ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন
কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টচার্যের জন্ম ১৯৪৪ সালে, পিতা নেপাল ভট্টাচার্য, মা লীলা ভট্টাচার্য। তাঁদের পরিবার ছিল রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে আবৃত। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন তাঁর কাকা। যদিও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শৈশবেই তাঁর মৃত্যু হয় যক্ষ্মায়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিতে তাঁর ক্ষীণ ছাপ ছিল। তিনি বলতেন, ‘সুকান্ত ভট্টাচার্য একটা আলাদা ঘরে থাকতেন এটা আমার মনে আছে।’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শৈশব কেটেছে উত্তর কলকাতার রামধন মিত্র লেনে। সবাই তাঁকে ডাকতেন ‘বাচ্চু’ নামে। শৈলেন্দ্র সরকার ইনস্টিটিউশনে স্কুলের পাঠ শেষ করেন। তারপর পশ্চিমবঙ্গের সমকালীন বাম রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। ১৯৬৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হন বাংলা নিয়ে। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তখনই প্রথমে ছাত্ররাজনীতি এবং তারপরে যুব আন্দোলনে তিনি অংশ নেন এবং নেতৃত্বে উঠে আসেন। সেই সময়ে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়েও বেড়াতে হয়েছিল তাঁকে। এরাজ্যে ডিওয়াইএফ’এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের খসড়াও তাঁরই লেখা। যুব সংগঠনের কাজে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন, পরে পার্টির সংগঠন গড়ে তোলার কাজও করেছেন।
৬এর দশকের উত্তাল দিনগুলিতে দীনেশ মজুমদার, বিমান বসুরা যখন বামপন্থী ছাত্রযুব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তখনই রাজনীতিতে প্রবেশ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাখালদার ক্যান্টিন’ কিংবা কফি হাউসের আড্ডা থেকে শুরু করে কলেজ স্ট্রিটের পথসভায় চিন্তাশীল, সুবক্তা হিসাবে ক্রমশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। তখন থেকেই সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাতেও সাবলীল ছিলেন। সাহিত্য-সংস্কৃতি আর রাজনৈতিক ভাবধারা তাঁর সমান্তরাল ভাবে চলতো। পরে নিজেই বলেছিলেন, একটাই জীবনবোধ থেকে চালিত আমি, সেখানে রাজনীতি আর সাহিত্য সংস্কৃতি মিলেমিশে থাকে, খন্ড খন্ড আলাদা আলাদা খোপ বলে কিছু নেই।
কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিপিআই(এম)’র সদস্য পদ লাভ করেন ১৯৬৬ সালে। পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ার আগে দমদম আদর্শ বিদ্যামন্দিরে বছর দুয়েক শিক্ষকতা করেছিলেন। সেই সময়ে বাংলায় খাদ্য আন্দোলন, ভিয়েতনামের প্রতি সংহতি আন্দোলনসহ বহু গণআন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের সম্পাদক নির্বাচিত হন। সিপিআই(এম)’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৭১ সালে। রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হয়েছেন – সালে এবং ১৯৮৫ সালে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্যও হন। স্বাস্থ্যের কারণে তিনি ২০১৫ সালে সিপিআই(এম)’র পার্টি কংগ্রেসে পলিট ব্যুরোর সদস্যপদ থেকে অব্যহতি নেন। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি সাম্মানিক সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী থেকেও অব্যহতি নিয়ে রাজ্য কমিটিতে সাম্মানিক সদস্য হয়ে ছিলেন।
১৯৭৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তিনি কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এম)’র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক নির্বাচিত হন, পরাজিত করেছিলেন কংগ্রেস নেতা প্রফুল্লকান্তি (শত) ঘোষকে। সেই বছরই মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী হন। মন্ত্রী হয়েই তিনি সরকারী কাজে বাংলা ভাষার প্রয়োগ কার্যকরী করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তখন কংগ্রেসের আমলে জেলবন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। কয়েকজন নকশাল নেতার বিরুদ্ধে ভিনরাজ্যে মামলা চলছিল। জ্যোতি বসুর নির্দেশে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেই সব রাজ্যে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ করেন। ১৯৮৭ সালে তৃতীয় বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনি এর সঙ্গে পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরেরও দায়িত্ব পান। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিনি যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সাময়িকভাবে মন্ত্রিসভা ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে পার্টি তাঁকে আবার দায়িত্ব দিলে তিনি মন্ত্রীপদে ফিরে আসেন। ১৯৯৬ সালে তিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) দপ্তরের দায়িত্বও পান। স্বাস্থ্যের কারণে জ্যোতি বসু যখন মন্ত্রিসভায় নিজের ভার লাঘব করতে চাইছিলেন তখন ২০০০ সালের জুলাই মাসে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এরপর ওই বছরের শেষের দিকেই জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে সরকারের নেতৃত্ব তুলে দেন। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এরপর ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি পুণরায় নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেন। ২০০৬ সালেও এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি পুণরায় মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের পরাজয় হওয়া পর্যন্ত তিনিই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সাড়ে দশ বছর এই দায়িত্ব তিনি শুধু দক্ষতার সঙ্গেই পালন করেননি, পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে ও রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বামফ্রন্টের নীতি ও কর্মসূচীগুলি আন্তরিকভাবে রূপায়ণের চেষ্টা চালিয়েছেন। ২০১১ সালে যেদিন নির্বাচনের ফলাফল বের হয় সেদিন দুপুরেই তিনি রাজভবনে গিয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দেন এবং সরকারী গাড়ির পরিবর্তে পার্টির গাড়িতে পার্টির রাজ্যদপ্তর মুজফফর আহমদ ভবনে ফিরে আসেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পাম অ্যাভিনিউ’তে সরকারী আবাসনের একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটেই তিনি দিন কাটিয়েছেন। আড়ম্বরতাকে কোনোদিন গ্রহণও করেননি, প্রশ্রয়ও দেননি।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিভিন্ন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ফ্রান্স সফর করেছেন। ১৯৮২ সালে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত চিকিৎসার জন্য চীনে গেলে সেখানে তাঁর সঙ্গী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রমোদ দাশগুপ্ত সেখানেই প্রয়াত হলে তাঁর মরদেহ নিয়ে কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ভূমিকাকে ইতিহাস মূল্যায়ণ করবে বলেই বিশ্বাস করতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পুঁজিবাদের অর্থনৈতিক স্থবিরতায় সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বুকেও যখন বেকারীর থাবা নেমেছে, তখন তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। পিছিয়ে পড়া সব অংশের মানুষের অগ্রগতির জন্য সরকারী উদ্যোগ, রাজ্যের ভিতরেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা, রঙ্গনাথন কমিশনের সুপারিশ প্রকাশের পরে ভারতের মধ্যে সর্বপ্রথম ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্কুলশিক্ষায় মেয়েদের ঘাটতি দূর করে তাদের ব্যাপক সংখ্যায় টেনে আনা, পরিবেশ রক্ষা করে গরিবের উন্নয়নের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তিনি পরিকাঠামো উন্নয়নে সচেষ্ট ছিলেন। আর কর্মসংস্থানের জন্য ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। বামফ্রন্ট সরকারকে তিনি উন্নততর গড়ে তোলার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কমরেড নিরুপম সেন ও পার্টি নেতৃবৃন্দকে সহযোগী করে তিনি এরাজ্যে ইস্পাত শিল্প, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং অটোমোবাইল শিল্প গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সিঙ্গুরে অটোমোবাইল শিল্পে বড় বিনিয়োগে টাটাদের শুধু রাজিই করাননি, ৮০ শতাংশ কারখানা তৈরিও করিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধীদের হিংসাত্মক আন্দোলনে তা ধংস হয়ে গিয়েছে। সিঙ্গুর কেবল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বপ্নের ইতিহাস হয়েই রয়ে গিয়েছে।
কিন্তু গণতান্ত্রিক বোধে বরাবর বিশ্বাস রেখেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কোনো গণআন্দোলন এমনকি বিরোধীদের যুক্তিহীন আন্দোলনও প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগে দমন করেননি। মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূল যখন হাত মিলিয়ে খুনের রাজনীতি চালিয়েছে তখনও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কেবলমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপের ওপরে নির্ভর করার বদলে হিংসাত্মক শক্তিকে জনগণের থেকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার ওপরে জোর দিয়েছেন। নোংরা কদর্য ভাষায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে কখনো রাজনৈতিক লড়াই করতে হয়নি তাঁকে, পরিশীলিত ভাষায় বামপন্থীদের সংগ্রামী রাজনীতির পরিচয় দিয়ে গেছেন বরাবর। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনার দায় প্রকাশ্যে নিজে মাথা পেতে নিয়ে বলেছেন কীভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে। আবার তৃণমূল সরকার আসার পরে তাঁকে যখন ১৯৯২ সালের ২১ জুলাই’এর ঘটনার সাক্ষ্য দিতে বিচারবিভাগীয় কমিশনের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, সটান বিচারপতির সামনে হাজির হয়ে তিনি বলে এসেছিলেন, ‘বিরোধীদের হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনে দুঃখজনক মৃত্যু হয়েছিল, সব তথ্য সরকারের মহাকরণের ফাইলে রয়েছে।’
সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর অন্তরের যোগ ছিল। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন। নিজে অনুবাদ করেছেন মায়াকোভস্কির কবিতা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, কাফকার রচনা। জীবনানন্দ দাশ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর তাঁর লেখা বই বিশেষজ্ঞদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত। ‘পুড়ে যায় জীবন নশ্বর’ তাঁর একটি বহু প্রশংসিত সাহিত্যগ্রন্থ। নিজে কবিতা লিখেছেন, নাটক রচনা করেছেন। আবার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, বামপন্থী রাজনৈতিক বিষয়ে বহু প্রবন্ধ এবং পুস্তিকা লিখেছেন। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালের অভিজ্ঞতা নিয়েও তাঁর দুইখন্ডে প্রকাশিত বই রয়েছে। তাঁর সর্বশেষ লেখা বই চীন সম্পর্কে ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’। চলচ্চিত্র সম্পর্কে শুধু ওয়াকিবহাল ছিলেনই না, মাধ্যম হিসাবে সমাজ ও সংস্কৃতির বিকাশে তার ব্যবহারে তিনি উৎসুক ছিলেন। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নিতেন। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবকে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলেছিলেন তিনি। আবার কলকাতা বইমেলা যখন আগুনে পুড়ে গেছিল তখনও তিনি নিজে ময়দানে দাঁড়িয়ে থেকে পোড়া ভস্ম সরিয়ে ফের বইমেলা চালু করতে সাহায্য করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতা যাতে সাংস্কৃতিক মর্যাদায় পূর্ণ থাকে তার জন্য তিনি সারাজীবন সচেষ্ট ছিলেন। জেলায় জেলায় রবীন্দ্রভবন গড়ে তোলা ও কলকাতায় আন্তর্জাতিক মানের প্রেক্ষাগৃহ নন্দন গড়ে তোলায় তাঁর বিশেষ অবদান ছিল। পুলিশ মন্ত্রী হিসাবে তিনি পুলিশবাহিনীকে আধুনিক ও ‘জনগণের বন্ধু’ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে নয়, সততা ও স্বচ্ছতাকে সরকারী পরিকাঠামোর সর্বত্র দৃশ্যমান করে তুলে মানুষের ভরসা অর্জনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন দৃঢ়। ছাত্রজীবন থেকেই সাঁতার কাটতে এবং ক্রিকেট খেলতে খুবই ভালোবাসতেন, পরবর্তীকালেও ক্রিকেটে তাঁর ছিল তীব্র আকর্ষণ। মাঠে লড়াকু সৌরভ গাঙ্গুলিকেও বহুবার ফোন করে উৎসাহ দিয়েছেন।
বিগত চারপাঁচবছর ধরেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বাস্থ্য ভাল ছিল না। শেষদিকে চোখের সমস্যায় পড়তে পারতেন না, খবরের কাগজও তাঁকে পড়ে শোনাতে হতো। ফুসফুসের সমস্যায় বারে বারে সংক্রমণে অসুস্থ হতেন, হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল। বাড়িতেই অক্সিজেন সহ নানা মেডিক্যাল সাপোর্টে থাকতে হতো। কিন্তু সমকালীন রাজনীতি সম্পর্কে সজাগ ছিলেন। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করতেন, বাংলার মাটিতে গণতন্ত্র ধংসকারী স্বৈরশাসনের ফলে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে। ‘বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা তোলার চেষ্টা করলে মাথা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবো’। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সোচ্চারে বলতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।