একশো দিনের কাজের প্রকল্প(রেগা) বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ৬০,০০০কোটি টাকা। যা গতবছরে ছিল ৭৩,০০০কোটি টাকা। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১-২২-এ এই প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৯৮,৪৬৮কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার রেগায় বাজেট বরাদ্দ কমানো হয়েছে ১৭.৮০%। ২০২১-২২-র তুলনায় তা আরও বেশি — ৩৯.০৬%!
অর্থাৎ একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ কমানোর পথেই রইলেন নরেন্দ্র মোদী।
সংখ্যালঘু উন্নয়নেও ব্যাপক বরাদ্দ ছাঁটাই হয়েছে। গত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮১০কোটি টাকা। এবার সেই বরাদ্দ নেমে এসেছে ৬১০কোটি টাকায়। কমেছে ৬৬.২৯%।
গ্রামীণ সড়ক যোজনায় বরাদ্দ একটি টাকাও বাড়ানো হয়নি। যা ছিল তাই। অর্থাৎ ১৯,০০০কোটি টাকাই রয়েছে।
কমানো হয়েছে শস্য বীমা যোজনায় বরাদ্দও। গত আর্থিক বছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৫,৫০০কোটি টাকা। তা এবারে করা হয়েছে ১৩,৬২৫ কোটি টাকা।
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের দুটি ক্ষেত্রেই বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এফসিআইকে ভর্তুকির পরিমাণ গত বাজেটে ছিল ১,৪৫,৯২০ কোটি টাকা। তা এবার নামিয়ে আনা হয়েছে ১,৩৭,২০৭ কোটি টাকায়। এখানে আশ্চর্যজনক হলো, বাজেটের সংশোধিত হিসাবে বলা হয়েছে চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত এই খাতে সরকার দিয়েছে ২,১৪,৬৯৬ কোটি টাকা!
একই জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুসারে খাদ্যশস্য সংগ্রহে ভর্তুকির পরিমাণও কমানো হয়েছে। গত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৬০,৫৬১কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেট বলছে খরচ হতে পারে ৭২,২৮৩ কোটি টাকা। অথচ এবারের বাজেটে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫৯,৭৯৩কোটি টাকা।
সংখ্যালঘু উন্নয়নে ব্যপক বরাদ্দ ছাঁটাই করল কেন্দ্রীয় সরকার।
এবারের বাজেটে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ করেছে ৩০৯৭.৬০ কোটি টাকা। গত বাজেটে এই ক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল ৫০২০.৫০ কোটি টাকা। যদিও সেই বরাদ্দের অনেকটাই খরচ করতে সরকার পারবে না, এমন ইঙ্গিতই রয়েছে বাজেটে। দেখা যাচ্ছে ২০২২-২৩-এর বাজেটের সংশোধিত অংশ(রিভাইজ্ড এস্টিমেট) জানাচ্ছে, সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রক ২৬১২.৬৬ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে জানাচ্ছে।
সংখ্যালঘু উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রি ম্যাট্রিক স্কলারশিপ, মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ, ফ্রি কোচিং, মাদ্রাসা শিক্ষা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্পে দেদার বরাদ্দ কমানো হয়েছে। উদাহরণ হতে পারে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্ষেত্র। গতবছর বরাদ্দ ছিল ২৩৫.৪১ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দ? ০.১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০লক্ষ টাকা। মাদ্রাসা শিক্ষার বিকাশে গতবারের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৬০ কোটি টাকা। এবার মাদ্রাসাগুলির মাধ্যে শিক্ষার উদ্যোগে জন্য বরাদ্দ মাত্র ১০ কোটি।
প্রথম ইউপিএ সরকারের সময়কালে চালু হয়েছিল মাল্টি সেক্টোরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম(এমএসডিপি)। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, ২০১৭ থেকে এই প্রকল্পটির নাম বদলে হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কার্যক্রম। সেই প্রকল্পে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে নানা ক্ষেত্রে টাকা খরচ হয়। এই প্রকল্পে গতবারের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৬৫০কোটি টাকা। সংশোধিত হিসাবে জানানো হয়েছে যে, তার মধ্যে ৫০০কোটি টাকা খরচ হয়েছে এখনও পর্যন্ত। এবারের বাজেটে বরাদ্দ কত? ৬০০ কোটি টাকা! গতবারের বাজেটের অর্দ্ধেকেরও কম।
দেশে ২০০৬ থেকে ২০১৩-র মধ্যে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের জন্য বাজেট বরাদ্দ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৪৪ কোটি থেকে শুরু করে তা ওই আট বছরে ৩৫৩১কোটি টাকায় পৌঁছোয়। তারপর থেকে এই বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির হার কমতে থাকতে। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত এই আট বছরে সংখ্যালঘুদের জন্য বাজেট ৩৫১১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে মাত্র ৫০২০.৫০ কোটি টাকা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে এই বৃদ্ধি একদমই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এবার তা আরও কমে হয়েছে ৩০৯৭.৬০কোটি টাকা। বরাদ্দ ছাঁটাই ৩৮%।
অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ২০১৩-তেও এবারের তুলনায় বেশি ছিল!
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুসারে রেশন সরবারহ যার উপর নির্ভরশীল, সেই খাতে বরাদ্দ লাগাতার কমানো নিঃসন্দেহে আশঙ্কাজনক।