২৪ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার
সুনয়না ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজটা হাতে নিয়েছিল, হঠাৎ মনে পড়ে গেল আজ অফিস তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে। সাগ্নিক অর্কপ্রভ আর মেঘা বলেছে আজ ধর্মঘটের জন্য লিফলেট দেবে ।
আসলে আইটি অফিসে তো সবকিছু একইরকম ভাবে করা যায় না, সন্তর্পনে করতে হয়, কিন্তু সবাই জেনেই গেছে ওরা অন্যরকম, ওরা প্রতিবাদ করে। কখন যে সুনয়না ওদের একজন হয়ে গেছে কে জানে!
ওরা নাকি হোয়াইট ক্লাস! যখন লকডাউনে একের পর এক লোক ছাঁটাই করলো, সেলারি কমিয়ে দিল, যখন work-from-home মানে প্রায় ২৪ ঘন্টাই কাজ করতে হচ্ছিল তখন তো বুঝেছে, যে কোন কল কারখানার শ্রমিক আর তাদের মধ্যে আসলে কোন পার্থক্য নেই, যখন ওরা শুধু আতঙ্কে প্রহর গুনছে, তখন তো ওই অর্ক রাজদীপ ওরাই প্রতিবাদ করেছিল,
আইনি লড়াই সহ সব রকম ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল ওদের কাজ। আর তারপর থেকেই প্রতিবাদী মনটা আবার ওদের সাথে কিভাবে যেন যুক্ত হয়ে গেছে, তাই আজ যখন ওরা ধর্মঘট করার দাবি করে, সামাজিক সুরক্ষা দিতে বলে, যখন দেখে দেশকে বেচে দিতে চাইছে সরকার, তখন সুনয়না বোঝে প্রতিবাদ করতেই হবে। মানুষ না বাঁচলে ওদের কাজেরই বা কি হবে তাই সুনয়না খবরের কাগজ হাত থেকে ফেলে মাকে ” খেতে দাও তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে” বলে স্নানে গেল। ধর্মঘট এর প্রচার যে করতেই হবে।
২৮- ২৯ শে মার্চ ওরও ধর্মঘট।
ডরোথি কিসকু
মাঠে যাচ্ছে। আলু তোলার সময় এখন, ও ভাবছিল এই সময়ে যদি বা একটু কাজ থাকে, আজকাল তো কাজেরই আকাল পড়েছে, তাও মজুরিও সব সময় সমান পায় না, কি করবে এত জনে কাজের জন্য বসে থাকে কেউ না কেউ তাহলে ঠিক কম পয়সায় কাজ করতে রাজি হয়ে যাবে। লকডাউন এরপর কতজন যে আর কাজই পাচ্ছেনা, কতজন তো আর আসছেই না।রামু কাকা বলছিল মজুরি বাড়ানোর কথা বলতেই হবে, দিনের-পর-দিন চাষীরাও ফসলের দাম পাচ্ছে না, মজুরি ও বাড়ছে না। বলছিল, দেশের কৃষকরা এক হয়ে দেশের সরকারকে এই যে কালা কৃষি আইন যা ওদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে কিন্তু তারপর যে কথা দিয়েছিল তা সরকার মানছেনা, রাজ্যে দিদি এত ভাল ভাল কথা বলে, দিদি ও তো ডরোথি দের ভালোর জন্য কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাই বিশুরা বলছিল ওই সংযুক্ত কিষান মোর্চা ২৮ – ২৯ শ্রমিকরা যে ধর্মঘট ডেকেছে, তাকে সমর্থন করেছে গ্রামেও ওই দিন কাজ হবে না। ওদের গ্রাম বৈঠকে যখন এই কথাগুলো বলছিল তখনই ও ঠিক করেছে ২৮–২৯ ও ধর্মঘট করবে, সারা বছরের ভালোর জন্য ওই দু দিন ও কাজ করবে না। ২৮–২৯ শে মার্চ ওর ও ধর্মঘট।
লক্ষী কাহার, নির্মাণ শ্রমিক। রাস্তা, বাড়ি তৈরীর সময় কখনো রাস্তায় ব্রাশ দিয়ে ঝাঁট দেয় কখনো স্টোন চিপস বয়। এখনতো মাঝে মাঝেই কাজ থাকছে না সবাই বলাবলি করছিল মজুরি বাড়ানোর দাবি নাকি আর করা যাবেনা,
মীনা দিদি বুবু দাদারা বলছিল কি সব আইন করেছে সরকার, শুধু মালিকের জন্য তাই ওদের নাকি আর কিছু বলার থাকবে না কি সব নাকি শ্রম কোড না কি যেন ও সবটা বোঝে নি শুধু বুঝেছে, যা হচ্ছে খুব খারাপ হচ্ছে সত্যিই তো মজুরি না বাড়লে ওর লেড়কা লেড়কি গুলোর কি হবে? রামশরণ ওর মরদ টাও তো অর্ধেক দিন কাজ পায় না আর পেলেও,
নিয়ে আসে আর কত টাকা, কি হবে তাহলে? মীনা দিদিরা প্রতিবাদ করতে বলেছে, বলেছে ২৮–২৯
_ কেউ কাজ করবে না ওই দুদিন সব বন্ধ। যাতে ওদের ভালো হয় অধিকার বজায় থাকে, তাই এই দুদিন ধর্মঘট। লক্ষ্মী ঠিক করেছে ও ২৮,২৯ কাজ করবেনা, রামশরন কেও বলবে কাজে না যেতে, পরের ভালোর জন্য এই দুদিন সব কাজ বন্ধ করতেই হবে। ২৮_২৯ শে মার্চ তাই ওরও ধর্মঘট।
রাবেয়া ফোনে রিচার্জ করতে গিয়ে ভাবছিল, উফফ কি পরিমান খরচ হয়েছে ডাটা এই লকডাউন আর কলেজ বন্ধর জন্য । যা ডাটা খরচ বেড়েছে সে কথা বলার নয়। রূপম,পিয়া মেহেনাজ,ঋকরা বারবার এ কথা বলে। ওরা যখন পোস্টারে নতুন শিক্ষানীতি NEP2020 র বিরুদ্ধে লেখে, যখন মাইকে বলে তখন তো এই কথাই বলে, বাবাও বলছিলেন ডাটা কেনার জন্য এত খরচ খুব অসুবিধা হচ্ছে। বাবা কি করবে বেসরকারি অফিসে চাকরি, মায়নেই তো কত কমিয়ে দিয়েছে লকডাউনে, রাবেয়ার টিউশন গুলো ও ছিল না, না অনলাইন এডুকেশন সত্যিই ভালো না, ঠিকই বলে রূপম রা আসলে সরকার ডিজিটাল ডিভাইড করে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ও ডিভিশন করতে চাইছে। পয়সা থাকলে পড়া যাবে নয়তো পড়া যাবে না।এ কি সিস্টেম? সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে নয়তো ও বোধহয় আর পড়া চালাতে পারবেনা।আমাদের রাজ্য সেখানেও তো এই একই পদ্ধতি চলছে নাকি বেসরকারি হবে, তাহলে ওর পড়ালেখার কী হবে? ভাবে রাবেয়া, না সত্যিই প্রতিবাদ করতেই হবে সরকারের বিরুদ্ধে। ২৮ _২৯ মার্চ অনেকে মিলে দেশ আর দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারের এই মানুষ বিরোধী নীতি গুলোর জন্যই তো ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ওই দিন ধর্মঘট কে সমর্থন করে ঐ শিক্ষানীতির, মানুষ মারা নীতিগুলোর বিরোধিতা করবেই।
২৮–২৯রাবেয়ার ও ধর্মঘট।
রীনা খবরের কাগজের পাতা উল্টাতে গিয়েই আবার দেখল ধর্ষণের খবর, সত্যিই কি হয়েছে রাজ্যে, মেয়েদের কি কোন নিরাপত্তাই থাকবে না! প্রতিদিন মেয়েদের প্রতি হিংসার ঘটনা বাড়ছে, আর কেন্দ্র রাজ্য শাসকদের মুখে বড় বড় বুলি। মানুষের কাজের ব্যবস্থা করছে না, হতাশায় ডুবে যাচ্ছে বড় অংশ তখন তাদের বেপথে নিয়ে যাচ্ছে। মদ, সমাজবিরোধী কাজ সবেতেই প্রশ্রয় দিচ্ছে এরা, কিভাবে সমাজ সুস্থ থাকবে, যেমন ভাবে থাকবে নিরাপত্তা! কাল যখন বাসে করে ফিরছিল, শুনছিল মিটিং হচ্ছে, ২৮–২৯ মার্চ নাকি ধর্মঘট, দেশ বাঁচানোর জন্য, দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য।পেট্রোলের দাম গ্যাসের দাম, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছিল, বলছিল মেয়েদের নিরাপত্তা র কথাও সবকিছুর জন্য সরকারকে জোরে ধাক্কা দিতে হবে। “ঠিকই,” রিনা ভাবে মানুষকে বাঁচানোর জন্য মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য, সত্যিই ধাক্কা দরকার ২৮_২৯ এর ধধর্মঘট কে ওর সমর্থন করতে ইচ্ছে হলো ভাবলো, ঐদিন সব বন্ধ রাখতেই হবে ২৮–২৯ শে মার্চ ওর ও ধর্মঘট।
এরকম সমাজের বিভিন্ন অংশের, বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন জগতের মহিলাদের দাবিও মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ২৮–২৯ শে মার্চের ধর্মঘটের দাবিগুলোর সাথে। আসলে ধর্মঘট যে দেশ বাঁচানোর জন্য দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য মহিলারা যে এই মানুষেরই এই সমাজেরই অংশ। তাই ছাত্রী, যুবতী, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক, কর্মচারী, গৃহবধূ সকলের দাবি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ধর্মঘটের দাবিতে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বেচে দিলে যে দেশের নতুন কাজ তৈরি হবে না।কেমন করে এগোবে দেশ! যারা তৈরি করবে সভ্যতার ভিত, তারা না খেয়ে থাকবে, আর আদানি আম্বানি কোটি কোটি গুণ সম্পদ বাড়াবে এই প্রান্তিক মানুষের রক্ত ঘামের বিনিময়ে তা চলতে পারে না। এক জাতের নামে অন্য জাতকে খেপানো হবে, যেকোন উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিরীহ মানুষের রক্তে হোলি খেলা হবে, এদেশ এই রাজ্যকে এরকম চলতে দেওয়া যায় না। এই দেশ আমাদের, রাজ্য আমাদের। তাই আজ রণধ্বনি, রণধ্বনি ২৮,২৯ দুদিন আসমুদ্রহিমাচল কে থামিয়ে দিয়ে সরকারকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার। এই লড়াইতে তাই সব অংশের মেয়েরা আছে, আছে সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, আছে অসীম সাহসিকতায়, সামনের সারিতে। ২৮ ও ২৯শে মার্চ তাই ধর্মঘট তাই হরতাল, চাকা বনধ্। অন্যায় অত্যাচার, দেশ লুটের জবাব চাইতে ওই দুদিন আমার আপনার সবার প্রতিবাদের দিন, ধর্মঘট এর দিন।