জলবায়ু ধর্মঘট সফল করুন
সৌরভ চক্রবর্তী
আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২১শুক্রবার বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার।‘
সংগঠনটি গঠিত হয়েছিল ২০১৮’র সালের আগস্ট মাসে।
১৫ বছরের নবম শ্রেণীর ছাত্রী, সুইডেনের গ্রেটা থুনবার্গ তিন সপ্তাহ ধরে স্কুল ছেড়ে সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে কার্যকরী ভূমিকা নাও ‘ এই দাবীতে ‘স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’ লেখা পোস্টার নিয়ে ধর্নায় বসতে শুরু করে। প্রথমে গ্রেটা সতীর্থ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে পায়নি, পায়নি অভিভাবকদের, পরে হাজারও ছাত্র – ছাত্রী, অভিভাবকেরা গ্রেটার পাশে দাঁড়ায়। প্রতি শুক্রবার স্কুলে স্কুলে পালিত হতে থাকে ‘ স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট ‘। দ্রুততার সাথে প্রথমে ইওরোপ জুড়ে পরে গোটা বিশ্বকে আলোড়িত করে ছড়িয়ে পড়ে ‘ স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট ‘। এই অভিনব স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেবার জন্য গঠিত হয়েছিল ‘ ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার ‘। ‘ স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট ‘ উত্তরণ ঘটে হলো’ বিশ্ব জলবায়ু ঘর্মঘট ‘বা ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক ‘গোটা বিশ্বের চরম সংকটের সময়, এই মুহূর্তে বিশ্বের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দাবী ‘জলবায়ু সংকটে রাষ্ট্রনেতারা ভূমিকা নাও’, এই দাবি নিয়ে তামাম বিশ্ব আলোড়িত হচ্ছে যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা নজিরবিহীন। একেই বলা হয় ‘গ্রেটা এফেক্ট’।
২০১৯ সালে ২০ শে সেপ্টম্বর দুনিয়াজুড়ে সাফল্যের সাথে পালিত হয়েছিল বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট। স্কুলের সীমা অতিক্রম করে অফিস আদালত, কলে কারখানাতেও পালিত হয়েছিল ‘ বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট ‘।
২০২০ সালে অতিমারীর সময়ে শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও ২৫ শে সেপ্টেম্বর পালিত হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট। এবারে ২০২১ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর পালিত হতে চলেছে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট।
শুক্রবার দিনটিকেই আন্দোলনের প্রতীক দিন হিসেবে চিহ্নিত করে ‘ ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার ‘এর নাম ও শুক্রবার কে নিয়ে, আর ‘ বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট’ ও শুক্রবার।
কেন এই ধর্মঘট?
বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট আহ্বানকারী ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ তাদের প্রচার লোগোতে কেন্দ্রীয় শ্লোগান হিসেবে বলেছে, “uproot the system” মানে “উচ্ছেদ করো ব্যবস্থার”। কোন ব্যবস্থা, না যে ব্যবস্থার জন্য, ভোগ লালসা চরিতার্থ করার কারণে প্রাকৃতিক সম্পদের লুঠ স্বীকৃত হয়! এই লুট করা প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ্য পণ্যে পরিণত করতে গিয়ে কারখানার চিমনি দিয়ে সীমাহীন পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করা স্বীকৃত হয় এবং যার ফলস্বরূপ বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে, যার পরিণতিতে হিমবাহ গ’লে, সুমেরু কুমেরুর বরফের চাদর গ’লে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ে, দ্বীপ ডোবে, উপকূল ডোবে, ঘনঘন সাইক্লোন হয়, ক্ষরা বন্যা হয়, পরিবেশ উদ্বাস্তু তৈরী হয়, রোগের প্রকোপ বাড়ে, মানুষের জীবন জীবীকা নষ্ট হয় ইত্যাদি।
এই ব্যবস্থাটারই উচ্ছেদের দাবি আদতে অক্ষরে প্রকাশ না করা বৈপ্লবিক রাজনৈতিক দাবি। তাই বর্তমান বিশ্ব সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রের দাবি, এ বিশ্বভূমি এবং মানব সভ্যতাকে রক্ষা করার দাবি আদতে সমাজ বদলের বৃহত্তর দাবির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পৃক্ত। যা বলা হয়নি, তা হলো এই মুনাফা এবং শোষণ ভোগ লালসাময় পূঁজিবাদী ব্যবস্থা থাকবে আর বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধ করা যাবে, এ শুধু অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। তাই ব্যবস্থার উচ্ছেদ সঠিক ভাবেই পোষাক পড়ানো কেন্দ্রীয় শ্লোগান।
মুশকিল হলো ব্যবস্থার উচ্ছেদ রাজনৈতিক বিপ্লব ছাড়া হয়না আর এখনও পর্যন্ত বিশ্ব রাজনীতি জলবায়ু পরিবর্তনকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশীভূত করেনি। ফলতঃ এই ভাবনা দুর কল্পনার বলে মনে হলেও এর বাস্তবতা অনস্বীকার্য। হয়তো আগামী বিশ্ব রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ ঘটবে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে, হবে নয়া জোটের উত্থান। হবে বিপ্লব, মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ ব্যবস্থা, মুনাফালোভী, লু্ন্ঠন, অন্যায় অসাম্যের এই ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটাবে মানুষ, নিজেকে মুক্ত করবে সেইসাথে নিয়ন্ত্রন করবে জলবায়ু পরিবর্তনকে,নিরাপদ হবে পৃথিবী আর তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স। নাহলে এ বিশ্বের কোনও ভবিষ্যত নেই।
‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার ‘ তামাম বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের উদ্দেশ্যে বার্তায় যা বলছেঃ
১) উত্তরের ধনী বিশ্বকে, বাতাসে কার্বন নিঃসরণ সুতীব্রভাবে কমাতে হবে, জীবাশ্ম জ্বালানির পথ থেকে সরে আসতে হবে, কার্বন নিঃসরণ কমানোর নিরীখে দেশগুলোকে সুনির্দিষ্ট বাৎসরিক কার্বন বাজেট নির্দ্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ এবং মাইলফলক স্থির করতে হবে যাতে করে ‘ নেট জিরো ‘ কার্বন নিঃসরণ সুনিশ্চিত করা যায়, মানে একটা দেশ বাতাসে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করবে সেই পরিমাণই শোষণ করে নেবে প্রযুক্তি, বনসৃজন, নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে। এইসাথে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করতে ন্যায় এবং সাম্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
২) উত্তর গোলার্ধের উপনিবেশবাদীরা গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় যে আকাশ পাতাল ফারাক পরিমাণের কার্বন নিঃসরণ ঘটিয়েছে ঐতিহাসিকভাবে তার জন্য তাদের উপনিবেশ গড়া দেশগুলোর প্রতি ঋণ রয়েছে, সে ঋণ শোধ করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রনে ক্ষতিপূরণ দিয়ে। এই ক্ষতিপূরণ শুরু হয়েছে ‘ক্লাইমেট ফিনান্স’ বা ‘জলবায়ু বিনিয়োগ’ এর আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। ২০০৯ এ কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলন হয়ে ২০১০ এ কানকুনে ‘গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড ‘ এর সিদ্ধান্ত হয়, ২০১৫ য় প্যারিসে সিওপি ২১ এ ক্লাইমেট ফিনান্স কথাটা আসে, এসবে বলা হলো ধনী দেশগুলোর অর্থ দিয়েই এই ভান্ডার তৈরী হবে গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রনে আর্থিক সহায়তা করার জন্য। এসব কথাই থেকে গেছে কাজ কিছু হয়নি। এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, উল্টে গরিব দেশগুলোর সব ঋণ বাতিল করতে হবে, কারণ ধনী দেশগুলোই এই চরম জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষরা, বন্যা, সাইক্লোন, রোগের প্রকোপ, শ্রম দিবস নষ্টের জন্য দায়ী।
৩) কোভিড ১৯ থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য ভ্যাকসিন এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোভিড অতিমারীকে রুখতে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশ্নে ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস ‘ এর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে।
৪) বিশ্বের মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে যে জলবায়ু সংকটের কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষরা বন্যা সাইক্লোন ভূমি ক্ষয়, ভূমি প্লাবনের কারণে যে মানুষেরা পরিবেশ উদ্বাস্তু হচ্ছেন তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৫) দেশজ মানুষের জীবন জীবিকা ও সংস্কৃতির ওপর বাস্তুতন্ত্রের যে অভিঘাত পড়ে তাকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংসসাধন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গন্য করে আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৬) দেশজ মানুষ, ক্ষুদ্র কৃষক- মৎসজীবী, অন্যান্য পরিবেশ এবং ভূমি রক্ষাকারদের ওপর যেকোনও ধরণের হিংসা এবং অপরাধ বন্ধ করতে হবে। তাদের কাজকে সমর্থন করতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে এবং সম্মাণ জানাতে হবে।
বিশ্বের প্রত্যেকের কাছে বার্তাঃ
১) MAPA (Most Affected Peoples and Areas) হলো জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আর তার চরম দুর্দশাগ্রস্ত মানুষজন। পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে ক্ষতি হচ্ছে না একমাত্র MAPA ই জানে কী দুর্দশা তাদের ওপর নেমে এসেছে। এরা মূক নন, সরব কিন্তু এদের কথা শোনা হয়না, ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো, সমুদ্র উপকূলবর্তী মানুষজন ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছে কিন্তু এদের কথা কেউ শোনে না। এরা শুধুমাত্র ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রাম করছে না, এরা বর্তমানে বেঁচে থাকার কঠিন সংগ্রামে নিয়োজিত। এ বিশ্বের কেউই অন্যায় অবিচারে বন্ধি থাকতে চায় না। এটা ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করার কিছু নেই যে MAPA র জন্য লড়াই করা হচ্ছে বরং এটা ভাবাই সঠিক যে, MAPA র লড়াইয়ের সাথে একজোটে লড়াই করা হচ্ছে। MAPA দের শুধু যে দুঃখ দুর্দশার অভিজ্ঞতা আছে তেমনটা নয় বরং MAPA দের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিরোধের কাহিনীকে তুলে ধরতে হবে।
২) MAPA দেশগুলো আদতেই গরীব নয়, তারা তাদের সম্পদে ধনী কিন্তু তারা ঐতিহাসিকভাবে এবং পর্যায়ক্রমে অত্যাচারিত হয়েছে এবং তাদের উন্নতির সোপান থেকে বিচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এই চরম অন্যায়, শোষণ বঞ্চনার জন্য উত্তর গোলার্ধের রাষ্ট্রনায়কদের মানবতার প্রতি জমে থাকা ঐতিহাসিক ঋণ শোধ করতে হবে। সেজন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রন করতে বা মানিয়ে নিতে উত্তরের ধনী দেশগুলো যদি প্রযুক্তি এবং অন্যান্য বিষয়ে MAPA দেশগুলোকে যদি আর্থিক সহায়তা করে তাহলে সেটা বড়োই সম্মাণজনক বা সৌভ্রাতৃত্বমূলক বলে আদৌ গন্য করা হবে না কারণ উচ্চ আয়ের দেশগুলো এবং নানা ক্ষেত্র প্রাকৃতিক সম্পদের যে বল্গাহীন লুটতরাজ, শোষণ ও অন্যায় করেছে এ তারই ক্ষতিপূরণ।
৩) MAPA দেশগুলোর জলবায়ুর প্রতি ন্যায়ের দাবিতে সংগ্রামী কন্ঠস্বরকে উচ্চগ্রামে তুলে ধরতে হবে নাহলে যদিও আমরা জীবন ও পৃথিবীর স্বার্থে বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রাকে নিরাপদ স্তরে বেঁধেও ফেলতে পারি, প্রান্তিক মানুষদের আত্মবলি এবং বিচ্ছিন্নতা থেকেই যাবে, সার্বিক সমস্যার আংশিক সমাধান হবে।
৪) অতীতের সমস্ত কিছুর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে মাদের কাজ, বৃহত্তর মানব সমাজের সাথে জোট বেঁধে পরিবেশ রক্ষাকারী, কর্মী এবং চরম অবহেলিত মানুষদের নেতৃত্বকে অনুসরণ করা। আমাদের কাজ তাদের উপনিবেশবাদ বিরোধী, ন্যায় এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুক্ত হওয়া কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে যে,আমাদের মুক্তি সকলের সঙ্গে দৃঢ় সঙ্ঘবদ্ধ।
আসলে ২০১৫ সালে প্যারিস কনভেনশন, COP 21 এর পর ৬ বছরের মাথায় এ বছরই স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ৩১ শে অক্টোবর থেকে ১২ ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ইউনাইটেড নেশনস এর জলবায়ু সম্মেলন। এখানে আলোচনা হবে প্যারিস চুক্তিতে যা ছিল, এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের নীচে রাখা হবে এবং সেজন্য প্রতি দেশকে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমাতে হবে এবং ২০৫০ এর মধ্যে ‘ নেট জিরো ‘ তে নিয়ে যেতে হবে। সব দেশ স্বেচ্ছা মূলক লক্ষ্যমাত্রা নির্দ্ধারণ করেছিল। যাকে বলে INDC ( Intended Nationally Determind Contribution) গরিব উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু নিয়ন্ত্রনে ব্যবস্থাপনার জন্য ধনী দেশগুলোর অর্থ ভান্ডার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে সে কাজ বড়ো একটা এগোয়নি।
সুইডেন, নরওয়ে আর দঃ কোরীয়া, জাপান অঙ্গীকার করেছে ২০৫০ এ ‘ নেট জিরো ‘ য় পৌঁছুবে, চীন অঙ্গীকার করেছে ২০৬০ এ তারা ‘ নেট জিরো ‘ য় পৌঁছুবে এবং জি ৭ এর একমাত্র বৃটেন দেশে আইন করে বলেছে যে তারা ২০৫০ এর মধ্যে ‘ নেট জিরো ‘ তে পৌঁছুবে। বোঝাপড়া হয়েছিল ১০০ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের ‘ ক্লাইমেট ফিনান্স’ তহবিল গঠন করা হবে, তা নানা ছলচাতুরীতে আটকে গেছে। আর আমেটিকার তো এসবের বালাইও নেই, ডোনাল্ড ট্রাম্প তো প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে, ঠিক যেমনটি ছিল না ক্রিয়েটো প্রোটোকলের কার্বন নিঃসরণ কমানোর মাপকাঠিতে। ভারত লক্ষমাত্রা দেয়নি তখন, পরে বলেছে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০০৫ সালের তুলনায় অর্থনীতির নির্গমন প্রাবল্য কে ৩৩-৩৫ শতাংশ কমিয়ে দেবে এবং ২০২২ সালের মধ্যে ৪০% নবীকরণ যোগ্য শক্তির ব্যবহার করবে যদিও লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বাস্তবতা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিশেষত নবীকরণ যোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো মুশকিল।
এর মধ্যেই গত ৯ ই আগস্ট ২০২১ এ চলে এলো IPCC( Intergovernmental Panel on Climate Change) এর ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদন AR6, যা বলল তাতে ভয়ে শিউরে উঠতে হয়। প্রতিবেদন বলছে প্যারিসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এ শতাব্দী শেষ হবে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে কিন্তু আগামী দুই দশকের মধ্যেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে পৌছবে। যদি প্যারিস কনভেনশনের বোঝাপড়া মতো সব দেশ যে INDC দিয়েছিল সেই মোতাবেক কাজ না হয়, ২০৫০ এ ‘নেট জিরো’ তে না পৌঁছায় তাহলে তাপমাত্রা ৩ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৪.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বেড়ে যেতে পারে। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নাসা গ্রেডিয়েন্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন GFM ব্যবহার করে বলল, ভারতের ১২ টি উপকূলবর্তী শহর প্রায় তিন ফুট জলের তলায় চলে যাবে। উপকূলবর্তী অঞ্চলের ৪ কোটি মানুষ চরম বিপদের মধ্যে পড়বেন, তার মধ্যে রয়েছে আমাদের খিদিরপুর।
শহর গুলি হল, কান্ডলা, ওখা, ভাবনগর, মুম্বাই, মর্মুগাও, ম্যাঙ্গালোর, কোচিন, পারাদ্বীপ, খিদিরপুর, বিশাখাপত্তনম, চেন্নাই এবং তুতিকোরিন।
এর সাথে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত IPBES (Intergovernmental Science-Policy Platform on Biodiversity and Ecosystem Services) এর প্যানডেমিক রিপোর্টে বলল যেভাবে ভূমি ব্যবহার,বা land use এর পরিবর্তন করা হয়েছে, বনাঞ্চল সাফ করা হয়েছে তাতে কোভিড ১৯ ভাইরাস প্রাণীদেহ ছলকে জুনোটিক ডিজিজ এর মাধ্যমে যে অতিমারী সৃষ্টি করেছে তা স্বাভাবিকই ছিল, রিপোর্টে আরও বলা হলো, ১৭ লক্ষ অজানা ভাইরাসের বেশকিছু ভাইরাস প্রাণী দেহ থেকে ছলকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়ে কোভিড ১৯ এর থেকে দ্রুতগতিতে অতিমারী ঘটিয়ে দিতে সক্ষম।
বিভীষিকাময় পরিস্থিতে পৌঁছে গেছে এই নীল সবুজ গ্রহ, আমাদের প্রিয় আবাসভূমি আর মনুষ্য প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স।
উত্তর গোলার্ধের ধনীদেশগুলো সহ নানা দেশের রাষ্ট্রনায়কেরা এখনও বলার মতো কিছু করেনি। এই ব্যবস্থা কতদূর করবে তা নিয়ে সংশয়ের মেঘ তামাম বিশ্বের আকাশ ছেয়েছে। কিন্তু আমাদের জন্য আর Planet B নেই। বিশ্বজুড়ে মানুষের জোট নতুন সমীকরণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুক ব্যবস্থার উচ্ছেদে। তাহলেই কেবল তাহলেই বাঁচবে বিশ্ব বাঁচবে হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স।