গত ১৮ জুলাই ,২০২৩ এ ২৬টি বিরোধী দল বেঙ্গালুরুতে মিলিত হয়েছিল। এই বৈঠকের পরে দলগুলির দ্বারা জারি করা যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হল।
আমরা, ভারতের ২৬টি প্রগতিশীল দলের নিম্নস্বাক্ষরকারী নেতৃত্ব, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ভারতের ধারণাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করছি। বিজেপি পরিকল্পিতভাবে আমাদের প্রজাতন্ত্রের নিজস্ব চরিত্রকে ভয়াবহ ভাবে আঘাত করছে।আমরা আমাদের দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।ভারতীয় সংবিধানের মূল স্তম্ভগুলি – ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো – পদ্ধতিগতভাবে এবং ভয়ঙ্করভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।
মণিপুরকে ধ্বংস করা মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মৌনতা মর্মান্তিক এবং বেনজির।মণিপুরকে শান্তি ও সমন্বয়ের পথে ফিরিয়ে আনা জরুরি।
আমরা সংবিধানের উপর এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলির সাংবিধানিক অধিকারের উপর অব্যাহত আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং এর মোকাবিলা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।আমাদের রাষ্ট্রনীতির যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করার সচেতন প্রচেষ্টা চলছে।অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপাল এবং উপরাজ্যপালদের ভূমিকা কোন সাংবিধানিক বিধিরই তোয়াক্কা করছে না।রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার তাদের অধীনস্থ সংস্থাগুলির নির্লজ্জ অপব্যবহার করে আমাদের গণতন্ত্রকে দমন করছে।অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির বৈধ চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা এবং অধিকারগুলোকে কেন্দ্র সচেতনভাবে অস্বীকার করছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং রেকর্ড বেকারত্বের হার এর গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আমরা আমাদের সংকল্পকে আরও জোরালোভাবে প্রকাশ করছি।নোটবন্দীকরণ এমএসএমই এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্দশা ডেকে এনেছে, যার ফলে আমাদের যুবদের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব দেখা দিয়েছে।আমরা কেন্দ্রের পছন্দের মিত্রদের কাছে দেশের সম্পদ বেপরোয়াভাবে বিক্রির বিরোধিতা করি। আমাদের অবশ্যই একটি শক্তিশালী এবং কৌশলগত সরকারি ক্ষেত্রের পাশাপাশি একটি প্রতিযোগিতামূলক এবং সমৃদ্ধ বেসরকারি ক্ষেত্র সহ একটি ন্যায্য অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে উদ্যোগী চেতনা বৃদ্ধি পায় এবং সম্প্রসারণের প্রতিটি সুযোগ দেওয়া হয়। কৃষক ও ক্ষেত মজুরদের কল্যাণকে সর্বদা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা ও হিংসা তৈরি করা হচ্ছে তা পরাস্ত করতে আমরা একত্রিত হয়েছি; নারী, দলিত, আদিবাসী এবং কাশ্মীরি পন্ডিতদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অপরাধ বন্ধ করা; সকল সামাজিক, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ন্যায্য শুনানির দাবি আমরা করছি এবং তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাতিভিত্তিক শুমারি বাস্তবায়িত করতে হবে।
আমরা আমাদের সহনাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা, তাদের দমন এবং নিপীড়ন করার জন্য বিজেপির পদ্ধতিগত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প গ্রহণ করছি। শাসক দল তাদের ঘৃণার বিষাক্ত প্রচারের মাধ্যমে তাদের বিভাজনকারী মতাদর্শের বিরোধী সকলের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর হিংস্রতার অভিমুখে পরিচালিত করেছে।এই আক্রমণগুলি শুধুমাত্র সাংবিধানিক অধিকার এবং স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে না বরং সেই মৌলিক মূল্যবোধগুলিকেও ক্ষয় করছে যার উপর ভিত্তি করে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে – স্বাধীনতা, সাম্য , ভ্রাতৃত্ব এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার।ভারতীয় ইতিহাসকে পুনরুদ্ভাবন ও পুনর্লিখনের মাধ্যমে নাগরিক ভাষ্যকে নষ্ট করার জন্য বিজেপির নিরন্তর প্রচেষ্টা সামাজিক সম্প্রীতির উপর আক্রমণের দৃষ্টান্ত।
আমরা জাতির সামনে বিকল্প রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের অঙ্গীকার করছি। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে দেশ পরিচালনার উপাদান এবং শৈলী উভয়ই রূপান্তরিত করা হবে, যা হবে আরও পরামর্শমূলক, গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক।