general-strike-2025

9 July Strike: The Struggle of Tailors

আশাদুল্লা গায়েন

পশ্চিমবঙ্গে বুনিয়াদি শিল্পের অন্যতম শিল্প দর্জি শিল্প। পোশাক মানুষের অপরিহার্য। সারা ভারতবর্ষে বেশিরভাগ পোশাকের চাহিদা পশ্চিমবঙ্গ পূরণ করে। হাওড়ার হাট, মেটিয়াবুরুজের হাট সহ বিভিন্ন হাটের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষ, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের পোশাক এ সমস্ত হাটের মাধ্যমে সরাসরি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। এই শিল্প মহেশতলা, মেটিয়াব্রুজ এবং হাওড়া কেন্দ্রিক হলেও বর্তমানে এর বিস্তার বেশ কয়েকটি জেলায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা দর্জিদের পুরনো জনপদ। দর্জি শিল্পের আদি পিঠস্থান। বর্তমানে বেশ কয়েকটি জেলায় এই কাজের পরিধি বেড়েছে এবং কয়েকটি জেলায় কয়েক লক্ষ নতুন দর্জি শ্রমিক এই কাজে নিয়োজিত হয়েছে।

দর্জি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় কাজ পাওয়ার কারণে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা খুব কম। এ রাজ্যে রেডিমেড পোশাক খুবই কম খরচে তৈরি হয়। যার কারণে অন্য রাজ্য এই পোশাক তৈরির চেষ্টা করলেও আমাদের রাজ্যের পোশাকের গুণমান এবং খরচ এর সঙ্গে তারা পাল্লা দিতে পারছে না। অপরদিকে বিশ্ববাজারে রেডিমেড গার্মেন্টসের যে বাজার সেখানে আমরা খুব একটা সুবিধা করতে পারছি না। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশ, আফ্রিকার কিছু দেশ সহ অনুন্নত দেশগুলি থেকে এজেন্ট মারফত আমাদের হাট থেকে রেডিমেড পোশাক সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু এর ধারাবাহিকতা নেই। সার্বিকভাবে বিশ্ববাজারে আমাদের ভারতবর্ষের পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা ঠিক সেভাবে তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ, চীন, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, পাকিস্তান বিশ্ব বাজারে যেভাবে সরবরাহ করছে আমরা তা পারছি না। এ ব্যাপারে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবই মূল কারণ।

নোটবাতিল এবং করোনার পরে দর্জিদের কাজ ক্রমশ কমছে। সারা ভারতবর্ষের মানুষ কাজ হারিয়েছে। উপার্জন কমেছে। তার সরাসরি প্রভাব এই রেডিমেড শিল্পে। বিশেষ করে করোনার পরে ছোট ওস্তাগারদের ব্যবসা প্রায় নেই বললেই চলে। ছোট ওস্তাগাররা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টোটো চালক বা অন্যান্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন।  দীর্ঘদিন ধরে হাটে কোন বেচাকেনা নেই। পশ্চিমবঙ্গের আভ্যন্তরীণ পোশাকের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। স্কুল ড্রেস, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাজ সরাসরি দর্জিরাই পেত। বর্তমানে বিভিন্ন দালাল বা ফড়েদেরমাধ্যমে এই কাজ করানো হয়। এখানে সরাসরি দর্জিরা তাদের কাছ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

দর্জি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে মজুরি কমানো হচ্ছে। দর্জি শ্রমিকদের স্বার্থে ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন, ৯ হাজার টাকা পেনশন ,সামাজিক সুরক্ষা সহ বিভিন্ন দাবিতে  দর্জিরা ধারাবাহিকভাবে লড়াই আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার কোন কর্ণপাত করেননি।

দর্জিদের মাল বহনকারী গাড়ির উপর পুলিশের অত্যাচার দিন দিন বাড়ছে। এক শ্রেণীর পুলিশ এই তোলাবাজিকে প্রায় অধিকারের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বন্ধ করতে হবে তোলাবাজি।

পুরানো হাওড়া মঙ্গলা হাটের আন্দোলন এবং ওস্তাগারদের অকারণে উচ্ছেদ বন্ধ ও হাটকে সরকারি অধিগ্রহণের দাবি।

হাটের অভ্যন্তরে পরিবেশের উন্নতি, চলাচলের জায়গা রক্ষা, পরিশ্রুত পানীয় জল, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। সহ শ্রমকোড বাতিল, দেশের সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না, স্মার্ট মিটার চালু করার বিরুদ্ধে লড়াই সহ ১৭ দফা দাবিতে সারা বাংলার দর্জিরা আগামী ৯ জুলাই ২০২৫ সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের ডাকে সর্বভারতীয় ধর্মঘটে সার্বিকভাবে সামিল হবে।

লেখার সঙ্গে ব্যবহৃত ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে নির্মিত

Spread the word

Leave a Reply