২৪ জুলাই ২০২৩ (সোমবার)
ময়ূখ বিশ্বাস
মহাভারতের বীর বভ্রুবাহনকে মনে আছে?
মণিপুর রাজ। মণিপুরের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা এবং মধ্যম পান্ডব অর্জুনের ছেলে। শুধু তাই নয়৷ মহাকাব্য বলে, বাবা ছেলের ভয়ংকর যুদ্ধও হয় এবং শেষ পর্যন্ত বভ্রুবাহন নিক্ষিপ্ত তীরে অর্জুন গো হারা হেরেও যান। আর চিত্রাঙ্গদা ছিলেন মণিপুর রাজ্যের উত্তরাধিকারী রাজকন্যা তথা রাজ্যের রক্ষক। তাঁর রূপ, বীরত্বে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাভারতের এই চিত্রাঙ্গদা চরিত্রকেই ঢেলে সাজিয়েছিলেন।
কয়েকদিন আগে ভারতীয় ফুটবল টিম অনবদ্য ফুটবল খেললো। সেই টিমেও ছিলো মণিপুরের ছেলেরা। মণিপুর মানে কলকাতার ময়দানে খেলা রেনেডি সিং, জেমস, মণিতোম্বি, জ্যাকসনরা। কুকি হোক বা মেইতেই। ফুটবল অন্ত:প্রাণ একটা রাজ্যে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বক্সিং থেকে ভারত্তোলনে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পাওয়া মীরাবাঈ চানু, ডিংকো সিংহ, মেরি কমের মাটিও মণিপুর।
মণিপুর মানে ভেসে ওঠে আমাদের সামনে বিপ্লবী হিজাম ইরাবত সিংহ। বিজন ভট্টাচার্য, বলরাজ সাহনি, সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাসদের বন্ধু। এক কমিউনিস্ট। যিনি হিন্দু-মুসলমান-খ্রীস্টান, সমতল-পাহাড় নির্বিশেষে মণিপুরের জনজাতিকে এক করার কথা বলেছিলেন। রাজবাড়ির জামাই হয়েও গরিব চাষি ও জেলেদের উপর কর কমাতে বলেছিলেন। এই মণিপুরেই ১৯০৪ এবং ১৯৩৯ সালে দু’বার মণিপুরী নারীরা ব্রিটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যেদের রাইফেল বেয়োনেটের সামনে খালি হাতে লড়াই করতে নেমেছিল মণিপুরের নারীরা। ১৯৩৯ সালের ১২ ডিসেম্বরের এই বিদ্রোহ মণিপুরের ইতিহাসে ‘নুপীলান’ নামে পরিচিত। কিন্তু আজ সেই মণিপুরেই নারীদের ওপর ক্রমাগত ঘটে চলা নৃশংসতম ঘটনা গুলো দেখে শিউড়ে উঠছে গোটা দুনিয়া। হিংসার আগুন থেকে বাঁচছে না স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারগুলোও। যেমন আমরা দেখলাম স্বাধীনতা সংগ্রামী চূড়াচাঁদ সিংহের স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হলো।
উত্তর-পূর্বে গুজরাট মডেল
মণিপুর যখন জ্বলছে,আওয়াজ উঠছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। তখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারকে। গত ৩ মে থেকে মণিপুরে জাতিগত হিংসা শুরু হয়। তা চলছে এখনও। রাজ্য জুড়ে হিংসায় কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের দুশোর বেশী মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। যে মেয়েটার ভিডিও দেখেছে দুনিয়া, তার বাবা, ভাই প্রাণ হারিয়েছে। জ্বলজ্যান্ত নরক হয়ে উঠেছে গোটা মণিপুর। বর্বর বিজেপি – আরএসএস রাজে বারবার ঘটছে এই রকম অত্যাচার। গুজরাট দেখেছে বিলকিস বানুকে। দেখেছে ত্রিশূলের ডগায় মায়ের পেট চিঁরে ভ্রুণ বার করে গেরুয়া শিবিরের জান্তব উল্লাস। এদের হিংস্রতা দেখেছে কাঠুয়া, হাথরস। বারবার গোটা দুনিয়ার সামনে বুদ্ধ, গান্ধী, রবি ঠাকুরের দেশের মান সম্মান ভূলুণ্ঠিত করেছে সংঘ পরিবার। কারণ হিংসাই ওদের শেষ সম্বল। মণিপুরে এক লাখ লোক ঘরছাড়া। জ্বলে গেছে বাড়ি। শরনার্থী শিবিরে মনুষ্যেতর অবস্থায় রাত কাটাচ্ছে তাঁরা। বহু মানুষ পাশের রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাশের দেশ মায়ানমারে পালিয়ে গেছে। দুদিন আগেও মানুষগুলো একসাথে গিটার বাজাতো, ফুটবল খেলতো, নাচ করতো। আজ তাঁরাই আধুনিকতম অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে একে অন্যের বিরুদ্ধে। আর কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার চুপ করে দেখছে। রাজ্যেকে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানো, সম্প্রীতি স্থাপন, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি স্থাপনের কোনোও উদ্যোগই নেয়নি এখনো ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার।’ বরং তাঁরা বিভাজনের অঙ্ক খেলে ভোটের আখের গোছাতে ব্যস্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে শান্তি স্থাপনা করবেন মণিপুরে। কিন্তু হিংসা শুরু হওয়ার ৮০ দিন কেটে যাবার পরেও, তা কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আজ মণিপুরে যে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার দায় কোনভাবেই মোদি প্রশাসন এড়াতে পারবে না।
আশ্চর্যজনকভাবে এই বিজেপি আরএসএসই মোদিকে ‘বিশ্বগুরু’ বলে প্রচার করেছে। তিনি নাকি রাশিয়া-ইউক্রেন এর মধ্যে শান্তি স্থাপনায় প্রধান উদ্যোক্তা। কিন্তু আমাদের দেশেই একটা রাজ্য মণিপুর যখন এতদিন ধরে জ্বলছে, মোদির টিকিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। মণিপুরে যখন হিংসার ঘটনা শুরু হলো সেই সময় প্রধানমন্ত্রী এবং চ্যালা অমিত শাহ দিনের পর দিন কর্নাটক নির্বাচনে সময় কাটিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভয়াবহ হিংসা শুরু হওয়ার ২৬ দিনের মাথায় মণিপুরে পা ফেলেছিল। আর বিশ্ব গুরু মোদি যিনি হনুলুলু তে কুকুর কামড়ালেও টুইট করেন, তিনি হিংসা শুরু হওয়ার ৭৯ দিনের পর মনিপুর নিয়ে মুখ খোলেন। তাও সুপ্রিম কোর্টের চাপ। তাই শান্তি স্থাপনের জন্য সরকার কতখানি ইচ্ছুক এদের আচরণেই স্পষ্ট।
হিংসার ব্যাপারি
অমিত শাহ নিজেকে বনিয়া অর্থাৎ ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি বলতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আর মনিপুরের ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এরা একটাই ব্যবসা বোঝে। তা হলো হিংসা। এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অন্যকে লেলিয়ে দেওয়াই এদের কাজ। এবং তাঁর নীল নক্সা করেছে সংঘ পরিবার। যেমন আরামবাই টেংগোল (Arambai Tenggol) এর মতো মেইতেই সম্প্রদায়ের ভাড়াটে জঙ্গি বাহিনীকে সরাসরি সমর্থন করেছে সংঘ পরিবার। মেইতেই লিপুন নামে একটি সংগঠনের নেতা প্রমথ সিং তো বলেই দিয়েছে, মণিপুর হলো সনাতন হিন্দু ধর্মের শেষ আউটপোস্ট। সুতরাং তাকে রক্ষা করা ওদের কর্তব্য। আর এইসব ব্যক্তি বা সংগঠনগুলোকে কোলে বসিয়ে রেখেছে আরএসএস এবং বিজেপির সরকার। স্বাভাবিকভাবেই এহেন ঘটনাপ্রবাহ গুলো বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে। যারা মূলত ধর্মে খ্রীস্টান।
যদিও বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, হিংসা শুরু হয়েছে মণিপুর হাই কোর্টের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর। মেইতেই সম্প্রদায়কে (এই সম্প্রদায়ের থেকেই মণিপুরের রাজারা ছিলেন) তফশিলি উপজাতি তকমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কোর্ট। বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারের দাবির ভিত্তিতে। এখন মেইতেইরা উপজাতি হলে, সহজেই তাঁরা পাহাড়ি জমি কিনতে পারবে। এটি উপত্যকার লোকেদের কাছে বাম্পার অফারের মতো। অপরদিকে স্বাভাবিকভাবেই পাহাড়ে বসবাসকারী মূলত আদিবাসী কুকি সম্প্রদায় তা মেনে নিচ্ছে না।এরা প্রধানত খ্রীষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী। সংখ্যালঘু। ব্যাস। আরএসএসের ফর্মুলাও মিলে গেছে। লোক মরছে কাটাকাটি করে। আর মণিপুর থেকে বহুদূরে নাগপুরে বসে মজা নিচ্ছে মোহন ভাগবতরা। লক্ষ্য এই বিভাজন করেই ২০২৪ এর নির্বাচনে ফায়দা তোলা।
বুলডোজার রাজ
উত্তর-পূর্বের শান্ত রাজ্যতেও আবির্ভাব ঘটেছে বুলডোজার রাজের। স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় জঙ্গলের বেআইনি বসতিগুলো উচ্ছেদ করতে এই হুংকার দিয়েছেন। কিন্তু জমি উচ্ছেদ করা হয়েছে কোনরকম আলোচনা না করে। বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই। এরমধ্যেই উচ্ছেদ অভিযানে বহু গ্রামের বাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এর প্রতিবাদ করেছেন, তাদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়েছে বিজেপি সরকার। বিগত কিছু বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই কুকি সম্প্রদায় কে কখনো “বহিরাগত”, “জমি দখলকারী”, “মায়ানমারের অনুপ্রবেশকারী” অথবা “বিদেশি” বলে গালিগালাজ করেছেন। অথচ মূলত পাহাড়ে বসবাসকারী কুকি সম্প্রদায় এ অঞ্চলের আদিম অধিবাসী। বিজেপির ফ্যাসিবাদী রাজ নাৎসি কায়দায় তাদেরকে রাজ্যের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে। জনমানসে আরএসএস কুকি সম্প্রদায়কে নিয়ে গড়ে তুলেছে মনগড়া কাহিনী। ক্রমাগত কুকি সম্প্রদায়কে ‘ড্রাগ মাফিয়া’, ‘আফিম চাষী’ বলে গেছে শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা ।
কিন্তু ইতিহাস বলছে এই কুকি সম্প্রদায়ের বীরত্বের কাহিনী। ১৮৪০ থেকে এরা লড়েছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজদের জোর করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করানোর বিরুদ্ধে কুকিরা গর্জে ওঠে। এদের মধ্যে অনেকেই নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগদানও করেছিল। আজ এদের ধর্মস্থান বাড়ি দোকান সম্পত্তি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে অথবা লুট হয়ে গেছে। দিল্লিতে অবস্থিত মণিপুর ট্রাইবাল ফোরামের (MTFD) হিসেবে ২৫০ এর বেশি চার্চ ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা পুড়ে গেছে। আবার পাল্টা হিংসায় পুড়েছে বহু মন্দির। মারা গেছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষও। যদিও কুকি সম্প্রদায়ের ওপর যা চলছে তাকে ইংরেজিতে Ethnic Cleansing ই বলা চলে। যেমনটা হয়েছিল ইহুদিদের সাথে নাৎসি শাসনে।
আর এইসবের পিছনে আসল উদ্দেশ্য সামনে আসছে জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার করা সার্ভের পর। তাদের করা সার্ভে অনুযায়ী মণিপুরে নিকেল, তামা এবং প্লাটিনাম গ্রুপের খনিজ পাওয়া গেছে। এছাড়াও আছে ম্যাগনেটাইট, আ্যজুরাইট এবং ম্যালাকাইট। মণিপুরের ৮৯% জমি পাহাড়ি। মূলত এই সব খনিজ পদার্থ সঞ্চিত আছে ওখানেই। আর এখানেই কয়েক শত বা হাজার বছর ধরে আদিবাসী মানুষরা বাস করছেন। মূলত কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ তারা। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নতুন আইনে জমি কেনার অধিকার পাবে উপত্যকার মানুষরাও। অর্থাৎ মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষরা। সাথে এই নয়া ফরমান সুবিধা করবে মাইনিং কোম্পানিগুলোকে।
পৃথিবীর অন্যত্রও আমরা দেখেছি এইভাবে জল জমি জংগল দখল করতে। ঠিক এই ফর্মুলাতেই। বলসোনারো রাজে ব্রাজিলে অথবা বলিভিয়ার মিলিটারি শাসনকালে। এটাই হয়েছে। আমরা দেখেছি কিভাবে বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো লুঠ করে আদিম অধিবাসীদের। ক্ষতিপূরণ সেখানে মায়া মরিচিকা। বরং নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বহু জনগোষ্ঠী। মনিপুরও সেই দিকেই যাচ্ছে।
গৃহযুদ্ধ
দেশের একটি রাজ্যেই জাতিগত হিংসা গৃহযুদ্ধের আকার ধারণ করেছে। বহু মৃত্যুর পাশাপাশি কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আক্রান্ত। জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া, অ্যাম্বুলেন্স ভর্তি রোগী ও তার পরিবারকে জ্বালিয়ে দেওয়া, মহিলাদের ওপর জান্তব ও আক্রমণ, গণ ধর্ষণ বর্বরতার সব সীমা লংঘন করে গেছে। প্রায় সব সম্প্রদায়ের ৫০০০ এর কাছাকাছি বাড়ি এবং ২০০ বেশি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। ৪০০০০ এর বেশি মিলিটারি, আধা সেনা, সিআরপিএফ, বিএসএফ, সশস্ত্র সীমা বল এবং আসাম রাইফেলও এই হিংসা থামাতে পারছে না। এই লেখাটি যখন লিখছি, তখনো দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্দুকের লড়াইয়ের খবর আসছে। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে শহরের নিরাপদতম, হাই সিকিউরিটি অঞ্চলে থাকা মন্ত্রী, এমএলএ দের বাড়িও ছাড় পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। ঘৃণার আঁচ এতটাই তীব্র যে আধা সেনা বিশেষত আসাম রাইফেলস এবং রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেও সম্প্রদায় ভিত্তিক ভাগাভাগি স্পষ্ট হয়ে দেখা যাচ্ছে। এদিকে মেইতেই বা কুকি দুই সম্প্রদাযয়ের নানা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি আধুনিকতম অস্ত্র হাতে পেয়ে গেছে। যা মূলত তারা পুলিশ এবং আধা সেনাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। একটি তথ্যানুযায়ী ৩রা মে যেদিন প্রথম হিংসা শুরু হয় সেই দিনেই ১৬০০ টি অস্ত্র লুট হয়েছে। আবার অমিত শাহের সফরের আগে, ২৭ এবং ২৮ শে মে তারিখে ২৫৫৭ টি অস্ত্র লুট হয়েছে। এগুলো মূলত হয়েছে মেইতেই অধ্যুষিত জায়গায় অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্প এবং অস্ত্রাগার গুলো থেকে। অত্যাধুনিক অস্ত্র মধ্যে চুরি হয়েছে দূরপাল্লার বন্দুক, গ্রেনেড, মর্টার। আর এইসবের মধ্যে রাজ্য পুলিশের ডিজিপি, পি.ডোওঙ্গেলের অপসারণ নতুন বিতর্ক যোগ করেছে। কারণ তিনি জাতিতে কুকি। এর ফলে সরকারের মেইতেই প্রীতি আরো সামনে এসেছে। অপরদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা এবং জীবন জীবিকা বাঁচাতে রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছে কুকি এবং মেইতেই উভয় সম্প্রদায়ই। এই গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এল নিশিকান্ত সিং তার টুইটারে, “I am just an ordinary Indian from Manipur, living a retired life. The State is now ‘stateless’. Life and property can be destroyed anytime by anyone just like in Libya, Lebanon, Nigeria, Syria, etc. It appears Manipur has been left to stew in its own juice. Is anyone listening?”
দেশ বাঁচাতে দ্বেষের কারবারিদের হারাতেই হবে
এদিকে মোদির ডাইনে-বাঁয়ে থাকা কর্পোরেট মিডিয়া ভুলে গেছে মনিপুরের কথা। তারা আপ্রাণ ভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করছে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন কে। এদিকে জল নেই। খাবার নেই। অপুষ্টিতে ভুগছে এক বড় জনসংখ্যা।সরকার নিজেরাই মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যস্ত। ইন্টারনেট বন্ধ।ব্যাংক পরিষেবা বন্ধ। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা হাহুতাশ করছে। অসুস্থ মানুষ, প্রতিবন্ধীরা, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, সন্তান সম্ভবা মাদের অবস্থা শোচনীয়। এই সময়ে দরকার মনিপুর কে বাঁচানো। দেশের সকল ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল শক্তিকে এগিয়ে আসতেই হবে মনিপুর তথা দেশের সার্বভৌমিকতা ধর্মনিরপেক্ষতা গণতন্ত্র এবং দেশের সংবিধানকে বাঁচানোর জন্য। ব্যর্থ করতেই হবে আরএসএস বিজেপির divide and rule রাজ। শান্তি স্থাপনায় সকল পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্ধ করতে হবে দীর্ঘদিন ধরে চলা কারফিউ, ইন্টারনেট লকডাউন। বিনামূল্যে রেশন ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে। জ্বলে পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। যে পরিবারগুলো আত্মীয়-পরিজন কে হারিয়েছে তাদের জন্য ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। উদ্ধার করতে হবে লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্রগুলো। কড়াভাবে কুকি মেইতেই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে দমন করতে হবে। এইসব না করে এখন কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার ব্যস্ত এনআরসি করে মায়ানমার থেকে আগত বেআইনি অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে। যা আরো হিংসাকে প্রশ্রয় দেবে। তাই সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে এদেশ সমাজের শত্রু আরএসএস বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করতে। এর সাথে এদেরকে হাওয়া দেওয়া শক্তি কেউ চিহ্নিত করতে হবে। আর এইসবের মধ্যে ভুলবেন না। ২০১৭ সালে মণিপুরে কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দিয়ে বিজেপি সরকার গঠন করলে আস্থা ভোটে বিজেপিকে সমর্থন করে একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক টি. রবীন্দ্র সিং। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, “আমি এখনও তৃণমূলেই আছি…যারা সরকার গড়ছে তাদের আমি পার্টির হাইকম্যান্ডের অনুমতি নিয়েই সমর্থন করেছি।” হারাতে হবে এদেরকেও।
আমাদের ভরসা মানুষ। আজ গর্জে উঠেছে দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্ত। বামপন্থী সাংসদরা ইতিমধ্যেই মণিপুরে গেছেন। আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গোটা দেশে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সহ বামপন্থীরা প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। আমরা ফিরে পেতে চাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’র মণিপুর। যেখানে মানুষ আবার মাথা তুলে বাঁচবে।