Brigade 2025 Cover I

Brigade 2025: The Call

কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতি, বৃহৎ পুঁজিপতি এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির অশুভ আঁতাত এবং রাজ্য সরকারের জনবিরোধী, স্বৈরতান্ত্রিক নীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র রক্ষা করতে ব্রিগেড সমাবেশ সফল করুন।

বন্ধুগণ,

কেন্দ্রীয় সরকারের উদার অর্থনৈতিক নীতি, শ্রমিক কৃষক সহ দেশের সব অংশের মানুষের উপর ভয়ংকর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। বিশেষ করে গত দশ বছরে দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতি, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, শ্রমিক শ্রেণীর অর্জিত অধিকার, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র ব্যাংক, বীমা, রেল, তৈল খনি, কয়লা, ইস্পাত, বিদ্যুৎ, বিমান ও স্থলবন্দর সহ যা কিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্র সবই আক্রান্ত। একই ভাবে আক্রান্ত ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। দেশী বিদেশী পুঁজিপতিদের হাতে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলি তুলে দেওয়া হচ্ছে। কার্যত: দেশে বিজেপি, আরএসএস, এনডিএ জোটের সরকারের মদতে এই সময়ে দেশে জাতীয় সম্পদের লুঠ চলছে। আদানি, আম্বানি সহ কর্পোরেট-পুঁজিপতিরা ফুলে ফেঁপে উঠছে।

দেশের সৃষ্ট সম্পদের বৃহৎ অংশ কুক্ষিগত করছে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি শ্রেণী। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ জুড়ে তীব্র বেকারি, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, মজুরি হ্রাস, কৃষকের ফসলের লাভজনক দামের আইন না করা, কৃষি উৎপাদনের ব্যয়-বৃদ্ধি, ঋণের জালে জড়িয়ে কৃষকের আত্মহত্যা, গ্রামে কৃষি শ্রমিক ও ক্ষেত মজুরদের ন্যূনতম মজুরি না পাওয়া, দুর্নীতির কারণে রাজ্যে রেগার কাজ বন্ধ হওয়া, ৬০০ টাকা মজুরি ও ২০০ দিনের কাজের দাবি না মানা, বেকার যুবক-যুবতী, শ্রমিক কৃষক, খেতমজুর সহ জনজীবনে ভয়ংকর সংকট ডেকে এনেছে। কৃষি ক্ষেত্রকে দেশি বিদেশি বহুজাতিকদের কাছে উন্মুক্ত করা, ফরওয়ার্ড ট্রেডিং থেকে শুরু করে অবাধ মজুতদারীর অধিকার, উৎপাদন থেকে বিপণন সবই ফড়ে ও বহুজাতিক কৃষি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

একইভাবে পুঁজিপতিদের মুনাফা বৃদ্ধির স্বার্থে পার্লামেন্টে আলোচনা না করে, শ্রমিক সংগঠনগুলির মতামতকে উপেক্ষা করে ২৯টি শ্রম আইন সংশোধন করে চারটি শ্রম কোড তৈরি করা হয়েছে। শ্রমিক স্বার্থবিরোধী শ্রম কোড চালু করার চক্রান্ত চলছে। চা, চট সহ রাজ্যের শিল্প কল কারখানায় সংগঠিত, অসংগঠিত ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের মালিক তোষণ নীতি ও শ্রমিক বিরোধী ভূমিকা শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকা দুর্বিষহ করে তুলেছে। গত ১৩ বছর রাজ্যে গণতন্ত্রহীন সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে। রাজ্য সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, ভ্রষ্টাচারে

শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা হয় জেলে না হয় বেলে আছেন। রাজ্যের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের জালে রাজ্য। গত ১৩ বছর রাজ্যে কোনো শিল্প বা নতুন বিনিয়োগ নেই। চালু শিল্প একে একে বন্ধ হচ্ছে, রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছে, রাজ্যে কাজ নেই, বেকার যুবক যুবতীরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে কাজের সন্ধানে অনিশ্চিত জীবন নিয়ে ভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা বিপন্ন, আরজিকর কাণ্ডে অভয়ার বিচার প্রহসনে পরিণত হয়েছে। রাজ্যে নারী নির্যাতন, খুন ধর্ষণের ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রাজ্যে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বেসরকারিকরন, সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সবই বিপর্যস্ত। রাজ্যের সরকারি জমি বেসরকারিকরন করে, পরিবেশ ধ্বংস করে, গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করে কর্পোরেট ও প্রমোটার, অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যজুড়ে বস্তির গরীব মানুষের উচ্ছেদ চলছে। গ্রামাঞ্চলে মাইক্রোফিনান্সের দাপাদাপিতে গরীব মানুষের জীবনে অন্ধকার নেমে আসছে। এর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে।

পুঁজিপতি শ্রেণী ও তাদের রাজনৈতিক দল, এই নয়া উদার অর্থনৈতিক নীতি ও তার শোষণ ব্যাবস্থা টিকিয়ে রাখতে চায়, তারা মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে, শোষিত বঞ্চিত মানুষের আন্দোলনকে ভাঙতে জাতপাত, ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলছে। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে আঘাত করছে। দেশজুড়ে বিজেপি, আর এস এস এবং রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূল রাজনীতির সাথে ধর্মকে যুক্ত করছে। মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও হিংসা তৈরী করে মেরুকরণের রাজনীতি করছে।

এসবের বিরুদ্ধে রাজ্যের সব অংশের শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র শ্রেণী আন্দোলন গড়ে তুলতে। সি আই টি ইউ, সারা ভারত কৃষকসভা, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, পঃ বঃ বস্তি উন্নয়ন সমিতি ও অন্যান্য সংগঠনের ডাকে রাজ্যব্যাপী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস জুড়ে পদযাত্রা ও ২০শে এপ্রিল ২০২৫ ব্রিগেডে ঐতিহাসিক সমাবেশের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এই সমাবেশের দাবিসমূহ-

১. শ্রম কোড বাতিল করো। দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি রোধ কর।

২. রেল, বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্ক, বিমা, কয়লা ইস্পাত সহ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর বেসরকারিকরণ বন্ধ কর। স্মার্ট মিটার বাতিল কর, রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত কর।

৩. শ্রমিক ও খেতমজুরদের মজুরী বৃদ্ধি ও সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা চালু কর।

৪. কৃষকের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইন, কৃষি ঋণ মকুব, সমবায় ব্যাবস্থাকে পুনরুজ্জীবন, সার ও বিদ্যুৎ-এ ভর্তুকি চালু কর।

৫. রেগার কাজ চালু, বকেয়া মজুরী প্রদান, ৬০০ টাকা মজুরী ও ২০০ দিনের কাজ চালু কর।

৬. রাজ্যে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, বন্ধ কলকারখানা খুলতে হবে।

৭. সরকারী জমি বেসরকারিকরণ বন্ধ কর।

৮. বস্তি উচ্ছেদ বন্ধ ও বস্তিবাসীদের পাট্টা দিতে হবে।

৯. রাজ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, দূর্নীতি বন্ধ করতে হবে, দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

১০. আর. জি. কর কাণ্ডে অভয়ার ন্যায়বিচার ও রাজ্যে নারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশ বাঁচাতে-রাজ্যে বদল আনতে-বৃহত্তর সংগ্রাম গড়ে তুলতে

শ্রমজীবী মানুষের ডাকে ২০শে এপ্রিল ২০২৫ বিকাল ৩ টায় ব্রিগেড চলুন

ব্রিগেড সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনগুলির বিবৃতি

Spread the word

Leave a Reply