ফোন নম্বরটা নেওয়াছিল অনেক দিন আগে। কলকাতায় SFI এর আহ্বানে এসেছিলেন কোর্ট খোলা থাকায় যেতে পারিনি। আজ এভাবে ওনার সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। সকালে উঠে দু একটা অনলাইন মামলা করে মাদ্রাজ হাইকোর্টে যাবো বলে প্রস্তুতি নিতে নিতেই মেসেজ করেছিলাম কমরেড জাস্টিসকে, এভাবে উনি ডেকে নেবেন বুঝতেই পারিনি। আনন্দে উত্তেজনায় দু একজন বন্ধুকে জানিয়েও দিয়েছিলাম ব্যাপারটা। আফটার অল ‘দ্য অনারেবল জাস্টিস’বলে কথা।
না। আসলে আমারই বোঝার ভুল ছিল কে চান্দ্রু’তো অনারেবল হবার জন্য জাস্টিস হননি। কমরেড হবার জন্য জাস্টিস হয়েছিলেন। আমাদের কাছে মানে রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ বিচারব্যবস্থার অলিন্দে কাজ করে যারা জনগনের সামান্য রিলিফের কথা ভাবি তাদের কাছে এই নামটি শুধু রিয়েল অনুপ্রেরণারই নয় আরো ভালো করে বললে রিয়েলিটির আয়না।
যে আয়নায় আমাদের বিচারব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছেন জাস্টিস ভি আর কৃষ্ণ আইয়ার। যে রিয়েলিটির আয়নায় ভারতের সংবিধানকে প্রকৃত ন্যায়ের চালিকা শক্তিতে পরিণত করার ঘোষনা করেছিলেন আমাদের সংবিধানের প্রণেতারা। সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক,ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্রের লক্ষ্যে এগিয়ে চলা ভারতের লক্ষ্যে।
তাঁর দপ্তরের সম্পদ বলতে শুধুই হাজার হাজার বই, জাস্টিস কৃষ্ণ আইয়ারের ছবি, জালিয়ানওয়ালাবাগের গাছের পাতা, আর আইনের ছাত্র-ছাত্রী, ইন্টার্নদের বসার জায়গা। তাঁর অবসরকালীন কাজ বলতে ঘরে বাইরে ছাত্র পড়ানো, প্রায় প্রতিদিনই নানান প্রতিবাদে সভায়, মিছিলে যাওয়া।
এ সময়টায় সাধারণত প্রাক্তন বিচারপতিরা হয় আরবিট্রেশন নয় কমিশন করে থাকেন। তার জুরিষ্ট হলেন মার্কস, লেনিন, আম্বেদকার, কৃষ্ণ আইয়ার। তার জীবনের আন্দোলনের গতিপথ পার্টি হোলটাইমার থেকে হাইকোর্টের উকিল, জজ। তার গতিপথে এস এফ আই, সি আই টি ইউ, এ আই এল ইউ, হাইকোর্ট এসেছে। তার কাছে এখনো কলকাতার বিমান’দা ডাকলে সেটা খুবই কাছের একটা ডাক। তবু তিনি বিচারক। তিনি মতাদর্শ নিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার এই স্তম্ভে ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ। একাধারে এজিটেশন, প্রোপাগ্যান্ডা অন্যদিকে প্র্যাকটিসের মধ্যে থাকা একজন মানুষ।
বললেন এমার্জেন্সির সময় কলকাতার শহিদ মিনার ময়দানে বক্তৃতা দিয়েছেন। নরনারায়ন গুপ্তু, হাসিম আব্দুল হালিম, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়দের স্নেহ পেয়েছেন। বিকাশ ভট্টাচার্য্যদের বন্ধু হিসাবে পেয়েছেন। সব মিলিয়ে মতাদর্শের জোরে যা পেয়েছেন তা দিয়েই গড়ে তুলেছেন বিকল্প। আদালতের গেট মিটিং ও সওয়াল একসাথেই করেছেন। আম্বেদকারকে প্রয়োগ করেছেন রায়দানের ক্ষেত্রে, দলিত, বঞ্চিত, গরীব মানুষ, মহিলা, শিশুদের জন্য ন্যায় নিশ্চিত করতে। বলতে বলতেই আমাকে দিলেন নিজের লেখা পাঁচ পাঁচটা বই-
১.জয় ভীমঃ মাই জাজমেন্ট ইন দ্যা লাইট অফ আম্বেদকার
২.জাস্টিস কৃষ্ণ আইয়ার এন্ড লেবার ল’স।
৩.লিস্ন টু মাই কেস! হোয়েন উইমেন এপ্রোচ দ্যা কোর্ট অফ তামিলনাড়ু
৪.লীগ্যাল প্রোফেশন এন্ড এপয়েন্টমেন্ট অফ জাজেস
৫.ফর হুম দ্য বেল টোলস
সই করে দিলেন এবার শুরু করলেন তার সেই ঐতিহাসিক মামলার কথা, লড়াই, অনুসন্ধান ও যুক্তির মধ্যদিয়ে দীর্ঘ সময়ের রাজাকান্নু কেসের কাহিনী। যে কাহিনী জয় ভীম ছবির দৌলতে সকলেরই জানা। তবে সে কাহিনীর মধেও ছিল তাঁকে মানে দলিতের আইনজীবীকে ঘুষ দিয়ে কিনে নেবার চেষ্টা ও তার প্রত্যাখ্যানের সাহসী গল্প। দীর্ঘ ৪৫ মিনিটের সাক্ষাৎকার একটু একটু করে লিখব।
আপাতত এটুকুই থাক। জয়ভীম আসলে শুধুই কমরেড চান্দ্রুর গল্প নয়। এ গল্প এ দেশের অসংখ্য জনস্বার্থে কাজ করা অজস্র আইনজীবীর সংগ্রামের গল্প। এ গল্পে হিরো থাকে সুপার হিরো থাকেনা। এ গল্পে বাধা ডিঙোতে ডিঙোতে এগোনো থাকে……
ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার জেদ থাকে।
শোষণ মুক্তি ঘটানোর জেহাদ থাকে।
“ওই যে বইগুলো ওগুলো খুললেই এমন হাজার হাজার গল্প পাওয়া যায়, যে গল্প মানুষের” কিন্তু সে গল্প অনুচ্চারিত থাকে……
তাকে উচ্চারিত করানোটাও আমাদের কাজ। জাস্টিস কমরেডরা সেটাই শিখিয়েছেন, শেখাচ্ছেন।
কদিন আগে উড়িষ্যা হাইকোর্টের প্রধাণ বিচারপতি মুরলীধর একটি সেমিনারে বলেছিলেন- “You can imagine the contribution which leftist lawyers, lawyers with leftist leanings, made towards the development of constitutional law. This is a matter for research, I earnestly plead with the law researchers who are listening in. The contribution of leftist lawyers, lawyers who shared leftist ideologies, to the development of constitutional law has not been written about enough”।
না এটা দুঃখের না।
এটা একটা নতুন দিকের বামপন্থার জুডিশিয়াল পলিটিক্সের অস্ত্রের।
যে অস্ত্র কমরেড বৃন্দা কারাতের হাতে থাকে গান্ধীর ভারত, আম্বেদকারের ভারতকে বুলডোজারের সামনে থেকে রক্ষা করার সময়।
হয়ত ক্ষুদ্র তবু এ অস্ত্রও শূণ্যকে পূর্ণ করার কাজে লাগে। লাগবেও।