায়গায়। কিন্তু কেন? হাত পা ভাঙলে, মাথা ফাটলে মর্যাদা যায়না? তবে ধর্ষনে কেন? আসলে সামন্ততান্ত্রিক, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর মর্যাদা তার “chastity” সতীত্বর ওপর অর্পিত। নারীর সতীত্ব রক্ষার উপর দাঁড়িয়ে পুরুষের পৌরুষত্ত্ব। সুতরাং যে নারী তার সতীত্ব খোয়ালেন তিনি যেমন মর্যাদাহীন হয়ে পরলেন, তার পরিবার, সেই পরিবারের পুরুষ যাদের ওপর মহিলার সুরক্ষার ভার ন্যস্ত ছিল, তার পৌরুষও পরাজিত হল। এই পৌরুষের হেরে যাওয়া, পুরুষতান্ত্রিক দম্ভের পতন। তাই হাত পা ভেঙে গেলে তা জুড়ে নেওয়া যায় , কিন্তু “সতীত্ব”, সতীত্ব চলে গেলে তার কলঙ্ক মোছা যায় না। নারী শরীরের ওপর দখল বা কর্তৃত্ব তাই পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক মর্যাদার জয় নিশান।
ধর্ষণ কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার পরম্পরা কয়েক শতাব্দী পুরোনো। আরো ভেঙে বলতে গেলে নারী শরীর একটি জাতি /সমাজ/পরিবারের সম্মান এবং অসম্মানের ভরকেন্দ্র হিসাবে পারিগণিত হচ্ছে কয়েকশো বছর ধরে। বৈদিক পরবর্তী ভারতে “Purity and Pollution” এর ওপর দাঁড়িয়ে জাতি ব্যবস্থার কোডিফিকেশান করেছিলেন মনু। তাতে শূদ্র, নারী দূষণ এর পক্ষে, “উচ্চ বর্ণ” শুদ্ধতার নিয়মক। মনুসংহিতা তে লিখেছেন নারী শরীর নরকের দ্বার। আবার সেই বইতেই লিখে গেছেন সমস্ত শুদ্র নারীর ঔরসজাত প্রথম সন্তান যেন ব্রাহ্মণ পুরুষের হয়। এতে নাকি গুনের বিকেন্দ্রীকরণ হবে। এখানে যেমন একাধারে তিনি ব্রাহ্মণ এর শ্রেষ্ঠত্বর হয়ে সওয়াল করেছেন একই সঙ্গে শূদ্র মানুষ এর (শ্রমজীবী মানুষ ) সাবযুগেশান কে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এবং সেই সাবযুগেশান এর আধার নারীর গর্ভ। মহিলা, বিশেষত শূদ্র মহিলার নিজের শরীর, তার সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতার ওপর অধিকার কে নস্যাৎ করেছেন মনু। মনু বলেছেন যে নারী তার “স্বামীর” কর্তৃত্ব মানেন না তিনি কুলটা, নারী শৈশবে পিতা, কৈশোর যৌবনে পতি এবং বৃদ্ধাবস্থায় পুত্রের অধীন। অমুকের মেয়ে, অমুকের বৌ এবং অমুকের মা ভিন্ন তার আর কোন স্বতন্ত্র পরিচয় থাকতে পারেনা। এই অধীনস্ততা শুধু পরিচয়িক নয়, নারীর শ্রমশক্তি তার প্রজনন শক্তির ও সমর্পন। নারীর ডোমেস্টিক লেবার নিশুল্ক তিনি রান্না করবেন, ঘর গোছাবেন, বাসন মাজবেন কারণ এগুলো তার দায়িত্ব, মহিলাদের দায়িত্ব। যে নারী তার ঘরের আঙিনার মধ্যে যত পরিশ্রমি, যে নারী বাড়ির অন্যদের দেখ ভালের কাজ (কেয়ার গিভিং ) করেন নিরলস ভাবে, বিনা প্রতিবাদে; যে নারী নিজের জীবন, শখ আল্হাদ কে বিয়ের আগুনে, সংসারের আগুনে পুড়িয়ে ছাই করছেন রোজ, তিনিই আদর্শ নারী। তাই আদর্শ কন্যা বাবার আদেশে বুড়ো ব্রাহ্মণ বরের সাথে সহ মরণে বসবেন, সতী হবেন। সতীর পিতার পুঁন্যি হবে, নাম ডাক হবে। আদর্শ স্ত্রী স্বামীর পা ধোয়া জল খাবেন, চুল দিয়ে পা মুছিয়ে দেবেন, স্বামীর উচ্ছিষ্ট খাবেন, তার মায়ের দাসী হয়ে থাকবেন, পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে বংশের প্রদীপ জ্বালাবেন, স্বামীর হাতের মার তার ভালোবাসার উপহার বলে মাথা পেতে নেবেন, তবেই না আপনি আদর্শ স্ত্রী.? আদর্শ মা আবার আরো কয়েক কদম এগিয়ে, তিনি ত্যাগের বিমূর্ত প্রতীক, নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে না দেওয়া অবধি তার নিষ্কৃতি নেই, তিনি জ্বর গায়ে খোকার পছন্দের পায়েস রান্না করবেন, শয্যসায়ী হয়েও তিনি খোকার জামা জুতো ঠিক জায়গায় রাখার জন্য হয়রান হয়ে উঠবেন, তার সদ্যবিবাহিত পুত্রবধু তার দুধের শিশু কে হাত করে নিচ্ছেন এই আশঙ্কায় চঞ্চল হয়ে উঠবেন, নিজের অস্তিত্ব নিয়ে এমন মানসিক অস্থিরতা তৈরী করতে পারলে আপনি আদর্শ মা হিসাবে পুরো নম্বর পাবেন।
মনু সংহিতা’য় মহিলারা দ্বিতীয় স্তরের নাগরিক, তাঁদের বিনেপয়সার শ্রমেই সামন্ত পরিবারে উদবৃত্ত মজুত বাড়তে থাকে। কিন্ত এ বিনামূল্যের শ্রম কে দীর্ঘ মেয়াদি করার উপায় কি? মনু তার উপায় ও বাতলে গেছেন, সংস্কারে, ধর্মে, আচারে মেয়েদের মন গুলো কে বাঁধতে হবে আগে, তাকে পড়তে দেওয়া যাবেনা, জানতে দেওয়া যাবে না, ভাবতে দেওয়া যাবেনা। ছোটবেলা থেকেই মূল্যবোধ এর নামে একগাদা মিথ্যে, কুসংস্কার, নিয়মশৃঙ্খল দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। যাতে নবীন প্রাণে কোথাও কোনো মুক্তির আঁচ না লেগে যায়। বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ, শিক্ষার অধিকার না দেওয়া, সবর্ণ বিবাহ, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে, এসবের মধ্যে দিয়ে তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র এর বিকাশ কে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে হবে। তবেই না পাওয়া যাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এমন একদল মানুষ যারা পায়ের নিচে থাকতেই অভ্যস্ত, স্বচ্ছন্দ।
মোদির ভারত, মনুর ভারত
এত খানি পড়ে অনেকে যুক্তি সাজাচ্ছেন। মনু সংহিতা is a thing of yesterday বলছেন। কল্পনা চাওলা মমতা ব্যানার্জী দেখিয়ে “মেয়েরা এখন সমান সমান হয়ে উঠেছে”, বলে টেবিল ঠুকছেন । অথচ তারা ভুলে যাচ্ছেন ভবরী দেবী কে। স্বাস্থ্য কর্মী ভবরী দেবী, দলিত মহিলা ভবরী দেবী, বাল্য বিবাহ আটকানোয় যাকে গন ধর্ষণ করে ফেলে দিয়েছিলো “উচ্চ বর্ণের ” পুরুষ রা। কোর্টে কেস ওঠায় শুনতে হয়েছিল “ওরা তো অস্পৃশ্য, রেপ করলে তো ছুঁতে হবে, উঁচু জাতের মানুষ রা ওকে ছোবেই না “। ভাবরী দেবী অবহেলায় হেসেছিলেন না রাগে পুড়ে গেছিলেন তা আমরা দেখতে পাইনি। মনুস্মৃতি হেসেছিল, এই ন্যায়ের কারখানায় তার নিজের কথা শুনে তৃপ্তি পেয়েছিল সে।
আপনি কি ভুলে গেছেন মনীষা বাল্মীকি কে? উত্তর প্রদেশের রাম রাজ্যে যে বছর উনিশর মেয়ের মেরুদন্ড ভাঙা, জিভ কাটা রক্তাক্ত শরীর কুড়িয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ওর মা। ঠাকুরের বাড়ির ছেলেদের নখের আঁচড় নিয়ে লড়াই করতে করতে নিথর হয়ে গেছিলো ছোট্ট শরীর টা। ক্ষত্রিয় মহাসভা, বিজেপি র নেতারা তাঁদের সাধের দুলাল দের নির্দোষ প্রমান করে দোষ চাপিয়েছিলেন “ছোটো পরিবারের খারাপ মেয়েদের ওপর” দের ওপর। আসলে ছেলেদের দোষ হয়না, ঠাকুর ব্রাহ্মণ ছেলেদের তো আরো হয়না। মেয়েটার ই দোষ।কি দরকার ছিলো লড়াই করার, প্রথম বারেই মরে যেতে পারতো। অথচ মেয়েটি সহজে মরেনি জানেন,১৪ দিন লড়াই করেছে, সব দোষী দের চিনিয়েছে। ঘাড় ভেঙে গেছিলো, কোমর থেকে পা অবধি সার ছিলো না, কিন্তু চোখ দুটো চুনির মতো ঝালমল করছিল। ওর আগুনে রাগ ছিলো, বুক ফাঁটা কান্না ছিলো, এই দেশের মানুষের প্রতি সওয়াল ছিল। পুলিশ আদালত নেতা মন্ত্রী সবার দিকে তাক করা ছিল ওর তর্যনি। শেষকৃত হয়নি মনীষার, প্লাস্টিক এ মুড়ে পেট্রল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল লাশ। আসলে নারী শরীর তো, মৃত, ধর্ষিত, নিথর, তবুও ভয়ঙ্কর। মনু শিখিয়ে গেছেন।
ভারত স্বাধীনতা পেয়েছে ৭৫ বছর হোলো। ফিউডাল স্টেট, কলোনীয়াল স্টেট এর হাত ঘুরে ডেমোক্রাটিক স্টেট এর বয়স নেহাত কম হোলো না। মেয়েরা ভোট এর অধিকার পেয়েছেন, পেয়েছে জমির মালিকানা, বিয়ের পর বাবার পদবি রাখতে পারার অধিকার আরো কতকিছু। অথচ মেয়েরা এখনো শুধু মানুষ হওয়ার সুযোগ পায়নি। নয়া উদারবাদী রাষ্ট্র আর তার চালিকা শক্তি পুঞ্জিবাদ, নারীর শরীর কে বদলে দিয়েছে পন্যে। একদিকে নারী পুরুষের বেতন বৈসম্য, কার্যক্ষেত্রে যৌন নিগ্রহ আর অন্যদিকে বাজারের মাপকাঠি তে “desirble commodity” হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতা।
এই সা রে গা মা পা ধা নি সা’য়, ২০১৪ র পর থেকে যুক্ত হয়েছে নতুন এক মাত্রা। হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির উন্মত্ত স্বপ্ন। ইতিহাসের আবর্জনা ঘেটে তারা খুঁড়ে আনছেন “সনাতনী চেতনা”, যে চেতনায় মনু র দেখানো পথে নির্মিত হচ্ছে আদর্শ নারীর ছবি। যে নারী সাচ্চা হিন্দু, যে নারী মুসলমান দের সাথে লড়তে জন্ম দেবে ৪ টে করে বাচ্ছা। যে নারী মুসলমান এর বিরুদ্ধে তালোয়াড় ধরবে, অথচ বৈবাহিক ধর্ষণে নিশ্চুপ থাকবে। যে নারী দাসী হবেন, প্রয়োজনে দেবী, কিন্তু কখনো মানুষ হবেন না, সমান হবেন না। যে নারী আসিফার ধর্ষক দের পক্ষে জাতীয় পতাকা তুলবেন, হিন্দু বলে। বিলকিস বানো র ধর্ষক দের মুক্তি তে ফুল মালা চন্দনে বরণ করে নেবেন, ধর্ষক রা ব্রাহ্মণ বলে, হিন্দু বলে। ভালোবেসে বিয়ে করা মুসলিম ছেলেটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে, নয়তো জেলে দেবে, লাভ জিহাদের আড়ালে।
মোদির রাজত্ব আসলে মনুর ফিরে আসার প্রতিধ্বনি। বিগত বছরে শিক্ষা খাতে ব্যাপক ছাটাই করেছে মোদী সরকার, বন্ধ করে দিয়েছে মেয়েদের pre matriculation scholarship, পোস্ট ডক্টরল ফেলোশিপ, সরকারি স্কুল বন্ধ করে মেয়েদের পড়া লেখার পরিসর কে গুটিয়ে আনতে চায় ওরা। হিজাব ব্যানের মুখোশে আসলে ওরা বন্ধ করতে চায় মুসলিম মেয়েদের পড়াশোনা। মনুর কথা শুনতে হবে, মেয়রদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে রান্না ঘরে। বেগম রোকেয়া, ফাতিমা শেখ, সাবিত্রী বাই দের সব লড়াই, প্রাপ্তি কে মিথ্যে করে দিতে হবে। আন্টি রোমিও স্কোয়াড, লাভ জিহাদ র নাম করে মেয়েদের নিজেদের পছন্দ মতো বিয়ে করার, ভালোবাসার অধিকার কেড়ে নিতে হবে, মনুর পথে মেয়েদের ইচ্ছার সমাধি ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে মোদির ভারতে।
তবু অন্ধকারে গাইবো আমরা অন্ধকারের গান
ব্রেখট শিখিয়েছেন কালরাত্রি তে কালরাত্রি র গান গাইতে, এই রক্তাক্ত সময়ে তাই আমাদের লেখাতেও লেগে থাকে চাপ চাপ রক্ত। খুন হয়ে যাওয়া অভিমন্যু ধীরাজ আইশ্বর্য অনিশের রক্তে আমাদের দোয়াত ভরে ওঠে। হতাশা ভেঙে পড়া সুবিধাবাদ গ্রাস করে নিতো কবেই। কিন্তু এই দেশের মাটি, এই দেশের মানুষ, মনুবাদ এর বিরুদ্ধে লড়তে থাকা ভাঙা চোরা অথচ দৃঢ় হাত গুলো আমাদের হারতে দেয়নি এখনো। ওই যে ট্র্যাক্টর চালিয়ে লাল ঝান্ডা কাঁধে আসছে বলজিৎ কাউর। বছর ২৮ শের ভেঙে পড়া আমাদের বুকে জড়িয়ে বলছে “অভি তো লি আংরাই হ্যায়, আগে অর লড়াই হ্যায়।” রাত জাগছে কিষান রমনি, মাইকে ভাষন দিচ্ছে, বলছে আমরাও কৃষক, আমরাও কামগার আমরা শুধু কারুর বৌ র মা নই। মনু ভয় পাচ্ছে ওদের দেখে। আশঙ্কায় পায়চারি করছে। শীতের রাতে আগুনের চারপাশে গিদ্দা নাচছে ওরা, খিল খিল করে হাসছে , বলছে মোদী কে হারিয়েই বাড়ি ফিরবে। সতীর্থের মৃত্যু তে কাঁদছে, রাগে গালি দিচ্ছে, আর কি আবেগের সাথে জড়িয়ে ধরছে একে ওপরের হাত।
আমাদের আমরা ছাড়া র কেউ নেই।
ওদের হলুদ ওড়না আকাশে ওড়ে , আর মোদী আর মনু ভয় পায়।
আমার খুব মনে পড়ছে সারা চাপম্যান কে, প্রথম মহিলা শ্রমিক ধর্মঘটের নেত্রী। এভাবেই যে মেয়েদের কেউ ছিলো না তাঁদের হাতে হাত রেখে মিছিল করে বেরিয়ে এসেছিলো কারখানা ছেড়ে। মনে পড়ছে গোদাবরী পারুলেকার কে আদিবাসী মহাল্লায় জমির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন মুষ্টিবদ্ধ হাতে। মনে পড়ছে নাঙেলি কে, ত্রিভান্দ্রম এর মাটি তে যার কাটা বক্ষযুগল শায়িত, স্তন শুল্কর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, শহীদ হয়েছেন ও। পাশেই রয়েছে ওর ভালোবাসার মানুষ চিরুকান্দান, স্ত্রীর মৃত্যু শোক সইতে না পেরে মরে গেছিলেন যিনি।
আসলে মনুর ভারতের বাইরেও একটা ভারত আছে, যে ভারতে মানুষ ভালোবাসে, জাত ধৰ্ম ভুলে আগলে রাখে পাশের মানুষ টাকে. যে ভারতে বনবিবির পায়ে মাথা রাখে সুন্দরবনের অমল-আসিফ, নিজামুদ্দিন এ কাওয়ালি শুনতে শুনতে St. Stephens এর ছেলেটির চশমায় ভেসে ওঠে প্রেয়সীর মুখ, যে ভারতে বিলকিস বানোদের লড়াই লড়ে জেল খেটে আসে তিস্তা শীতলবাদরা। যে ভারতে আসিফা ,মুস্কান ,অনুশ্রী রা শত জল কামানেও একে অপরকে ছেড়ে পালায় না। সেই ভারতে ওদের হলুদ ওড়না ওড়ে আকাশে, পুরো আকাশের দাবি তে রামধনু রং আঁকে ওদের চোখের জল, চোয়াল চাপা জেদ। নাঙেলি রোকেয়া ক্যাপ্টেন লক্ষ্মীবাই এর উত্তরসূরীরা এত সহজে মাথা নোয়াবে না। কি বলেন? মনু-মোদী কিন্তু ভয় পাচ্ছে, ভীষণ ভীষণ ভয় পাচ্ছে।