প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দু’জনের সরকারই গরিবের টাকা লুটের ব্যবস্থা করে এখন ভোটের দিকে তাকিয়ে গরিব কল্যাণের কথা আওড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করলেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। মঙ্গলবার একটি অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী দু’জনের কারোর ঘোষণামতোই চাল ডাল মানুষ পাননি। কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল ডিজেলে দাম বাড়িয়ে, পিএম কেয়ারের নামে টাকা লুটের ব্যবস্থা করেছে, আর রাজ্যে রেশনের চাল এবং আমফানের ত্রাণের টাকা তৃণমূল নেতারা এমন লুটেছে যে গ্রামে গ্রামে মা বোনেরা ঝাঁটা জুতো নিয়ে বিক্ষোভে নেমেছেন।
এদিনই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ছটপুজো পর্যন্ত গরিব কল্যাণ যোজনার সময়সীমা বাড়ানোর কথা বলেছেন। এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, বিহারের নির্বাচন আসছে বলে এখন ছটপুজোর কথা মনে পড়ল? গরিবের কল্যাণের জন্য আমরা বামপন্থীরা লকডাউনের গোড়া থেকেই বলে আসছি দেশের মজুত খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার প্রয়োজনের তুলনায় তিনগুণ বেশি আছে, সেখান থেকে সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থায় সকলকে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হোক ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। সেকথা আগে শোনেননি কেন? ভোট আসছে বলে এখন গরিবের কথা মনে পড়ল?
প্রধানমন্ত্রী এদিন আবারও ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান রেশন’ সুযোগের আশ্বাস দিয়েছেন। এর জবাবে সেলিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসে নতুন ঘোষণা কী করলেন? তাঁর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন প্যাকেজের নামে বাজেটের পুরানো স্কিম আবার ঘোষণা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন আবার সেই কথা শোনাতে ভাষণ দিলেন? ‘এক দেশে এক রেশন’এর ঘোষণা ২০১৯ সালেই হয়েছিল কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। কার্যকর হলে পরিযায়ী শ্রমিকদের অভুক্ত মিছিল দেখতে হতো না। রামবিলাস পাসোয়ান নিজেই বলেছেন, ওটা ব্যর্থ হয়েছে।
যথাসময়ে লকডাউনের ফলে ভারত কোভিড সংক্রমণ মোকাবিলায় ভালো ফল করেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দাবি সম্পর্কে সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত কোভিড সংক্রমণে পৃথিবীতে এক নম্বর হতে চলছে। আর প্রধানমন্ত্রী তথ্যের কারসাজির আড়ালে লুকোতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গর মুখ্যমন্ত্রীর মতো যাঁরা তথ্য লুকিয়ে কারসাজি করেন আমরা মহামারী নিয়ে তাঁদের বক্তব্য শুনতে চাই না, আমরা এই বিষয়ে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনতে চাই।
চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা নিয়ে মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, দেশের মানুষ ভারতের ম্যাপ রক্ষা নিয়ে চিন্তিত, আর কেন্দ্রীয় সরকার চীনের অ্যাপ আটকাচ্ছে। এই প্রধানমন্ত্রী নিজেই চীনের অ্যাপ পেটিএমের বিজ্ঞাপন করেছিলেন নোটবন্দির সময়। টিকটকের সেলিব্রেটিদের বিজেপি নেতা মন্ত্রী বানিয়েছে রাজ্যে রাজ্যে। এখন জাতীয়তাবাদ আর যুদ্ধোন্মাদনা দেখাতে চীনের অ্যাপ দেখাচ্ছেন? এটাই আরএসএস–বিজেপি’র রাজনীতির কৌশল। একবার বালাকোট দেখিয়ে ভোটে জিতেছেন, এখন চীন দেখাচ্ছেন। আমরা বামপন্থীরা কোনও দেশের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু আমাদের দেশের অখণ্ডতা, সীমানা রক্ষায় দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার পক্ষপাতী। সেই ঐক্য তো বিভাজনের রাজনীতিতে নষ্ট করছে বিজেপি–আরএসএস। দেশকে ভিতর থেকে দুর্বল করে বাইরের শত্রু থেকে ওরা বাঁচাবে? মোদী সরকার এমন বিদেশনীতি নিয়েছে যে আমেরিকার ছোট শরিক হতে গিয়ে ভারতের সবকটা প্রতিবেশী দেশ, এমনকি নেপাল ভূটানকে পর্যন্ত চটিয়ে দিয়েছে।
এদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কে কত গরিব দরদি। গরিবের পকেটে মাসে ৭৫০০ টাকা ঢোকানোর দাবি জানিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী, সেই দাবি নস্যাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু চাল খেয়ে মানুষ বাঁচে না, বাঁচার জন্য আরও কিছু দরকার, তার জন্য টাকা লাগে। মোদী সরকারের সেদিকে নজর নেই।
তিনি আরও বলেন, এরাজ্যে তৃণমূলের বড়, ছোট, মেজো নেতারা সরকারি টাকা লুট করছেন। রোজ সংবাদমাধ্যমে মানুষ দেখছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের গ্রেপ্তার করছেন না কেন? ভাষণে মানুষের পেট ভরে না, মাথায় ছাদ হয় না। তাঁর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগে। বিজেপি–তৃণমূলের সেই সদিচ্ছা নেই, তারা ভোটের রাজনীতি করছে, তাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মানুষের বাঁচার রসদ জোগাবে না।
‘‘এক দেশ এক রেশনের ঘোষণা গত বছরই হয়েছিল। সেটা হলে পরিযায়ী শ্রমিকদের অভুক্ত মিছিল দেখতে হতো না।’’
‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই চীনের অ্যাপ পেটিএমের বিজ্ঞাপন করেছিলেন নোটবন্দির সময়। টিকটকের সেলিব্রেটিদের বিজেপি নেতা-মন্ত্রী বানিয়েছে রাজ্যে রাজ্যে। এখন জাতীয়তাবাদ আর যুদ্ধোন্মাদনা দেখাতে চীনের অ্যাপ দেখাচ্ছেন? এটাই আরএসএস –বিজেপি’র রাজনীতির কৌশল। একবার বালাকোট দেখিয়ে ভোটে জিতেছেন , এখন চীন দেখাচ্ছেন।’’