আনিস খাঁন নিজেই স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন, সেই অভিযোগপত্রের সম্পূর্ণ বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হল। আনিসের নিজের লেখাতেই স্পষ্ট তাকে এবং তার পরিবারকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব সন্ত্রস্থ করে তুলেছিল। যারা হত্যাকারীদের পরিচয়, আশ্রয় সম্পর্কে সন্দিহান তাদের জন্য আনিসের লেখা চিঠিটি ‘আই ওপেনার’। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রত্যেকে সোচ্চার হন, বিচার চান – দোষীদের শাস্তির দাবী জানান।
প্রতি
অফিসার ইন চার্জ
আমতা থানা
আমতা
হাওড়া
তাং ২৪.0৫.২০২১
বিষয়: শাসকদল কর্তৃক বলপূর্বক রক্তদান শিবির বন্ধ করে দেওয়া এবং পরবর্তী হিংসার প্রতি আপনার দপ্তরের দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন
মহাশয়,
আমি শ্রীযুক্ত আনিস খাঁন, আমতা থানার অন্তর্গত সারদা দক্ষিণ খাঁন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আপনার অবগতির জন্য জানাই যে গত ২২.0৫.২০২১ তারিখে একটি রক্তদান শিবিরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল আমাদের গ্রামে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অধিকার মঞ্চ, উলুবেড়িয়া মহকুমা হাওড়ার পক্ষ থেকে এই উদ্যোগের মূল উদ্যোক্তা ছিলাম আমি। বর্তমান সময়ে রক্তের তীব্র সংকটের সময় উক্ত রক্তদান শিবিরটি সফল করার জন্য এলাকার বিভিন্ন মানুষদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু গত ২১.0৫.২০২১ তারিখ বিকেল বেলায় আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েত (কুশবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত) এর উপ প্রধানের ও স্থানীয় তৃণমূল বুথ সভাপতি মালেক খাঁন ও তার জেষ্ঠ পুত্র মাসুদ খাঁনের নেতৃত্বে এবং তাদের কিছু অনুগামীরা হুমকি সহকারে আমাকে প্রকাশ্য রাস্তায় জানায় “রক্তদান শিবিরটি করা যাবে না আর করলে ফল ভীষণ খারাপ হবে”। আমি কারণ জানতে চাইলে তারা আমায় বলে “এবারের নির্বাচনে আমাদের পার্ট থেকে তৃণমূল ছাড়া অন্যরা ভোট পেল কেন? এর দায় আমাকে নিতে হবে”। আমি বলি “মানুষ যখন ভোট দিয়েছে তার দায় আমি কেন নিতে যাবো, এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রত্যেকের অধিকার আছে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার”। এটা বলার পরেও উক্ত ব্যক্তিরা আমার কোনো কথায় কর্নপাত করে নি এবং আমাকে হুমকি দিতেই থাকে। এছাড়াও আরো নানা রকম মিথ্যে অভিযোগ দিতে থাকে। অতঃপর ঐ দিন আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ উক্ত ব্যক্তিরা আমার বাড়ি চড়াও হয় এবং আমাকে, আমার বৃদ্ধ বাবা ও বাড়ির মহিলাদের এবং এক প্রতিবন্ধী বোনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বাড়ির দরজায় লাথি মারতে থাকে এবং আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এর পরদিন আমাকে বাড়ি ছাড়া করে দিয়েছে।
এরপর থেকেই লাগাতার আক্রমন চালিয়ে আসছে উক্ত ব্যক্তিরা। গতকাল দুপুরের দিকে আচমকা আমার ছোট কাকাকে জাহাঙ্গীর খান ও আলী হোসেন খান বাড়িতে ঢুকে মারধর করে এবং রাত ১১টার দিকে আমাদের গোয়াল ঘর ও রান্না ঘরটি বিভৎস ভাবে ভাঙচুর করে এবং ভাঙচুর করে মেহবুব খাঁন (মবু), রাজা খাঁন, সাইফুল্লা খাঁন, আতি খাঁন সহ আরো অনেকেই। এরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের সদস্য। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ভাবে এরা আক্রমন করছে
এমতাবস্থায় আমি ও আমার সমগ্র পরিবার ভীষণ নিরাপত্তা হীনতায় মধ্যে আছি এবং আশঙ্কা প্রকাশ করছি যে, যেকোনোদিন এরা আমাকে ও পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলতে পারে।
এই মোতাবেক উপরোক্ত আমার আবেদনের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং উক্ত আক্রমনকারি ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আমার সমগ্র পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিন্ত করার জন্য অবিলম্বে আপনার দপ্তরের প্রয়োজনীয় দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছি। যেভাবে এরা আমাকে অনুসরণ করছে তাতে আমার পক্ষে থানায় যাওয়া সম্ভব নয়, এই কারণে পোস্ট মারফত আমার এই অভিযোগ পত্রটি পাঠালাম। সার্বিক ভাবে আপনার সহযোগিতা কামনা করি।
ধন্যবাদান্তে
আনিস খাঁন
সারদা দক্ষিণ খাঁন পাড়া
আমতা থানা, হাওড়া -৭১১৪১৩