Tamanna Case

Crime in West Bengal: Analysis of a Decade

সৌপর্ণ অধিকারী

পিশাচের আবির্ভাব হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। আমরা, নাস্তিকরা, ভূত-প্রেত-পিশাচ-দৈত্য মানি না বটে, কিন্তু আশপাশে যা চলছে, তাতে না মেনেই বা উপায় কী! আর পিশাচসিদ্ধ একজন আছেন, তিনি ঊর্ধ্বাসনে আরোহণ করার পর থেকে এই পিশাচদের লেলিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। এই পিশাচরা এককালে তাঁর বশংবদ হয়ে কাজ করেছে। কিন্তু তাদের খিদে মেটানোর জন্য, রক্তের স্বাদ, নারীমাংসের স্বাদ, শিশুর লাশের স্বাদের জন্য তাদেরকে করে দিতে হয়েছে এক বিরাট বধ্যভূমি- তার নাম পশ্চিমবঙ্গ।

বেশ কিছু বছর আগে, আমরা সদ্য সদ্য কলেজ পাশ করে বেরিয়েছি তখন, বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হল- খেয়াল করুন, ঠিক কী আলোচনা-মাধ্যমে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে সমর্থ হয়েছিলেন বিরোধিরা, ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’, ‘জমি দখল’- তার মধ্যে খুব জরুরি দুটো পয়েন্ট ছিল। এই দুটো পয়েন্টের নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল বেশ কিছু মিথ্যের- হাজার হাজার শিশুকে হত্যা করে হলদি নদীর কুমীর দিয়ে খাইয়ে দেবার মত মিথ্যের, অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন এই মিথ্যে। কিন্তু নাটের গুরু জানতেন একটা অমোঘ সত্য, এই মিথ্যেগুলো বেশিদিন টিকিয়ে রাখা মুশকিল। গুল দেবার মধ্যে একটা নিষ্পাপ মজা থাকে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যায় সেটা থাকে না।

অতএব, নামিয়ে আনো চরম অত্যাচার। আসলে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল ক্ষমতাটা চেয়েছিল যে কারণে, সেই উদ্দেশ্যসাধনের জন্যও মানুষকে চুপ করানো দরকার। এই ক্ষমতা জাহিরের কৌশল হিসেবেই ধর্ষণকে বেছে নিয়েছিল এরা। ছোট ছেলেরা, দুষ্টুমি করে ফেলেছে/ধর্ষিতার চরিত্র, রেট নিয়ে প্রশ্ন তোলা- এগুলো আসলে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়। ওই যে বললাম, পিশাচবাহিনীকে পুষতে গেলে পিশাচবাহিনীর নরমাংসনারীমাংসশিশুমাংসের জোগান লাগে। এই তিনটে শব্দ দেখে একটু কেমন কেমন করছে আপনার? অভিনন্দন! আপনি এখনোও সুস্থ, আপনার মনুষ্যোচিত গুণাবলী এখনো আছে।

পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষিতা সুজেট জর্ডানকে মনে আছে? এক সন্তানের মা, সিঙ্গল মাদার, সুজেট ধর্ষিতা হয়েছিলেন বর্তমান এক তৃণমূল সাংসদের তৎকালীন প্রেমিকের দ্বারা। মনে আছে আপনাদের ঘটনাটা? সুজেট কোনদিন নিজের পরিচয় লুকোননি, সামনাসামনি এসে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মেনিঞ্জোএনসেফালাইটিস অকালেই কেড়ে নিয়েছে সুজেটকে, নাহলে হয়তো আমরা এই পিশাচবাহিনীর বিরুদ্ধে একজন জোয়ান অফ আর্ককে পেতাম।

তারপর তালপাটি খাল-বাগজোলা খাল-কেষ্টপুর খাল-মহানন্দা-তিস্তা-গঙ্গা-হুগলী-পদ্মা দিয়ে বহু জল বয়ে গেছে। মধ্যমগ্রাম, কামদুনি, কাটোয়া থেকে একদম ২০২৪ এর আর জি কর কিংবা জয়নগর-মজিলপুর- দেখুন এই ধরণের অপরাধের নৃশংসতা, বীভৎসা একদম সিঁড়ির ধাপের মত বেড়ে গেছে। আপনি-আমি-আমরা কিন্তু প্রত্যেকবারই রাস্তায় নেমেছি। কী হয়েছে? আমাদের নিজেদের অপরাধবোধ স্খালন করেছি আমরা, কিন্তু সমস্যাটাকে উদ্দেশ্য করিনি কখনোই। আমরা সিঁড়ির প্রত্যেক ধাপে এই ক্রমবর্ধমান বীভৎসতার সাথে অভ্যস্ত হতে হতে গেছি। আজকে তৃণমূল যদি একজন ব্যক্তি হত, তাকে ক্লাসিফাই করা হত একজন সিরিয়াল অপরাধী হিসেবে- অপরাধের এই escalation pattern এর ওপর নির্ভর করে।

তৃণমূলের অপরাধের ধরণ বুঝতে গেলে আগে এটা বোঝা জরুরি, যে তৃণমূল অপরাধকে ব্যবহার করে নিজের অধিকার জাহির করার জন্য। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করতে- প্রত্যেকবার নির্বাচনের সময় খেয়াল করে দেখুন, গত প্রায় ১৪ বছর ধরে, প্রায় গোটা পশ্চিমবঙ্গে হিংসার ঘটনা অসংখ্য, এক্ষেত্রেও দুষ্কৃতীদের সাহস এবং ঔদ্ধত্য ক্রমবর্ধমান। Stick and carrot- অর্থাৎ তুমি চুপচাপ বাপু তৃণমূলের সাথে থাকো, টাকাপয়সা চলে আসবে হাতে (ভুল করবেন না, ওয়েলফেয়ার স্কীমের টাকা নয়, চুরির টাকা), নইলে, ‘হুসেনের মেয়ে, ঝেড়ে দে’! এই অপরাধগুলো করার জন্যই তৃণমূলকে ওই পিশাচবাহিনী পুষতে হয়।

নয় বছরের শিশু তামান্না খাতুন বোমা নিয়ে খেলতো না। তৃণমূলের বোমার আঘাতে (কেন দুষ্কৃতী বললাম না? কারণ, এই বোমাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, ঐ ওপরে লিখেছি, ‘হুসেনের মেয়ে’, হুসেন সিপিআই-এম করেন, অতএব তার মেয়েকে, ‘ঝেড়ে দে’, এটা আগাপাশতলা রাজনৈতিক অপরাধ) ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবার পর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ দুপুর ২:৩৬ এ এক্স হ্যান্ডলে লিখলো, বোমার বিস্ফোরণে মৃত্যু। ঠিক দুপুর ২:৪৬ এ সেই পুলিশই একই এক্স হ্যান্ডলে লিখলো, একই জিনিস, শুধু বোমা শব্দটা বাদ। আসলে বোমা শব্দটা এতটাই রাজনৈতিক, তার অভিঘাত আরক্ষা ভবন-ভবানী ভবন অবধি এসে পড়তে পারে।

এই অপরাধটা ওই প্রথম যে ধরণের অপরাধের কথা লিখেছিলাম, ধর্ষণ-খুনের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রদর্শন আর একেবারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ক্ষমতা প্রদর্শনের মাঝখানে সেতুবন্ধনের কাজ করেছে। যে কারণে কলকাতার মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত বৃত্তের নাগরিক মননেও ঢিল পড়েছে। আর জি কর আন্দোলনের সময় পড়েছিল, তাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন, এবারেও নামলেন, নামবেন।

এই ঘটনাটার অব্যবহিত পরেই কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল। অদ্ভুত বলছি, কারণ আপনাদের অদ্ভুত লাগতে পারে। আজকে কলেজে কলেজে ইউনিয়ন নির্বাচন হয় না বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল, ফলে সেই যে উদ্ভ্রান্ত আদিম যুগে যেসব তৃণমূলী দাদারা কলেজের মসীহা হয়ে উঠেছিলেন, তাঁদের প্রতাপ এখনোও বর্তমান। সেইরকমই এক মূর্তিমান মনোজিৎ মিশ্র তাঁর দুই সাঙ্গপাঙ্গকে সাথে নিয়ে ধর্ষণ করলেন এক জুনিয়র ছাত্রীকে। ছাত্রীও তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই নেত্রী। ছাত্রীর দোষ, মনোজিৎ ‘দাদা’ তাকে বিয়ের/সহবাসের প্রস্তাব দেয়, বিনিময়ে তাকে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা করার কথা বলে। ছাত্রী প্রস্তাব নাকচ করেন তাঁর প্রেমিক আছে জানিয়ে। কিন্তু মনোজিৎ ‘দাদা’র (এমএম) ভঙ্গুর পুরুষ আত্মপরিচয়ে আঘাত লেগে যায়। তিনি ধর্ষণ করেন।

খেয়াল করুন, এই অপরাধের ধরণটা কিন্তু বিনিময়কেন্দ্রিক, transactional। নেতা তার জুনিয়রের প্রতি (ওরা এরকমভাবেই দেখে) যৌন আকৃষ্ট, নেতার কাছে কারেন্সি, বিনিময় মাধ্যম হচ্ছে ক্ষমতা (জেনারেল সেক্রেটারি)। সে সেই ক্ষমতার কারেন্সি ব্যবহার করে পেতে চাইছে তার অভীষ্ট যৌন সুখ। নির্যাতিতা নেতাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। অর্থাৎ নির্যাতিতার ফেরানোর জোর যে নেতার কারেন্সির থেকে বেশি, এইটা নেতার ইগোয় লাগছে। তিনি ধরেই নিচ্ছেন, তাঁর ক্ষমতা আছে, তাঁর দল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায়, অতএব তিনি ধর্ষণ করলে কারোর সাহস হবে না তাঁকে শাস্তি দেবার। আশপাশের ঘটনাক্রমও তাঁর এই ধারণা ভাঙতে যে কিছু করেনি, বলাই বাহুল্য।

খেয়াল করুন, পশ্চিমবঙ্গে যখনই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, সরকারি রেট চার্ট মেনে (মুখ্যমন্ত্রী তো বেসিক্যালি রেটই ঠিক করে দিয়েছেন নির্যাতনের) মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন একটা বিরাট অঙ্কের টাকা। তারপরেই অদ্ভুত ভাবে দেখা যায়, বিষয়গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া ক্ষীণতর হতে হতে বিলুপ্ত হয়ে যায়। আচ্ছা, আমি যদি বলি, ওই টাকাটা আসলে মূল্য- কীসের? ধর্ষিতার নয়, পিশাচবাহিনীর পিশাচদের খিদের, খুব ভুল হবে?

এবার একটা প্রশ্ন, আপনি এতদূর এসে করতেই পারেন- এদের পিশাচ কেন বলছেন?

দেখুন, রাস্তায় আপনার কাউকে দেখে ভালো লাগতেই পারে, কিন্তু তাহলেই কি আপনি তাকে সহবাসের প্রস্তাব দিতে যান? বা ধর্ষণ করতে যান? পটকা ফাটান যখন (পেটো নয়, সকেট নয়, আমি পটকা দিয়েই উদাহরণ দিই), আপনি সুস্থ মস্তিষ্কে আপনার চরমতম শত্রুর শিশু সন্তানের বুকে ছুঁড়ে মারতে পারবেন?

পারবেন না। কেন বলুন তো? এটা আপনার মস্তিষ্কের স্নায়ু, স্নায়ুর গঠন এবং রসায়নের মধ্যেই আছে। মনস্তত্ত্ববিদরা মনের বিকৃতি, মনের অস্বাভাবিকতার অংশটা অনেক বিশদে বলতে পারবেন, জীববিজ্ঞানের, স্নায়ুবিজ্ঞানের দিকটা আমি বলতে পারি।

আমাদের মস্তিষ্কের অনেকগুলো অংশের একটা সমন্বয় কাজ করে আমাদের আটকানোর জন্য, কাউকে হত্যা করা থেকে, ধর্ষণ করা থেকে আটকাতেও এই অংশগুলো কাজ করে- শরীরস্থানগত বিশদে না গিয়েও এইটুকু বলা যায়, এই অংশগুলোর অস্বাভাবিকত্বের সাথে ধর্ষণ জাতীয় অপরাধের একটা যোগাযোগ থাকা অসম্ভব নয়।

২০১৬ সালের বিএমসি নিউরোসায়েন্স জার্নালে চেন এবং অন্যান্যরা একটা চেষ্টা করেছেন ইমেজিং এর মাধ্যমে এই ধরণের অপরাধীদের মস্তিষ্কের গঠনের অস্বাভাবিকত্ব দেখার জন্য। তাঁরা কিছু রেজাল্ট পেয়েওছেন এই ইনহিবিটরি সেন্টার, অর্থাৎ মস্তিষ্কের যে অংশ আমাদের বারণ করে, সেই অংশের গঠনগত অস্বাভাবিকত্বে।

মানুষের মস্তিষ্কের গঠনের পেছনে জিনের প্রভাব থাকে, এটা আপনারা জানেন। এবার ক্লাসিক্যাল জেনেটিক্স থেকে যেরকম আমরা জানি, যে বাবা-মায়ের জিনের গুণাবলী সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হয় সংখ্যাতত্ত্বের নিয়ম মেনে, ঠিক সেরকমই আরেকধরণের বৈশিষ্ট্য থাকে (নন-ক্লাসিক্যাল/নন-মেন্ডেলিয়ান), যেগুলোকে বলে এপিজেনেটিক বৈশিষ্ট্য। এপি অর্থাৎ ওপর- জিনের ওপরে বেশ কিছু কেমিক্যাল পরিবর্তন সাধিত হয় আমাদের খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ, অভিজ্ঞতা এসবের দ্বারা (মিথাইলেশন/অ্যাসিটাইলেশন/ডিঅ্যাসিটাইলেশন প্রভৃতি) আপনি যদি জিনকে মনে করেন হার্মোনিয়াম। তাহলে একটা সুর বানাতে গেলে নির্দিষ্ট যে স্বর পরপর বাজে, সেই ক্রম ঠিক করে দেয় এই এপিজেনেটিক্স। আপনি কোন সুর বাজাবেন, এটা যেমন আপনার শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল (নিশ্চয়ই সদ্য পিয়ানো শিখছে যে, সে ভি বালসারার মত বাজাবে না), এই এপিজেনেটিক মডিফিকেশনসও সেরকম।

বিভিন্ন স্নায়ুবৈচিত্র্যে এই এপিজেনেটিক সিগনেচার পাওয়া যায়। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে যেরকম এই যোগাযোগ খুব স্পষ্ট। কিন্তু আমরা অপরাধের সাথে এই যোগাযোগের ব্যাকরণটা এখনো স্পষ্টভাবে জানি না- অন্ততঃ যেটুকু জানা, তাতে নীতি তৈরী করা দূরস্থান। তবে, এখনো অবধি পাওয়া প্রমাণের ওপর দাঁড়িয়ে এটুকু বলা যায় খাবার, পরিবেশ, অভিভাবকদের আচরণ, হিংসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার সুযোগ- সবকিছুর ওপরেই একটা শিশুর সুস্থ, স্বাভাবিক বিকাশ নির্ভর করে। যে শিশুর জন্ম হচ্ছে কামানের গোলার আওয়াজে, আপনার মনে হয়, তার মস্তিষ্ক খুব আরামে থাকবে ভবিষ্যতে?

আসলে, মস্তিষ্ক, মস্তিষ্কের গঠন, তার কোষ-কলা, তার রসায়ন, তার স্নায়ুতন্ত্র এবং তদজনিত মন, মনের চলন- এগুলোকে দুম করে দাগিয়ে দেওয়াটা কঠিন। অপরাধের সাথে স্নায়ুতন্ত্র-জেনেটিক্স-এপিজেনেটিক্সের সংযোগ নিয়ে গবেষণা অত্যন্ত জরুরি এবং ইন্টারেস্টিং হলেও এই গবেষণা খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়। মানুষ জাতির মধ্যে চিন্তাভাবনার বৈচিত্র্য, বহু বর্ণিল সমাজের যে উৎসব, তাকে উদযাপন করতে গেলে, আমাকে এই বৈচিত্র্য স্বীকার করতেই হবে। আজকে যারা ধর্মের নামে দাগিয়ে দিতে চায়, লিঙ্গের নামে পীড়ন চালায়- তারা কিন্তু এই বৈজ্ঞানিক তথ্যটাকেই অস্বীকার করে।

কিন্তু অপরাধ, অপরাধই। অপরাধ কোন স্নায়ুবৈচিত্র্যের (neurodivergence) কথা বলে পার পাবে না। কলেজছাত্রীর ধর্ষণ, তামান্নার খুন এগুলোর ছত্রে ছত্রে যেটা উঠে এসেছে, সেটা হচ্ছে ঘৃণা, সংখ্যালঘুর প্রতি ঘৃণা। তামান্না শিশু, পরিবারগতভাবে ধর্মে সংখ্যালঘু, অতএব তাকে ঝেড়ে দেওয়াই যায়। ল’ কলেজের ছাত্রীটি নারী (তৃণমূলের লোকেরা অবশ্য এত সুসভ্য ভাষা ব্যবহার করে না), জুনিয়র- তাকে ধর্ষণ করাই যায়।

এই ধরণের অপরাধের মোকাবিলার জন্য পুলিশকে সক্রিয় হতে হবে-বিচারব্যবস্থাকে দ্রুত এবং এফেক্টিভ হতে হবে, বিচারের সুযোগ যাতে দরিদ্রতম অংশ পর্যন্ত পৌঁছোয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে- এগুলো আমরা জানিই। এর সাথে আমাদের দেশের দরিদ্রতম অংশের শিশু যেন অভুক্ত না থাকে, বিনা চিকিৎসায় যাতে মরে না যায়, তার অভিভাবকদের যাতে সংস্থান দেওয়া যায় সুস্থ জীবনযাপনের- এই দাবিগুলো ভারতবর্ষে বামপন্থীরাই করে এসেছে। সোভিয়েত উত্তর জমানায় যখন নব্য উদারনীতিবাদী মিডিয়া এবং তাদের উলঙ্গ চামচারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে, ‘সব কিছুর দাম হয়, everything has a price’, সেখানে দাঁড়িয়ে সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দলগুলো চিৎকার করে বলছে খাদ্য-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কাজের দাবি, রোটি-কাপড়া-মকান-বিজলী-সড়ক-পানি। এগুলো মৌলিক অধিকার।

আমরা, কমিউনিস্টরা কোনও অপরাধকে কখনো কোনওদিন আলাদা কোন আধিভৌতিক, পরাবাস্তবতা হিসেবে দেখি না।

আমরা দেখি আর্থসামাজিক কাঠামোর একটা একেকটা প্রকাশ হিসাবে।

অলমিতি।

Spread the word

Leave a Reply