ভাষা একটি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত। এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিত আছে। ফরাসী সমাজ বিজ্ঞানী গুস্তাভ লা বোঁ এর কথায়-
” ভাষার চেয়ে অধিক জটিল, যৌগিক এবং বিস্ময়কর আর কি হতে পারে?”
সবচেয়ে জ্ঞানী শিক্ষাবিদ এবং বৈয়াকরণ ভাষা ব্যবহারের বিধিসমূহ নির্দেশ করতে পারেন কিন্তু ভাষা তৈরি করতে অক্ষম।
প্রত্যেক মানুষের কাছে তার মাতৃভাষা হলো সবচেয়ে প্রিয়। কারণ মাতৃভাষার মাধ্যমে মানুষ তার চেতনাকে লালন করে, আশা-নিরাশা আনন্দ-বেদনার হৃদয়ের গভীরে ভাব-অনুভূতি গুলোকে জাগ্রত করে। প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ মাতৃভাষার ও সাহিত্যের সংরক্ষণ করা এবং এর মাধ্যমেই জ্ঞানচর্চার আদান-প্রদান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য বাঙালী জাতি লড়াই করেছে এমনকি প্রাণ বিসর্জনও দিয়েছে- যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তবে ভাষা আন্দোলনে বাঙালীরা একক নয়, দ্বাদশ শতকে ইংল্যান্ডের ইংরেজভাষী মানুষকে লাতিন ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষার ভাবার, পড়ার ও লেখার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছিল। আসামে বরাক উপত্যকায় গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য সংগ্রামে আসামের রাজপথ হয়েছিল রক্তাক্ত। একুশ আমাদের জাতির অহংকার-একুশের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয়েছে মাতৃভাষা।
‘ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া এ ফেব্রুয়ারি’।
মায়ের মুখের ভাষা রক্ষায় বাংলার দামাল ছেলেদের বুকের তাজা রক্তে পিচ ঢালা কালো রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। তাদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে প্রাপ্তি ঘটেছিল মাতৃভাষার সম্মান।
কবি আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন-
“মোদের ভাষার প্রাণ
একুশ করেছে দান
একুশ মোদের পাথেয়
একুশকে করো নাকো হেয়”।
তবে ব্যাপকতায় ও সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততায় বাঙালীর ভাষা আন্দোলনের পরিসর ছিল ব্যাপক। এই আন্দোলন বাঙালীর আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বৈপ্লবিক প্রভাব বিস্তার করে। একুশের বৈপ্লবিক চেতনার স্পর্শে বাঙালির সামাজিক জীবনে অপরিমেয় সম্ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। তাই ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। সামাজিক গুরুত্বের পাশাপাশি একুশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য অস্বীকার করা যায় না। আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ভাষা আন্দোলনের অবদানকে মূল্যায়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
ঐতিহাসিক দিক দিয়ে দেখলে বলা যায়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে পূর্ব বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলনের ভিত্তি ছিল ১৯৪০ এর “লাহোর প্রস্তাব”।
এই প্রস্তাবে উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে মধ্যশিক্ষিত এলাকাসমূহে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। কিন্তু ১৯৪৬ সালে লাহোর প্রস্তাবকে আংশিক সংশোধন করে একাধিক স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি রাষ্ট্র পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুসারে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ই আগস্ট ভারতবর্ষকে দু’টুকরো করে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের মানচিত্রের পূর্ব অংশে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তান যা ছিল ১৬০০ কিলোমিটারের ভারত রাষ্ট্র দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এই বিভক্তির ভিত্তি ছিল মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব নীতি’ – যা ভাষা ও সংস্কৃতির মত মৌলিক বিষয়গুলিকে অবজ্ঞা করে। নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ছিল বাংলা ভাষাভাষী। ১৯৫১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী পাকিস্তানের জনগণের ৫৬.৪০ শতাংশ -যাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা নিয়ে বাংলাভাষী জনগণ আশা করেছিল পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যা লঘিষ্ঠ ৩.২৭ ভাগ জনগণের মাতৃভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে। প্রকৃত অর্থে তখন থেকে শুরু হয় বাঙ্গালীদের বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আন্দোলন। ১৯৪৮ এর ছাত্র ধর্মঘট, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ ধর্মঘট এবং মিছিল ইত্যাদি সংঘটিত হয়। চলতে থাকে পুলিশের দমন পীড়ন। ওই বছরের একুশে মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকা রেসকোর্সে ময়দানে জনসভায় দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা করেন- “পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হবে একমাত্র উর্দু”। বাংলাভাষী জনগণের ক্ষোভ ধূমায়িত হতে থাকে। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসাহী ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে। বাঙালীরা বুঝেছিল ভাষার শক্তি যখন কমে আসে তখন দুর্বল হয়ে যায় ভাষা শক্তিতে শক্তিমান সংস্কৃতি।
১৯৫২ সালের জানুয়ারী মাসে ভাষা আন্দোলন পুনর্জীবিত হয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে এক জনসভায় ঘোষণা করেন- ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’
প্রতিবাদে-আন্দোলনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ৩০শে জানুয়ারি ছাত্ররা সভা আহবান করে। সিদ্ধান্ত হয় ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ছাত্র ধর্মঘট, মিছিল মিটিং হবে। ভাষা আন্দোলনকে ব্যাপক করার উদ্দেশ্যে ৩১শে জানুয়ারি ঢাকার ‘বার লাইব্রেরী’তে মৌলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানীর সভাপতিত্বে এক সর্বদলীয় সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। উক্ত পরিষদ ৪ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচীকে সমর্থন করে এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল ও সভার কর্মসূচী ঘোষণা করে। কর্মসূচী দমনে প্রাদেশিক সরকার কঠোর মনোভাব নেয়। ২০শে ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। সরকার এই ঘোষণায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে রাস্তায় নামে। বিক্ষোভ- প্রতিবাদ দমনে নিষ্ঠুর পুলিশের নির্বিচার গুলি চালায়। শহীদদের মৃত্যুবরণ করে- রফিক উদ্দিন আহমেদ, শফিউর রহমান, আব্দুল বরকত, আব্দুল জব্বার এবং আব্দুল সালাম সহ বেশ কিছু আন্দোলনকারী। মাতৃভাষা সম্মান ও অধিকার সমুন্নত রাখতে প্রাণ বিসর্জনকারী ছাত্র-জনতার আত্মাহুতি যেমন ছিল মর্মান্তিক তেমনি ছিল গৌরবোজ্জ্বল। প্রতিক্রিয়াশীল শাসকের নির্মম অত্যাচারী সৃষ্টি হয় ব্যাপক জনরোষ যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। অবশেষে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি দেয়।
ভাষা আন্দোলনের ছাত্রদের পাশে ছাত্রীদের অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখ করার মতো। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়েদের উর্দু, আরবি, ফার্সি ছাড়া সাধারণ লেখাপড়া চর্চা ছিল কম। রক্ষণশীলতাকে উপেক্ষা করেই মেয়েরাও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘ওমেন হল’ এর ছাত্রীরা ভাষা আন্দোলনে দুঃসাহসিক অবদান রেখে গেছেন। ভাষার ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন সুপ্রিয়া খাতুন, সামসুন নাহার, রওশন আরা বাচ্চু, সারা তৈফুর, কাজী আমিনা, আহফিল আরা, খুরশিদি খান, হালিমা খাতুন প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যেসব নারী ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন- তারা হলেন তমদ্দুন মজলিশের আনোয়ারা খাতুন, গাইবান্দার বেগম দৌলতুন্নেশা প্রমুখ। এছাড়াও নাদেরা বেগম, লিলি হক, হামিদা খাতুন, নুরজাহান মুরশিদ, আফসারী খান, রানু মুখার্জি প্রমুখ মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। মিলেটের জোবেদা খাতুন চৌধুরানী, সাহারা বানু, সৈয়দ লুতফেন্নেশা, রাবেয়া বেগম, বিপ্লবের ভূমি চট্টগ্রামের তোৎফাতুন্নেশা আজিম, সৈয়দা হালিম, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, সুলতানা বেগমদের নাম উল্লেখ করতে হয়। তমদুন মজলিসের বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ কিছু তরুনের আদর্শিক প্রেরণার উৎস ছিলেন – রাহেলা খাতুন, রাইমা খাতুন ও রোকেয়া বেগম। অলংকাত, অর্থ, ভালোবাসা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা দিয়ে এইসব নারীরা ভাষা আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তিকে জাগ্রত রেখেছিলেন।
বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা এবং মায়ানমারের আরাকান জনগোষ্ঠী ও বাংলা ভাষায় কথা বলে। একুশে ফেব্রুয়ারীকে নিয়ে বাঙালি জাতির প্রাণের আবেগ উচ্ছ্বাসী বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় নিয়ে যায়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০ তম প্যারিস অধিবেশনে বিশ্বের ১৮৮ টি দেশের সমর্থনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের ৬৫ তম অধিবেশনে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিভাবে গৃহীত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে তখন কোনো না কোনোভাবেই বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন ইতিহাস ও বাঙালির আবেগ সম্পর্কে সচেতন হন। হয়তো গেয়ে ওঠেন ভাষা শহীদদের স্মরণে আব্দুল গফুর চৌধুরীর রচিত, আলতাব মামুদ সুরারোপিত
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।”
একুশে ফেব্রুয়ারি অস্তিত্ব আজ গোটা বিশ্বজুড়ে। বাহান্নোর একুশ বিশ্বের সমস্ত মাতৃভাষার অনন্য স্বীকৃতি। বাংলা ভাষার আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে বাংলা ভাষার প্রতি আকর্ষণ, ভালো লাগা, আবেগ-উচ্ছ্বাস ও সস্নেহ লালনের সংস্কৃতি বাঙালীর ঐতিহ্য- আজ যেন কোথাও কোথাও বিবর্ণ ও বেসুরো। বাংলা ভাষার উপর হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার আগ্রাসন চলছে। ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত মূল্যবোধ একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েক শতকের প্রোথিত অনেক শব্দের আমদানি করার সচেতন প্রয়াস চালাচ্ছেন একশ্রেণীর স্বঘোষিত গবেষক। হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষা শ্রুতিমাধুর্য।
শামসুর রহমান একুশের চেতনায় ফুটিয়ে তুলেছেন
‘স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উজ্জ্বল সভা!’
দেশের সাহিত্যিক সংস্কৃতিবিদদের রচনায় বাংলার তেজোদীপ্ত ভাবে ভাষার প্রকাশ ঘটেছে। অথচ বর্তমানে চিত্রটা কেমন? বাস্তব সত্য এটাই আমাদের নিজেদের সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আমরা বড় বেশি অমনোযোগী হয়ে পড়েছি। এখন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত আমাদের টানে না, রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদের গানে ক্লান্তি নাকি নেমে আসে। অনেকেই বলবেন এটা হল নতুন প্রজন্মের রুচিবোধের পরিবর্তন।
সত্যিই কি তাই ? না, অন্য কিছু — মাথার মধ্যে ঢুকানো হচ্ছে। প্রতিবাদের ভাষা যখন হয় ‘ইনসাফ’ তখন শোনা যায় ওটা নাকি বিশেষ কোনো জাতি-সমাজের ভাষা। ‘হরদম’ আমরা এই সমস্ত ভাষাগুলো ব্যবহার করে থাকি। অথচ কিছু কিছু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজনেরা বলছেন এতে নাকি মানুষের মধ্যে মানুষের বিভাজন তৈরি হচ্ছে। ধর্ম দিয়ে তারা মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছেন। গোটা দেশ সমাজকে এক রাষ্ট্র – এক ভাষার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। অথচ আমাদের ভারতবর্ষ, আমাদের স্বপ্নের ভারতবর্ষ যা কিনা
‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’।
ভাষার মধ্যে দিয়ে বিভাজনের চেষ্টা যা কিনা একটা সম্প্রদায়কে আলাদা করে দিচ্ছে অন্য সম্প্রদায়ের থেকে। নাগরিকত্ব নিয়েও পুনরায় প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এন.আর.সি’র মাধ্যমে বিভেদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষজনদের। ভাষার ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য আমরা একতা বজায় রাখার চেষ্টা করব।
আসলে একুশের সংগ্রাম- ভাষা আন্দোলনে বামপন্থীদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ভাষার আন্দোলনে কোন বিশেষ ভাষা অর্থাৎ উর্দু আরবি সরিয়ে নয়, ভাষা আন্দোলনকারীরা চেয়েছিলেন বাংলা কেউ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হোক । কিন্তু তা বলে উর্দুসহ অন্য কোন ভাষাকে বাদ দেওয়ার কথা কোথাও বলা হয়নি। তাই বলা যেতেই পারে হঠাৎ করেই বাংলা ভাষার অভিধান থেকে উর্দু সহ আরবি, ফারসী, হিন্দি, ইংরেজী ইত্যাদি শব্দ কি সহজেই যেমন বাদ দেওয়া যাবে না আবার এই ভাষাকে নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ লেখনীর মাধ্যমে হবে। কবি আব্দুল জামাত তার কবিতায় লিখেছিলেন-
‘জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই’।
আমরা একুশের শপথ নিয়ে এগিয়ে চলব। রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের- মাতৃভাষাপ্রেমী সংস্কৃত মনস্ক সুধীজনদের। কারণ- ভাষার শক্তি যখন কমে আসে, তখন ধার কমে যায় ভাষার শক্তিতে বলীয়ান সংস্কৃতির।