গৌতম রায়
গত ২০-২১ অক্টোবর, ২০২২ মধ্যরাতে সল্টলেকের করুণাময়ীতে টেট উত্তীর্ণ হবু শিক্ষকদের ৮৪ ঘণ্টা অনশন আন্দোলনকে যে বর্বরতায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পুলিশ মাত্র ১৫ মিনিটের তথাকথিত অপারেশনের দ্বারা উচ্ছেদ করল, সেই দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে দেখতে আমার পাশের শহরের সেই বইওয়ালার পুত্রবধূর কথাই বারবার মনে পড়ছিল। কি নিশ্চিন্ত নিরাপত্তায় সে তখন মধ্যরাত্রে স্বামী ,শিশু সন্তানের সঙ্গে সুখনিদ্রার স্বপ্নাতুর দুনিয়াতে বাস করছে ।আর তারই মত শত শত নারী, শিশুসন্তানদের বুকে জড়িয়ে দিনের পর দিন খোলা রাস্তায় রোদ ঝড় জল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, রাজপথে বসে থেকেছে তাঁদের প্রাপ্য চাকরিটা আদায় করবার জন্য ।অনশন করেছে তাঁদের প্রাপ্য চাকরিটাকে পাবার আশায় ।
একটি গণতান্ত্রিক সরকার, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বড়াই করে যে সরকার, সেই সরকারের পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর কেবল হামলাই চালায়নি, দেশের সহ নাগরিকদের, হবু শিক্ষকদের যেভাবে চ্যাংদোলা করে আন্দোলন স্থল থেকে তুলেছে, তাকে শুধু নিন্দা করলেই সবটা বলা হয় না ।যেভাবে আন্দোলনরত মহিলাদের মধ্যরাত্রে একটা দুটো মহিলা পুলিশ রেখে ,বাকি সব পুরুষ পুলিশদের দ্বারা আন্দোলন স্থল থেকে উৎখাত করেছে ,তার নিন্দা করবার জন্য কোনো ভাষাই বোঝায় বিশ্বের কোনো শব্দ ভান্ডারে নেই।
টেলিভিশনের পর্দায় মধ্যরাত্রে আমরা শিউরে উঠছিলাম কিভাবে আন্দোলনকারীদের উপরে পুলিশ শারীরিক অত্যাচার চালিয়েছে। মহিলা আন্দোলনকারীদের উপরে কিভাবে পুরুষ পুলিশ শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। আন্দোলনকারী সধবা মহিলাদের শাখা ইত্যাদি যেগুলি তাঁদের এয়োতীর চিহ্ন হিসেবে তাঁদের কাছে বিশেষ মর্যাদার, স্বামী সন্তানের সুখ সমৃদ্ধির প্রতীক, সেই সমস্ত জিনিস গুলিও পুলিশ ভেঙ্গে দিয়েছে উচ্ছেদের নাম করে। কোন ভাষাতেই পুলিশের এই মধ্যরাত্রের বর্বরতাকে নিন্দা করা বোধহয় সম্ভব নয়। কোন ভাষাই উপযুক্ত নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের টেট উত্তীর্ণ ,যোগ্য মানুষদের ন্যায্য আন্দোলনকে এইভাবে রাষ্ট্রীয় জুলুমবাজির ভেতর দিয়ে তুলে দেওয়ার ঘটনার সমালোচনা করা।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কি পর্বত প্রমাণ দুর্নীতি করেছে তা কেবল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ নয় ,গোটা বিশ্বের মানুষই আজ জানেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসবার পর থেকে সরকারি স্তরের নিয়োগের সিংহভাগই ঘটেছে পিছনের দরজা দিয়ে। শাসক দলের কেষ্টবিষ্টুদের মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে। যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পাননি। সেটা স্কুল শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই ,হোক প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই হোক , আর মাদ্রাসা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই হোক ।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে স্বচ্ছতা বহু লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছিল ,সেই প্রক্রিয়াকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই একেবারে জলাঞ্জলি দেন ।গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে চলতে থাকে ঘুষের বিনিময়ে। লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে সম্পূর্ণ অযোগ্য প্রার্থীদের একটা বড় অংশ পেছনের দরজা দিয়ে সরকারি চাকরি দখল করে। আর বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা সহ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, পরীক্ষাতে ভালো ফল করা সত্ত্বেও ,যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পান না ।গত বারো বছরে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত ঘুষ ছাড়া ,শাসকদলের কেষ্ট বিষ্টুদের মোটা অংকের উৎকোচ দেওয়া ছাড়া, কোনো মানুষই চাকরি সরকারি চাকরি পাননি। নিয়োগ ক্ষেত্রে এই পর্বত প্রমাণ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত করছে ।রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা সেই সময়ের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে রয়েছে।তার পরিচিত পরিমণ্ডল থেকে কোটি কোটি টাকা ইডি, সিবিআই উদ্ধার করেছে ।ওই টাকাগুলো মূলত প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে এরা নিয়েছিল।
তাছাড়াও মমতা-ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই যিনি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হয়েছিলেন, তথা বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য গ্রেপ্তার হয়েছে। আরো বহু শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষজন অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি র পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের ,এমনকি সাদা খাতা জমা দেওয়া প্রার্থীদেরও লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দিয়েছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা ঘুষের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে আদালত কঠিন কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও একটা খুব বড় প্রশ্ন থেকে যায় এই যে, এইসব অযোগ্য, ঘুষের বিনিময় চাকরি, বদলি পাওয়া শিক্ষকরা গত বেশ কয়েক বছর ধরে ছাত্রদের কাছে শিক্ষা বিষয়টিকে কিভাবে উপস্থাপিত করল?
মাঝে মাঝে সামাজিক গণমাধ্যমে হিন্দি বলয়ের বিভিন্ন স্কুলে অযোগ্য শিক্ষকদের শিক্ষাদানের ভয়াবহ অযোগ্যতার ভিডিও আমরা দেখেছি। তাই প্রশ্ন জাগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামানায় ঘুষের বিনিময়ে পরীক্ষায় ফেল করা সাদা খাতা জমা দেওয়া টাকার বিনিময়ে বদলি হওয়া এইসব শিক্ষকরা কি শিক্ষা ছাত্রদের দিয়েছে?
আদালতের হস্তক্ষেপে এইসব অযোগ্য শিক্ষকরা নিশ্চিত একদিন শিক্ষাঙ্গন থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। কিন্তু যতটুকু সময় এরা শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করতে পেরেছে, এই সময়কালে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার যে অবনমন এই অযোগ্য শিক্ষকদের দ্বারা রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে ঘটলো ,তার মূল্য আগামী বাংলার নাগরিক সমাজ কে চোকাতে হবে। এই অযোগ্য শিক্ষকরা ,ঘুষের বিনিময়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষকেরা, ঘুষের বিনিময়ে বদলি হওয়া শিক্ষকরা বহাল তবিয়তে অযোগ্যতায় ভরা শিক্ষাদান করে চলেছে আমাদের ভাবি প্রজন্মকে। আর যোগ্যতার ভিত্তিতে যাঁদের চাকরি পাওয়ার অধিকার ,তাঁরা চাকরি না পেয়ে ,দিনের পর দিন ,শত রকমের সমস্যাকে অস্বীকার করে, শরীর স্বাস্থ্যের দিকে না তাকিয়ে, পরিবার-পরিজনদের দিকে না তাকিয়ে, রাস্তায় বসে অবস্থান করেছেন । তারপর বাধ্য হয়ে অনশন করেছেন। অথচ তাঁদের প্রতি একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পুলিশ রাতের অন্ধকারে কি ভয়াবহ আচরণ করল।
মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যে কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয় ঘিরে যদি কোনো মহিলা রাজপথে আন্দোলনরত থাকেন, সূর্যাস্তের পরে পুলিশ প্রশাসন তাঁদের উৎখাত করতে পারে না। দিনের আলো ছাড়া ,পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ ছাড়া মহিলা আন্দোলনকারীদের পুলিশ উৎখাত করতে পারে না। সেদিন রাতে আমরা দেখলাম ; মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ অনশনরত মুমূর্ষু , হবু শিক্ষক, যাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের মহিলা রয়েছে,ন তাঁদেরকে বর্বরোচিতভাবে আন্দোলন স্থল থেকে কার্যত শারীরিক নিগ্রহের ভেতর দিয়ে, চ্যাংদোলা করে অজানা জায়গায় নিয়ে গেল। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে কিনা সে সম্পর্কে পুলিশের পক্ষ থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্পষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি। বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি ,আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন ; তাঁদের দু একজন সহযোদ্ধার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সে সম্পর্কে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট কথা জানা যায়নি । বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি, পুলিশের গাজোয়ারিতে আন্দোলনকারীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অসুস্থ আন্দোলনকারীদের গাজোয়ারির ভেতর দিয়েই পুলিশ থানার ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে ।থানায় যখন সেই আন্দোলনকারী কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন তিনি সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন। তার অবহিত করেই সেই আন্দোলনকারী কে আবার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখনও তিনি সংজ্ঞাহীন ।সেই আন্দোলনকারী বর্তমানে কেমন আছেন, তাঁর সংজ্ঞা ফিরেছে কিনা, তাঁর শারীরিক অবস্থা কিরকম –এসব কোনো কিছুই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত জানানো হয়নি ।
শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের এই নারকীয় অত্যাচার কেবলমাত্র হবু শিক্ষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এটা ভাববার কোন কারণ নেই। হবু শিক্ষকদের ন্যায্য চাকরির দাবিকে অতিক্রম করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের এই নারকীয়তার ফলশ্রুতি আগামী দিনে প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িক শক্তি তৃণমূল কংগ্রেস এবং তার মূল প্রতিভু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে উৎখাত করবার লক্ষ্যে নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক রচনা করবে।
গত শারদ উৎসবের সময়কাল থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি গোটা রাজ্য জুড়ে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি আরএসএস ও তার রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি এবং তাদের দোসর প্রতিযোগিতা মূলক সম্প্রদায়িকতার প্রতিভু তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে একটা বোঝাপড়ার খেলা চলছে। বিজয় দশমী আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠা দিবস। সেদিন আমরা দেখতে পেয়েছি , আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত , জাত পাত ঘিরে কিছুটা চমক লাগানো নতুন ধরনের কথা বলবার চেষ্টা করেছেন।
চরম বর্ণবাদী আরএসএস যে উচ্চ বর্ণের অভিজাত মনুবাদ সম্পৃক্ত চিন্তা চেতনার দ্বারা নিজেদের সমস্ত রাজনৈতিক ভিত্তিকে সামাজিকতার আড়াল দিয়ে ভারতবর্ষে কায়েম করবার চেষ্টা করছে, সেই বর্ণবাদী ব্যবস্থাকে নানা ধরনের মধুর বাক্য দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের একটা ভিন্ন মুখোশধারী অবস্থান তৈরি করবার চেষ্টা করছে , যে হিন্দু রাষ্ট্রের কথা আরএসএস তাদের প্রায় জন্ম লগ্ন থেকে বলে আসছে ,স্বাধীনতার পরবর্তী সময়কাল থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের পরিবর্তে, রাজনৈতিক হিন্দু রাষ্ট্রের প্রতি যে আরএসএস এবং তাদের বিভিন্ন সময়ের যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠন; হিন্দু মহাসভা, ভারতীয় জনসংঘ বা বর্তমানের বিজেপি এবং তাদের হাজার রকমের সঙ্গী সাথীরা সক্রিয় ,সেই হিন্দু রাষ্ট্রের শব্দগত কিছু অদল বদল ঘটিয়ে, রাজনৈতিক ভিত্তিকে অক্ষুন্য রেখে, প্রতিষ্ঠিত করবার লক্ষ্যে আরএসএস তাদের প্রতিষ্ঠা দিবসে ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছে।
আমাদের জানা আছে চরম হিন্দু সম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ,ফ্যাসিবাদী সংগঠন আরএসএস তাদের আগামী এক বছরের কর্মসূচির আভাস ,তাদের এই জন্ম দিবস বিজয় দশমীর সময় দেয় ।তাই এই আশঙ্কা আমাদের মধ্যে ক্রমশঃ তীব্র হতে শুরু করেছে যে, আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ,নরেন্দ্র মোদিকে তথা তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে আবার দিল্লির মসনদে ফিরিয়ে আনবার লক্ষ্যে ,ভারতের সংবিধানের মূল কাঠামোর আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে, রাজনৈতিক হিন্দুর রাষ্ট্রের পথে ভারতকে রিভার্স গিয়ারে পরিচালিত করবার জন্যে আরএসএস অত্যন্ত সক্রিয়।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের অভ্যবহিত পরে ২০২৫ এ আরএসএস এর শতবর্ষ ।সেই শতবর্ষকে সামনে রেখে গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, ফ্যাসিবাদী শক্তি তাদের নানা ধরনের পরিকল্পনা করতে শুরু করে দিয়েছে। এই সমস্ত পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা পূর্বাঞ্চল কেই তারা বেছে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তারা তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির চালাচ্ছে। সেই সমস্ত শিবির গুলিতে একদিকে তাদের তথাকথিত রাজনৈতিক আদর্শ, যা মূলত সামাজিক বিভাজন ,বিভেদ, হিন্দু মুসলমানের সংঘাতকেই উসকে দেওয়ার নামান্তর , আর তার পাশাপাশি প্রতিবেশী সহ নাগরিক, মুসলমানদের প্রতি সশস্ত্র আক্রমণের লক্ষ্যে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ।
এই সমস্ত ঘটনাক্রম ঘিরে রাজ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। সরকার পোষিত বিভিন্ন স্কুলে, বিভিন্ন জায়গায় এইসব সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলছে। আরএসএসের শাখা সংগঠন হিন্দু মহাসভা গান্ধীজীর সম্প্রীতির আদর্শকে বিনষ্ট করবার লক্ষ্যে দেবী দুর্গার অসুর হিসেবে গান্ধী মূর্তির আদলে অসুর মূর্তি নির্মাণ করছে ।
কোনো কিছুকেই আটকানোর লক্ষ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটিও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আমাদের মনে রাখা দরকার আরএসএসের হিন্দু রাষ্ট্র স্থাপনের এই যে কালক্রম ,আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্বত প্রমাণ দুর্নীতিকে আড়াল করতে প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িকতার রাজনীতি ,সেগুলি কিন্তু একই সুতোতে গাঁথা। বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার সদস্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাকে আরএসএস ‘দেবী দুর্গা’ বলে সম্বোধন করে, যে মমতা আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত পশ্চিমবঙ্গে এলে নির্বিঘ্নে তিনি যাতে সমস্ত ধরনের বিভাজন মূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করে দেওয়াই শুধু নয়, তার প্রতি সহানুভূতি সূচক মানসিকতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ফুল মিষ্টি ইত্যাদি প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাকে পাঠান, যে মমতা প্রকাশ্যে আরএসএস খারাপ নয় ,বলে বিবৃতি দেন, সেই মমতাই কিন্তু নিজের ঘনিষ্ঠ মহলের সমস্ত ধরনের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক দুর্নীতিকে আড়াল করে, আরএসএসকে এই রাজ্যে ভূমি কর্ষণের সম্পূর্ণ সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই হবু শিক্ষকদের উপরে এই ধরনের নারকীয় বর্বরতা চালালেন ।
এই বর্বরতা চালানোর মধ্যে দিয়ে মমতা কেন্দ্রের শাসকদের উদ্দেশ্যে যে আইনগত বিধি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্ররোচনা দিচ্ছেন না , তা হলফ করে বলতে পারা যায় না। এই নারকীয়তার ভেতর দিয়েই মমতা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চান ,যাতে তাঁর ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে ,তাঁর স্বাভাবিক মিত্র আরএসএস বা তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয় গোটা পূর্বাঞ্চল এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতাকে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের এক ভয়ংকর পর্যায়ে পর্যবসিত করতে পারে।
মতামত লেখকের নিজস্ব