বিমান, রেল এবং জাহাজে।
এই মুহূর্তে বিশ্বের ৮৯টি দেশে করোনা মোকাবিলায় জরুরি সামগ্রী পাঠাচ্ছে চীন।
এতে যেমন রয়েছে মাস্ক, সুরক্ষা পোশাক, সুরক্ষা চশমা, ফোরহেড থার্মোমিটার, তেমনই আছে ভেন্টিলেটর।
চীনের স্বাস্থ্যকর্মী এবং বিমানবোঝাই সামগ্রী ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে এশিয়ার ২৮টি দেশে, আফ্রিকার ২৬টি, ইউরোপের ১৬টি, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০টি এবং আমেরিকার ৯টি দেশে।
১৯৪৯, চীন বিপ্লবের পর এটিই সবচেয়ে নিবিড় এবং ব্যাপকতম জরুরি মানবিক সংহতি-সহায়তা। (চায়না ডেইলি, ২৪ মার্চ)।
চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে এখনও পর্যন্ত পাঠিয়েছে ২২টি এয়ারলিফট।
এখানেই চীনের ‘সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনার’ উৎকর্ষ। কারো সঙ্গত বিতর্ক থাকতেই পারে। থাকতে পারে চীনে সমাজতন্ত্র নির্মাণ নিয়ে ইতিবাচক, নেতিবাচক বা মিশ্র বক্তব্য। থাকা উচিতও। যদিও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নিজেরই বক্তব্য, তারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ‘প্রাথমিক পর্যায়ে’ রয়েছে। এমনকি ট্রটস্কিবাদী, যাঁরা একসময় ‘সোভিয়েত, পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতন আর চীনে অধঃপতন’ বলতেন, তাঁরাও আজকের বেজিঙের ভূমিকায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ধনী অর্থনীতি। করোনার লড়াইয়ে বেআব্রু নয়া উদার অর্থনীতির তুমুল বিশৃঙ্খল চেহারা। বাকি বিশ্বের দায়িত্ব পালন তো দূরঅস্ত। নিজের দেশেই হিমশিম খাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিহতের সংখ্যা এখন ছাপিয়ে গিয়েছে চীনকে। যেখানে এই নতুন রোগ প্রথম দেখা যায় চীনে, যেখানে চীনের জনসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় চারগুণ।
জরুরি সরবরাহের জন্য মার্কিন মুনাফাখোর হেলথ কর্পোরেশন এবং সরকারি সংস্থাগুলি প্রায় প্রতিটি স্তরে এখন মুখ ঘুরিয়েছে বেজিঙের দিকে। মার্কিন সরকার, মার্কিন প্রশাসনের নাকাল অবস্থা দেখে গভর্নর, মেয়র, চ্যারিটেবেল সংস্থা, এনজিও— সবাই তাকিয়ে চীনের দিকে। প্রত্যেকেই বরাত দিচ্ছে চীনকে।
তাকান কিউবার দিকে। ১ কোটি ১০ লক্ষের একরত্তি দ্বীপরাষ্ট্র। নিজে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে। অথচ, কিউবা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যে সংখ্যায় ডাক্তার পাঠিয়েছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পর্যন্ত পাঠায়নি।
২৯ মার্চ, ৮০ টন চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে চীন থেকে আসা কর্মাশিয়াল বিমান নামে নিউ ইয়র্কে। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি এবং কানেকটিকাটের জন্য তারা পৌছে দিয়েছে ১,৩০,০০০ এন-৯৫ মাস্ক। সঙ্গে ১৮ লক্ষ ফেসমাস্ক এবং পোশাক, ১ কোটি দস্তানা এবং হাজারো থার্মোমিটার। একইরকম সামগ্রী নিয়ে আরও দু’টি বিমান আসবে আগামী দু’দিনে শিকাগো এবং ক্লিভল্যান্ডের জন্য। (নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৯ মার্চ)।
এটাই চীন। এটাই কিউবা।
করোনাযুদ্ধে বিশ্বের পাশে ট্রাম্প। শিরোনাম দেশী-বিদেশী সংবাদমাধ্যমে। যদিও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট-র মাধ্যমে বরাদ্দ করেছে মাত্র ১৭ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার। এই সহায়তায় ৬৪টি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত-ও। দিল্লির জন্য মার্কিন বরাদ্দ হলো ২৯ লক্ষ ডলার। ঘটনা হলো, ট্রাম্পের এই ১৭ কোটি ডলারের সহায়তা আসলে, পেন্টাগন প্রতি ২ ঘণ্টায় যা খরচ করে, প্রায় তার সমান। পেন্টাগনের বাজেট মানে দিনে ২০০ কোটি ডলার, ঘণ্টায় ৮ কোটি ডলার!
এখন প্রশ্ন: কীভাবে চীন বাগে আনল করোনাভাইরাসকে? কীভাবে এখন তারা ব্যাপক আকারে সহায়তা করছে বিশ্বকে?
সহজ উত্তর: সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা এবং মেডিকেল শিল্প-সহ বুনিয়াদি শিল্পে বৃহৎ আকারের যৌথ মালিকানাই নির্ণায়ক।