Sambad Pravakar Cover

Sambad Prabhakar – The History (Part I)

শাম্ব মন্ডল

সংবাদপত্রের ইতিহাস খুব প্রাচীন নয়, এমনকি ইউরোপীয়দের ক্ষেত্রেও তার বয়স বছর শ’তিনেকের চাইতে বেশি হবে না। এর আগের ইতিহাস কেমন ছিল? সংবাদ সংগ্রহ হত বড়লোক ও ব্যবসায়ীদের হাতে লেখা চিঠি থেকে। মোগলদের ছিল চর; চরেরা স্থানীয় সংবাদ সংগ্রহ করত, মাসে একবার কি সপ্তাহে-সপ্তাহে লিখিত সেই খবর পৌঁছত দিল্লি। গোপন সমস্ত তথ্য ছাড়া, বাদবাকি চিঠি পড়া হত সভায়, সভাস্থ সকল লোকের সুযোগ হত নানা স্থানের সংবাদ পাওয়ার। খবর পাওয়ার জন্য করদ রাজারা, অন্যান্য ছোট শাসনকর্তারা সম্রাটের সভায় সংবাদ-লেখক রাখতেন বেতন দিয়ে। এইভাবে রাজকর্মচারীরাও নিজেদের ঊর্ধ্বতনের সভায় পত্রলেখক নিযুক্ত করতেন, বণিকদের থাকত নিজস্ব প্রতিনিধি। মোগলদের সময় সবারই কোনো না কোনোভাবে সুযোগ মিলে যেত, নানান জায়গার খবর পাওয়ার প্রতি মানুষের যে আকাঙ্খা তা পূরণের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব খবর লেখা হত ফার্সিতে, মারোয়াড়ী ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা ব্যবহার করতেন হিন্দী ভাষা। ফার্সিতে লিখিত এসব খবরের পোশাকি নাম হয়েছিল ‘আখ্‌বারাৎ’। তবে এ জিনিসের ধরণ আধুনিক সংবাদপত্র থেকে ভিন্ন ছিল; রাজনৈতিক মন্তব্য বা শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্যই এখানে করা হত না, থাকত শুধু বিশেষ-বিশেষ ঘটনার উল্লেখ।

এরপর এল ইংরেজ আমল, ইংরেজি সংবাদপত্রের অনুকরণে এই ব্যবস্থায় হল পরিবর্তন। বাংলায় মুদ্রণযন্ত্র এল আঠেরো শতকের শেষভাগে, জ্ঞান ও শিক্ষাচর্চার ক্ষেত্রে শুরু হল এক নবজাগরণ—বাংলায় সংবাদপত্রের প্রকাশ তারই ফলশ্রুতি। এইখানের এই বাংলা, আপাতত ভাষা বাংলা নয়, ‘বাংলা প্রভিন্স’। কেননা বাংলায় তথা ভারতে প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্রটি ছিল ইংরিজি ভাষার। ১৭৮৯ সালের ২৯ জানুয়ারি, আইরিশ জেমস হিকি কতৃক প্রকাশিত হয় ‘বেঙ্গল গেজেট’। কিন্তু ভবিষ্যৎ এই পত্রিকার ভালো কিছু হয়নি; বছর দুই যেতে না যেতেই, তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের স্ত্রী ও জনাকয়েক পদস্থ লোকের বিরুদ্ধে মানহানিকর প্রবন্ধ প্রকাশ করায় এই সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশ দেওয়া হয় বন্ধ করে। কিন্তু বিষয়টি তাতে থামে না; ‘ইন্ডিয়া গেজেট’, ‘ক্যালকাটা গেজেট’ বা ‘হরকরা’, নানা পত্রিকা তারপর থেকে প্রকাশ পাওয়া শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানির গভর্নমেন্ট খুব একটা প্রসন্ন ছিলনা সংবাদপত্রগুলির উপর; অধিকাংশ সংবাদপত্রের রচনাভঙ্গি উগ্র এবং ভাষা ইতর ও অশ্লীল, এই ছিল তাঁদের মত। ১৭৯৯ সালের মে মাসে প্রথম সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের নিয়ম জারি করেন রিচার্ড ওয়েলেসলি। সেন্সরশিপ চালু হয়, নিয়ম হয় সংবাদপত্রের সমস্ত লেখা এমনকি বিজ্ঞাপন পর্যন্ত মুদ্রণের আগে সরকার নির্দিষ্ট সেক্রেটারির কাছ থেকে অনুমোদিত হতে হবে। অন্যথায় সম্পাদকের প্রাপ্তি হবে ইউরোপে নির্বাসন। দমন চলছিল ভালোই, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সম্পাদকেরা তখনও সবাই ছিলেন ইউরোপীয়, কিন্তু ‘হিট্‌লী’ নামক এক এদেশীয় সাহেব ‘মর্নিং পোস্ট’ নামক সংবাদপত্রটির স্বত্বাধিকারী ও সম্পাদক হওয়ার পর বাঁধল গোল। ১৮১৮ খ্রীস্টাব্দের এপ্রিল মাস নাগাদ ‘মর্নিং পোস্টের’ একটি সংখ্যার বেশ কিছুটা অংশ ছাপা যাবেনা, এমন নির্দেশ দেন সরকার নিয়োজিত সংবাদপত্র পরীক্ষক বেলী সাহেব। হিট্‌লী তাতে কানই দেননি; তাঁর মা এদেশীয়, তাঁর নিজের জন্ম এদেশে, সেন্সরের নির্দেশ অমান্য করলেও তাঁর শাস্তি হতে পারেনা কারণ ওসব নিয়ম ইউরোপীয় সাহেবদের জন্য। ওয়ারেন হেস্টিংস বুঝতে পারেন, বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো—এই বাক্যের মাহাত্ম্য। ফলে সেন্সরের পদ যায় উঠে এবং চালু হয় বেশ কিছু সাধারণ নিয়ম। তদ্দিনে বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় সংবাদ সরবরাহের জন্য একাধিক পত্রিকা চালু হয়ে গেছে। ১৮১৮ থেকে ১৮২৩ অবধি প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায়; হয় মাসিক নয় সাপ্তাহিক পত্রিকার। ১৮২৩ সালে আসে মুদ্রাযন্ত্র বিষয়ক আইন। সাংবাদিকতা পরিচিত হল সরকারী লাইসেন্সিং বিষয়টির সাথে। সাময়িকপত্র প্রকাশের আগে স্বত্বাধিকারী, মুদ্রাকর ও প্রকাশককে সরকারের চিফ সেক্রেটারির কাছে হলফনামা পেশ করলে, কী কী বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না—তার একটা মুদ্রিত বিবরণ প্রকাশককে পাঠিয়ে সরকার ব্যবস্থা করত পত্রিকাটিকে লাইসেন্স প্রদানের। নিষিদ্ধ বিষয়ে আলোচনা করলে, কাগজের লাইসেন্স বাতিল হত আর চারশো টাকা পর্যন্ত জরিমানা হওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। এই আইন ১৮২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে চালু হয়, চলেছিল ১৮৩৫ এর মাঝামাঝি অবধি।

প্রচুর সংবাদপত্র সেকালে প্রকাশিত হত, প্রচারিত হত এবং সেইসবে সম্পাদকেরা চাঁচাছোলা মন্তব্য করতে পিছপা হতেন না। এঁরা সবাই উন্নত বাঙালি, এঁদের আমরা বাংলার নগজাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে চিরকাল দেখে এসেছি। যদিও সকলে সম্পাদনার কাজ করে গেছেন, বা শুধুই সম্পাদনার কাজ করেছেন এমন না; নানা নদীর জল একস্থানে মিশে তৈরি হয়েছে এক মহা সম্মিলনীর, যা এক অশান্ত সময়ের দলিল হিসেবে সংরক্ষিত হয়ে থেকে গেছে। এঁদের মধ্যেই উজ্জ্বল এক নাম ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের ভেলা চর্যাপদ থেকে শুরু করে, মঙ্গলকাব্য, শিবায়ন হয়ে কাব্যের ঘাট পার হয়ে এসে দাঁড়ায় ঈশ্বর গুপ্তের হাতে। বাঙালী কবি হিসেবে তিনি প্রাতঃস্মরণীয়। এই ঈশ্বর গুপ্তেরই আর এক অদ্বিতীয় কীর্তি হল সংবাদ প্রভাকর। সংবাদ প্রভাকর দৈনিক হিসেবে প্রকাশের আগে একবার সাপ্তাহিক ও একবার সপ্তাহে তিনটি সংখ্যা অর্থাৎ বারত্রয়িক হিসেবেও প্রকাশিত হয়। ১৮২৩-এর আইন তখনও চলছে, ঈশ্বর গুপ্ত পাথুরিয়াঘাটা থেকে সরকারের কাছে আবেদন করলেন লাইসেন্সের। উল্লেখযোগ্য যে, আবেদনপত্রটি লেখা ইংরিজিতে অথচ তলায় ঈশ্বর গুপ্ত সই করেছেন বাংলাতে। সেই লাইসেন্স মঞ্জুর হয় ১৮৩১ সালের ১১ জানুয়ারি। ২৮ জানুয়ারি (১৬ মাঘ ১২৩৭, শুক্রবার) সাপ্তাহিক সমাচারপত্র হিসেবে প্রথমবারের জন্য প্রকাশিত হয় সংবাদ প্রভাকর। ৩ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বহুল প্রচারিত পত্রিকা ‘সমাচার চন্দ্রিকা’য় এ সম্বন্ধে একটি লেখা প্রকাশ পায় যা এখানে তুলে ধরা হল—

পাঠকবর্গের স্মরণে থাকিবেক সম্বাদ প্রভাকরনামক সমাচারপত্র এতন্নগরে প্রকাশ পাইবার কল্পনা জল্পনা হইয়াছিল সংপ্রতি গত ১৬ মাঘ শুক্রবার তাহার প্রথম সংখ্যা প্রচার হইয়াছে তদবলোকনে বোধ হইতেছে যে তৎপ্রকাশক হিন্দু ধর্ম্মনাশেচ্ছুকদিগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রস্তুত হইতে পারেন যেহেতুক প্রভাকরপ্রকাশকের যুক্তি উক্তিদ্বারা শক্তি ভক্তি ব্যক্ত হইয়াছে সাধু মহাশয়েরা এ সম্বাদপত্রের সম্বাদ শুনিলে ঔদাস্য না করিয়া অবশ্য সন্তুষ্ট হইবেন।

এবিষয়ে ভ্রুকুটি অমূলক। ঈশ্বর গুপ্ত লোকটি যথেষ্ট হিন্দু ছিলেন, কিন্তু যুক্তিতে বিশ্বাস করতেন। আর ছিল তাঁর ছুরির ফলার মতো শ্লেষ; ফলে যেমনি হোন, বস্তুনিষ্ঠভাবে তাঁকে বিশ্লেষণ করলে এক বাঙালির ছবি ভেসে ওঠে চোখের সামনে যিনি কোনোভাবেই বিধবাবিবাহকে সমর্থন করতে পারেননা অথচ কৌলিন্যপ্রথার প্রতি তাঁর যথেষ্ট রাগ। কুলীনদের তিনি যে মন-প্রাণ দিয়ে ঘৃণা করতেন তা তাঁর কবিতায় স্পষ্ট। কুলীনদের নিয়ে একটি কবিতা এখানে এই মতের সমর্থনে তুলে দেওয়া হল, আর তুলে দেওয়া হল বিধবা বিবাহ সম্পর্কে ঈশ্বর গুপ্তের অবস্থান। এ থেকে যে আমরা কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পারব তা নয়, তবে ধারণা করতে পারব। ধারণা করতে পারব কিভাবে হিন্দু মন যুক্তিবাদী ঈশ্বর গুপ্তের ক্ষেত্রে কাজ করেছে। তিনটি কবিতার কিছু কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল- ‘বিধবাবিবাহ’, ‘বিধবাবিবাহ আইন’ এবং ‘কৌলিন্য’।

বিধবাবিবাহ

বাধিয়াছে দলাদলি, লাগিয়াছে গোল।

বিধবার বিয়ে হবে, বাজিয়াছে ঢোল।।

কত বাদী, প্রতিবাদী, করে কত রব।

ছেলে বুড়া আদি করি, মাতিয়াছে সব।।

কেহ উঠে শাখাপরে, কেহ থাকে মূলে।

করিছে প্রমাণ জড়ো, পাঁজি পুঁতি খুলে।।

একদলে যত বুড়ো, আর দলে ছোঁড়া।

গোঁড়া হয়ে মাতে সব, দেখেনাকো গোড়া।

লাফালাফি, দাপাদাপি, করিতেছে যত।

দুই দলে খাপা খাপি, ছাপা ছাপি কত।

অনেকেই এই মত, লতেছে বিধান।

“অক্ষতযোনির” বটে, বিবাহ বিধান।।

কেহ বলে ক্ষতাক্ষত, কেবা আর বাছে?

একেবারে তরে যাক, যত রাঁড়ী আছে।।

সকলেই এইরূপ, বলাবলি করে।

ছুঁড়ীর কল্যানে যেন, বুড়ী নাহি তরে।।

শরীর পড়েছে ঝুলি, চুল গুলি পাকা।

কে ধরাবে মাছ তারে, কে পরাবে শাঁখা?

জ্ঞানহারা হয়ে যাই, নাহি পাই ধ্যানে।

কে পাড়িবে ‘সৎবাপ’, মায়ের কল্যাণে?

বিধবাবিবাহ আইন

হিন্দু বিধবার বিয়া, আছে অপ্রচার।

বহুকাল হতে যার, নাহি ব্যবহার।।

সে বিষয়ে ক্ষতাক্ষত, না করি বিশেষ।

করিলেন একেবারে, নিয়ম নির্দ্দেশ।।

গ্রান্ট করি, গ্রান্টের সকল অভিলাষ।

কালবিল, কাল বিল করিলেন পাশ।।

না হইতে শাস্ত্রমতে, বিচারের শেষ।

বল করি করিলেন, আইন আদেশ।।

যাহাদের ধর্ম্ম এই, আর দেশাচার।

পরস্পর তারা আগে, করুক বিচার।।

করিছে আমার ধর্ম্ম, আমাতে নির্ভর।

রাজা হয়ে পরধর্ম্মে, কেন দেন কর?

আগে ভাগে রাজাদেশ, করিতে প্রচার।

এত কেন মাথাব্যথা, হইল রাজার?

…বিধবার বিয়ে।

আপনারা করুক, আপন দল নিয়ে।।

অনিয়মে করি এক, নিয়মের ছল।

ভূপতি তাহাতে কেন প্রকাশেন বল?

কোলে কাঁকে ছেলে ঝোলে, যে সকল রাঁড়ী।

তাহারা সধবা হবে, পোরে শাঁকা শাড়ী!

এবড় হাসির কথা, শুনে লাগে ডর।

কেমন কেমন করে, মনের ভিতর।।

বিবাহ করিয়া তারা, পুনর্ভবা হবে।

সতী বলে সম্বোধন, কিসে করি তবে?

বিধবার গর্ভজাত, যে হবে সন্তান।

“বৈধ” বলে কিসে তার, করিবে প্রমাণ?

যে বিষয় সর্ব্ববাদী-সম্মত না হয়।

সে বিষয় সিদ্ধ করা, শক্ত অতিশয়।।

বিধবার বিয়ে দিতে যাহারা উদ্দত।

তার মাঝে বড় বড়, লোক আছে যত।।

যারে ইচ্ছা তারে হয়, ডাকিয়া আনিয়া।

ঘরেতে বিধবা কত, পরিচয় নিয়া।।

গোপনেতে এই কথা, বলিবেন তারে।

জননীর বিয়ে দিতে, পারে কি না পারে?

যদি পারে, তবে তারে, বলি বাহাদুর।

এখনি করিলে সব, দুঃখ হয় দূর।।

যদি কেহ নাহি পারে, সাহস ধরিয়া।

বিফল কি ফল তবে, আইন করিয়া?

পরস্পর আড়ম্বর, মুখে কত কয়।

কেহ আর মাথা তুলে, অগ্রসর নয়।।

রাজার কর্ত্তব্য কথা, করিতে বর্ণন।

এরূপ লিখিয়া আর, নাহি প্রয়োজন।।

এইমাত্র শেষ কথা, কহিব নিশ্চয়।

এবিষয়ে বিধি দে’য়া, রাজধর্ম্ম নয়।।

মরুক্‌ মরুক্‌ বাদ, প্রজায় প্রজায়।

কোন কালে রাজার কি, হানি আছে তায়?

কৌলিন্য

মিছা কেন কুল নিয়া, কর আঁটা আঁটি?

এ যে কুল, কুল নয়, সার মাত্র আঁটি।।

কুলের গৌরব কর, কোন্‌ অভিমানে?

মূলের হইলে দোষ, কেবা তারে মানে?

ঘটকের মুখে শুধু, কুলীনের চোপা।

রস নাই যশ কিসে, কুল হলো টোপা?

আদর হইত তবে, ভাঙ্গিলে অরুচি।

পোকাধরা সোঁকা ভার, দেখে যায় রুচি।

অতএব বৃথা এই, কুলের আচার।

ইথে নাহি রক্ষা পায়, কুলের আচার।।

কুলের সম্ভ্রম বল, করিব কেমনে?

শতেক বিধবা হয়, একের মরণে।।

নর নারী তুল্য বিনা, কিসে মন তোষে?

ব্যভিচার হয় শুদ্ধ, এই সব দোষে।।

কুলকল্পে নয় রূপ, সুলক্ষণ যাহা।

অবশ্য প্রামাণ্য করি, শিরোধার্য্য তাহা।।

নচেৎ যে কুল তাহা, দোষের কারণ।

পাপের গৌরব কেন, করিছ ধারণ?

হে বিভু করুণাময়, বিনয় আমার।

এদেশের কুলধর্ম্ম, করহ সংহার।।

উক্ত তিনটি কবিতার কিছু অংশ পড়লেই আমরা এক যুক্তিবাদী লোকের সামনে এসে দাঁড়াই, যিনি প্রশ্ন করছেন। বিধবাবিবাহকে তিনি সমর্থন করেননা সেকথা যেমন ঠিক, তেমনই বিধবাবিবাহ প্রচলনের ক্ষেত্রে ঘটা তৎকালীন ‘কেওস’কে তীব্র শ্লেষের সামনে দাঁড় করাতেও তিনি পিছপা হননি। কুলীনদের বিরুদ্ধে কথা বলার সময়েও তাঁর বক্তব্য দঢ় ও সুস্পষ্ট। এতে তাঁর প্রগতি-বিরোধিতা যেমন হালে পানি পায়না, তেমনই তাঁর সমকাল সংক্রান্ত দলিল তৈরির কাজও আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণের দাবী রাখে। অতীত বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে তথ্যের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার প্রক্রিয়া অনুশীলনের, এ এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।

Spread the word

Leave a Reply