cpi(m) state committee

সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভার প্রেস বিবৃতি...

২০ জুন ,২০২১(রবিবার) কলকাতা

সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠক ১৯-২০ জুন, ২০২১এ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও একাধিক পলিট ব্যুরো সদস্য সভায় ছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর্যালোচনাই ছিল এই সভার আলোচ্য। মোট ৫২জন রাজ্য কমিটি সদস্য আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। অনেকে লিখিত বক্তব্যও পেশ করেছেন। পার্টির রাজ্য সম্পাদক যে পর্যালোচনার খসড়া পেশ করেছেন সেখানে পার্টি ও বামফ্রন্টের নির্বাচনী বিপর্যয়ের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কারণগুলি অনুসন্ধান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সিপিআই(এম) ও বামফ্রন্টের ভোটের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। শ্রেণি ও জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমর্থন হ্রাস পেয়েছে। রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ থাকলেও ক্রমে বিজেপি-বিরোধী মনোভাবের ফলে তারা লাভবান হয়েছে। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে তীক্ষ্ণ মেরুকরণ হয়েছে। জনগণ তৃণমূলকেই বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে বেছে নেন। বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পকে তৃণমূল জনগণের সমর্থন লাভের জন্য ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। ধর্মীয় মেরুকরণ এই ফলাফলের প্রধান কারণ না হলেও একটি কারণ। বিজেপি-র আগ্রাসী প্রচারের বিরুদ্ধে বাংলার জাতিসত্বাকে তৃণমূল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। বিজেপি, তৃণমূল উভয়েই পরিচিতিসত্ত্বার রাজনীতি করেছে, তার যথাযথ মোকাবিলা করা যায়নি। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট সর্বোচ্চ সম্ভব এক জায়গায় আনতে এবং বাম, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির সমাবেশের প্রয়োজনীয়তা থেকেই রাজ্যে বামফ্রন্ট থাকলেও সংযুক্ত মোর্চা গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু মোর্চাকে বিকল্প হিসাবে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। পার্টির সাংগঠনিক দুর্বলতা নির্বাচনী সংগ্রামে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, নির্বাচনী বিপর্যয়ের অভিন্ন কারণ হল পার্টির গণভিত্তি হ্রাস। এই দুর্বলতা আমরা কাটাতে পারিনি। যে ভুলগুলির কথা আগেই পার্টিতে আলোচিত হয়েছে তা অতিক্রম করা যায়নি। ভুলকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থতা আরো বড় ভুলের জন্ম দেয়। রাজ্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা ছিল। যার ফলে ২০১৯-এ বিজেপি’র লাভ হয়েছিল। কিন্তু পরে তৃণমূল কিছু পদক্ষেপ নেয় এই অসন্তোষ হ্রাসের জন্য। বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পকে তারা একাজে ব্যবহার করে। বিজেপি’র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে বাঙালি জাত্যাভিমানকেও তারা ব্যবহার করেছে। ইয়েচুরি বলেন, পার্টির ২২তম কংগ্রেসেই বলা হয়েছিল বিজেপি-কে পরাস্ত করা মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এই ঐক্য হবে সংগ্রামের জন্য। নির্বাচন এলে বোঝাপড়ার চেষ্টা হবে। কিন্তু জনগণ প্রস্তুত না থাকলে রণকৌশল সফল হয় না। রাজ্যেও এই ঐক্যের চেষ্টা অব্যাহত থাকা উচিত কিন্তু কীভাবে তা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আলোচনা করতে হবে। ইয়েচুরি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ ছিল না। ছিল অর্থনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা। সেখানে আমাদের কিছু ঘাটতি ছিল। কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। এখন বিজেপি-বিরোধিতা সামনে এসে যাওয়ায় পরিবর্তন হয়েছে। পরিচিতির প্রশ্নকে নিয়ে আমাদের সক্রিয় হতে হবে কিন্তু তা যেন শ্রেণি আন্দোলনের অধীনে হয়, পরিচিতিসত্ত্বা শ্রেণি আন্দোলনকে ছাপিয়ে না যায়। এই অভিমুখেই চলতে হবে।

ইয়েচুরি বলেন, সংগঠনকে চেহারা দেয় রাজনীতি। রাজনীতির সঙ্গে সংগঠনের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক রয়েছে। জনগণের প্রশ্ন, রাজনৈতিক বিকল্প তুলে ধরতে না পারলে শুধু আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোয় কাজ হবে না। ইয়েচুরি বলেন, এক নতুন সূচনার সময় এখন। পার্টিকে রাজনৈতিক সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। যে তরুণরা আমাদের চারপাশে এসেছেন তারা আমাদের সম্পদ। এদের যত্ন করতে হবে, পার্টি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। অভিজ্ঞদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। সিপিআই(এম) ও বামফ্রন্ট ছাড়া জনগণের মৌলিক প্রশ্ন কেউ তুলবে না। জনগণ আক্রান্ত। সামনের দিনে আরো বেশি আক্রমণ নেমে আসবে। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিকশ্রেণি ও কৃষকদের আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। জনগণই আমাদের প্রকৃত শক্তি। জনগণের লড়াই গড়ে তোলার সুযোগ সামনেই আসবে। তা এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্ম দেবে।

রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, পার্টির স্বাধীন শক্তির বিকাশ ঘটাতেই হবে। তার ওপরেই বামফ্রন্ট, অন্যান্য বাম দলকে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে। আবার সেই ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে সমবেত করা যাবে। বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে এই শক্তি সমাবেশ ঘটাতে হবে। শ্রেণি সমাবেশ ও বিভিন্ন সামাজিক অংশের মানুষকে টেনে আনার লক্ষ্যে এই সমাবেশ করতে হবে। নির্বাচনের সময়ে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সম্ভব শক্তি সমাবেশের প্রয়োজনীয়তা থেকেই সংযুক্ত মোর্চা তৈরি করা হয়েছে। মিশ্র বলেন, প্লেনামে চিহ্নিত দুর্বলতা অতিক্রম করতে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। গণফ্রন্টগুলির কার্যধারা নতুন উদ্যমে পরিচালনা করতে হবে। শ্রেণি ও জনগণের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। জনগণের জীবনের সমস্যাগুলি নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শ্রেণি আন্দোলনের তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি করতে হবে। আদিবাসী, তফসিলি জাতির মানুষের সমস্যায় তাদের পাশে থাকা বৃদ্ধি করতে হবে। শ্রেণি আন্দোলনের প্রশ্ন থেকে সামাজিক প্রশ্নকে পৃথক করা যায় না। পরিচিতিসত্ত্বাকে বিভাজনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, আমরা শ্রেণি ঐক্য গড়ে তোলার জন্য তার গণতান্ত্রিক উপাদানকে স্বীকৃতি দেব। মতাদর্শগত অনুশীলনে প্রয়োজনীয় জোর দিতে হবে। বাংলা বিভাজনের যে কথা উত্থাপন করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বামপন্থীরা লড়াই করবে। সূর্য মিশ্র রেড ভলান্টিয়ারদের কাজের প্রশংসা করে বলেন, সময়োপযোগী কাজ হচ্ছে। এখান থেকে শিক্ষা নেবার আছে।

রাজ্য কমিটি স্থির করেছে, পর্যালোচনার কাজ চলবে। পার্টি ও জনগণের সব অংশের মধ্যে থেকে আরো বিশদে অভিমত সংগ্রহ করা হবে। পরে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিও এই পর্যালোচনা করবে। রাজ্য কমিটি বলেছে, পরাজয় স্বীকার করার অর্থ হতাশা নয়। পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েই কমিউনিস্টদের এগতে হবে।

বামপন্থী দলগুলির সর্বভারতীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে এরাজ্যে ২৪ জুন থেকে ৫ জুলাই প্রচার, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের কর্মসূচি হবে। ৩০জুন বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ‘হুল দিবস’ পালন করা হবে। সকালে রক্তদান ও বিকেলে কর্মসূচি পালন হবে।




শেয়ার করুন

উত্তর দিন