Disinfectant Sprayed on Migratory Labourers in Yogi State



বড় রাস্তার পাশে পিঠে ব্যাগ, মালপত্র-সহ এক দল লোক উবু হয়ে বসে রয়েছেন। তাঁদের ঘিরে ধরে পুরো শরীর ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে জীবাণুনাশক রাসায়নিকে। যাঁরা সেই স্প্রে করছেন, তাঁদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা বিশেষ পোশাকে। কিন্তু যাঁদের রাসায়নিকে স্নান করানো হচ্ছে, তাঁদের পরনে সাধারণ জামাকাপড়। জীবাণুনাশকে ভিজতে ভিজতে উবু হয়ে বসে থাকা মানুষগুলির কেউ মুখ ঢাকছেন কাপড়ে, কেউ আবার নিজের ক্ষতির পরোয়া না-করে পাশে বসা শিশুটির চোখ জোড়া ঢাকছেন দু’হাতে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মোকাবিলা করতে এ ভাবেই উত্তরপ্রদেশের বরেলির একটি চেক পয়েন্টে ভিন রাজ্য থেকে আসা এক দল শ্রমিককে ‘শুদ্ধকরণ’ করেছে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন।

৩০ মার্চ সোমবার যোগী রাজ্যে বর্বরতার খবর সামনে আসার পরে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। বরেলির জেলা শাসক নীতীশ কুমার সোমবার বলেছেন, তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। 

পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে বিজেপি সরকারগুলি। মধ্য প্রদেশ, গুজরাট থেকে সেই অভিযোগ আসছিলই। কিন্তু উত্তর প্রদেশের বরেলির ছবি-ভিডিও সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের রাস্তার ওপর হাঁটু মুড়ে বসিয়েছে পুলিশ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যাগপত্র নিয়ে বসে আছেন। শিশুরাও রয়েছে। তারপর দমকলের গাড়ি থেকে পাইপ দিয়ে হাইপোক্লোরাইড মেশানো জল দিয়ে তাঁদের ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সুরক্ষা পোশাকে সর্বাঙ্গ ঢাকা দমকলকর্মীরা এই কাজ করছেন। রবিবার স্যাটেলাইট বাস স্ট্যান্ডে এইভাবে কয়েকশো শ্রমিকদের ‘জীবাণুমুক্ত’ করেছে যোগী সরকার। রাসায়নিকযুক্ত জল চোখে যেতেই চোখ লাল হয়ে উঠেছে অনেকের। শিশুদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তারা কাঁদতে শুরু করে। 

দিল্লি থেকে শত শত কিলোমিটার পায়ে হেঁটে দলে দলে ঘরে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের অসহনীয় যন্ত্রণার ছবি মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে আসরে নামে প্রশাসন। বাস পাঠিয়ে রাজ্যে নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতে ভেসে যায় গাজিয়াবাদের বাস ডিপো। দেশ-দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই ছবি। তারপরেই বলা হয় শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা বন্ধ। কিন্তু ততক্ষণে পায়ে পায়ে বরেলি পর্যন্ত চলে এসেছেন শ্রমিকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্যাটেলাইট বাস ডিপোতে শ্রমিকরা এসে খোঁজ করছেন বাস আছে কি না, তখনই ট্রাফিক পুলিশ এসে তাঁদের রাস্তায় বসে পড়তে বলে। পুলিশও এসে যায়। শ্রমিকরা তখন খুবই আতঙ্কিত। ভাবছেন পুলিশ বোধহয় তাঁদের গ্রেপ্তার করবে। সেই সময়ে দমকলকর্মীরা বলেন তাঁদের গায়ে জীবাণুনাশক দেওয়া হবে। শ্রমিকরা তো বুঝেই উঠতে পারছেন না কী হতে চলেছে! কিন্তু পুলিশ মারবে বা ধরে নিয়ে যাবে এই ভয়ে তাঁরা বসে পড়েন। কেউ উবু হয়ে, কেউ হাঁটু মুড়ে। এরপর তাঁদের বলা হয়, চোখ বন্ধ করতে। আতঙ্ক আরও চেপে বসে তাঁদের। ফলে চোখ বন্ধের ভান করলেও চোখ খোলা থাকে অনেকেরই। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁদের ওপর জলের তোড় নেমে আসে দমকলের গাড়ি থেকে। রাসায়নিক মেশানো জলে পুরো ভিজে যান তাঁরা। এরমধ্যেই কারও কারও চোখে ওই হাইপোক্লোরাইড মেশানো জল ঢুকে জ্বালা করতে শুরু করে। তাঁরা যন্ত্রণা এবং ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন। সব মিলিয়ে তখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। 

সোমবার এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই ধিক্কার জানানো হয় সব মহল থেকে। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, রাজ্যের প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, মায়াবতী —সরকারের এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা করেন। সমালোচনা করে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করে বলেছেন, এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। গরিব এবং দুর্বলদের থেকে তাঁদের মৌলিক মানবিক মর্যাদাটুকুও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অখিলেশ যাদব প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এইভাবে মানুষকে জীবাণুনাশ করার কথা বলেছে? যেভাবে মানুষগুলোকে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারপর তাঁদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য সরকার কি বন্দোবস্ত করেছে?  অভূক্ত মানুষগুলোর জন্য খাবারের কি বন্দোবস্ত করেছে? মায়াবতী বলেছেন, বরেলির ঘটনা অমানবিক এবং বর্বরতা। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও টুইটে উত্তর প্রদেশ সরকারের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, শ্রমিকদের প্রতি এই অমানবিক আচরণ করবেন না। 

চাপে পড়ে প্রশাসন এখন দায় পৌরকর্মী এবং দমকলকর্মীদের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। বরেলির জেলা শাসক বলেছেন, মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং দমকলকর্মীদের যে বাসে করে পরিযায়ী শ্রমিকরা এসেছেন, সেটা জীবাণুমুক্ত করতে বলা হয়েছিল। ওই কর্মীরা অতি উৎসাহে শ্রমিকদের সঙ্গে এটা করে ফেলেছে। যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও এদিনই লক্ষ্ণৌয়ে অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অবনীশ অবস্তি এই কাজকে কার্যত সমর্থন করেছেন। তাঁর দাবি, এই ধরনের ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিকভাবেই অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু চোখটা বন্ধ করে রাখা প্রয়োজন। 



Spread the word

Leave a Reply