Last Days Of Lenin: A Memoir

ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

১৯১৮ সালের ৩০ শে অগাষ্ট, রাশিয়ায় বিপ্লব সফল হবার পরের বছরে একটি বিশেষ দিন। মস্কোর দক্ষিণ প্রান্তে হ্যামার অ্যান্ড সিকল নামের অস্ত্র কারখানায় বক্তৃতা করে বেরিয়ে আসছেন লেনিন, ততদিনে গোটা পৃথিবী তার নাম জেনে গেছে। গাড়িতে ওঠার আগে লেনিন কে ঘিরে রয়েছেন অনেকেই, হঠাৎ পিছন থেকে তার নাম ধরে কেউ জোরে ডেকে উঠলে তিনি পিছন ফিরে সেদিকে তাকান – আর সাথে সাথেই তিনটি গুলির শব্দ। একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও বাকি দুটি লেনিনের শরীরে ঢুকে যায়। পরে আদালতে বিচারের সময় আততায়ী নিজের পরিচয় জানায় – ফ্যানী এফিমোভনা কাপ্লান। ব্রেস্ৎলিতোভস্ক চুক্তির বিরোধিতা করে গোটা রাশিয়াকে যুদ্ধের অন্ধকারে ঢেকে দিতে চেয়েছিল যারা – সোশ্যালিস্ট রিভল্যুশনারি দল তাদের মধ্যে অন্যতম, এই দলেরই সদস্য ছিলেন ফ্যাণী কাপ্লান।

আততায়ী ফ্যানি কাপ্লান
চিত্রকরের তুলিতে লেনিনকে গুলি করার দৃশ্য

না। লেনিন গুলির আঘাতে মারা যান নি। তিনি বুলেটের আঘাতে আহত হন, সেই আঘাতের ধাক্কা বাকি জীবনে তাকে আর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে দেয় নি। বুলেট দুটি জীবিত অবস্থায় লেনিনের শরীর থেকে বের করা যায়নি।

অসুস্থ লেনিনের পাশে তার বোন উলিয়ানোভনা এবং চিকিৎসক কোজেভনিকোভ (১৯২৩)
হুইলচেয়ারে বসে লেনিন (১৯২৩)

চিকিৎসকদের কড়া রুটিনে থাকা শুরু হয় তার।  ঘরবন্দী লেনিন কাজে ফিরতে চেয়েছেন বার বার। শরীর ক্রমশ অবশ হয়েছে। তার শরীরের ডানদিক পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়, ১৯২২ সালে হৃদযন্ত্র বিকল হবার ক্রমিক ফল। অসুস্থ শরীর, ভয়ঙ্কর মাথা যন্ত্রণা এবং ক্রনিক ইনসোমনিয়া আক্রান্ত লেনিন স্তালিনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ চেয়ে ছিলেন। অসহ্য যন্ত্রনায় তিলে তিলে নিশ্চিত মৃত্যুমুখে চলে যাওয়া বিপ্লবীর জীবনে মানায় না বলে মনে করতেন – নিজে বিপ্লবী ছিলেন বলেই জানতেন আরেকজন সাচ্চা বিপ্লবীর কাছেই একমাত্র এমন বিষ পাওয়া যাবে। তাই স্তালিন।

না। লেনিন বিষ খেয়ে মারা যান নি। কমরেড স্তালিন লেনিনের সেই ইচ্ছায় সায় দেন নি। বিপ্লবী, জনগণের নেতা ছিলেন বলেই তিনিও জানতেন অমন মৃত্যু লেনিনকে মানায় না। রাগে, অভিমানে, শারীরিক যন্ত্রনায় অশক্ত লেনিন সেদিন স্তালিনের সাথে কথা বলা বন্ধ করেছিলেন। এসব নিয়ে আজও ট্রটস্কিপন্থীরা উদ্ভট গুজব ছড়ান।

লেনিনের মৃত্যুর পরে কফিনের সাথে ক্রুপ্সকায়া, কালিনিন এবং টমস্কি
লেনিনের কফিনের সাথে স্তালিন, টমস্কি এবং কামেনেভ

১৯২৩ সালে দ্বিতীয়বার লেনিনের হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। শারীরিক সংকট চরম আকার নেয়। সেই সংকটকালীন অবস্থা নিয়েই লেনিন লড়াই করে চলেন, সোভিয়েত নিয়ে চিন্তায়, জনগণের স্বার্থ নিয়ে চিন্তায়। জনগণের স্বার্থ ছাড়া কমিউনিস্টদের অন্য কোনো স্বার্থ নেই – একথায় আমরা নিজেদের অভ্যস্ত করি, লেনিন সেই কথা যাপন করতেন। চর্চা করতেন।

এই ট্রেনে করে লেনিনের মৃতদেহ গোর্কি থেকে মস্কোতে নিয়ে আসা হয়

১৯২৪ সাল, ২১ শে জানুয়ারি। সোভিয়েত রাশিয়ার গোর্কি অঞ্চলে থাকাকালীন লেনিন মারা যান। পূর্ব ইউরোপের সময় অনুযায়ী তখন সন্ধ্যা ৬টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। মৃত্যুর কারণ নির্ধারণে বলা হয় রক্তবাহক শিরা – ধমনীর দীর্ঘ, ধারাবাহিক এবং দুর্ভেদ্য সমস্যা।

আজও ধনতন্ত্র লেনিনের ভুত দেখে, আজও তারা দিস্তা দিস্তা পাতা খরচ করে লেনিনের নামে কুৎসা এবং মিথ্যাচারের পাহাড় গড়ে। আজও মানুষের মনে ভ্রান্তি ঢুকিয়ে দিতে তারা লেনিনের মৃত্যুর জন্য অজ্ঞাত ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব হাজির করে – ট্রটস্কিপন্থীরা সেইসব বিকট তত্ত্বের সূত্র যোগান দেন।

বিপ্লবী লেনিন, মানুষ লেনিন মারা গেছেন, আমাদের কাজ লেনিনবাদকে বাঁচিয়ে রাখা – মার্কসবাদকে বাঁচিয়ে রাখতে লেনিনবাদকে রক্ষা করা আমাদের অন্যতম কর্তব্য।

সৌভিক ঘোষ

Spread the word

Leave a Reply