চে’র হত্যাকারীর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন কিউবার চিকিৎসকরা। কিউবার সরকারি সংবাদ মাধ্যমের খবর, ১৯৬৭ সালে যিনি বিপ্লবী নেতা চে’কে হত্যা করেছিলেন, বলিভিয়াতে কর্মরত চিকিৎসকরা তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
তিনি মারিও টেরান, বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর একজন সার্জেন্ট। পূর্ব বলিভিয়ার নিম্নভূমিতে চে গুয়েভারা ধরা পড়ার পর তিনিই চে’কে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
৯ অক্টোবর, চে’র ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিউবার সংবাদমাধ্যম এই অস্ত্রপচারের খবর প্রকাশ্যে আনে।
সমগ্র লাতিনন আমেরিকা জুড়ে কিউবা বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা প্রকল্প চালাচ্ছিল। সেখানেই টেরানের চোখের ছানি বাদ দেন চিকিৎসকরা।
টেরানের চিকিৎসা হয় আগের বছর। তবে, বাবার চোখ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর ছেলে কিউবান চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলিভিয়ার এক সংবাদপত্রে লেখার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।
যেহেতু কিউবা দ্বীপরাষ্ট্র চে গুয়াভারা’র মৃত্যুর ৪০ বছরকে স্মরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, তাই কিউবার সংবাদমাধ্যম খবরটি তুলে রাখে সপ্তাহান্তের জন্য।
কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘গ্রানমা’ ঘোষণা করে: ‘মারিও টেরান, একটি স্বপ্ন, একটি ধারণা ধ্বংসের চেষ্টা করার চার দশক পরে, চে আরও একটি যুদ্ধ জয়ের জন্য ফিরে এসেছেন।’
‘এখন বৃদ্ধ মানুষটি, তিনি (টেরান) আরেকবার আকাশ এবং গাছপালার রঙের প্রশংসা করতে পারবেন, তাঁর নাতি-নাতনিদের হাসি উপভোগ করতে পারবেন এবং ফুটবল খেলা দেখতে পারবেন।’
—বিবিসি নিউস, ২ অক্টোবর, ২০০৭
যিনি বিখ্যাত বিপ্লবী ও গেরিলা নেতা এরনেস্তো চে গুয়েভারাকে হত্যার জন্য ট্রিগারে চাপ’টা দিয়েছিলেন, সেই বলিভিয়ার সৈনিক মারিও টেরান আশি বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন।
জখম অবস্থায়ই চে’কে হত্যার জন্য টেরানকে বেছে নেওয়া হয় ও নির্দেশ দেওয়া হয়। চে’র বয়স তখন ৩৯। আর তাঁকে হত্যার জন্য রাজধানী (লা পাজ) থেকে আসেন টেরান।
অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল গ্যারি প্রাদো বলেন ‘টেরান সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট হিসাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন।’ মাসভর চেষ্টা চালিয়ে যে দলটি গুয়েভারাকে ধরতে সক্ষম হয়, তার মাথা ছিলেন প্রাদো।
পরবর্তীতে টেরান সাংবাদিকদের বলেন ‘সেটা ছিল আমার জীবনের জঘন্যতম মুহূর্ত। আমি সামনে থেকে চে’কে দেখি, একদম সামনে থেকে। তাঁর চোখ তীব্র ভাবে জ্বলজ্বল করছিল। আমার মনে হচ্ছিল তিন যেন আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আর যখন তিনি আমার দিকে তাকালেন, আমি আছন্ন হয়ে পড়লাম…’
‘’তিনি আমায় বললেন ‘নিজেকে শান্ত করো, আর ঠিক করে নিশানা লাগাও! তুমি কেবল একজন মানুষকে মারতে যাচ্ছো!’ তখন আমি দরজার দিকে এক পা পিছিয়ে যাই, চোখ বুজি এবং গুলি চালাই।”
—দ্য গার্ডিয়ান, ১০ মার্চ, ২০২২
ভাষান্তর: কৃষ্ণায়ন ঘোষ