GST: Assault on Federal Structure

মাননীয় ডেপুটি চেয়ারম্যান,

স্যার,

আলোচনায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

জিএসটি নিয়ে আলোচনায় ইতিমধ্যেই অনেক কথাবার্তা হয়েছে। আমাদের সংবিধানে সংশোধনী পেশ হয়, এ নিয়ে বেশ দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছে। আমি এখন সেই আলোচনায় যাব না। জিএসটি প্রসঙ্গে আলোচনার সময়ই উল্লিখিত হয়েছিল এর সাথে আমাদের সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। আমাদের সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদেই রয়েছে ভারত হল এর অন্তর্গত রাজ্যগুলির এক যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি হল আমাদের সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলির অন্যতম একটি। আজকের পরিস্থিতিতে শাসকের এমন কোনও অবস্থান যাতে সংবিধানের সেই নীতি লঙ্ঘন হয়, এ সম্পর্কে আমাদের ভীষণভাবে সতর্ক থাকতে হবে। এই কারনেই আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, জিএসটি বিল পেশ করার সময় যাতে একে আর্থিক বিল হিসাবে পেশ না করা হয়। যেহেতু এই বিলটি আমাদের সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সাথে সম্পর্কযুক্ত তাই আমরা অনুরোধ জানিয়েছিলাম যে বিলটিকে এমনভাবে পেশ করা হোক যাতে সরকার এমন কোনও আইন প্রণয়নের পূর্বে সংসদে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে তার দোষগুণ বিবেচনা করার সুযোগ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সরকারের আচরণ আমাদের রীতিমত হতাশ করেছে। আমাদের অনুরোধ, পরামর্শকে প্রত্যাখ্যান করে, জোর খাটিয়ে এটিকে অর্থ বিল হিসাবেই পেশ করা হল।

ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ একে কর সংক্রান্ত (ট্যাক্স) বিল হিসাবে পেশ করা হয়েছে। আপনার খেয়াল রাখা উচিত।

সীতারাম ইয়েচুরিঃ স্যার, আমি প্রথমেই যে কথার উল্লেখ করি আপনি সম্ভবত সেটি খেয়াল করেননি। আপনি যে জায়গায় বসে সাংবিধানিক দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সেই সংসদ হল দেশীয় রাজ্যগুলির যুক্তরাষ্ট্রীয় কাউন্সিল। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আমাদের সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট। সরকারে যেই আসীন হোক না কেন, যদি তাদের আচরণে সেই নীতি লঙ্ঘিত হয় কিংবা তেমন কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয় তাহলে তা সংসদে আলোচিত হবে। সংসদের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসাবে আপনার দায়িত্ব সেই আলোচনার অধিকার সুরক্ষিত রাখা। সেই অধিকার সঠিক অর্থে সুরক্ষিত থাকছে না বলেই আমি মনে করছি, এমন মতামত জানানোর অধিকার আমার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিরিখেই আমি এই বিল সম্পর্কে আলোচনা করছি, এটা নিছক কর সংক্রান্ত একটি বিল মাত্র না। মাননীয় চেয়ারম্যান, আপনি এই সংসদের একজন অভিজ্ঞ সদস্য, একসময় মন্ত্রীর দায়িত্ব ও সামলেছেন। আপনি নিশ্চই জানেন সংসদে পেশ করা যেকোনও বিলের শেষে একটি অর্থনৈতিক বিবৃতি যুক্ত থাকে, এটাই প্রথা। কিন্তু তার মানে কী এইসমস্ত বিল অর্থনৈতিক বিল বলে চিহ্নিত হয়? যদি তফসিলি জাতি গোষ্ঠীর তালিকা থেকে কারোর নাম বাদ দিতে হয় সেক্ষেত্রেও একটি আর্থিক বিবৃতি জমা করতে হয়। এমন আইনকে কি আমরা আর্থিক বিল হিসাবে গণ্য করি? তাই আমি বলব যুক্তি দেওয়া ভালো, কিন্তু যুক্তিকে টেনে হিঁচড়ে এতদূর নিয়ে যাওয়া উচিত না যাতে মূল প্রসঙ্গই পাল্টে যায়। এই মুহূর্তে জিএসটি বিল প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয় বলে যেভাবে আলোচনাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে তাতে আমি মনে করতে বাধ্য হচ্ছি যে এতে সাংসদ হিসাবে আমার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। অন্যান্য আরও কিছু প্রসঙ্গ রয়েছে, কিন্তু সেসবের মধ্যে এটাই এখন আমার জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।

আজকের পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে ‘এক দেশ, এক কর’ (ওয়ান কান্ট্রি, ওয়ান ট্যাক্স)…

স্যার, ‘এক দেশ, এক কর’ এবং ‘এক দেশ, এক ব্যবস্থা’-র যে সার্বিক ধারনা, তাতে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে বলেই আমি মনে করি। আমার বন্ধু প্রফুল্ল প্যাটেল ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছেন যে এই বন্দোবস্ত হল আসলে ‘এক দেশ এক কর’, ‘এক দেশ, এক ভাষা’, ‘এক দেশ, এক ধর্ম, এবং ‘এক দেশ, এক সংস্কৃতি’। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বলতে আমরা যা বুঝি এ কি আদৌ তেমন কিছু? …  

টি কে রঙ্গরাজনঃ ‘এক দেশ, এক খাদ্য’ (ওয়ান নেশন, ওয়ান ফুড)। …

সীতারাম ইয়েচুরিঃ ‘এক দেশ, এক খাদ্য’! আমাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে মানুষের বহুমুখী পরিচিতি রয়েছে। …

অরুণ জেটলিঃ একটি বিষয় আপনি ভুলে যাচ্ছেন। কমিউনিস্ট দেশসমুহে ‘এক দেশ, এক পার্টি’ ব্যবস্থা রয়েছে। …

সীতারাম ইয়েচুরিঃ না, না। মিঃ জেটলি, আপনি শুনে রাখুন, সেই পার্টিতেও চিরকাল মতামতের পার্থক্য থাকে। এমন কোনো মতপার্থক্য আপনাদের পার্টিতে থাকা সম্ভব না। আমরা কখনও কোনো একজন নেতাকে সামনে তুলে ধরে বলি না ‘ এক দেশ, এক নেতা ‘। স্যার, যে কায়দায় এরা জিএসটি বিল পেশ করেছেন আবার এখন অদ্ভুত সব ব্যাখ্যা হাজির করছেন এসমস্ত ভালো লক্ষণ না। তাই আমি বলব আমাদের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। এই কারণেই আমি বলছি যেভাবে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজ্যগুলির রাজস্ব সংগ্রহের অধিকার হরণ করা হচ্ছে তাতে দেশের সংসদের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। এহেন বিলের অনুমোদন এই সংসদ ব্যতীত অন্য কোনো সংস্থার হাতে ছেড়ে দেওয়া চলে না।

সুতরাং জিএসটি কাউন্সিল যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় যা রাজ্যগুলির সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করে তেমন পরিস্থিতিতে সংসদকে হস্তক্ষেপ করতেই হবে। সংবিধান স্বীকৃত অধিকারের সুরক্ষার বিষয়টি এই বিলের অন্যতম একটি ত্রুটি যা সংশোধন করতেই হবে। এহেন বিলের অনুমোদন সংসদ ব্যতীত অন্য কোনো সংস্থার হাতে দেওয়া যায় না। আর সেই সংস্থাটির চেহারাই বা কেমন? কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়া ঐ কাউন্সিল কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারবে না। এই সংস্থা কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ চাইলে প্রস্তাবের পক্ষে অন্তত তিন চতুর্থাংশ সমর্থন থাকতে হবে, অথচ কাউন্সিলের মধ্যেই এক তৃতীয়াংশ ভোট কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রয়েছে। এ কেমন ব্যবস্থা? বোঝাই যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে না। এমনটা হলে রাজ্যের অধিকার বলতে আর কিছু থাকবে? এমন কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা যার সুবাদে রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত নয় তাকে কিভাবে অনুমোদন দেওয়া যায়? দেশের সংসদ এমন কিছু ঘটতে দিতে পারে না যাতে দেশের সংসদ কার্যত নপুংসক সংস্থায় পরিণত হয়

এমন নপুংসকতার স্বপক্ষে আমি দাঁড়াতে চাই না। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দেশের সম্পদ বণ্টনের প্রশ্নে সংবিধান স্বীকৃত যুক্ত রাষ্ট্রীয়কাঠামোর যে বোঝাপড়া তাকে এড়িয়ে যেতে পারে এমন যেকোনও সিদ্ধান্তকে আমি দেশের সংসদের অনুমোদনসাপেক্ষ বিষয় বলেই মনে করি। এটাই হল জিএসটি বিল সম্পর্কে আমার আলোচনার প্রথম পয়েন্ট। দ্বিতীয় প্রশ্নটি জি এস টি কাউন্সিল সম্পর্কে। যদি কেন্দ্রীয় সরকার যেমনটা চাইছে জিএসটি কাউন্সিল সেভাবেই কাজ করে তবে তার কাজের হিসাব রাখার দায় কার উপর বর্তাবে? বিভিন্ন সংবাদপত্রে ইতিমধ্যে এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করি সংসদের অনুমোদন নিয়ে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-কেই ঐ কাউন্সিলের হিসাবপত্র যাবতীয় নিরীক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। জি এস টি কাউন্সিল ও তার সাথে সংযুক্ত যেকোনও সংস্থার হিসাব নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ) কেই একমাত্র দায়িত্ব দেওয়া উচিত, অন্য কোনো বেসরকারী সংস্থা এমন দায়িত্ব নিতে পারে না। আমার তৃতীয় পয়েন্ট, পেট্রোপণ্য ও অ্যালকোহল ব্যতীত অন্য কোনকিছুর উপরে বাড়তি কর চাপানোর অধিকার কোনও রাজ্যের নেই। তাই তো? অতএব ঐ দুটি ক্ষেত্র ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামত কর চাপিয়ে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের কিংবা সম্পদ বৃদ্ধির অন্য কোনও উপায়ই তাদের নেই। স্যার, আমি চাইব আপনি নিজে যে রাজ্যের মানুষ সেখানকার উদাহরণ বিবেচনা করুন। কেরালায় মানব উন্নয়ন সূচক কিভাবে ইউরোপের জীবনমানের কাছাকাছি পৌঁছাল? সরকারী ব্যয়বরাদ্দের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের এমন উচ্চতায় পৌঁছাতে রাজস্ব বাবদ আদায়কে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল?

এবার তামিলনাড়ু রাজ্যের দিকে নজর দিন। তারা যখন মিড ডে মিল প্রকল্প চালু করে, কিংবা সে রাজ্যে সাক্ষরতার হার  যখন ৫৬ শতাংশ থেকে ৮৩ শতাংশে পৌঁছে গেল তখন তার সবই হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে কয়েকটি পরোক্ষ কর আরোপের মাধ্যমে। তৎকালীন এমজিআর সরকার বাড়তি সম্পদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই ঐ সকল কর আরোপ করেছিল। এখন আর সেই সুযোগ নেই, তাহলে রাজ্যগুলির স্বায়ত্তশাসন আগের মতোই রয়েছে বলতে আপনারা ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন? বলা হচ্ছে জিএসটি’র একটি অংশ রাজ্যের নিজস্ব আদায় বাবদ বরাদ্দ থাকবে; এমন বন্দোবস্ত কার্যত করুণার সমান। তামিলনাড়ু সরকার যাতে ঐ সকল কাজ করতে পারে তখন সেই উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধন করা হয়।* আমি সংসদের অধিবেশনে অনুরোধ জানাচ্ছি, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জরুরী প্রশ্নটিকে আপনার যথাবিহিত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখুন। সেই দৃষ্টিভঙ্গী অনুসারেই আমি মনে করি জিএসটি কাউন্সিল কর্তৃক গৃহিত যাবতীয় সিদ্ধান্তই সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে আইনানুগ ও কার্যকর হওয়া জরুরী। মনে রাখতে হবে ‘এক দেশ, এক কর ‘ হল কার্যত একটি অপ্রত্যক্ষ কর। সংজ্ঞা অনুসারে অপ্রত্যক্ষ করের বোঝা চাপে ক্রেতার উপরে। প্রত্যক্ষ কর আদায় হয় ধনী, বড় মাপের এই করেন এমন নাগরিকদের থেকে। ইদানিং আমাদের দেশে একদিকে ক্রমাগত প্রত্যক্ষ করের বোঝা কমিয়ে আরেকদিকে সমানে অপ্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যারাই অপ্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধি করতে জিএসটি প্রয়োগ করেছে, সেই সকল দেশই ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েছে। তাই এমন কোনো ব্যবস্থা যদি আমাদের দেশে কার্যকর করতে হয় তবে সবার আগে দেশের কর কাঠামোকে বিশদ বিবেচনায় আনতে হবে।

কর কাঠামো সংশোধনের কাজটি যথাযথ রূপে সম্পন্ন করে তবেই ওদিকে মনোযোগ দেওয়া চলে। এই মুহূর্তে আমাদের দেশে রাজস্ব আদায়ের সাধারণ হার ১২ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ শুভ্রমনীয়মের হিসাব অনুযায়ী এর ওঠানামা ১২ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে চলে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের জন্য শেষবার যখন আমরা সংসদে আলোচনা করেছিলাম তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শ্রী চিদাম্বরম জানিয়েছিলেন রাজস্ব আদায়ের হার ১৮ শতাংশই স্থির হওয়া উচিত। আমার অনুমান তৎকালীন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদার সুবিধার কথা মাথায় রেখেই তিনি এমন প্রস্তাব দেন। আজকের পরিস্থিতিতে আমি দু স্তরীয় কর ব্যবস্থার বদল চার স্তরের বন্দোবস্তের প্রস্তাব রাখছি। সংসদের উচিত আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত বন্দোবস্তটি কেন্দ্রীয় সরকার মারফত জিএসটি কাউন্সিলে একে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া। বিলাস সামগ্রীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ শতাংশ অবধি কর, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বেলায় সর্বনিম্ন ৪-৬ শতাংশ এমনটাই হওয়া উচিত। এর মধ্যবর্তী আরও দুটি স্তর থাকবে, একটিতে হার হবে ১২-১৪ শতাংশ, আরেকটিতে ১৮-২০ শতাংশ। এদুটি স্তরই সাধারণ ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বিবেচিত হবে। এমন ব্যবস্থা জরুরী যাতে বিলাস সামগ্রীর কেনাবেচায় কর বাবদ ছাড়ের সুযোগ না থাকে। যদি বিলাস সামগ্রীর কেনাবেচায় কর ছাড় দেওয়া হয় তবে সেসবের দাম কমতে থাকবে, উল্টোদিকে সাধারণ ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। এই কারণেই চার স্তরের কর কাঠামো একান্ত প্রয়োজন। আরেকটি জরুরী বিষয় হল কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক। এই মুহুর্তে তিন ধরনের জিএসটি’র কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় জিএসটি, সংযুক্ত (ইন্টিগ্রেটেড) জিএসটি এবং রাজ্য জিএসটি। আমি মনে করি রাজ্য জিএসটি’র বেলায় আরও নমনীয় মনোভাব নেওয়া উচিত। আমার মনে হয় না এমন পদক্ষেপে সার্বিক জিএসটি ব্যবস্থায় কোনও অসুবিধা তৈরি হবে।

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে তার সমাধানে এমন পদক্ষেপ কার্যকরী হবে বলেই আমি মনে করি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ রাজস্ব আদায়ের সাধারণ গড় ২০ শতাংশ ধরে তাকে কেন্দ্রীয় জিএসটি খাতে ১২ শতাংশ ও রাজ্য জিএসটি খাতে ৮ শতাংশের হিসাবে বণ্টন করা হোক। এতে রাজ্যগুলির জন্য বাড়তি সম্পদ সংগ্রহের জন্য কিছুটা হলেও বাড়তি সুযোগ তৈরি হবে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমার বক্তব্যে হাসছেন লক্ষ্য করছি। তাই আশা করব তিনি এ প্রস্তাবটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। আমি মনে করি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য এমন বন্দোবস্ত জরুরী। রাজ্যগুলির অধিকারে যে সামান্য হলেও স্বায়ত্ব শাসনের সুযোগ রয়েছে আমি চাই তাদের সেটুকু সুযোগ সুরক্ষিত থাকুক। এই মুহূর্তে আমরা কি দেখছি? কর আদায়ে যাবতীয় ছাড় ও মুকুবের সুযোগ খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে। স্যার, আপনি নিজে যে রাজ্য থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন সেখানকার পরিস্থিতির কথা চিন্তা করুন। কেরালায় এমন অনেক পণ্য উৎপাদন করা হয় যেগুলির ঐতিহ্যবাহী, এই সকল উৎপাদনে আমাদের কিছু স্বার্থও রয়েছে। এবার যদি আপনি যাবতীয় কর ছাড় ও মুকুবের ব্যবস্থা খারিজ করে দেন তবে এমনসব উৎপাদনে কিভাবে উৎসাহ দেওয়া যাবে? খাদি কাপড়, কয়ার সামগ্রী ও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ফসল উৎপাদনে যদি উৎপাদকদের কর ছাড়ের সুযোগ না দেওয়া হয় তবে তারা কিভাবে উৎপাদন করবে? একটি সাধারণ ধারণা হল এমন বন্দোবস্তের সবটাই বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে করা হয়। কেরালায় মরিচ কিংবা কয়ার সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে কী এমন কোনো বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যাবে? এ এক গুরুতর সমস্যা, নতুন কর ব্যবস্থার মাধ্যমে এধরনের উৎপাদনে যেটুকু সুরক্ষার বন্দোবস্ত রয়েছে তার সবটাই বাতিল হয়ে যাবে। এখনকার নিয়মানুযায়ী ২০ লাখ টাকার উপরে যেকোনো আয় (টার্নওভার) নেট ট্যাক্সের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ছে। যেকোনো ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে (যেমনটি কেরালায় হয়) কুড়ি লাখ টাকার আয় কার্যত সামান্যই। এই সমস্যাটি গুরুতর, সরকারের এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। একটি তথ্য উল্লেখ করছি, ১.৫ কোটি টাকা বা তার চাইতে কম আয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি কর বাবদ আদায় আসলে কার প্রাপ্য সেই নিয়ে বিগত দু বছর যাবত কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কিছুতেই বিতর্কের অবসান হচ্ছে না।

জিএসটি চালু হওয়ার আগে অবধি ঐ বাবদ আদায়ে রাজ্যেরই অধিকার ছিল। এখন নতুন নিয়মে সেই অধিকার সম্ভবত আর নেই। এটা রীতিমত উদ্বেগের বিষয়, কারণ এতে রাজ্যের স্বার্থ প্রভাবিত হচ্ছে। এই সকল পরিস্থিতির বিবেচনা করে সংক্ষেপে আমি যা বলতে চাইছি তার প্রথম কথা হল দেশ পরিচালনার কাজে দেশের সংসদকে উপেক্ষা করা চলে না, তাকে এড়িয়ে যাওয়া চলে না।  দেশের সংসদ হল রাজ্য সমূহের কাউন্সিল, এর কিছু নির্দিষ্ট কর্তব্য রয়েছে। দ্বিতীয় জি এস টি কাউন্সিলের হিসাব নিরীক্ষণের কাজ করবে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)। তৃতীয় দেশের সাধারণ কর কাঠামো হবে চার স্তরীয়, তার সাথে যাবতীয় ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে কর ছাড় ও কর মুকুবের সুযোগ সহ সুরক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে। জিএসটি কাউন্সিল নির্ধারিত যাবতীয় সিদ্ধান্ত সংসদে আলোচনার মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। ‘এক দেশ এক নির্বাচন’, ‘এক দেশ, এক কর’ ইত্যাদি অনেক কিছু বলা হচ্ছে। আমি চাই কোনোভাবেই আমাদের দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূল ভাবনা থেকে আমরা যেন না সরে আসি।  এ হল আমাদের সংবিধানের অন্যতম একটি মৌলিক ধারনা। সেই দৃষ্টিভঙ্গী অনুসারেই এই বিলের ক্ষেত্রে আমরা বেশ কিছু সংশোধনীর পরিকল্পনা করেছি। আমি চাইব এই অধিবেশনে সেই সকল সংশোধনীর যথাবিহিত গুরুত্ব বিবেচিত হবে।

ধন্যবাদ

২০১৭ সালের ৬ই এপ্রিল রাজ্যসভার আলোচনায় কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির ভাষণ

অ্যাডভান্সিং পিপলস স্ট্রাগল, ১ম খণ্ড থেকে সংগৃহীত

ভাষান্তরঃ সৌভিক ঘোষ

Spread the word

Leave a Reply