ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর কেন্দ্রীয় কমিটি নয়াদিল্লিতে ৩-৫, নভেম্বর ২০২৪ বৈঠক করে নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে:
নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে
ঝাড়খণ্ড নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিজেপি নেতাদের দ্বারা সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা দেওয়া আদর্শ আচরণবিধি কোডের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলকে কমিশন কর্তৃক জারি করা গাইডলাইনগুলির স্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্যদের “ঘুসপেটিয়া” বা অনুপ্রবেশকারী হিসাবে সম্বোধন করেছেন। তিনি তার সাম্প্রদায়িক এবং ঘৃণা ভরা বক্তৃতায় এতদূর চলে গেছেন যে এই অভিযোগ করতে পেরেছেন যে “এই লোকেরা আপনাদের (আদিবাসিদের) রুটি এবং কন্যাদের কেড়ে নিচ্ছে”। এর সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা হ’ল সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে একটি বিভাজন সৃষ্টি করে ভোট জোগাড় করা। এটি নিন্দনীয় যে কমিশন এই জাতীয় বক্তৃতাগুলির ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রনোদিত ভাবে কোন ভূমিকা নেয়নি। মনোভাবটা এমন যেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি একইরকম বক্তৃতা করেছেন তারা আইনের ঊর্ধ্বে। আমরা দাবি করি যে প্রধানমন্ত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি অন্যান্য বিজেপি নেতাদের সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করা দরকার। এদের মধ্যে রয়েছে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিব রাজ চৌহান।
মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন
মহারাষ্ট্রে, সিপিআই (এম) মহা বিকাশ আঘাড়ির সাথে আসন সমঝোতার অংশ হিসাবে দুটি আসনে লড়াই করছে। এগুলি দুটিই উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসন: থানে-পালঘর জেলার দাহানু (এসটি), যেখানে প্রার্থী বর্তমান বিধায়ক বিনোদ নিকোল। দ্বিতীয় আসনটি নাসিক জেলার কালওয়ান (এসটি) – যেখানে প্রার্থী পাঁচবারের বিধায়ক এবং গত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী জে.পি.গাভিট।এছাড়াও, সিপিআই (এম) বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে তৃতীয় একটি আসনে,যেটি হল সোলাপুর শহর কেন্দ্রীয় আসন যেখানে প্রার্থী প্রবীণ নেতা এবং তিনবারের বিধায়ক নরসায়্যা অ্যাডাম।
ঝাড়খণ্ডে, জেএমএম যারা ইন্ডিয়া ব্লকের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা কোনও উদ্যোগ নেয়নি সিপিআই (এম) এর সাথে আলোচনার জন্য, তাই পার্টি রাজ্যের নয়টি আসন লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার মধ্যে পাঁচটি তফশিলী উপজাতি আসন এবং একটি তফশিলী জাতি আসন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যান্য আসনে, দল বিজেপি এবং তার সহযোগীদের পরাজিত করার জন্য সেরা প্রার্থীকে সমর্থন করবে।
মনরেগা কর্মীদের অধিকারের উপর আক্রমণ
ডিজিটালাইজেশনের নামে, গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের উপর সর্বাত্মক আক্রমণ নামানো হয়েছে যেমনটি মনরেগা কর্মীদের ভয়াবহ দুর্দশায় পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক একটি বিস্তারিত গবেষণায় দেখা গেছে যে গত দুই বছরে আট কোটি নথীভুক্ত কর্মীদের নাম বাতিল করা হয়েছে আইন লঙ্ঘন করে এবং কাজের সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই বছরের বাজেটে, জিডিপির শতাংশ হিসাবে মনরেগার জন্য বরাদ্দকে ভয়াবহভাবে ছাটাই করা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দের ছাটাইয়ের সাথে এই প্রযুক্তি কেন্দ্রিক পদ্ধতির প্রয়োগ গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলির আইনী অধিকারের উপর আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয় যা বছরে ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টিকে খুন্ন করছে। এই বছরের শুরুর দিকে সংসদের স্থায়ী কমিটি বছরে কমপক্ষে ১৫০ দিন কর্ম দিবস করার এবং বাজেটের বরাদ্দ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সুপারিশগুলি বাস্তবায়ন করা উচিত।
কৃষিক্ষেত্রে সারের ঘাটতি
পর্যাপ্ত ডিএপি মজুত না থাকায় রবি মরসুমের চাষের পরিকল্পনায় কৃষকদের জন্য একটি বিশাল ঘাটতি ও সংকট তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৪.৫ লাখ টন আমদানির বিপরীতে, এই বছর একই সময়ের মধ্যে মাত্র ১৯.৭ লাখ টন আমদানি করা হয়েছে। দেশীয় উৎপাদনও কমেছে। ১ অক্টোবর,২০২৪-এ সুপারিশকৃত ২৭-৩০ লক্ষ টনের বিপরীতে মাত্র ১৫-১৬ লাখ টন মজুত ছিল; যেখানে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আনুমানিক চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ টন।
কৃষকরা ডিএপি এবং ইউরিয়া, এমওপি ইত্যাদির ঘাটতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তাদের ডিএপি-র সরকার নির্ধারিত মূল্য অর্থাৎ প্রতি ৫০-কেজি ব্যাগ ১,৩৫০ টাকা থেকে প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। ব্যর্থতা মেনে নিয়ে জরুরী সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে, সরকার অস্বীকার করছে এবং ন্যানো-ইউরিয়া এবং ন্যানো-ডিএপি নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত রয়েছে যেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
ভারতে ইউরিয়া এবং ডিএপি-এর নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। প্রধান সমস্যা হ’ল নিয়ন্ত্রণমুক্তির কারণে সারের দাম বৃদ্ধি এবং পাশাপাশি উৎপাদন মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে শুধুমাত্র ইউরিয়ার দাম নিয়ন্ত্রণ হয় এবং এর ফলে অন্যান্য সারের তুলনায় ইউরিয়ার ব্যবহার বেশি হচ্ছে।
পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি
কেন্দ্রীয় কমিটি ২০২২ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত শেষ পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক-কৌশলগত লাইন বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি রাজনৈতিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন আলোচনা করে এবং গ্রহণ করে। এটির উপর ভিত্তি করেই মাদুরাইতে ২ থেকে ৬ এপ্রিল,২০২৫ এর মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য ২৪ তম পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব তৈরি হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টি কংগ্রেসের জন্য রাজ্যভিত্তিক প্রতিনিধিদের কোটাও চূড়ান্ত করেছে যারা আসন্ন রাজ্য সম্মেলনের দ্বারা নির্বাচিত হবে।