আজ ২১ জুন। ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের যাত্রা শুরু হল। এর ১০ বছর আগে প্রবল উচ্ছ্বাসে তৈরী হয়েছিল প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার। সেখানে বামপন্থীরা ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন অজয় মুখার্জী – বাংলা কংগ্রেসের নেতা। কংগ্রেসের মধ্যে এমন ভাঙন ঘটেছিল অনেক রাজ্যে। অনেক রাজ্যেই অ-কংগ্রেসি সরকার তৈরী হয়েছিল। তখন সিপিআই(এম) সব সরকারে যোগ দিতে যায় নি। পার্টির নীতি, যে সরকারে নীতি নির্ণায়ক অবস্থানে যাওয়ার মত তাকত নেই সেখানে যোগ দিয়ে যা লাভ আখেরে তার চাইতে ক্ষতি বেশি। এমনিতেই আমাদের দেশের সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রিকতার চেহারাটুকুই আছে, মোদ্দা ক্ষমতা কেন্দ্রেরই হাতে। সংবিধান বহির্ভূত ভাবেও রাজ্যের ক্ষমতা সামান্য। আদতে এটা হল এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা। তাই পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা এবং ত্রিপুরা ছাড়া আর কোথাও আমরা সরকারে অংশ নিতে যাইনি। কেরালায় মুখ্যত বামপন্থী শক্তির পরিচালিত সরকার তো ১৯৫৭ সালে তৈরী হয়েছিল। ই এম এস নাম্বুদিরিপাদের নেতৃত্বে। দিল্লির সরকার যেই বুঝলো কেরালার সরকার মানুষের পুঞ্জীভূত সমস্যার মৌলিক সমাধান তো নয়, কিন্তু সেগুলো প্রশমন করতে শুরু করেছে সব ক্ষেত্রে তখনই তাকে খারিজ করে দিল- কায়েম করলো রাষ্ট্রপতি শাসন।
কিন্তু যুক্তফ্রন্টে আমাদের পার্টির কোন নেতা মুখ্যমন্ত্রী না হলেও তা গঠনে আমাদের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বের। অন্য বামপন্থীরাও সেই সরকারের শরিক ছিলেন। তবু এই যে কংগ্রেস হারলো, তাবড় সব নেতারা ধূলিসাৎ এতেই মানুষের সেকি উচ্ছ্বাস! পাড়ায় পাড়ায় লাল পতাকা উড়ছে। ল্যাম্প পোস্টের বাতি লাল কাচ-কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। আর পথে পথে মহল্লায় গ্রামাঞ্চলে সে উচ্ছ্বাস ফেটে পড়েছিল এক মহাপ্লাবনে। তা-ও সে সরকার কেবল ‘সংগ্রামের হাতিয়ার’- তাকেও দু’দুবার ভাঙা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার ভাঙার পর ফের নির্বাচন- কিন্তু ফলাফল যা তাতে সেদিন আর বামপন্থী সরকার গড়ে তোলা গেল না। রাষ্ট্রপতির শাসন এবং তার পরেই ১৯৭২-এর ভোটে চূড়ান্ত জালিয়াতি আর গুন্ডামি করে তৈরী হল সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের সরকার। সিপিআইও সেদিন তাতে যোগ দিয়েছিল। যে সন্ত্রাস যুক্তফ্রন্ট আমলেই ইতিউতি শুরু হয়েছিল বর্জিত কংগ্রেস আর বিপ্লববিলাসী অতিবামেদের হাতে, তা নজিরছাড়া চেহারা নিল ১৯৭২-এ ‘জেতা’ সরকারের দাক্ষিণ্যে। একদিন গোটা ভারতকেই গিলে ফেললো প্রায় তেমনই স্বৈরাচার আর বিশেষ করে এই বাংলায় ১৯৭৫-এ জরুরী অবস্থার সময়। সে নাকি ‘অনুশাসন পর্ব’! আদতে পশ্চিমবঙ্গে এলো আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের ভয়াবহ দিনগুলো। কলকাতায়, মফঃস্বলে, দূরজেলায় হাজারে হাজারে সিপিআই(এম) নেতা কর্মীরা বাস্তুচ্যুত হলেন, প্রায় তেরশ’ কর্মী নির্মম ভাবে খুন, কতজন জেলে গেলেন। অবশ্য সেটা পার্টির পক্ষে কিছু নতুন নয়,বিস্ময়েরও নয়। নতুন নয় জেলখানায় পুলিশী অত্যাচারের নির্মম হত্যাকান্ড। মনে পড়ে ইংরেজ আমলেরও কথা।
সেই সব অন্ধকারের দিন পার হয়ে শেষ পর্যন্ত যখন ১৯৭৭-এ লোকসভার ভোটে ইন্দিরা গান্ধী এবং সঞ্জয় গান্ধীরা হারলেন, সে এক অভাবনীয় উল্লাস। নব গঠিত জনতা দল তৈরী করলেন কেন্দ্রীয় সরকার। তারই ছায়াপটে এল পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার ভোট। জনতা পার্টির বাড়তি আসন দাবির নির্বোধ অহমিকার কাছে মাথা না নুইয়ে বামফ্রন্ট একযোগে ভোটে লড়ল। সিপিআই তখনও কংগ্রেসের সাথে রয়েছে।
২১জুন প্রথম বামফ্রন্ট সরকার তৈরী হল। জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রীত্বে মোট মাত্র পাঁচ জন মন্ত্রী শপথ নিলেন। সিপিআই(এম)-এর জ্যোতি বসু তো বটেই, সেই সঙ্গে কৃষ্ণপদ ঘোষ, ড. অশোক মিত্র, ফরোয়ার্ড ব্লকের কানাইলাল ভট্টাচার্য এবং আরএসপি-র যতীন চক্রবর্তী। তারা কেউ আজ নেই।
ড.অশোক মিত্র সেদিনকার কাহিনী লিখেছেন ‘আপিলা- চাপিলা’য়। “রাজভবনের প্রাঙ্গনে মস্ত শামিয়ানা খাটানো, তা হলেও মাত্র কয়েকশো জনের জায়গা করা সম্ভব হল তার তলদেশে। বাইরে জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার। একশ চুয়াল্লিশ ধারা উধাও, রাজভবনের উত্তর-পুব দ্বার থেকে শুরু করে কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট ধরে বিবাদী বাগ-রাইটার্স বিল্ডিং পর্যন্ত উদ্দাম মানুষের ভিড়। শপথগ্রহণ ও চা-চক্র অনুষ্ঠানান্তে কাতারে-কাতারে মানুষ জ্যোতি বাবুর গাড়ি ছেঁকে ধরে, ওরকম স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের ব্যঞ্জনা কদাচিৎ দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রীকে জনতা প্রায় শোভাযাত্রা করে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে পৌঁছে দিলেন। জ্যোতি বাবু দোতালায় অলিন্দ থেকে জড়ো-হওয়া সরকারি কর্মচারী ও জনতার উদ্দেশে ভাষণরত: ‘আমরা জনতার নির্বাচিত সরকার, জনতার অনুশাসন অনুসারে এই সরকার চলবে, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে বসে নয়।’
জ্যোতি বসুর লেখা ‘যতদূর মনে পড়ে’ -তে অবশ্য ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ প্রসঙ্গটি একটু আলাদা এবং আমরাও তা-ই জানি- জ্যোতি বসু বলেছিলেন’ আমরা শুধু রাইটার্স বিল্ডিং থেকে সরকার চালাব না।’
সেইদিন মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠক বসলো স্বল্প সময়ের জন্যে। দুটি মাত্র সিদ্ধান্ত- দলমতনির্বিশেষে সব রাজবন্দীর মুক্তি দেওয়া হবে এবং প্রথম অ্যাডভোকেট জেনারেল হবেন স্নেহাংশুকান্ত আচার্য। ময়মনসিংহের রাজকুমার হলেও কত সম্পদ যে পার্টির হাতে তুলে দিয়েছেন সময় অসময়ে তার হয়তো হিসাব নেই। এর পিছনে ছিল পার্টির প্রতি মতাদর্শের প্রতি অকুন্ঠ শ্রদ্ধা। এই যে সব রাজবন্দীর মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এতেই বোঝা গেল এই সরকারের লক্ষ্য হল এতদিন কংগ্রেসি স্বৈরাচারে নিষ্পেষিত হয়েছিল যে রাজনৈতিক কর্মীরা সেই স্বৈরশাসনের অবসান, নতুন বাংলা গড়ে তোলা।
২৩ জুন আরও ১৬ জন নতুন মন্ত্রী শপথ নিলেন যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা বিনয় চৌধুরী ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, আরএসপি -র দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, আর সিপিআইয়ের সুধীন কুমার। ২৫ জুন বামফ্রন্টের নির্দিষ্ট নেতাদের নিয়ে তৈরি হল ‘পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্ট কমিটি’ এর আহ্বায়ক ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে একজন থাকবেন।প্রথমে প্রবল গররাজি হলেও সব দলের অনুরোধে নিমরাজি হলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্ত, যার ‘সুযোগ্য ভূমিকার কথা এরাজ্যের মানুষ চিরকাল মনে রাখবেন’ বলে মন্তব্য করেছেন জ্যোতি বসু।
কিন্তু সরকারের কাছে প্রধান সমস্যা হল জনগণের অপরিমেয় প্রত্যাশা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সংবিধান আরোপিত ও সংবিধান বহির্ভূত পরাক্রম যা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কে নাম-কা-ওয়াস্তে করে ছেড়েছে। প্রত্যাশার চিরভাস্বর স্মারক ছিল কংগ্রেস ও নকশালপন্থীদের বেলাগাম আক্রমণে দীর্ঘদিন ঘরছাড়া সিপিআই(এম) কর্মীদের নিজেদের পাড়ায় দিয়ে আসার দৃশ্য । কোথাও কোথাও উল্লসিত শুভেচ্ছা জানিয়েছে বহুদিন না-দেখা প্রতিবেশীদের আকুল সারি। বামফ্রন্টের সাধারণ কর্মীদেরও কি কম প্রত্যাশা ! তারা কি সিপিআই(এম)-র কর্মসূচির নিবিড় পাঠ করেছে? সেখানে ১১২ নং ধারায় বলা ছিল সরকার গড়ার সুযোগ যদি তেমনভাবে আসে তা হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার – সে কেবল জনগণের পুঞ্জীভূত ক্লেশকে প্রশমন করতে পারবে আর আগামী দিনের মহত্তর সমাজবদলের সংগ্রামের দিকে এগিয়ে দিতে পার্টি পারবে।যাকে বলে ‘দাগ রেখে যাওয়া’ । পার্টির নবীন পার্টি কর্মীরা মিছিলের সামনে সমুদ্যত লম্বা-চওড়া ইঙ্গ – ভারতীয় পুলিশ কর্তার নেতৃত্বে বাহিনীর উদ্দেশ্যে বিবেক – জাগানো শ্লোগান দিত ‘পুলিশ তুমি যতই মারো, মাইনে তোমার একশ বারো।’ মুখে মৃদু হাসি – পার্টি কর্মসূচির ১১২ নং ধারার কথা মনে রেখে। কিন্তু আম আদমি !
সুতরাং সরকারের বারংবার উচ্চারণ ছিল তাদের ক্ষমতার ‘সীমাবদ্ধতা’ নিয়ে। এ সরকার কোন সব পেয়েছির আসর নয়। তাকে লড়তে হবে কেন্দ্রীয় সরকারেরও বিরুদ্ধে। শুধু নিজেদের রাজ্যের জন্যে নয়, সব রাজ্য সরকার বিশেষত বিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত সরকারের স্বার্থে অথবা আরও স্পষ্ট ভাবে বলা উচিত রাজ্যের জনগণেরই স্বার্থে। তাদের বোঝাতে হবে লড়াই ছাড়া দিল্লির সরকার তোমাদের ‘কিছু দেবে না, দেবে না- মিথ্যা কহে শুধু কত কী ভাণে’। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ তো স্বাধীনতার পর থেকেই বিশেষ বঞ্চনার শিকার। রণজিত রায় তাঁর Agony of West Bengal বইয়ে তার ফিরিস্তি দিয়েছেন।
তবে শুধু রাজবন্দীদের মুক্ত করা নয়। তার ভিতর দিয়ে একটি খবর পৌঁছে দেওয়া হল। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের ভিতরে ছিল প্রায় হাজার দুয়েক কংগ্রেস, নকশালপন্থী ও অন্যান্য কর্মীরা। শুধু বামপন্থী মন আছে জানতে পেরে বরখাস্ত সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ইত্যাদির প্রাপ্য বকেয়া সমেত চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়া, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, যা এক সময় পুলিশ বাহিনীকেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গণতন্ত্রের আরও সম্প্রসার করতে হবে। শুধু মহাকরণে বসে রাজ্য চালানো যাবে না। চাই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীভবন। গ্রামে শহরে সব মানুষের কাছে বিশেষ করে যারা প্রান্তিক তাদের কাছে, যারা বহুযুগ ধরে নানান লাঞ্ছনায় পীড়িত সেই মেয়েদের কাছেও ক্ষমতার অংশ পৌঁছে দিতে হবে। পরে একদিন বামফ্রন্ট শুধু নির্বাচিত পঞ্চায়েত ও পৌর কর্তৃপক্ষকে নয় একেবারে নির্বাচকমন্ডলীর কাছে ক্ষমতা পৌঁছে দেয়া। গ্রামে গ্রাম সংসদ আর গ্রামসভা এবং শহরে ওয়ার্ড কমিটির হাতে। পায়াভারি নতুন মোড়লরা যেন মাতব্বর না হয়ে ওঠে।
আর এই সঙ্গে এল যুক্তফ্রন্ট আমলে শুরু হওয়া ভূমি সংস্কারের অসমাপ্ত কাজ । ৩৪ বছরের জমানায় একাধিক সংশোধনী আইন এনে ( রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির আপত্তির কারণে যা বারবার স্থগিত বা প্রায় শিলীভূত হয়েছে) ভূস্বামীদের বেনাম জমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের মধ্যে বিলি করে, বর্গাদারদের উচ্ছেদ বন্ধ করে, সেচ ও সারের বন্দোবস্ত করে গ্রামের মানুষের চাহিদা বাড়াতেও তাদের স্বাবলম্বী করা হল। আর এর সাথে রইল পঞ্চায়েত। পরে আসবে নিরক্ষরতা দূরীকরণ আন্দোলন যা রূপ নেবে সাক্ষরতা অভিযানে, ধীরে ধীরে ইস্কুলের গন্ডি ছোবে এতদিনকার প্রাগৈতিহাসিক আঁধারে থাকা মানুষগুলি। তারা মাথা তুলে দাঁড়াল।
শহরের নামজাদা ডাক্তারের কাছে চোখ দেখাতে গিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম “,দূর থেকে ছোট-মাঝারি- বড় ইংরাজি ও বাংলা জ্বলজ্বলে হরফগুলো আঁকা আলোর বাক্সের একপিঠে গোল বৃত্তাকার একেক জায়গায় ফাঁক দেওয়া ‘বালা’ গুলোর তাৎপর্য কী? ওগুলো ময়লাই বা কেন? ডাক্তারবাবু বলেছিলেন , দৃষ্টিশক্তির পরখ করতে যারা আসে তাদের যারা নিরক্ষর তাদের জন্যে ঐটা রাখা আছে। তারা বালার কোন জায়গায় ফাঁক আছে দেখতে পারছে কি না যাচাই করা যায়। মশাই, আপনাদের আমলে ওটা অকেজো পড়ে আছে। গাঁ থেকে হেমব্রম, মুর্মু, বাগদিরাও আসে আজকাল,তারা হরফ চেনে – সাক্ষর হয়েছে।
ক্রমে ইস্কুলগুলোকে ধাপে ধাপে বারো ক্লাস পর্যন্ত অবৈতনিক করা হল। দেওয়া হল বিনা পয়সায় পাঠ্য বইও একটা স্তর পর্যন্ত। আদিবাসীদের জন্যে আলাদা ইস্কুল- একলব্য বিদ্যালয়।তারা যাতে হোস্টেলে থেকেই পড়াশুনা করে সে ব্যবস্থা হল।চালু হল আরো জলপানির ব্যবস্থা। মেধা ও সঙ্গতি ভিত্তিক আর্থিক সাহায্য একেবারে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত দেওয়া হল। তৃণমূলের সরকার এসে প্রকল্পের নতুন নাম দিল – সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সহাস্য মুখের ছবি। একেবারে কচি বাচ্চাদের জন্যে অঙ্গনওয়াড়ি বিদ্যালয় – সেখানে ন্যূনতম পুষ্টিকর খাদ্যের সংস্থান হল- সেখানকার শিক্ষিকাদের নাম হয়ে গেল ‘খিচুড়িদিদিমনি’ – আদর ও সমাদরের অভিধা। একেবারে তস্য গরিব এলাকায় বিদ্যালয় চালু হয়েছে মিড-ডে মিল। পড়াশুনায় টান বেড়েছে। দেওয়া হয়েছে সাইকেল। কেবল বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। শিক্ষাশাস্ত্রের নিয়ম মেনেই পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ইংরাজি বন্ধ করা হল যাতে মাতৃভাষাকেই শৈশবে ভালোমত শেখে যা পরে ভিন ভাষা শিখতে উৎসাহিত করবে। কিন্তু সোরগোল পড়ে গেল। যুগ ও পাল্টে যাচ্ছে। ব্যাঙয়ের ছাতার মত বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম বিদ্যালয় খুলতে লাগল। এই পরিস্থিতিতে ইংরাজি শিক্ষায় পুনঃপ্রবর্তন হল একেবারে প্রথম শ্রেণী থেকেই। কতটা লাভ হয়েছে অভিভাবকেরাই বলবেন।আর বলবে ছাত্ররা ।
সত্তরের দশকে কংগ্রেসি আমলে চালু হয়েছিল গণটোকাটুকি। কংগ্রেসি ছাত্র নেতাদের জন্যে অনেক সময়ে আরামপ্রদ নিভৃত পরীক্ষাকক্ষ। স্বল্প দক্ষিণা দিতে হত বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র নেতাদের। মাথা পিছু মাত্র পাঁচ টাকা – টোকো বা না টোকো। সত্যজিৎ রায়ের ‘জনঅরণ্য’ ছবিতে দৃশ্য মনে আছে? পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীরা সোরগোল তুলে টুকছে। সরলমতি নজরদার মাষ্টারমশাই বিনম্র কণ্ঠে (পাছে ছুরি খেতে হয়) কথা ছুঁড়ে দিলেন , কি হচ্ছে ভাই ? বিনম্রতর সুরে সমবেত হাসির কলরোলের মধ্যে উত্তর এল ‘পরীক্ষা হচ্ছে ভা…ই!’ ক্লাসরুমের ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা ‘সত্তরের দশক মুক্তির দশক’ । বামফ্রন্ট আমলে সেই টোকাটুকি বন্ধ হল। আজ অবশ্য টেলিভিশনের পর্দায় দেখি সহমর্মী অভিভাবক অভিভাবিকারাও টুকলির কাগজ ছুঁড়লেন পরীক্ষাকক্ষের জানালার দিকে অকম্পিত হাতে টিপ করে।
নতুন নতুন অনেক স্কুল কলেজ তৈরি হল। সরকারি পৃষ্ঠপোষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ও বানানো হল। মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমের আধুনিকীকরণ হল। আর নিয়োগ যাতে নীতিভিত্তিক হয় সে জন্য স্কুল স্তরে সার্ভিস কমিশন তৈরি হল। ফি বছর হাজার হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলেন। মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়োগেও আলাদা কমিশন করা হল। কলেজ সার্ভিস কমিশন হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থায় শিক্ষক ,ছাত্র, কর্মচারী, স্বল্পসংখ্যক প্রাক্তন ছাত্র সব অংশের প্রতিনিধিত্ব আনা হল। সরকার মনোনীতরাও থাকলেন। স্কুলের পরিচালনাতেও ইতিবাচক বদল আনা হল। ভুল কি আর হয়নি? সব কিছু নীতিমালা কি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা গেছে? কোথাও কি অন্ধতা একেবারে কাজ করেনি? পদক্ষেপের নামে হস্তক্ষেপ হয়নি ? হয়েছে। শোধরানোর চেষ্টাও হয়েছে বারংবার।
উচ্চশিক্ষা সংসদের সভাপতি সঙ্গত কারণেই দপ্তরের মন্ত্রীকে করা হয়েছিল। পরে সঙ্গততর কারণে মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে নেওয়া হয়। আজ অবশ্য মন্ত্রীরা সেই পদে সমাসীন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীর জন্য আলাদা জলপানি সহ নানান ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তফসিলিদেরও জন্য। চেষ্টা করা হয়েছে অনগ্রসর শ্রেণীর উৎসাহী বিদ্যার্থীদেরও শিক্ষার চৌহদ্দিতে নিয়ে আসতে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনগ্রসরদেরও তালিকা রাখা হয়েছিল।
আর রাজ্যের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার ব্যবস্থার বিধানে, চিকিৎসাবিদ্যাতেও বেসরকারি ক্ষেত্রকে আহ্বান করতে হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষারও ব্যবস্থা চালু করা হয়। নতুন সরকারি আইন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে কলকাতায়। আসলে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বেসরকারি ক্ষেত্রকে ডাকা হয়নি পাছে লাগামছাড়া হয়ে যায় সবকিছু- এখনতো দেখি সবই বেসরকারি। কেন্দ্রেও নীতি সেটাই। এব্যাপারে কেন্দ্র-রাজ্য ভেদ নেই। আসলে নতুন স্কুল কলেজ তৈরীর সময় বামফ্রন্টের নীতি ছিল পৌঁছানো যায়নি যেসব এলাকায় সেখানে পৌঁছানো। সেইজন্যই কলেজ স্থাপন কোথায় অগ্রাধিকার পাবে বাছাইয়ের সুবিধার জন্য মানচিত্র বানানো হয়। এখনকার সরকার বলছেন ওটা তারাই বানিয়েছেন। ভালো! বামফ্রন্টের আমলেই প্রাথমিকে ভর্তির সংখ্যা ৯৯.২৫% ছিল। ২০১১ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হয় ১০লক্ষ ৪হাজারের বেশি। শুধু সপ্তম বামফ্রন্টের আমলেই ৫টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭৩টি সাধারণ কলেজ তৈরী হয়। প্রেসিডেন্সি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। BE কলেজ যাতে IIEST হয় তার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কিন্তু অর্থনীতির কি হবে ? মানুষ খাবে কী ? কৃষির কম উন্নতি হয়নি। ধান, পাট, সবজি উৎপাদনে বামফ্রন্ট সারা দেশের মধ্যে সেরা হয়ে উঠেছিল। মাছের ক্ষেত্রেও তাই। সেচের আওতায় আনা হয় বিস্তর পরিমাণ জমি। ক্ষেতমজুরের মজুরি বাড়ে। গ্রামাঞ্চলে আর হাহাকার ছিল না। ব্যাতিক্রমী কিছু এলাকা ছিল। কিন্তু তা ব্যাতিক্রমই। সেখানেই তো সীমাবদ্ধতা। এরই ভেতরে সারা দেশে যা ভূমিসংস্কার হয়েছিল তার ২২% ই এই রাজ্যে হয়। উল্লেখ্য যে সারা দেশে জমির মাত্র ৩% পশ্চিম বাংলায়। ৩০.৪৪ লক্ষ মানুষ ১১.২৭ লক্ষ একর কৃষিজমির পাট্টা পেয়েছিল। এদের ৬৬% ই তফসিলি। অপারেশন বর্গার মাধ্যমে ১৫.১৬ লক্ষ বর্গাদারের নাম নথিভুক্ত করে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। ২০১১-য় সরকার চলে যাওয়ার পর সে পাট্টা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অনেক বর্গাদার উচ্ছেদও হয়েছে জবরদস্তি করে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য, তাদের নির্দিষ্ট স্থান যেমন রাখা হয়েছে পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই, পৌরসভায় সাধারণ সদস্য হিসাবে এবং কর্মকর্তা স্তরেও- তেমন গ্রামে ১.১৫ লক্ষ মহিলাকে পাট্টা দেওয়া হয় আর স্বামীস্ত্রীর যৌথ নামে ৬.২০ লক্ষ কে যৌথ পাট্টা বিলি করা হয়। ভূমিসংস্কারে সামগ্রিক ভাবে উপকৃত হয় গ্রামের প্রায় ৪৯ লক্ষ দরিদ্র পরিবার। এমনকি বাস্তু জমির মালিকানাও বিলি হয় ভূমিহীন ক্ষেত মজুরদের মধ্যে প্রধানত যাদের ২১% ই ছিল তফসিলি জাতি ও উপজাতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। গ্রামীণ পরিবার ও মৎস্যজীবীদের বিনা মূল্যে ৫ কাঠা করে জমি দেওয়া হয়। বলা বাহুল্য গ্রামাঞ্চলে উপকৃতদের মধ্যে তফসিলি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষই ছিল প্রধান। তারাই ছিল স্বাধীনতা ও দেশভাগ – উত্তর সময়ে পশ্চিম বাংলার গরিবদের অধিকাংশ আরেকটি কথাও প্রাসঙ্গিক, গরিবির নিরিখে সবকিছু সূচক মাথায় রেখে রাজ্যের ৫৬০০টি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়। জঙ্গলমহলের এলাকাগুলোই বেশি।
সবকিছু সত্ত্বেও রাজ্যের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনে কৃষির অংশ ২৬%, পরিষেবায় ৫০% এবং শিল্পে ২৪%। শিল্প হবে কোত্থেকে ? পশ্চিমবঙ্গ তো কংগ্রেসের বিরোধী বলে চিহ্নিত। ছিল নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ফরোয়ার্ড ব্লক। ছিলেন বিপ্লববাদী যুবকেরা যাদের অনেকেই পরে কমিউনিস্ট পার্টির যোগ দেন। কংগ্রেসের মধ্যে শরৎ বসুর মত নেতা তো দেশভাগ চানই নি। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বদ্ধমূল ছিলেন। বলতেন বাংলাভাগ করছিনা। পাকিস্তানকে ভাগ করছি। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বৈষম্য সেখানকার মানুষের যুগসঞ্চিত ‘অপরাধ’-এরই যেন পরিণাম। ওখানে নতুন শিল্পকে লাইসেন্স দেওয়া হবে না, কলকাতা বন্দরকে শুকিয়ে মারো, হলদিয়া হবে না। বক্রেশ্বর হবে না, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প — সর্বনাশ! সে তো পাকিস্তানি বোমার লক্ষ্যস্থল হবে। আর থাকছে মাশুল সমীকরণ নীতি। সে ইতিহাস সুদীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস। তারই মধ্যে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হবেই। যুবরা বলেছিলেন, রক্ত দেব। তবু বিদ্যুৎ তো নেই। শিল্প আসবে কেন? আর রটিয়ে দেওয়া হল ওখানকার শ্রমিকেরা ধর্মঘট করে, ঘেরাও করে, কাজ করে না। তা হলে?
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল। সমাজতান্ত্রিক পূর্ব ইউরোপও একে একে ধূলিসাৎ। এক সময়ে পাঁচশালা যোজনা সফল করার কাজে এই সোভিয়েতেরই সাহায্য নিয়েছিল কত। গড়ে উঠেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প। সোভিয়েত ভাঙ্গনের পরে দাঁড়িপাল্লা ঝুঁকে গেল ‘উদার’ পুঁজিবাদের দিকে- শুরু হল লগ্নি পুঁজির ভুবন জোড়া আসন পাতা। পুঁজি ঢুকবে সর্বত্র, সব পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হবে। তার ঠেলায় পড়ে-পাওয়া চোদ্দ আনার মত এদেশে লাইসেন্স- পারমিট রাজ উধাও। মাশুল সমীকরণ নীতিও বিদায়। এক সময় এ সব বঞ্চনার বিরুদ্ধে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বিরোধী দলের পরিচালিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে কনক্লেভ হয়েছিল শ্রীনগর ও কলকাতায় । ফারুক আব্দুল্লা থেকে রামকৃষ্ণ হেগড়ে বা এনটি রামারাও, নৃপেন চক্রবর্তী, বিজু পট্টনায়ক, শারদ পাওয়ার ও করুণাণিধির মত ডাকসাইটে নেতারা হাজির হয়েছিলেন সেখানে। রাজ্যপালের বেপরোয়া আচরণের বিরুদ্ধে, ৩৫৬ ধারার অবাধ প্রয়োগের মাধ্যমে রাজ্য সরকারগুলোকে স্থানীয় কংগ্রেসকে খুশি করার নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠল- তৈরি হল সারকারিয়া কমিশন। ৩৫৬ ধারা যখন তখন জারি করাও বোম্মাই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খণ্ডিত (তবু তারই দাবি বারংবার কংগ্রেস নেতাদের ও পরে মমতা ব্যানার্জীর নিদেন পক্ষে ৩৫৫ ধারা জারি হোক)- এই সবের দাঁতনখ অনেকটা ভাঙা হল- এসবই হল জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলির চাপে । সাধে সঙ্কটকালে তাঁকে প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ গ্রহণের আবেদনে বিরোধীরা সোচ্চার হয়! পার্টির নীতির কারণে জ্যোতি বসু তা প্রত্যাখ্যানও করেন। এখন অবশ্য সে কথা অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু এই সামগ্রিক পরিবেশে বামফ্রন্ট সরকারের কাছে সুযোগ এল শিল্প আনার , শিল্প গড়ার। মানুষের বারংবার সমর্থন মেলায় সরকারের সহমত বেড়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পার্টির কর্মসূচি জানিয়েছে, এ সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন বলে দাগিয়ে দেওয়া ভুল হবে, সবই যে পারবে তা-ও নয় , তবু শুধু মানুষের যন্ত্রণাকে প্রশমন করলেই চলবে না- দীর্ঘমেয়াদী পথ খুঁজতে হবে, খুঁড়তে হবে।
সর্বোপরি সরকারের স্থায়িত্ব, ট্রেড ইউনিয়নের ক্রমবর্ধমান দায়িত্বশীলতা, শেষ অস্ত্র ধর্মঘট নয়- বরং তাকে যখন তখন ব্যবহার করে ভোঁতা করার প্রাথমিক উচ্ছ্বাস নয় আর তাদের উৎপাদনশীলতা তো বহুপ্রশংসিত। অবশ্য শ্রমদিবস যা নষ্ট হতো ,তা বেশিরভাগটাই মালিকদের লক-আউটে । সে আর কে মনে রাখে? সুতরাং নতুন শিল্পনীতি নেওয়াই যায়। তবু শিল্প আসবে কেমন করে, বিদ্যুৎ যে নেই! একদিকে ভয়াবহ লোডশেডিং। ‘জ্যোতি চলে গেল’, ‘পাখি উড়ে গেল’ বলে বিরক্তিকর মন্তব্য আর টিপ্পনি। তৈরি হল একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বক্রেশ্বর তো বটেই, সেই সঙ্গে আরও অনেক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র , এমনকি অচিরাচরিত শক্তি উৎপাদনের জন্য বেশ কিছু ছোট ছোট কেন্দ্র। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্টনকে আলাদা কর্তৃত্বে আনা হল। কংগ্রেসি আমলে তো খুঁটি পোতা হয়েছিল। আর নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম। বামফ্রন্ট সরকার ২০ বছর মত সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি রাজ্য থেকে মাথা তুলল উদ্বৃত্ত উৎপাদনকারী রাজ্য হিসেবে। কোলাঘাট, সাঁওতালডিহি, সাগরদীঘিতে তাপবিদ্যুৎ, জলঢাকায় জল বিদ্যুৎ প্রকল্প হল। সিইএসসি- কে ছাড়পত্র দেওয়া হল টিটাগড় ,বজবজ ও হলদিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে। ইতিমধ্যে ঈশান কোনে মেঘ জমেছে। বিজেপি উঠে আসছে। দেহরক্ষীদের হাতে ইন্দিরা গান্ধী খুন হয়েছেন, সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এবং রাজীব গান্ধীকেও খুন করা হল জঘন্য ভাবে। ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ধূলিসাৎ করা হল। সারা দেশে দাঙ্গা। পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতি বসু কঠোর উপস্থিতিতে দাঙ্গার ঘটনা ঘটল না। সেই জ্যোতি বসুও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হল। শেষ পর্যন্ত জ্যোতি বসু ২০০০ – এর নভেম্বরে অবসর নিলেন। ২০০১ এই বিধানসভা ভোট। ষষ্ঠ বিধানসভা নির্বাচন- জ্যোতি বসু সামনে থাকতে পারছেন না। তরুণ নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কে সামনে রেখেই ভোট। বামফ্রন্ট আবারও জিতল। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি আওয়াজ তুললেন , ” কৃষি আমাদের ভিত্তি , শিল্প আমাদের ভবিষ্যত।” সেই আওয়াজ এখনও মানুষের মুখে মুখে । আর সেদিন তরুণদের মধ্যে নতুন স্বপ্নও বুনে দিল।
ভূমিসংস্কার তো সীমাবদ্ধ ক্ষমতার মধ্যে যথাসম্ভব হয়েছে। মানুষের চাহিদাও বেড়েছে। শিল্প গড়তেই হবে। না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে বাংলাকে। এছাড়া কর্মসংস্থান হবে কি করে? ভূমিসংস্কাররের ফলে জমির খন্ডীকরণও হয়েছে। আর এ রাজ্যে তো ৭০% জমিই আবাদযোগ্য। আছে কিছু এক-ফসলি জমি আর উর্বর জমি। ৩%-এর কম। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার ‘ ফিরে দেখা’ বইয়ে লিখেছেন, কৃষির ভারসাম্য বজায় রেখে,খাদ্য নিরাপত্তা অটুট রেখে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের নীতি উদ্ভাবনের চেষ্টা শুরু হয়। উর্বর কৃষি জমিকে যতটা সম্ভব অপরিবর্তিত রাখতে হবে। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ও শুখা জমি রূপান্তরের লক্ষ্য স্থির হয়। জেলা ভিত্তিক জমির মানচিত্র তৈরীর কাজও শুরু হয়। ছোট ছোট জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা শিল্পসংস্থার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সরকারি হস্থক্ষেপেই সেটা সম্ভব, জমির মালিকেরাও ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত হয়। জমি অধিগ্রহণ শুধু শিল্পসংস্থার হাতে ছেড়ে না দিয়ে ‘আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি’। সরকারের আন্তরিকতা ও নীতিতে শিল্পপতিরাও আকৃষ্ট হয়। তারা চায় লাভ বা মুনাফা। সরকার চায় কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন। এও এক লড়াই। শৈলেন দাশগুপ্তের প্রয়াণের পর অনিল বিশ্বাস যখন রাজ্য পার্টির সম্পাদক হন, তিনি বলেছিলেন, উন্নয়নও এক ধরনের শ্রেণী সংগ্রাম। একের পর এক নতুন শিল্পের পদধ্বনি শুরু হল। আয়োজন হল তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের। গড়ে উঠলো রাজারহাটে নতুন উপনগরী। বিধাননগরে ভিডিওকন কারখানার সম্প্রসারণের শিলান্যাস। আই বি এমের সাথে চুক্তি। বিধাননগরে মনিকাঞ্চন পার্ক। উইপ্রোর প্রধান আজিম প্রেমজির সাথে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক। হলদিয়ায় বৃহত্তর অনুসারী শিল্প। সাউথ এশিয়ান পেট্রোকেমের উদ্বোধন। বিদেশ সফরে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে চুক্তি নানান বিদেশি সংস্থার সঙ্গে। যে প্রযুক্তি আমাদের নেই, যে শিল্প আমাদের পক্ষে প্রায় সুদূরপরাহত, তাকে আমন্ত্রণ জানানো হল। তারাও আগ্রহী। পেপসি বললো হাওড়ায় আলু প্ৰক্রিয়াকরণের শিল্প গড়বে। মিতসুবিসি চাইলো হলদিয়াতে নতুন কারখানা গড়ে তুলতে। কলকাতায় নতুন সব উড়াল সেতু তৈরী হল। আরও হচ্ছে। আরও হবে। একের পর এক শিল্প সম্মেলন। ঢেউ উঠছে আশা ফুটছে। বিরোধীরাও চুপ করে নেই। তৃণমূল যেন ছুরি শানাচ্ছে।
২০০৬ এলো বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে বামফ্রন্টের অভাবিত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তরুণেরা ঢেলে ভোট দিল। গ্রামে-শহরে বামফ্রন্টের জয়জয়কার। ১৮ মে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিলেন। ২৮ জুন নেতাজি ইনডোরে বিজয় সমাবেশ। তার আগেই ১৯ জুন হলদিয়ায় ট্রাক কারখানার শিলান্যাস হয়ে গেছে। জুলাই মাসে কেন্দ্র রাজি হল কলকাতা বিমান বন্দরের আধুনিকীকরণে। ইতিমধ্যে এসে গেছে টাটা কোম্পানির সিঙ্গুরে নতুন মোটর গাড়ির কারখানার প্রস্তাব। বড় বড় শিল্পপতিরা উৎসুক। মোটর গাড়ির কারখানার অর্থ তার সঙ্গে অনুসারী সব ছোট শিল্প, মাঝারি শিল্পও গুণক প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠবে। বিরোধীরা বিশেষত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে মাওবাদীরা, আগমার্কা বিপ্লবীরা আর বামফ্রন্টের তাবৎ ছিদ্রান্বেষীরা দুশ্চিন্তিত। হাত কামড়াচ্ছে। দাঁত কিড়মিড় করছে। নখ ছুঁচালো করছে। এই পরিবেশেই সিঙ্গুরে গাড়ির কারখানা ও অনুসারী শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হল। সেপ্টেম্বরে সেখানকার বিডিও অফিসে জমির মালিকদের চেক দেওয়া হবে। তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী সামনে থেকে পাঁচমিশেলী হুজ্জুতবাহিনী নিয়ে বিশাল হামলা বাঁধালেন। নভেম্বরে হল বিধানসভা ভবনে নজিরবিহীন হাঙ্গামা – অধিবেশন কক্ষের ভেতরে। বাইরের লবিতে বেধড়ক ভাঙচুর। তার আগের মাসেই কিন্তু সিঙ্গুর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছিল। তাতে কি? তৃণমূল ওইসব পরোয়া করেনা-এবার নয়তো, নেভার। নন্দীগ্রামে নিছক গুজব রটিয়ে তৃণমূলের নেতৃত্বে মাওবাদীআগমার্কা সমাজতন্ত্রীদের সশস্ত্র হামলা হল। পুলিশও আক্রান্ত। অথচ জমি অধিগ্রহণের নোটিসই ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী তা স্পষ্ট বলেছিলেন। তৃণমূলের সন্ত্রাসে ৭জন খুন হল। পার্টি সমর্থকদের রীতিমত চামড়া গুটিয়ে লিঞ্চিং করা হল। তৃণমূলের প্রিয় স্লোগান ‘সিপিএম-এর চামড়া/গুটিয়ে নেবো আমরা’। পুলিশও খুন হল। কংগ্রেস ২৪ ঘন্টার বনধ ডাকলো। বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ নন্দীগ্রামে গিয়ে তেড়ে গালমন্দ করলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বললেন, সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ভুল হলে শোধরাতেও হবে। নন্দীগ্রামে গুজব, কৃষিজমি – বসতবাড়ি – মন্দির – মসজিদ সরকার সব কেড়ে নেবে। মুখ্যমন্ত্রী জনসভায় ঘোষণা করলেন, নন্দীগ্রামে কোথাও কোনো জমি অধিগ্রহণ হবে না। বিডিও অফিসে নোটিশ লটকানো হল। তবু অবরোধ উঠলোনা – সে যেন মুক্তাঞ্চল।
ওদিকে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। সরকার টাটাদের বলেছিল খড়্ গপুরে এই শিল্প করতে, কিন্তু টাটারা সিঙ্গুরেই চায়। তৃণমূল ইত্যাদির রামধনু জোট কৃষকদের মিথ্যা বোঝাচ্ছে । অথচ ৮০ শতাংশের বেশি কৃষক শিল্প ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বিবেচনা করে, একই সঙ্গে কৃষির নিরন্তর সমস্যা – ফসলের লাভজনক দাম না পাওয়া (কয়েক বছর পরেই, দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল কৃষকদের আত্মহত্যা – সেই ধারা আজও বহমান – কাজ না পাওয়া গরীবেরা ছুটছে ভিন রাজ্যে কাজের সুযোগ পেতে লাখে লাখে) অথচ কারখানার জন্য জমি দিলে আকর্ষক ক্ষতিপূরণ ও জমির বাড়তি দাম মিলবে। ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাদার ও ক্ষেতমজুরও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। আর যারা অনিচ্ছুক তাদের বৃহদংশের তো জমির কোন দলিলই নেই।
ওদিকে কারখানার কাজ চলছে। চলছে নিত্যনতুন হামলাও। কারখানার মাঠে তাপসী মালিকের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ পাওয়া গেল, কোথা থেকে এল? রটিয়ে দেওয়া হল সিপিআই(এম) মেরেছে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, সিবিআই তদন্ত করুক। সে মামলা আজও চলছে। তাপসীর বাবা আজ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেখানকার বিধায়ক মাষ্টারমশাই স্বগতোক্তির মতো বলেছেন, কারখানাটা হতে দিলেই ভালো হত। কিন্তু তা তো হয়নি। দিল্লি রোড অবরোধ করে দীর্ঘদিন তৃণমূলের নেতৃত্বে আন্দোলন চললো। সেখানে সর্বদলীয় পরিবর্তন প্রত্যাশীদের ভিড় ও ভাষণ। এই তুমুল বিশৃঙ্খলার মধ্যে রতন টাটা বললেন, সিঙ্গুরে কারখানা হবে না। কারখানা চলে গেল গুজরাটে। বিশ্বের কোথাও কি এমন হয়েছে? সিঙ্গুরে কারখানার জমিতে কি চাষ চলছে? সর্ষে ফুলও তো দেখা গেল না। ওদিকে নন্দীগ্রামে চরম বিশৃঙ্খলা। আগেরদিন লাউড স্পিকারে ঘোষণা করে ১৪ মার্চ,২০০৯ পুলিশ ঢুকলো নন্দীগ্রামে, রাস্তা সরিয়ে গাছ সরিয়ে আইনশৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সংঘর্ষ হল। ১৪জন নিহত। পুলিশের গুলিতে ৭ জন বাকিরা অজানা কারণে। কত কি রটানো হল। হলদি নদীর জলে নাকি শিশুদের লাশ ভাসছে , জলের রং লাল, নারী ধর্ষণ হয়েছে। রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বললেন- ‘হাড়-হিম করা অভিজ্ঞতা’। আজ যারা জগদীপ ধনকরের বেহিসেবি মন্তব্যকে নিত্য আক্রমণ করছে – তর্জন গর্জন চলছে, তারা সেদিন গোপাল গান্ধীকে স্বাগত জানান।
এর মধ্যেই ২০০৮ এ শালবনিতে বিশাল ইস্পাত প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করে ফিরতি পথে মুখ্যমন্ত্রী আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাশওয়ানের কনভয়ে মাওবাদীরা বিস্ফোরণ ঘটাল। কয়েক মুহূর্তের জন্য তারা অক্ষত রয়ে গেলেও নিরাপত্তা বাহিনীর ৬জন গুরুতর আহত হল। মাওবাদীরা বললো শালবনিতে নাকি এস ই জেড হবে। আকন্ঠ মিথ্যা কথা।
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা যা আদতে মাওবাদীদের কাজ , রিজায়ানূর রহমানের মৃত্যু, গোর্খাল্যান্ড, নেতাই, আজ সব স্তব্ধ। কেশপুরে লাল ঝান্ডা উড়ছে। নন্দীগ্রামেও। কাজ ফুরিয়েছে। ২০১১-র নির্বাচনে বামফ্রন্টের বিদায় ঘটেছে। চরম কুৎসা -অপপ্রচার -মিথ্যা খবর- মিডিয়ার প্রতিকূলতা – জাতীয় আন্তর্জাতিক চক্রান্ত সব কিছুর সামনে মানুষকে বোঝাতে আমরা পারিনি।
আজ এই ভয়াবহ অতিমারীর সময়েও বিদায়বেলায় তৃণমূলের পোড়ামাটি নীতির মত ব্যাপক দুর্নীতি, গোটা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে দলদাসে পরিণত করার অদম্য প্রচেষ্টা, মুখ্যমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র, বিজেপির হুঙ্কার -ওরা সরকারে এলে, বদল নয় বদলাও নেবে – CAA, NRC, NPR সব চালু হবে – সংখ্যালঘুদের হটানো হবে এবং প্রত্যুত্তরে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা দেখে মানুষ কি বিধ্বস্ত নয়? তারা কি বামফ্রন্টকে স্মরণ করছে না? মিডিয়ারা ব্যস্ত ‘হয় তৃণমূল নয় বিজেপি’ এমন একটা স্থায়ী দ্বৈততা চাপিয়ে দিতে।
তবে বামফ্রন্ট সরকারের কি কোনও ভুলই ছিল না? সীমাবদ্ধতার কথা নয় ,ত্রুটি? সমানে প্রচার, বামফ্রন্ট কোষাগারকে শূণ্য করে চলে গেছে। ঋণের ভার বাড়িয়ে গেছে। তাই কি? এর বেশির ভাগই তো স্বল্প সঞ্চয় থেকে গৃহীত বাধ্যতামূলক ঋণ। তৃণমূলের আমলে তার বদলে এসেছে চিট ফান্ড। কিন্তু খেলা মেলা উৎসব ইত্যাদিতে টাকা ঢেলে, মুখ ঢেকে যায় এমন বিজ্ঞাপনের ঢেউ তুলে অন্তত তিনগুণের বেশি খরচ করে ফেলেছে তৃণমূল। তবে?
অতিমারির সময়ে মানুষ কি মনে পড়ে না জনাদেশ পেয়ে বামফ্রন্টের সব সদর্থক প্রয়াসের কথা? সেই আমলেই তো স্বাস্থ্য, বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ তৈরী হল। ছাত্রদের জন্য আসন সংখ্যা ৩ থেকে ৬ গুণ বেড়েছিল।
তবু ভুল তো ছিলই । শিক্ষায় কিছু ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ তো ঘটেছিল।পার্টি মূল্যায়ণ করে বলেছে “বাস্তবে শিল্পায়নের জন্য জমি যত কমই লাগুক ,সরকারি পরিকল্পনা যতই বাস্তবসম্মত হোক, সাধারণ মানুষের স্বার্থেই শিল্পায়ন দরকার ,তা সাধারণ মানুষকে যত্ন সহকারে বোঝানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতেই হবে যে জমির বিষয়টি কেবল ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের বিষয় নয়, কৃষকের কাছে তা খুবই সংবেদনশীলতার।” আমাদের এই সংবেদনশীলতায় ফাঁক ছিল। আর দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকায় কিছু অহমিকা কিছু ওপর চালাকিও ছিল।
তবু মানুষ নিজের তাগিদেই ক্রমশ বুঝছে বামফ্রন্টের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু যা হবে তা নবতর উন্নততর বামফ্রন্ট সরকার। পার্টি যদি গণলাইন নেওয়াকে বিপ্লবী কর্তব্য বলে স্থির করে তবে সরকারকেও জনগণের কাছে যেতে হবে, শিখতে হবে – শুধু মহাকরণে বসে রাজ্য চালানো যাবে না। জ্যোতি বসুর কথা আজও সত্যি। এতদিন পরেও। এর কোন বিকল্প নেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : ”যাকে হারিয়েছি,তাকে নতুন রূপে ফেরাতে চাই” কমরেড সুদর্শন রায় চৌধুরী’র নিবন্ধটি ওয়েবসাইটে ২১ জুন ২০২১, প্রকাশিত হয়েছিল।