তিলক কানুনগো
একটা সময় আমাদের দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থাগুলির হাতে। স্বাধীন ভারতবর্ষে প্রথম বিদ্যুৎ আইন ছিল ‘The Indian electricity supply act 1948’। এই আইন প্রণয়নের প্রশ্নের সংবিধান প্রণেতা ডঃ বি আর আম্বেদকর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের শিল্পের এবং আর্থিক উন্নয়নের প্রশ্নে বিদ্যুৎ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এইরকম একটি শিল্প রাষ্ট্রের হাতে থাকা উচিত।
২০০৩ সালে ১৩ দিনের বিজেপি সরকার বিদ্যুৎ বিল,২০০১ সংসদে আইনে পরিনত করে। যার নাম হয় বিদ্যুৎ আইন, ২০০৩। সেই সময়ে একমাত্র বামপন্থী সাংসদরা ছাড়া বাকি সবাই এই বিলকে সমর্থন করেছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আইনের মূল কথাই ছিল বিদ্যুৎ শিল্পের বেসরকারিকরণ করা। যদিও ২০০৪ সালে প্রথম ইউ পি এ সরকার বামপন্থীদের চাপে এই আইনে অনেকগুলি জনস্বার্থবাহী সংশোধনী আনতে বাধ্য হয়।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ শিল্পের বেসরকারিকরনের লক্ষে বিদ্যুৎ( সংশোধনী) বিল, ২০১৪ নিয়ে আসে। যদিও দেশজুড়ে বিদ্যুৎ কর্মী ও সাধারণ মানুষের আন্দোলনের ফলে এই বিল আইনে পরিনত করতে ব্যর্থ হয়। এরপরেও বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল সংসদে নিয়ে আসে। সর্বশেষ বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল, ২০২২ তাঁরা নিয়ে আসেন। কিন্তু এই বিলও এখনও সংসদে তারা পাশ করাতে পারেননি।

মোদি জমানায় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের অবস্থা হয়েছে ভয়াবহ। কেন্দ্রীয় সরকার একের পর এক জনবিরোধী নীতিসমূহ চাপিয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে বাধ্য করেছে বিদেশ থেকে বেশী দাম দিয়ে কয়লা আমদানি করতে। ফল হয়েছে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। লাভ হয়েছে আদানী, আম্বানিদের আর বোঝা বেড়েছে সাধারণ মানুষের। দেশের ১২ টি রাজ্য সরকার এই বিলের বিরোধিতা করলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রাথমিকভাবে এই বিলের বিরোধিতা করেনি। পরবর্তী কালে বিদ্যুৎ কর্মী ও রাজ্যের মানুষের গন আন্দোলনের চাপে বিলের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দেয়। এই বিলের মুল উদ্দ্যেশ্য ছিল বিদ্যুৎ বিতরণ ক্ষেত্রের লাভজনক এলাকা বেসরকারি মালিকানার হাতে তুলে দেওয়া। এই বিতরণ ক্ষেত্রের পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে সরকারী অর্থে এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে।
পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম তার নিজস্ব কয়লাখনি থেকে উৎপাদিত কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। যার সুফল পাবার কথা রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। কিন্তু রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ মাশুলে সেই সুযোগ সাধারণ গ্রাহকদের দেয়না। যদি তা দিত তাহলে রাজ্যে বিদ্যুৎ মাশুল অনেক কম হত। বিদ্যুৎ বিলকে আইনে পরিনত করতে না পেরে ২০২১ সালের জুলাই মাসে নিয়ে এসেছে এক নতুন স্কীম। যার নাম রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কীম (RDSS)। এই স্কীম কার্যকর করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার চালু সমস্ত আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। ৩ লক্ষ কোটি টাকার প্রিপেড স্মার্ট মিটারিং স্কীমে ২ লক্ষ কোটিরও বেশী টাকার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকার ও গ্রাহকদের উপর।
এই স্কীম চালু হলে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের নামে পারষ্পরিক ভর্তুকি তুলে দেবে। তার ফল কি হতে পারে তা আমরা দেখেছি গ্যাসের ক্ষেত্রে। রেগুলেটরি কমিশনকে বাধ্য করা হবে বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি করতে। গোটা দেশজুড়ে গ্রাহকদের বাধ্য করা হবে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসাতে। এবং তা বসাতে হবে গ্রাহককে নিজস্ব ব্যায়ে। স্মার্ট মিটারের আয়ু বড় জোর ৫/৬ বছর। মিটারের দাম হবে ১০/১২ হাজার টাকা। এই টাকা মাসে মাসে গ্রাহক কে দিতে হবে। যার অর্থ এখন আপনাকে মিটার ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ১৫ টাকা দিতে হয়। স্মার্ট মিটার লাগলে আপনাকে দিতে হবে প্রতি মাসে ১৭০/১৭৫ টাকা । অর্থাৎ মাসে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা বাড়তি খরচ হবে। এই ব্যবস্থাই গ্রাহককে আগাম টাকা দিতে হবে তারপর বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে। ৫/৬ বছর বাদে যখন আপনার মিটার খারাপ হবে তখন আবার আপনাকে মিটার কিনতে হবে ঐ নির্দিষ্ট কোম্পানীর।
বর্তমানে গ্রাহক আগে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তারপরে বিদ্যুতের বিল বাবদ দাম মেটান। এই ব্যবস্থায় আপনাকে আগে রিচার্জ করতে হবে তারপর আপনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। রিচার্জ শেষ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এখন কোন কারনে গ্রাহক নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ বিল জমা করতে না পারলেও আপনি কিছুদিনের জন্য সুযোগ পান। সেই সুযোগ গ্রাহকের কাছে থাকবে না। বর্তমানে সারাদিনের বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য ইউনিট পিছু একই দাম দিতে হয় গ্রাহককে। প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবস্থায় দিনের বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের দাম হবে বিভিন্ন রকম। যখন চাহিদা বাড়বে তখন বিদ্যুতের দাম বাড়বে আবার যখন চাহিদা কমবে তখন বিদ্যুতের দাম কমবে। গ্রাহকের বিদ্যুতের বিলের বোঝা বেড়ে যাবে ভয়াবহভাবে। ফলে গরীব মানুষ এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষও বিদ্যুৎ ব্যবহারের অধিকার হারাবে।
চুক্তি অনুযায়ী যে গ্রাহকের লোড কম আছে অথচ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন বেশী তাঁরা বিপদে পরবেন। লোড বেশী হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। লোড বাড়ানোর জন্য তাঁকে ছুটতে হবে বণ্টন কোম্পানীর অফিসে। সেখানে আবেদন করার পরে টাকা জমা দিতে হবে। তারপর বণ্টন কোম্পানী মিটার কোম্পানিকে জানালে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে। বিলের টাকা বেশী মনে হলেও কার্যত কোন অভিযোগ জানাতে পারবেননা। অভিযোগ যদিও বা জানাবেন তা জানাতে হবে বন্টন কোম্পানীর কাছে। তারা জানাবে মিটারিং কোম্পানিকে। তারা এসে মিটার চেক করবে। মিটারের কোন সমস্যা থাকলে বন্টন কোম্পানিকে জানাবে। তারপর বণ্টন কোম্পানী ব্যবস্থা গ্রহন করবে। কিন্তু আপনি যতক্ষন পর্যন্ত স্মার্ট মিটার রিচার্জ না করবেন ততক্ষন বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে না।
সকল গ্রাহকের ভর্তুকি কার্যত তুলে দেওয়া হবে। বিশেষ করে কৃষি গ্রাহকদের ফিডার আলাদা করে তাদের পারষ্পরিক ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে। যার ফলে দেশের কৃষি ব্যবস্থা চুড়ান্ত সংকটে পরবে। সংকটে পড়বে দেশের কৃষক সমাজ। কৃষিজাত পন্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে বহুগুন।
বিদ্যুৎ সংবিধানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। এই ব্যবস্থাই কার্যত রাজ্য তালিকার বাইরে চলে যাবে।
কেন এই ‘RDSS’ স্কীম?
‘RDSS’ স্কিমের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খাতে কেন্দ্রীয় সরকার ৯৭,৬৩১ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করেছে। উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে সরকারের অর্থে পরিকাঠামো উন্নয়ন করে দেশী বিদেশি কর্পোরেট পুঁজির হাতে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে তুলে দিয়ে লুঠের ব্যবস্থা কায়েম করা।
কেন্দ্রীয় সরকার চায় বিদ্যুতকে বাজারের পন্যে পরিনত করতে। অর্থনীতির নিয়মে বাজারে যেমন জিনিষের চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে আবার একইরকমভাবে চাহিদা কমলে দাম কমে বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থা করতে চাইছে। বর্তমানে রাজ্যের কোথাও কোথাও “TOD” মিটার চালু আছে। কিন্তু সেই মিটারে কোন চিপ নেই। স্মার্ট মিটার ব্যবস্থায় সেই চিপ লাগিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকের যাবতীয় তথ্য হস্তগত করতে চায় সরকার ও কর্পোরেট পুঁজি। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুতের জন্য আলাদা ফিডারের ব্যবস্থা করবে এই স্কিমের মধ্যে দিয়ে। এবং কৃষি ক্ষেত্রে পারষ্পরিক ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নেওয়াই হচ্ছে মুল উদ্দ্যেশ্য। যার ফলে কৃষি উৎপাদনের খরচ বাড়বে।
প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করবে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী , যাঁরা মিটার রিডিং, বিলিং এবং আনুষঙ্গিক কাজে যুক্ত আছেন তাঁদের কাজ চলে যাবে চিরতরে। যার মধ্যে অধিকাংশ ঠিকা শ্রমিক।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ হরণকারী এই প্রকল্পকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাজ্যের বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার উপর জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে।
এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের ক্ষোভ ইতিমধ্যে গণবিক্ষোভ-এর চেহারা নিয়েছে। আমাদের রাজ্যেও ইতিমধ্যে শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রিপেইড স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে। বর্তমানে বন্টন কোম্পানি কোথাও কোথাও গার্হস্থ্য গ্রাহকদের স্মার্ট মিটার লাগানোর কাজ শুরু করেছে । সেই সমস্ত এলাকার গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। এমনকি দেখা যাচ্ছে গার্হস্থ্য গ্রাহকের ২৫০০/৩০০০ টাকার রিচার্জ মাত্র ১৫ দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে । ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় সাধারণ মানুষ এই প্রিপেইড স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে গণ-বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। ক্ষোভের মুখে পড়ে বন্টন কোম্পানি প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রিচার্জ শেষ হয়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না। গ্রাহককে ৩০০ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। গ্রাহক যখন আবার রিচার্জ করবেন তখন ওই ৩০০ টাকা রিচার্জ থেকে কেটে নেওয়া হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ১০০০ টাকা রিচার্জ করেন তাহলে ৩০০ টাকা কেটে নিয়ে আপনার থাকবে ৭০০ টাকা। এই ব্যবস্থা আসলে গ্রাহককে বোকা বানানোর একটা প্রচেষ্টা মাত্র । গণ আন্দোলনের চাপে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে প্রিপেড স্মার্ট মিটার লাগানোর কাজ স্থগিত থাকবে। কিন্তু তাতেও আন্দোলনকে থামানো যায়নি, আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। কেবলমাত্র উত্তর ২৪ পরগনা নয় গোটা রাজ্য জুড়েই আন্দোলন সংঘটিত হচ্ছে। প্রিপেইড স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গন আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। অবশেষে আন্দোলনের চাপে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার লাগানো বর্তমানে স্থগিত থাকবে। কিন্তু প্রিপেইড স্মার্ট মিটার কেবলমাত্র স্থগিত থাকলেই হবে না, এই প্রকল্প সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নিতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে। অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার সাথে সাথে বিদ্যুৎ শিল্পকেও বেসরকারিকরণ করার যে কোন রকমের পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে। অন্যান্য দাবির সাথে সাথে এই দাবিকেও সামনে রেখে আগামী ৯ জুলাই গোটা দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট সফল করতে হবে।
কেন স্মার্ট মিটারের বিরোধিতা করব?
১) এখন আমরা আগে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তারপর বিদ্যুতের বিল বাবদ টাকা জমা দিই। স্মার্ট মিটারিং ব্যবস্থায় আগে টাকা দিতে হবে, তারপর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন মোবাইলে আপনি আগে টাকা দেন তারপর কথা বলতে পারেন। টাকা শেষ হয়ে গেলে নিজে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এমনকি মিটারিং সংস্থার ভুলে টাকা শেষ হয়ে গেলেও কার্যত কিছু করার থাকবে না।
২) সকল গ্রাহকের ভর্তুকি কার্যত তুলে দেওয়া হবে। বিশেষ করে কৃষি গ্রাহকদের ফিডার আলাদা করে তাদের পারষ্পরিক ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে। যার ফলে দেশের কৃষি ব্যবস্থা চুড়ান্ত সংকটে পরবে।
৩) চালু করা হবে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার। অর্থাৎ যদি কোন রাজ্য সরকার ভর্তুকি দিতে চায় তাহলে তা সরাসরি ব্যাংকে ট্রান্সফার করা হবে। যা ইতিমধ্যে রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে চালু করা হয়েছে। এবং তার পরিনতি কি হয়েছে তা সবাই জানি।
৪) স্মার্ট মিটারিং ব্যবস্থা গ্রাহককে সরাসরি খোলা বাজারে ঠেলে দেবে। বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হবে অস্বাভাবিক হারে। দিনের বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের দাম হবে বিভিন্ন রকম। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় বিদ্যুতের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫০ টাকা অথবা তার থেকেও বেশী হবে।
৫) বন্টন সংস্থা বাজার থেকে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহককে সরবরাহ করবে। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করবে স্মার্ট মিটারিং কোম্পানী এবং সমস্ত সরকারি বেসরকারী কোম্পানীর টাকা ফেরত দেবার পরে অবশিষ্ট যা থাকবে তা পাবে বন্টন কোম্পানী। অর্থাৎ বন্টন কোম্পানিকে তার প্রাপ্য টাকার জন্য তৃতীয় পক্ষের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে।
৬) রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ আর্থিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। বেসরকারি কোম্পানী লাভজনক এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবসা করবে। অপরদিকে ভেঙে পরা আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে গ্রামীন এলাকায় ব্যাপক হারে অবিদ্যুতায়ন করবে সরকারী কোম্পানী।
৭) বিরাট সংখ্যক গ্রাহকের ব্যাক্তিগত তথ্য চলে যাবে দেশী বিদেশী বেসরকারি কোম্পানীর হাতে।
৮) ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলছে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
৯) এই ব্যবস্থা দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করবে।
লেখার সঙ্গে ব্যবহৃত ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে নির্মিত